নিজেদের আপোষকামীতাকে জায়েজ করার জন্য বিভিন্ন ইসলামী দল,ব্যক্তিত্ব ও আন্দোলন মূলত দুটি অজুহাত ব্যবহার করে।
.
১) হিকমাহ
২) মাক্কী জীবন
.
সবাই কমবেশী এদুটো অজুহাতের সাথে পরিচিত। ক্ষমতার রাজনীতির কারনে মুসলিমদের উপর গণহত্যা চালানো কসাইদের শুভেচ্ছা জানানো হয়, তারপর তা জাস্টিফাই করার চেষ্টা করা হয় হিকমাহর অজুহাত দিয়ে। বিভিন্ন কথিত ইসলামিক “স্কলার” কে দেখা সমকামী অধিকার, সমকামী বিয়ের মতো বিষয়েকে সমর্থন করতে। আর অজুহাত হিসেবে বলা হয় হিকমাহর কথা। আল্লাহর রাসূলের সম্মানের প্রশ্নে ক্ষমতাসীনদের সাথে আপোষ করা হয়। অজুহাত দেওয়া হয় হিকমাহর। অর্থাৎ এমন কোন কাজ যা স্পষ্টতই ইসলামের অবস্থানের সাথে সাংঘর্ষিক – সেগুলোকে জায়েজ করার জন্য হোলসেলভাবে হিকমাহর অজুহাত ব্যবহার করা হয়।
.
অন্যদিকে ইসলামে যে কাজগুলো আমাদের উপর আবশ্যক করা হয়েছে তার মধ্যে যেই কাজগুলো আমাদের অপছন্দনীয় অথবা যেই কাজগুলো কঠিন, সেগুলো থেকে নিজের বিরত থাকাকে জায়েজ করার ব্যবহার করা হয় মাক্কী জীবনের অজুহাতঃ
.
“আল্লাহ আমাদের অমুক ইবাদতের নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআনের অমুক অমুক আয়াতে, রাসূলুল্লাহর ﷺ অমুক অমুক হাদীসে স্পষ্ট বলা আছে। আপনারা কেন এই কাজ করেন না?”
.
“কারন এগুলো মাদানী জীবনের আয়াত। আমরা এখন মাক্কী জীবনে আছি।”
.
এই অজুহাত যে উপরের হিকমাহর অজুহাতের মতোই সম্পূর্ণ বাতিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। হিকমাহ হল একাধিক জায়েজ কাজের মধ্যে উত্তমটিকে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। নাজায়েজ কাজ, ইসলামের সাথে সাঙ্ঘর্ষিক কাজের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য না। অন্যদিকে একবার শারীয়াহ পরিপূর্ণ হয়ে যাবার পর মাক্কী জীবন-মাদানী জীবনের অজুহাত দেয়ার সুযোগ নেই। মাক্কী জীবনে কেবলা ছিল জেরুসালেমের দিকে। যারা মাক্কী জীবনের অজুহাত দেন তারা কি এখন “মাক্কী জীবনে থাকার” কারনে জেরুসালেমের দিকে ফিরে নামায আদায় করেন? এসব খোঁড়া অজুহাত দেয়ার পেছনে মূল উদ্দেশ্য হল কিতাবের কিছু অংশ গ্রহন আর কিছু অংশকে বর্জন করা।
.
তথাপি যদি আমরা ধরেও নেই আমরা মাক্কী জীবনে আছি – সেই ক্ষেত্রে মাক্কী জীবনে রাসূলুল্লাহ ﷺ যে কাজগুলো করেছিলেন সেগুলো কি মাক্কী জীবনের অজুহাত দেওয়া ব্যক্তিরা করেন? মাক্কী জীবনে, ইসলামী রাষ্ট্রের অবর্তমানে, কোন সামরিক শক্তি না থাকা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ ﷺ সরাসরি মিথ্যা ইলাহ (তাগুত) বর্জন ও একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের দাওয়াত দিয়েছেন। সরাসরি বায়তুল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে, ক্বুরাইশদের সামনে দাঁড়িয়ে তাগুত বর্জনের দাওয়াহ দিয়েছেন এবং দেখিয়ে দিয়েছেন তাগুত কোনগুলো। লাত, মানাত, উযযা, হুবাল – কে চিনিয়ে দিয়েছেন। কোন অস্পষ্টতা রাখেন নি।
.
যারা মাক্কী জীবনের অজুহাত দেন তারা কি তাগুত বর্জন করে এক আল্লাহর ইবাদতের দাওয়াহ দেন? তারা কি সাধারন মানুষকে চিনিয়ে দেন তাগুত কোনগুলো? তারা কি আদৌ নিজেরা তাগুত চেনেন? তারা কি আদৌ নিজেরা তাগুত বর্জন করেন? নাকি নানা আঙ্গিকে, নানা ভূখন্ডে, নানা পোশাকে, মাক্কী জীবনের অজুহাত দেওয়া লোকেরা তাগুতের আচলের তলায় গিয়ে বসেন?
.
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা ক্বুরআনে বলেছেন - “আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত থেকে দূরে থাক” [আন-নাহলঃ ৩৬]
.
এই আয়াত হল দলীল – মানব্জাতির উপর সর্বপ্রথম ফরয হল সকল মিথ্যা ইলাহ, তাগুতকে বর্জন এবং কেবলমাত্র আল্লাহকে আনুগত্য, ইবাদাত ও বিধানদাতা হিসেবে নির্দিষ্ট করা। অথচ তাগুত আসলে কি –আমাদের দেশের কয়জন মানুষ বোঝেন? তাগুত কোনগুলো সেটা নাহয় বাদই দিলাম। তাগুতের কনসেপ্টটা আমাদের দেশের কয়জন মানুষ বোঝেন? প্রথম ফারযিয়্যাত – যা সকল নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাতু ওয়াস সালাম সর্বাবস্থায় পালন করেছেন – সেটা সম্পর্কেই আমাদের দেশের, এবং পৃথিবীর অধিকাংশ মুসলিম জানে না। এ দায়ভার কার? মাক্কি জীবনের অজুহাত দেওয়া নবীদের ওয়ারিশ হবার দাবিদারের কি এই দায়ভার এড়াতে পারেন?
.
তাই যখন হক্বকে খুজবেন, হক্বপন্থি আলেমকে খুজবেন তখন সবসময়ে দেখবেন তার কথায় এই ফারযিয়্যাতের আলোচনা আছে কি না। তিনি কি তাগুত বর্জন আর কেবমাত্র আল্লাহকে রব্ব, ইলাহ, ও বিধানদাতা হিসেবে গ্রহন করার দাওয়াহ দেন কি না। দেখবেন তিনি কি শুধু তাত্ত্বিক কথা বলেন নাকি নবীদের আলাইহিমুস সালাতু ওয়াস সালাম মতো করে দেখিয়ে দেন –
এটা হুবাল, এটা লাত, এটা মানাত, এটা উযযা – এগুলোর প্রতিটি এক-একটি তাগুত। এরা মিথ্যা ইলাহ, যাদের উপর মানুষ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার বৈশিষ্ট্য আরোপ করেছে।
.
মক্কাতে হারাম শরীফে ৩৬০ টী মূর্তি ছিল। আর এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মূর্তির নাম ছিল হুবাল। উহুদের যুদ্ধের পর যখন আবু সুফিয়ান আনন্দিত হয়ে স্লোগান দিয়েছিল তখন হুবালের নামেই দিয়েছিল। হুবাল ছিল মুশরিকদের বিশ্বাস অনুযায়ী এই এই ৩৬০টির মধ্যে প্রধান।
.
আজকে সারা পৃথিবী জুড়ে ৩৬০ না, আরো অনেক, অনেক বেশী তাগুত আছে। সবগুলো পাথরের না। বেশির ভাগই জীবন্ত তাগুত। হারাম শরীফের মূর্তিগুলোর মধ্যে যেমন একটি মূর্তি ছিল প্রধান, তেমনিভাবে বর্তমানের তাওয়াগীতের (তাগুতের বহুবচন) মাঝেও একটি প্রধান তাগুত আছে। তখন যেমন হুবাল আছে, এই যুগেও এক হুবাল আছে। আজও, পূর্বের মতো এই হুবালের নামে কাফির-মুশরিকরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত আছে।
.
পার্থক্য হচ্ছে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাগুত বর্জনে দাওয়াহ দিয়েছিলেন, তাগুতকে চিনিয়ে দিয়েছিলেন, তাগুতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে নবিদের ওয়ারিশ হবার দাবিদারদের ৯০% এর বেশি তাগুতের আচলের তলায় থাকা আর মাঝেমধ্যে হাকডাক করাকেই নিজেদের কৃতিত্ব মনে করেন। এদের কাছে গিয়ে আপনি তাগুত চিনতে পারবেন না। হক্বকেও চিনতে পারবেন না।
.
তবে অবশ্যই হক্ব এখনো আছে। হকপন্থিরাও আছেন। কোন ব্যানার টাঙ্গিয়ে নেই। হক্বের ডিলারশিপ দাবি করে বসে নেই। হক্বের কপিরাইট করার জন্য অ্যাপ্লিকেশান করে নেই – তবে আছেন। আর তারা তাদের দায়িত্ব আলাহামদুলিল্লাহ পালন করছেন। তাগুত বর্জন ও এক আল্লাহর ইবাদতের দাওয়াহ দিচ্ছেন। লাত-মানাত-উযযা-হুবালকে চিনিয়ে দিচ্ছেন।
.
দেখুন যুগের হুবালকে নিয়ে এমনই একজন আলিম, শায়খ ইব্রাহিম আর-রুবাইশের রাহিমাহুল্লাহ বয়ানঃ
.
ক্রুসেডারদের আগ্রাসনের বাস্তবতা
.
ইউটিউবে দেখুনঃ https://youtu.be/tmVXs1T-yig
.
#তাওহিদের_পতাকা
#হকপন্থি_আলিম