আমরা সামাজিক ভাবে রাসূলুল্লাহর ﷺ সুন্নাহকে সম্মান করি না। আমরা মুখে দাবি করি রাসূলকে ﷺ ভালোবাসার। কিন্তু আমাদের কথা, কাজ ও সামাজিক বাস্তবতা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়। আমাদের কথা ও কাজ মেলে না।
.
আমরা রাসূলুল্লাহকে ﷺ ভালোবাসার দাবি করি, কিন্তু আমাদের সমাজে দাড়ি রাখাকে অত্যন্ত তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হয়। কমবয়েসী কোন ছেলে দাড়ি রাখতে গেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রথমে পরিবার থেকেই তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হয়। এরপর বন্ধুবান্ধবের টিটকারি, ইউনিভার্সিটির টিচার-অ্যাডমিনসট্রেশানের তির্যক মন্তব্য ইত্যাদি তো আছেই। এমনকি যারা আশেকে রাসূল ﷺ হবার দাবি করে তাদেরকে দেখা যায় চকচকে গাল নিয়ে রাসূলুল্লাহর ﷺ চরম অবমাননাকারীর ইশকে পাগল হতে। রবীন্দ্রনাথ, চে, লালন কোন মিউযিশিয়ান, ফুটবলার কিংবা মুভিস্টারের অনুকরনে দাড়ি রাখাটা একটা এক্সিসটেনশিয়াল স্টেইটমেন্ট। রাসূলুল্লাহর ﷺ অনুকরনে দাড়ি রাখল সেটা খ্যাত, ব্যাকওয়ার্ড, মধ্যযুগীয়।
.
আমরা রাসূলুল্লাহকে ﷺ ভালোবাসার দাবি করি, কিন্তু আমাদের সমাজে সুন্নতি পোশাককে খুব খাটো করা হয়। আমাদের ছেলেরা হিপহপ কিংবা গ্যাংস্টাহ্ র্যাপ শুনে অ্যামেরিকান নিগাহ্-দের অনুকরনে তাবুর মতো ঢিলেঢালা পোশাক পরে সেটা ট্রেন্ড, স্টাইল। ফ্যাশন স্টেইটমেন্ট। কিন্তু কমবয়েসী একটা ছেলে রাসূলুল্লাহকে ﷺ ভালোবেসে পাঞ্জাবী কিংবা থোব পরলে সেটা আরব সংস্কৃতির অন্ধ অনুসরন। আবার সার পৃথিবি জুড়ে রক্তের বন্য বইয়ে দেওয়া ফিরিঙ্গিদের অনুকরনে শার্ট-প্যান্ট-কোট-টাই পরলে সেটা আধুনিকতা।
.
আল্লাহর রাসূলের হাদিসের উপর আমল করে গোড়ালির উপর কাপড় রাখার কথা আমাদের সমাজে চিন্তাই করা যায় না। কিন্তু কোন হিপস্টার, ইমো-রকারকে ফলো করে গোড়ালির উপর প্যান্ট পরাটা কোন সমস্যাই না।
.
আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে ভালোবাসার দাবি করি কিন্তু আমাদের সমাজে রাজাকারদের চিত্রায়িত করার জন্য সিম্বল হিসেবে ব্যবহার হয়ে দাড়িটুপি। হাজার লক্ষ ক্লিন শেইভড আর গোফওয়ালা চুরি থেকে শুরু করে হত্যা, ধর্ষন, বাটপাড়ি সব করছে কিন্তু কেউ ইন শা আল্লাহ বললে আমাদের পত্রিকাগুলো তাকে জঙ্গি বানিয়ে ফেলে। বিসিএসে টেকার জন্য দাড়ি-টুপিওয়ালা ছেলেটা ক্লিন শেইভ করে প্যান্ট-শার্ট পরে আধুনিক হয়ে যায়। প্রত্যেক চাকরির ইন্টারভিউয়ের আগে দাড়ি-টুপিওয়ালারা আগে থেকেই হিসেব করা শুরু কতোবার দাড়ি কাটার কথা নানাভাবে নানা জায়গা থেকে শুনতে হবে।
.
আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে ভালোবাসার দাবি করি কিন্তু আমাদের মা-বাবা, আত্মীয়, প্রিয় নেতা, প্রিয় খেলোয়ার, প্রিয় লেখক, প্রিয় মুভিস্টারের অবমাননা আমরা সহ্য করতে না পারলেও কিন্তু রাহমাতুললিল আলামিনের ﷺ অবমাননা আমাদের গায়েই লাগে না। ওগুলো নাকি বাক-স্বাধীনতা, চেতনার আবশ্যকতা।
.
এই হল আমাদের ভালোবাসার নমুনা।
.
অনেকে তো এমনো আছে সুন্নাহকে স্বীকারই করতে চায় না। দ্বীনের সুন্নাহর কোন ভূমিকা আছে এটাই তারা মানতে রাজি না। এরা হাদীস স্বীকার করে না। অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সাক্ষ্য দিয়েছেন আমাদের রাসূলের ﷺ সুন্নাহকে আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।
.
তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসূলের অনুসরণের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।
.
সামাজিকভাবে সুন্নাহকে তুচ্ছাতাচ্ছিল্য করার এই প্রবণতার পাশাপাশি আরেকটি প্রবণতা আমাদের সমাজে দেখা যায়। কিছু সুন্নাহকে প্রাধান্য দেওয়া আর কিছু সুন্নাহকে সুন্নাহই মনে করে না। সুন্নাহ একটি কমপ্লিট প্যাকেজ। যেখানে জীবনের, সমাজের, রাষ্ট্রের প্রতিটী ক্ষেত্রে ব্যাপারে আমাদের জন্য অনুসরনীয় উত্তম আদর্শ আছে। কিন্তু আমাদের সমাজ সুন্নাহ পালন বলতে আমরা ভিন্ন কিছু বুঝি। যা প্রসারিত তা আমরা আমাদের ইচ্ছেমতো সংকুচিত করি। যা সম্পূর্ণ তা থেকে আমরা বিয়োজন করি, তার সাথে সংযোজন করি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহকে ছেড়ে দিয়ে আমরা যতোটুকু কোনমতে আমাদের সমাজে পালন করা যায়, সেটাকেই শুধু সুন্নাহ সাব্যস্ত করতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে যাই। অর্থাৎ একদিকে আমাদের সমাজে সুন্নাহকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হয়, অন্যদিকে সুন্নাহ পালন করা হয় কিন্তু কাটছাঁটও করা হয়।
.
নিশ্চয় সর্বোত্তম দিকনির্দেশন কুর’আন। আসুন কুর’আন থেকেই জানা যাক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা রাসূলুল্লাহর ﷺ সুন্নাহ অনুসরণের ব্যাপারে আমাদের কি বলেছেন এবং কোন প্রেক্ষাপটে কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে বলেছেন।
.
তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসূলের অনুসরণের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। মু’মিনরা যখন সম্মিলিত বাহিনীকে দেখল তখন তারা বলে উঠলঃ এটাতো তা’ই, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যার প্রতিশ্রুতি আমাদেরকে দিয়েছেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সত্যই বলেছিলেন। আর এতে তাদের ঈমান ও আনুগত্যই বৃদ্ধি পেল। মুমিনদের মধ্যে কিছু লোক রয়েছে যারা আল্লাহর সাথে কৃত তাদের প্রতিশ্রুতি সত্যে বাস্তবায়ন করেছে। তাদের কেউ কেউ [যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করে] তার দায়িত্ব পূর্ণ করেছে, আবার কেউ কেউ [শাহাদাত বরণের] প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা (তাদের সংকল্প) কখনো তিল পরিমাণ পরিবর্তন করেনি। [আল-আহযাব,২১-২৩]
.
আল্লাহ আমাদের সিরাতুল মুস্তাক্বিমের উপর অবিচল থাকার তাউফিক্ব দান করুন কোন রকম বাড়াবারী এবং ছাড়াছাড়ি থেকে মুক্ত হয়। আল্লাহ আমাদের তাউফিক দান করুন আমাদের নেতা, আমাদের প্রিয়, মুহাম্মাদের ﷺ সুন্নাহ সম্পূর্ণভাবে অনুসরণ করার এবং দুনিয়ার বিনিময়ে এই দ্বীনকে বিক্রি না করার। আমীন
.
#KnowYourDeen