গল্পটা হাজারো বছরের পুরনো। পূর্ব থেকে পশ্চিমে একই প্যাটার্নের পুনরাবৃত্তি। তবে শুরু যেহেতু একটা জায়গাতেই করতে হয় তাই ১৪০০ বছর আগেকার উদাহরনটা দিয়েই শুরু করা যাক।
.
ঘটনাটা মক্কার। যখন মুসলিমরা কি সংখ্যা, অর্থে, ক্ষমতায়, শক্তিতে নগন্য। যখন তাদের কোন রাষ্ট্র ছিল না। কোন প্রতিষ্ঠান ছিল না। যখন তারা কাফির-মুশরিক পরিবেষ্টিত অবস্থায় বসবাস করতে বাধ্য ছিল। ইসলামের শুরুর এই সময়টাতেও, মুসলিমদের চরম দুর্বলতার এই পর্যায়টাতেও কাফির-মুশরিক মূল সমস্যা কিন্তু ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে নিয়ে ছিল না। সাহাবীদের রাঃ নিয়ে ছিল না। তাদের মূল মাথাব্যাথা ছিল তাওহিদ নিয়ে।
.
আর তাইতো ক্বুরাইশ নেতারা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে প্রস্তাব দিয়েছিল – ‘তোমাকে আমরা আরবদের বাদশাহ বানাব। দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েদের তোমার কাছে এনে দেবো। তোমাকে সম্পদের পাহাড় বানিয়ে দেব। সব পাবে – শুধু এক বছরের জন্য, এক মাসের, এক সপ্তাহের জন্য, নিদেনপক্ষে এক দিনের জন্য আমাদের দেবতাদের মেনে নাও। বাকি পুরোটা সময় এক আল্লাহর ইবাদাত চলবে। আমরা বাকি পুরোটা সময় এক আল্লাহকেই শুধু মানবো।’
.
আল্লাহর রাসূল ﷺ ক্বুরাইশদের এই প্রস্তাব মেনে নেননি। চরম দুর্বলতা, চরম অসহায়ত্বের এই সময়টাতেও রাসূলুল্লাহ ﷺ এই আপাত লাভজনক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
.
তিনি ﷺ যুক্তি দেখাতে পারতেনঃ আরবদের বাদশাহ হবার শাসনক্ষমতা মুসলিমদের হাতে আসবে। এই শাসনক্ষমতা ব্যবহার করে প্রকৃত ইসলামের প্রচার প্রসার করা যাবে। তাই আপাতত এই “ছোট” ছাড় দেওয়াটাই হিকমাহ...
.
তিনি ﷺ যুক্তি দেখাতে পারতেনঃ বিপুল সম্পদের মালিক হতে পারলে সেই সম্পদ ব্যবহার করে বিভিন্ন সামাজিক-ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যাবে। সেগুলোতে মুসলিমদে কর্মসংস্থান হবে। সমাজে মুসলিমদের যে নাজুক অবস্থা তা দুর্বল হবে। তাই আপাতত একটু ছাড় দিয়ে এই নীতির অনুসরণ করাটাই বিচক্ষণতা হবে।
.
তিনি ﷺ যুক্তি দেখাতে পারতেনঃ সম্পদ ও শাসনক্ষমতা দিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনেক উন্নতি করা যাবে। শিক্ষায় এগিয়ে যাওয়া যাবে। প্রযুক্তিগত উন্নতি সাধন করা যাবে আর এইসব ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য ব্যবহার করা যাবে।
.
বরং তিনি ﷺ সেই উত্তর দিয়েছেন যা আল্লাহ রাব্বুল ইযযাহ তার ﷺ মুখ দিয়ে বলিয়েছিলেন – আর এই উত্তর ছিল সূরা কাফিরুন।
.
ইসলামের ব্যাপারটা, তাওহিদের ব্যাপারটা এমনই। ক্ষমতার লোকেরা, নেতৃত্বে থাকা লোকেরা একে অপছন্দ করে। রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন আরবের বিভিন্ন গোত্রের কাছে দাওয়াহ নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন এক গোত্রপতি বলেছিল – তুমি তো ভালো কথাই বলছো, কিন্তু এই কথাগুলো এমন যা রাজা-বাদশাহদের আতঙ্কিত করে।
.
কেন? উত্তরটা সহজ। তাওহিদ।
.
বড় অদ্ভুত ব্যাপার এই তাওহিদ। আল্লাহ রাব্বুল ইযযাহ ছাড়া আর কোন কর্তৃপক্ষের আনুগত্য করার সুযোগ নেই। আর কাউকে রব হিসেবে মানার সুযোগ নেই। আর কোন ইলাহ – এর অস্তিত্ব মেনে নেয়ার সুযোগ নেই। আর কোন বিধানদাতাকে মানার সুযোগ নেই। এই তাওহিদে আপোষের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। এক দিন কেন, এক মূহুর্তের জন্য এতে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। এ এমন এক আদর্শ যা কখনো পরিবর্তিত হতে পারে না। কখনো অবদমিত, নিয়ন্ত্রিত হতে পারে না। ইসলাম নিয়ন্ত্রন করে, নিয়ন্ত্রিত হয় না।
.
দুঃখজনক বিষয়টা আজ উম্মাহর কান্ডারি, নবীর ওয়ারিশ হবার দাবিদারেরা নবীর ﷺ উদাহরনের অনুসরণ করে না। ইসলামের দা’ঈ বলে নিজেদের প্রচার করা লোকেরা ইসলামের মূল স্তম্ভকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না। নানা অজুহাতে, নানা দোহাই দিয়ে, সুন্দর কিন্তু ফেনার মতো ওজনহীন কথার জাল বুনে তারা তাওহিদের সাথে আপোষ করে। দুনিয়ার জন্য তারা দ্বীনকে বিক্রি করে। কিছুটা গ্রহন করে কিছুটা ছেড়ে দেয়।
.
যা বলছিলাম। তাওহিদের আদর্শ শাসকদের, ক্ষমতাসীনদের, ফিরআউনদের সবসময়ই আতঙ্কিত করেছে। আর তারা নানা ভাবে চেষ্টা করেছে এই আদর্শে ভেজাল মেশাতে। কারন এই অতি সাধারন লোকজনকে এই আদর্শ অতি অসাধারন বানিয়ে দেয়। এই গল্প পুরনো। যুগে যুগে এই কাজের জন্য তারা কিছু পায়ের নিচে ধুলো চেটে নেওয়ার মতো গাদ্দারদের খুজে নেয়। এই গল্প হাজার বছরের পুরনো।
.
সমস্যা হল এই পুরনো গল্প থেকে মানুষ শিক্ষা নেয় না। সতর্ক হয়। হাজার বছরের পুরনো এই ফিতনার বর্তমান রূপ সম্পর্কে জানা এবং জানানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সময়ে ফিরআউনের পদলেহনকরা, দ্বীন বেচে দিন কাটিয়ে দেওয়া এই দলটা হল মডারেট মুসলিম। এরা কাফিরদের রাহে দ্বীন পালন করে। আর এদের দ্বীন ও কাফিরদেরই বানানো, যার নাম হল সিভিল ডেমোক্রেটিক “ইসলাম”। এই মডারেট ‘মুসলিম’-দের সমর্থন ও অর্থায়ন করা, এই সিভিল ডেমোক্র্যাটিক “ইসলাম” প্রচার করাকে কাফিররা নিজেদের পলিসি হিসেবে গ্রহন করেছে। আর দ্বীন বেচে দুনিয়া কেনা মানুষেরা তাদের এই পলিসির বাস্তবায়ন করছে।
.
এই দালালেরা আপনার অচেনা কোন জগতের না। তারা আপনার আশেপাশেই আছে। হয়তো এরই মধ্যে আপনি তাদের কথা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। তাদের অনুসরণও শুরু করেছেন। কিন্তু নিশ্চিত জানুন এ এমন এক পথ যা তৈরি হয়েছে আল্লাহ রাব্বুল ইযযাহর শত্রুদের মাধ্যমে, তাওহিদের আদর্শের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। একজন মডারেট ইসলামের প্রচারক কাফিরদের আদর্শিক সেনা ছাড়া আর কিছুই না।
.
উম্মাহর শরীরে ক্যান্সার, কাফিরদের রাহে মুসলিম এই দল সম্পর্কে জানার জন্য ভিডিওঃ
.
মডারেট মুসলিমদের বৈশিষ্ট্যঃ https://youtu.be/W2-JOG0gnMs
.
#তাওহিদের_পতাকা
#দিন_যায়_দ্বীন_বেচে