হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ – একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
মুসলিম জনসাধরণের ঈমান-আকীদা, তাহযীব-তামাদ্দুন হেফাজতের উদ্দেশ্য নিয়ে
এদেশের সম্মানিত উলামায়ে কেরাম নিজেদের উপর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ)
কর্তৃক অর্পিত ঈমানী দায়িত্ব পূরণের লক্ষ্যে ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারী এশিয়ার
বিখ্যাত ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান “জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম
হাটহাজারী” এর সম্মানিত পরিচালক সর্বজন শ্রদ্ধেয় বুজুর্গ, আলেমে দ্বীন হযরত
মাদানী রহ.-এর সুযোগ্য খলীফা শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব
(দামাত বারাকাতুহুম) এর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ গঠন করেন।
দেশের মুসলিম জনসাধারণের মাঝে ইসলামের শিক্ষা-সংস্কৃতি ইত্যাদি সংরক্ষণ ও
চর্চার মহান মাকসাদ নিয়ে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে ‘হেফাজতে ইসলাম
বাংলাদেশ’ এর পথচলা শুরু হয়। ধর্মীয় আন্তরিকতা এবং দেশ ও জাতির প্রতি পূর্ণ
দায়িত্ববোধ সর্বোপরি নিষ্কলুষ দেশপ্রেমের সুমহান প্রত্যয় ঘোষণার মধ্য দিয়ে
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ আজ বর্তমান পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। হেফাজতে ইসলাম
বাংলাদেশ বিশ্বাস করে- ইসলামের নির্ভেজাল মৌলনীতি, আক্বীদা-বিশ্বাস, শিরক,
বিদআত ও কুফরী তৎপরতামুক্ত মুসলিম সমাজ গঠন ও সংরক্ষণে যেমন তার অপরিহার্য
দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি যে কোন রাষ্ট্রীয় সংকটে ও প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ
পরামর্শ ও সহযোগিতা দানের মধ্য দিয়ে এই সংগঠন তার গুরুদায়িত্ব পালন করে
যাবে। বিশেষ করে ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী যে কোন অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার
কণ্ঠ উপস্থাপন ও সার্বিক প্রতিবাদ প্রতিরোধের ধারা এই সংগঠন যে কোন মূল্যে
অব্যাহত রাখবে।
আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, বর্তমানে বাংলাদেশে ইসলাম বিরোধী
আক্বীদা-বিশ্বাস, শিক্ষা-সংস্কৃতি প্রচারের মধ্য দিয়ে মুসলমানদের
স্বাতন্ত্র্য, মূল্যবোধ, স্বকীয়তার ঐতিহ্যগত অনুভূতি ধ্বংস করার লক্ষ্যে
আন্তর্জাতিক ও জাতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সমূহ ষড়যন্ত্র চলছে। বিশেষ করে পঞ্চদশ
সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংবিধান থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ
মুসলমানের প্রাণের স্পন্দন “সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও
বিশ্বাস” তুলে দিয়ে রাষ্ট্রীয় অন্যতম মূলনীতি হিসেবে কুফরী মতবাদ
‘ধর্মনিরপেক্ষতা’কে প্রতিস্থাপন করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটি তথাকথিত
ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করার ঘৃণ্য চক্রান্ত শুরু হয়। শুধু তাই নয়,
ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নামে ইসলাম বিদ্বেষীরা প্রশাসনের পূর্ণ
সহযোগিতায় ও ছত্রছায়ায় দেশে কুফরী মতবাদ, একমূখী শিক্ষার নামে ধর্মহীন
শিক্ষানীতি, কওমী মাদরাসার বিরুদ্ধে অপপ্রচার, কুরআন বিরোধী নারী নীতিমালা
ও সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার অপতৎপরতা পূর্ণোদ্যমে শুরু করা হয়। এতে করে এ
দেশের মুসলমান বিশেষত মুসলিম শিশু-কিশোর ও যুবক শ্রেণী চরম ধর্মীয় ও নৈতিক
অধঃপতনের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। উল্লেখ্য যে, উক্ত ধর্ম নিরপেক্ষতার
দোহাই দিয়ে এদেশের উচ্চ আদালতের একজন বিচারক একজন বিচারপ্রার্থীর টুপি খুলে
ফেলতে বাধ্য করেন। সর্বোপরি নারীর ক্ষমতায়নের ধোঁয়ায় আমাদের মুসলিম
নারীদেরকে বেহায়াপনা-বেলেল্লাপনার এক মহোৎসবে মাতাল করে পশ্চিমা সংস্কৃতির
ছোবলে আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে দেশে ইভটিজিং ও নারী নির্যাতনের প্রবণতা
আশংকাজনক হারে বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করেছে। এসব সর্বাগ্রাসী আগ্রাসনের মহাসাগর
থেকে নিমজ্জিত মানবতাকে উত্তোলনের জন্য আপনাদের সকলের প্রতি হেফাজতের
পতাকায় সমবেত হওয়ার আকুল আবেদন জানাচ্ছি। আল্লাহ তা’আলাই একমাত্র
সাহায্যকারী।
মূলনীতি:
আল্লাহ তা’আলার একত্ববাদ
খতবে নবুয়াতের প্রতি পূর্ণ আস্থা
কুরআন ও সুন্নাহ, খোলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) গণের অনুসরণে
তথা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ এর নির্ধারিত পথ অনুসরণ
আমর বিল মা’রুফ নাহী আনিল মুনকারের মাধ্যমে ইসলামী সমাজ বিনির্মাণে তৎপরতা
সৃষ্টি, সমাজ গঠন ও সংরক্ষণ এবং শিরক, বিদআত ও কুফরী তৎপরতার বিরুদ্ধে
সংশোধন ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
আত্মশুদ্ধিমূলক মুসলিম ভ্রাতৃত্বই হেফাজতের অন্যতম মূলনীতি।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
মহান আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জন।
কুরআন-হাদীস অনুসারে জীবন যাপনের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা।
আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে একটি আদর্শ ইসলামী সমাজ বিনির্মাণ।
কর্মসূচি:
১. দাওয়াত ও তাবলীগ: মুসলিম সমাজে ইসলাম তথা কুরআন-হাদীস ও উলামায়ে
কেরামের ঐতিহ্যবাহী অনুঃসৃত পথে নির্ভেজাল ইসলাম চর্চার পথে দা’ওয়াতী
কার্যক্রম পরিচালনা।
২. আত্মশুদ্ধি বা তাযকিয়ায়ে নফ্স: ইসলামী আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে
আত্মশুদ্ধি বা তাযকিয়ায়ে নফ্সের শর্ত পূরণে কার্যক্রম গ্রহণ।
৩. খিদমাতে খালক্ বা আল্লাহর সৃষ্টির সেবা: সমাজে পরার্থে আত্মত্যাগের
মহান রীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং মানবতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে
কার্যক্রম পরিচালনা করা।
৪. ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন চর্চা: সুস্থ সমাজ বিনির্মাণে প্রতিটি সমাজ
সদস্যের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিবেক সৃষ্টি করতঃ চর্চার রীতি প্রতিষ্ঠার
কার্যক্রম পরিচালনা করা।
৫. আমর বিল মা’রুফ ওয়া নাহী আনিল মুনকার: সৎকাজে আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ
একটি আদর্শ সমাজ ব্যবস্থার পূর্বশর্ত। পবিত্র কুরআন নির্দেশিত এই দায়িত্ব
বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনা করা।
কার্যক্রম:
১. দা’ওয়াত: ব্যক্তিগত দাওয়াত, লিফলেট-ইস্তিহার বিতরণ, চিঠিপত্র লেখা,
মাহফিল-সম্মেলন ও সেমিনারের আয়োজন, বই-পুস্তক, পত্রিকা ও সাময়িকী প্রকাশ,
বক্তৃতা ও লেখনী প্রকাশ।
২. সংগঠন:
* কেন্দ্রীয় পরিষদ
* জেলা ও মহানগর পরিষদ
* উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ।
পরিষদের ধরণ:
সভাপতি ১ জন, সহ-সভাপতি অনুর্ধ ১০ জন, সাধারণ সম্পাদক ১ জন, যুগ্ম সাধারণ
সম্পাদক ৩ জন, সহ-সাধারণ সম্পাদক ১০ জন, অর্থ সম্পাদক ১ জন, সহ অর্থ
সম্পাদক ৩ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক ১ জন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ৫ জন, প্রচার
সম্পাদক ১ জন, সহ প্রচার সম্পাদক ৫ জন, দপ্তর সম্পাদক ১ জন, সহ দপ্তর
সম্পাদক ৩ জন, সাহিত্য সম্পাদক ১ জন, সহ সাহিত্য সম্পাদক ৩ জন, সমাজকল্যাণ
সম্পাদক ১ জন, সহ সমাজকল্যাণ সম্পাদক ৩ জন, সম্মানিত সদস্য ১৫ জন।
৩. আন্দোলন : শিরক ও বিদআতমুক্ত সমাজ গঠনে, ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ
প্রতিরোধে, মুসলমানের বিপক্ষে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রোধে,
স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে, সামাজিক নির্যাতন, সুদ-ঘুষ ও যৌতুক
প্রতিরোধে জনমত সৃষ্টির মাধ্যমে আন্দোলন গড়ে তোলা।
—————————————————————————————————
তথ্যগুলো সংগঠনটির অফিসিয়াল ব্লগস্পট সাইট থেকে নেয়া হয়েছে।
http://www.hefazat-e-islambd.blogspot.com/
অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ
https://www.facebook.com/hefazateislambd/info
Source :: collected from
https://skmahdi.wordpress.com/2013/04/04/হেফাজতে-ইসলাম-বাংলাদেশ-এ/