ইউটিউব লিঙ্ক- https://youtu.be/0deSD32sNFQ
ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প, “দা ডোনাল্ড”। বিলিয়নার রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী, রিয়েলিটি টিভি স্টার, ইসলামবিদ্বেষী, বর্ণবাদী, লম্পট, কামুক, রূঢ়, পুঁজিবাদী, বস্তুবাদী, ভোগবাদী, আত্মম্ভরী ট্রাম্প, নানা গুনে গুণান্বিত এই ট্রাম্প হল ৪৫ তম প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট। ট্রাম্পের বিজয় অনেকেই মেনে নিতে না পারলেও বাস্তবতা হলো এটাই যে গণতান্ত্রিক ভাবেই ট্রাম্প অ্যামেরিকার ক্ষমতায় এসেছে। ঠিক যেভাবে গণতান্ত্রিক ভাবে অ্যাডলফ হিটলার ক্ষমতায় এসেছিল। ঠিক যেভাবে গণতান্ত্রিক ভাবে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে মারি লা পেনের ন্যাশনাল ফ্রন্ট ফ্রান্সের ক্ষমতায় আসবে।
.
উদারনৈতিক গণতন্ত্রের ধর্মে বিশ্বাসী অনেকেই ট্রাম্পের এ বিজয়কে ধর্মের উপর আঘাত হিসেবে দেখছেন। কিন্তু কাঠামোগতভাবেই গণতন্ত্রগুলো ট্রাম্পদের জন্ম দিয়ে যাবে, ট্রাম্প-বুশদের শাসন ক্ষমতায় বসাবে – এটাই স্বাভাবিক। ইন ফ্যাক্ট হাজার হাজার বছর আগেই শাসন পশ্চিমা চিন্তার বুনিয়াদী স্তম্ভের একজন, প্লেইটো তার Republic এর একটি জায়গাতে সক্রেটিসের মুখে বলেছে – সব রাষ্ট্রব্যবস্থার মাঝে গণতন্ত্রেরই একনায়কতন্ত্র জন্ম দেবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। স্বৈরতন্ত্র প্রকৃতিগতভাবেই গণতন্ত্র থেকে উৎসারিত হয়।
.
ভুল বুঝবেন না। আমি বলছি না ট্রাম্প একজন স্বৈরশাসক। এটা ইতিমধ্যেই পরিষ্কার যে অ্যামেরিকার জনগন বুঝেশুনে, হিসেবনিকেশ করে, ট্রাম্পের পলিসিগুলোর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে এ পলিসিগুলো বাস্তবায়নের জন্যই তাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। সুতরাং ট্রাম্পের হাতে যে রক্ত লেগে থাকবে সেটার দায়ভার একাকী ট্রাম্পের উপর পড়বে না, অ্যামেরিকার জনগণের উপরও পড়বে। তবে যে বিষয়টা ইন্টারেস্টিং তা হল, যে উদারনৈতিক মূল্যবোধের পতাকা উড়িয়ে পশ্চিমা বিশ্ব মুসলিম বিশ্বকে মানবতা, সভ্যতা, ভব্যতা ইত্যাদি শেখানো চেষ্টা করে – ট্রাম্পের অধিকাংশ নীতি সেই উদারনৈতিকতার সাথে সাংঘর্ষিক।
.
অর্থাৎ পশ্চিমা বিশ্ব মুখে উদারনৈতিকতার কথা বললেও, উদারনৈতিকতার ক্যান্সার মুসলিম ভূখন্ডগুলোতে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য জুলহাসদের পেছনে মিলিয়ন ডলার খরচ করলেও, তারা নিজেরা এই উদারনৈতিকতা থেকে সরে আসছে। অন্যদিকে লিবারেলরা এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে পারছে না তাই জনগণ যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, গণতন্ত্র তার স্বাভাবিক নিয়মে যে ফলাফল দিচ্ছে সেটা তারা আর মেনে নিতে পারছে না। গণতন্ত্র মানে সংখ্যাগরিষ্ঠের খেয়াল খুশির অনুসরণ। সংখ্যাগরিষ্ঠের খেয়ালখুশি যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সঠিক সিদ্ধান্ত দেয় না- সেটা সম্ভবত এখন তারা বুঝতে পারছে।
.
দুঃখজনক বিষয় হল যতোই পশ্চিমা উদারনৈতিক গণতন্ত্র সার্বিক ভাবে,এবং উদারনৈতিকতা ও গণতন্ত্র আলাদা আলাদা ভাবে পশ্চিমে গ্রহনযোগ্যতা হারাচ্ছে, আমরা মুসলিমরা ততোই এই ফুটো নৌকায় উঠার জন্য পাগলপারা হয়ে যাচ্ছি। কাফিরদের তৈরি যে সিস্টেম কাফিরদের জন্যই আর কাজ করছে না, আমরা মুসলিমরা মনে করছি তা আমাদের জন্য কাজ করবে। শুধু তাই না আমাদের মধ্যে আমরা এমন দল দেখছি, এমনকি আলিমদেরও দেখছি যারা বলছেন তারা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করবেন এই গণতন্ত্র দিয়ে! কি বিচিত্র বিপন্ন বিস্ময়!
.
সারা দুনিয়াজুড়ে মুসলিমরা আক্রমনের সম্মুখীন। যেখানে তারা সামরিক ভাবে আক্রমনের মুখোমুখি না সেখানে তারা আদর্শিক আক্রমনের সম্মুখীন, সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের সম্মুখীন। আমাদের মতন যেসব ভূখন্ড এখনো সরাসরি কাফিরদের বুলেট-বোমার দ্বারা আক্রান্ত নয়, তারাও আক্রান্ত কাফিরদের মদদপুষ্ট দালালদের ইসলামবিদ্বেষী আক্রমনের। আর যেখানে মুসলিমরা সামরিক ভাবে আক্রান্ত সে জায়গাগুলোর নাম উল্লেখ করতে গেলেই এ লেখা অনেক বড় হয়ে যাবে।
.
এমন পরিস্থিতিতে অবশ্যই আমাদের সবার চিন্তা করা আবশ্যক ঠিক কিভাবে এই অবস্থা থেকে মুসলিম উম্মাহর উত্তরণ ঘটতে পারে। এবং ঠিক কিভাবে আমরা এই উত্তরণের পথে ভূমিকা রাখতে পারি। কিন্তু আমাদের সমাজে এখনও আমরা পশ্চিমা ব্যর্থ গণতন্ত্রের অন্ধ অনুসরণের প্রেস্ক্রিপশান হাতে নিয়ে বসে আছি। যখন পরিষ্কার ভাবেই এ ব্যর্থ সিস্টেম আমাদের সমাধান দিতে সক্ষম না।
.
গণতন্ত্রের ব্যাপারে খুব প্রচলিত একটা কথা হল – গণতন্ত্র হল সর্বনিকৃষ্ট শাসন ব্যবস্থা কিন্তু এর কোন ভালো বিকল্প আমাদের হাতে নেই। কাফিরদের ক্ষেত্রে কথাটা সত্য হলেও হতে পারে। কিন্তু মুসলিমদের ক্ষেত্রে কি একথাটা সত্য? আমরা সবসময় ইসলামের গৌরবজ্জল ইতিহাস, হাজার বছরের মুসলিম শাসনের স্বর্ণযুগের কথা বলি। কিন্তু আবার আমরাই দিন শেষে বলি উম্মাহর উত্তরনের পথ হল কাফিরদের অনুসরণ করা গণতন্ত্রের অন্ধকূপে ঝাপ দেওয়া। আমরা কি নিজেদের প্রশ্ন করি মুসলিমদের হাজার বছরের সাম্রাজ্য কি গণতন্ত্রের আদর্শ অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে?
.
আমাদের উত্তরনের পথ কি হবে এ নিয়ে কি ইসলামের কিছুই বলার নেই? অথচ আমরা দাবি করছি ইসলাম পূর্ণাংগ জীবনবিধান! নাকি ইসলামের যা বলার আছে আমরা তা মানতে চাই না, আর তাই আমরা ইচ্ছেমতো ইসলামের দেখানো সমাধান বাদ দিয়ে মনগড়া আদর্শ আর নানা তন্ত্রমন্ত্রের অনুসরণ করি?
.
ইমাম মালিক ইবন আনাসা রাহিমাহুল্লাহ বলেছিলেন -
.
উম্মাহর শেষ অংশ ততোক্ষণ সফল হবে না যতোক্ষন তারা ঐ পথ ও পন্থার অনুসরণ করছে যার উম্মাহর প্রথম অংশকে সফল করেছিল।
.
আবার একটু চিন্তা করুন। উম্মাহর সমাধান কিসে নিহিত?
.
#KnowYourDeen
#LiveYourDeen
#Millatu_Ibrahim