তারবীয়া-তাসফিয়া পদ্ধতিঃ (প্রশিক্ষণ ও আত্মশুদ্ধি” পদ্ধতি)
.
বিভিন্ন পীর সাহেবগণ, তাবলীগ-জামায়াত ও বেশিরভাগ আহলে হাদিস / সালাফীরা এ পদ্ধতির অনুসারী।
.
এটি শাইখ আলবানীর (রঃ)-ও মতামত। তার ছাত্রবৃন্দ ও ভক্ত-অনুসারীরাও এই পদ্ধতির ঘোর সমর্থক।
.
এই পদ্ধতির অনুসারীদের বহুল পরিচিত কথাগুলি হচ্ছেঃ
.
১। “আগে নিজের দেহে ইসলাম কায়েম করুন, তখন আপনা-আপনি দেশে ইসলাম কায়েম হয়ে যাবে”। কিংবা
.
২। “যারা সালাতেই সুন্নাহর অনুসরণ না, সে আবার কিসের ইসলাম কায়েম করবে?”
.
অর্থাৎ যারা সালাতে রফে ইয়াদাইন ও জোরে আমীন ইত্যাদি সুন্নাহ পালন করে না, তারা আবার কি ইসলাম কায়েম করবে?”।
.
উল্লেখ্যঃ তারা অন্যান্য ব্যাপারে ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) ও ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রঃ) এর মতামত উল্লেখ করলেও নামাজের এসব সুন্নাহর ব্যাপারে তাদের মতামত উল্লেখ করতে কিংবা অনুসরণ করতে ভুলে যান। আর রফে ইয়াদাইন, জোরে আমীন বলাকে ঈমান ও ইসলামের মানদণ্ড মনে করতে শুরু করেন।
.
এসব সুন্নাহর ব্যাপারে ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) বলেছেনঃ “এ বিষয়ে আমাদের নীতি, আর এটাই বিশুদ্ধতম নীতি, এই যে, ইবাদাতের পদ্ধতির বিষয়ে (যেসব ক্ষেত্রে মতভেদ রয়েছে তাতে) যে পদ্ধতি সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য আছার রয়েছে তা মাকরূহ হবে না; বরং তা হবে শরীয়াতসম্মত। সালাতুল খওফের বিভিন্ন পদ্ধতি, আযানের দুই নিয়ম : তারজীযুক্ত বা তারজীবিহীন, ইকামতের দুই নিয়ম : বাক্যগুলো দুইবার করে বলা কিংবা একবার করে, তাশাহহুদ, ছানা, আউযু এর বিভিন্ন পাঠ, কুরআনের বিভিন্ন কিরাআত, এই সবগুলো এই নীতিরই অন-র্ভূক্ত। এভাবে ঈদের নামাযের অতিরিক্ত তাকবীর-সংখ্যা (ছয় তাকবীর বা বারো তাকবীর), জানাযার নামাযের বিভিন্ন নিয়ম, সাহু সিজদার বিভিন্ন নিয়ম, কুনুত পাঠ, রুকুর পরে বা পূর্বে, রাব্বানালাকাল হামদ, ওয়াসহ অথবা ওয়া ছাড়া, এই সবগুলোই শরীয়াতসম্মত। কোনো পদ্ধতি কখনো উত্তম হতে পারে কিন্তু অন্যটি কখনো মাকরূহ নয়। (মাজমূউল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ২৪/২৪২-২৪৩ আরো দেখুন : আল-ফাতাওয়া আল কুবরা ১/১৪০)
.
ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) যাদুল মাআদ গ্রন্থে' ফজরের সালাতে কুনুত পড়া প্রসঙ্গে বলেছেন : “এটা ওইসব মতভেদের অন-র্ভূক্ত যাতে কোনো পক্ষই নিন্দা ও ভর্ৎসনার পাত্র নন। এটা ঠিক তেমনই যেমন সালাতে রাফয়ে ইয়াদাইন করা বা না করা, তদ্রূপ আত্তাহিয়্যাতুর বিভিন্ন পাঠ, আযান-ইকামাতের বিভিন্ন ধরন, হজ্বের বিভিন্ন প্রকার - ইফরাদ, কিরান, তামাত্তু বিষয়ে মতভেদের মতোই”।
.
৩। এই মতের অনুসারীদের আরেকটি কথা হচ্ছেঃ “সারা বাংলাদেশে দ্বীন কায়েম হলেও আমার কোন লাভ হবে না যদি আমার শরীরে দ্বীন কায়েম না হয়, আমার পরিবারে দ্বীন কায়েম না হয়”।
.
উল্লেখ্যঃ পরিবারে দ্বীন কায়েমের যথাযথ চেষ্টা করার পর,তারা ঈমান না আনলে ঐ মুসলিম দায়ী হবেন না যদি তিনি করণীয় কাজগুলি করে থাকেন। অনেক নবী তাঁদের স্ত্রী, সন্তান কিংবা কোন কোন নিকটতম আত্মীয়কেও দ্বীনে আনতে পারেন নি। হিদায়াত সম্পূর্ণ আল্লাহর হাতে।
.
আর তারা যদি এর দ্বারা এটা বুঝাতে চান যে, পরিবারের সবাই ভালোভাবে দ্বীনে আসার আগ পর্যন্ত সমাজে দ্বীনের দাওয়াত তথা দ্বীনকে বিজয়ী করার চেষ্টা করা উচিত নয়, তবে তা বাতিল। কারণ রাসুল (সাঃ) নিজে তাঁর চাচা আবু তালিব ও আরো অনেক নিকত্মায়ী ইসলাম গ্রহণ করার আগেই সমাজের লোকদেরকে ইসলামের আহবান পৌছিয়েছে এবং দ্বীনকে অন্যান্য বাতিল দ্বীনের উপর বিজয়ী করার কাজ শুরু করেছেন।
.
যাই হোক, তাদের মূলকথা হলো “আমরা মুসলিমরা যদি আমাদের নিজেদেরকে ভালো / আদর্শ মুসলিম হিসেবে গড়ে তুলি, নিজেরদের আক্বীদা-আখলাক সংশোধন করতে পারি, তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা একদিন খিলাফাহ / শাসন ক্ষমতা লাভ করবো”।
.
দলীল হিসেবে তারা সূরা নূরের ৫৫ নং আয়াত পেশ করে থাকেন যেখানে বলা হয়েছেঃ
.
“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে আর সৎ কাজ করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে খিলাফাত দান করবেন যেমন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে তিনি খিলাফাত দান করেছিলেন এবং তিনি তাদের দ্বীনকে অবশ্যই কর্তৃত্বে প্রতিষ্ঠিত করবেন যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তিনি তাদের ভয়-ভীতিপূর্ণ অবস্থাকে পরিবর্তিত করে তাদেরকে অবশ্যই নিরাপত্তা দান করবেন। তারা আমার ‘ইবাদাত করবে, কোন কিছুকে আমার শারীক করবেনা। এরপরও যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করবে তারাই বিদ্রোহী, অন্যায়কারী”। (সূরা আন্ নুর ২৪:৫৫)
.
এই আয়াতটি একটি আ’ম (সাধারণ) আয়াত যেখানে ঈমানদার ও সৎ কাজ সম্পাদন কারীদের জন্য আল্লাহর প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু কোন পদ্ধতিতে খিলাফাহ কায়েম করার চেষ্টা করতে হবে কিংবা কোন পদ্ধতিতে দ্বীন বিজয়ী হবে তা এই আয়াতে উল্লেখ হয়নি।
.
তাছাড়া সঠিকভাবে “ঈমান আনা” আর “সৎ কাজ করা” বলতে কি বুঝায়?
.
‘ঈমান আনা’ বলতে যদি শিরক মুক্ত হয়ে আল্লাহর একত্ববাদে ঈমান আনা বুঝায়, ঈমানের তথা ইসলামের সকল শর্তগুলি পূরণ করা বুঝায়, ঈমান বিনষ্টকারী কাজগুলি থেকে বেঁচে থেকে, ঈমানের উপর মৃত্যু বরণ করা বুঝায় তাহলে সেটা শুধু খিলাফত বা ইসলামী রাস্ট্রের শর্ত নয় বরং সেটা মুসলিম থাকারও শর্ত।
.
আয়াতে উল্লেখিত ‘আমালে সালিহাত’ এর ভিতর ‘জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ’ও অন্তর্ভুক্ত। হিজবুত তাহ্রীর এর নুসরাহ অণ্বেষণ করাও এর অন্তর্ভুক্ত।
.
এমনকি ‘কলমের মাধ্যমে কিংবা বক্তৃতার জিহাদ’ (ইসলামী শরীয়াত অনুযায়ী জিহাদের সংজ্ঞা ইনশাআল্লাহ পরে আসছে) ও এই আমালে সালিহাতের অন্তর্ভুক্ত হবে।
.
যদিও হারাম, শিরকের ও কুফরের ছোঁয়া থাকায় ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচনী জেতার পর সংসদ সদস্য / মন্ত্রী হয়ে, (‘নির্বাচিত আয়াতের সংকলনের’ মধ্যে হতে কর্মী/ রোকন অবস্থায় গুরুত্ব সহকারে মুখস্থ করা) সূরা মায়েদার ৪৪ আয়াতকে ভুলে গিয়ে কোরআন সুন্নাহের হুকুমের বিরুদ্ধে গিয়ে মন্ত্রনালয় পরিচালনা করে’ ইসলামকে বিজয়ী করার চেষ্টা করা ‘আমালে সালিহ’ এর অংশ হবে না। (যার বিস্তারিত আলোচনা পরে আসছে ইনশাআল্লাহ)
.
তাই এই আয়াত খিলফাহ কিংবা ইসলামী রাস্ট্রের প্রতিষ্টা পদ্ধতির ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির দিক-নির্দেশনা দেয় না। বরং এই আয়াতে আল্লাহর একটি সাধারণ ঘোষণা এবং ওয়াদা উল্লেখ করা হয়েছে।
.
কোন সালাফে সালেহীন এই আয়াতের ব্যাখ্যায় এ রকম কথা উল্লেখ করেন নি যে, “এই আয়াতের মাধ্যমে বুঝা যায় - দ্বীনকে বিজয়ী করার উপায় হচ্ছে আকীদা ও আখলাকের সংশোধন”।
.
উপরুক আয়াতের তাফসীরে ইমাম তাবারী (রঃ) বলেছেনঃ
يقول تعالى ذكره:( وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ منكم ) أيها الناس،( وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ ) يقول: وأطاعوا الله ورسوله فيما أمراه ونهياه ( لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الأرْضِ ) يقول: ليورثنهم الله أرض المشركين من العرب والعجم، فيجعلهم ملوكها وساستها
দেখা যাচ্ছে, ইমাম তাবারী (রঃ) আমালে সালেহ এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) এর যত আদেশ-নিষেধ আছে সেগুলির ক্ষেত্রে তাদের আনুগত্য করা। (তাফসীরে তাবারী ১৯/২০৮)
.
এখন জিহাদ কি আল্লাহর আদেশ নয়? রাসুলের নির্দেশ নয়?
.
যদি কখনো জিহাদ ফরজে কিফায়াও থাকে তাহলেও জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ কিংবা অন্যান্য ফরজ- ওয়াজিব এর উপর আ’মল না করে নিজেদেরকে এই আয়াতে আল্লাহর কৃত ওয়াদার হক্বদার দাবী করা যাবে না।
.
তাই জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ ব্যতীত সুধু ‘তারবিয়া-তাসফিয়া’ এর অনুসারীরা এই আয়াতের আওতায় পড়বেন না। কারণ তারা তো একটা গুরুত্বপূর্ণ ফরজ তথা আমলে সালিহ থেকে দূরে আছেন।
.
যদি কোন এলাকার মুসলমানরা ঐ এলাকায় জানাজার নামাজ ছেড়ে দেয় – যা একটি ফরজে কিফায়া, তাহলে কি তারা নিজেদেরকে এই আয়াতে করা আল্লাহর ওয়াদার হক্বদার দাবী করতে পারবে?
.
সুতরাং আল্লাহর ওয়াদার হক্বদার তারাই হবেন, যারা আল্লাহর দেয়া সকল ফরজ-ওয়াজিব পালনে তৎপর। শুধু পছন্দমতো কিছু পালন করলাম আর কিছু বাদ দিলাম, এ রকম আমলকারীরা এই ওয়াদার আওতায় পড়বে না।
.
তাই এই আয়াতের দলীল দিয়ে শুধু ঘরে বসে সারাজীবন তারবিয়া-তাসফিয়া করতে থাকলে তা এই আয়াতে উল্লেখিত ওয়াদার ভাগীদার হবেন না বরং আল্লাহর একাধিক ফরজ পালন না করার পাপে পাপী হবেন।
.
বরং জিহাদরত মুজাহিদগণ আল্লাহ্র নেয়ামতে অন্যান্য ফরজ- ওয়াজিব পালনের পাশাপাশি জিহাদের ফরজিয়াত আদায় করার কারণে এই আয়াতে আল্লাহ্র কৃত ও ইয়াদার ভাগীদার হবেন ইনশাআল্লাহ।
.
তারবিয়া কতদিন চলবে?
.
তাছাড়া কতদিন পর্যন্ত এই মনগড়া “তারবিয়া-তাসফিয়া” চলবে, কতজন মানুষের তারবিয়া-তাসফিয়া সম্পাদিত হলে তারা নিজেদেরকে নুসরাহ নেয়ার উপযোগী মনে করবেন, জিহাদ করার উপযোগী মনে করবেন - এ ব্যাপারে তারা কোন সুস্পষ্ট ধারনা দিতে পারেন না।
.
রাসুল (সাঃ) তো হাতে গুনা ১০০/১৫০ জন সাহাবী মক্কায় প্রস্তুত করে তারপর বিভিন্ন গোত্রের কাছে সাহায্য চাওয়া শুরু করেছিলেন। এই ভাইরা কত হাজার মুসলিমের তারবিয়া-তাসফিয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নিবেন, তা তারা উল্লেখ করতে পারেন না।
.
নবী (সাঃ) মক্কায় সাহাবী (রাঃ)-দের যে প্রশিক্ষণ ও শুদ্ধি চালিয়েছিলেন, তা এক প্রজন্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। সেই প্রজন্মকেই তিনি পরবর্তীতে হিজরাত করতে নির্দেশ দেন, সে প্রজন্মকেই জিহাদে ঝাপিয়ে পড়তে বলেন।
.
কিন্তু আমাদের এই ভাইরা Specifically কত প্রজন্ম পরে ইসলামী খিলাফাহ এর জন্য কোন পদক্ষেপ নিবেন - তা তারা জানাতে পারেন না।
.
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
মুসলমানরা (ইসলামী শরীয়াত) কিভাবে আবার বিজয়ী হবে এ প্রশ্নের জবাবে শাইখ আলবানী (রঃ) বলেনঃ
As for the first, then it is that you must incorporate and return into the minds of the Muslims, the Religion of Islaam that is purified from all that has entered into it, which was not part of it on the day when Allaah, the Mighty and Majestic, revealed His saying:
"This day I have completed your religion for you, and I have perfected My favor upon you and I am pleased with Islaam as a Religion for you."[Surah Al- Maa’idah: 3]
And returning to this matter, in this day – as it was during the first times – requires intense and extreme efforts on the part of the Muslim scholars in the different regions of the world.
The second thing is that: This persistent and serious work (to rectify the ummah) must be joined with this purified knowledge. So the day that the Muslims return to the understanding of their Religion, as the Companions of the Messenger of Allaah, sallAllaahu' alayhiwa sallam, understood it, and they then work hard to implement this pure Islaam, based on a knowledgeable and correct manner in every aspect of life, then it is on that day that the Muslims will celebrate the victory of Allaah [Al-Asaalah, Issue #11]
সুত্রঃ ahlalhadeeth.files.wordpress.com/20...
তাহলে দেখা যাচ্ছে, শাইখ আলবানীর মত হচ্ছেঃ প্রথমে ইসলামের মধ্যে প্রবিষ্ট শিরক, বিদয়াত ও অন্যান্য নতুন বিষয় বাদ দেয়া, ইলমকে পরিশুদ্ধ করে সলফে সালেহীনদের মতো করে ইসলামকে বুঝবে, তারপর যখন তারা একটি সঠিক পদ্ধতিতে জীবনের সকল ক্ষেত্রে দ্বীন মানতে চেষ্টা করবে, তখন ইসলাম পুনরায় বিজয়ী হবে। আল্লাহর সাহায্য তখন তাদের কাছে আসবে।
এখন কথা হচ্ছে সালাফে সালেহীনদের মতো করে দ্বীন বুঝতে ও মানতে হবে সেটা MUST. এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু পরবর্তী পদক্ষেপ যদি এটা হয় যে, ‘জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলাম পালন করার চেষ্টা করা’ – সেটা আমাদেরকে কোন সুস্পষ্ট পদ্ধতি বলে দেয় না। এছাড়া এই ব্যাপারে মতামত দিতে গিয়ে সনদের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ শায়েখ আলবানী (রঃ) নিজে কোন সনদ তথা দলীল-প্রমাণ ছাড়া কথা বলেছেন।
ইসলামে কোন বিধান নাজিল হওয়ার পর সাহাবা (রাঃ)-গন ধীরে ধীরে তা পালন করছেন, এমন নজির পাওয়া যাবে না। বরং সাথে সাথে তারা তা পালন করেছেন। তাই, আগে সবার আমল-আক্বীদা (সেই আক্বিদার আবার নিজস্ব একটা ধারনা বিদ্যমান) ঠিক করতে হবে তারপর ইসলামী রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা, জিহাদ ইত্যাদি চিন্তা করা যাবে – এ রকম চিন্তা করার সুযোগ নেই। এর একটি বিপদজনক দিক রয়েছে যা Inactivity এর দিকে নিয়ে যায়। কারণ এতে কখন ঈমান পর্যাপ্ত হয়েছে, কি কি কাজ করতে পারলে ইসলামী রাস্ট্র প্রতিষ্টার চেষ্টা করার মতো যথেষ্ট ঈমান হয়েছে, তা defined করা থাকে না।
তাছাড়া সাহাবাদের (রাঃ) জীবনে ঈমান আনার পর ‘ঈমানের যথেষ্ট উন্নতি’ করার আগ পর্যন্ত জিহাদ কিংবা ইসলামী খিলাফাত প্রতিষ্ঠার কাজে অংশ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার কোন প্রমাণ নেই। এমন কোন দলীল পাওয়া যায় না যে, যুগ যুগ ধরে মূর্তি পূজা করে আসা ইসলাম গ্রহণকারী কোন সাহাবীকে রাসুল (সাঃ) আগে বছর দুই / তিনেক উমর (রাঃ) কিংবা আলী (রাঃ) এর মতো বিশেষজ্ঞ কোন সাহাবীর তত্ত্বাবধানে ‘আক্বীদা ও সঠিক ইলম’ অর্জনের জন্য বসিয়ে রেখেছেন। বরং অন্যান্য কাজের সাথে সাথে আক্বীদা ও আমল সংশোধনের কাজ চলতে থাকে।
আর ঈমান আনলে ও সৎ কাজ করলে একসময় এমনি এমনি মদীনা রাস্ট্রের মতো আমাদেরও একটি ইসলামী রাস্ট্র হয়ে যাবে ধারনা করা অমূলক। কারণ আয়েশা (রাঃ) এর বর্ণিত হাদিসে এসেছে
“আল্লাহ বুয়াসের দিন ঘটিয়েছিলেন আল্লাহর রাসুলকে (রাসুল হিসেবে) পাঠানোর পূর্বেই যাতে তিনি যখন মদীনায় পৌছেন তখন মদীনাবাসী ছিলো বিভক্ত, তাদের নেতৃত্ব নিহত ও আহত হয়ে গিয়েছিলো। তাই আল্লাহ তার রাসুলের আগেই সেই দিন সংগঠন করেছিলেন যাতে তারা (আনসারগণ) ইসলাম গ্রহন করে”। (সহীহ বুখারী ৫ম খন্ড, বাব ৫৮, হাদিস নং – ১২১, ১৮৬, ২৬৭)
তাহলে দেখা যাচ্ছে, রাসুল (সাঃ) নবী হওয়ার আগেই, সাহাবি (রাঃ)-গণ ইসলাম গ্রহন করার আগেই আল্লাহ বিশেষভাবে মদীনাকে প্রস্তুত করছিলেন ইসলামের জন্য, প্রথম খিলাফাতের জন্য। তাই আল্লাহ তাঁর নবীকে দেয়া বিশেষ উপহার আমরাও পেয়ে যাবো, সেটার আশায় নিজেরা কোন সুস্পষ্ট কর্মপন্থা গ্রহণ না করে ঘরে বসে থাকা উচিত হবে না।
ব্যক্তিগত আমলের পরিপূর্ণতা খিলাফাহ কিংবা ইসলামী রাস্ট্রের শর্ত নয়
প্রথমত আল্লাহ কিংবা তারঁ রাসুল (সাঃ) এ রকম কোন শর্ত আরোপ করেন নি। সকল সাহাবা (রাঃ) যে একই রকম আমল করতেন, তাও নয়। এমনকি কোন কোন সাহাবী (রাঃ) ব্যক্তিগত ভাবে কদাচিৎ কোন হারামেও লিপ্ত হয়েছেন অতঃপর তওবা করেছেন, আল্লাহ তাদেরকে মাফ করে দিয়েছেন। যেমনঃ যিনার পর স্বীকৃতি ও রজমের ঘটনা। কোন সাহাবী (রাঃ) মদ পান ছাড়তে অনেক সময় নিয়েছিলেন, তার উপর নিয়মিত হদ কায়েম হতো। এক সাহাবি তাকে অভিসম্পাত করলে হলে রাসুল (সাঃ) বলেছিলেন, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) কে ভালোবাসে।
হুনায়ুনের যুদ্ধে কতিপয় নতুন ইসলাম গ্রহণকারী সাহাবী (রাঃ) জাহেলী যুগের ন্যায় ‘যাতে-আনওয়াত’ নির্দিষ্ট করতে অনুরোধ করেছিলেন যা করলে শিরক হতো। রাসুল (সাঃ) বলেছিলেন, তোমরা বনী ইসরাইলের ‘বাছুর পূজার’ মতো একটি জিনিস দাবী করলে।
সুতরাং সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তির ব্যক্তিগত আমলের পরিপূর্ণতা যথা নফল ইবাদাত কিংবা হারাম থেকে মুক্ত থাকা ইসলামী রাষ্ট্র / খিলাফাহ এর শর্ত নয়। তবে ইসলামী রাস্ট্র / খিলাফাহ প্রতিষ্টাকামী পুরো জামায়াত যদি সাংগঠনিক/ দলীয় ভাবে হারামে লিপ্ত থাকে, তাহলে সেটা গ্রহনযোগ্য নয়। আর শিরক, কুফরে লিপ্ত থাকার তো প্রশ্নই উঠে না।
তাই শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আক্বীদা ও আমলের পরিশুদ্ধি তথা তারবীয়া-তাসফিয়া ইসলামকে বিজয়ী করার কোন পদ্ধতি হতে পারে না। বরং সেটা অন্য যে কোন পদ্ধতির (যেমনঃ গণতান্ত্রিক পদ্ধতি (!!), নুসরত অন্বেষনের পদ্ধতি, তাওহীদ ওয়াল জিহাদের মানহাজ) একটি অংশ হতে পারে, যা অন্যান্য অংশের সাথে চলতে থাকবে। অর্থাৎ এর পাশাপাশি দাওয়াত, নুসরাহ লাভের চেষ্টা, জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ চলতে পারে।
তাছাড়া জিহাদের মাঠ হচ্ছে তারবিয়া-তাসফিয়ার সবচেয়ে উত্তম জায়গা। শত্রু বোমার সামনে, কানের পাশ দিয়ে গুলি গেলে আল্লাহর উপর ভরসা, আল্লাহর আসমা ওয়া সিফাতের ব্যাপারে যতটুকু গভীর জ্ঞান হবে, খানকায় বসে আক্বীদা আত্ তাহাবীর শরাহ শতবার খতম করলেও ততটুকু ‘সহীহ আক্বীদা’ হাসিল হবে না। আর দ্বীনকে বিজয়ী করার প্রচেষ্টায় নিয়োজিত থাকলে কিংবা জিহাদের ময়দানে গেলে ইলম অর্জন তো থেমে থাকবে না ইনশাআল্লাহ।
‘আল্লাহর উপর ঈমান আনা’ বলতে ‘শিরক, কুফর, নিফাকমুক্ত হয়ে তাগুতকে পরিত্যাগ করে ঈমান আনা’ বুঝায়
কিন্তু বাস্তবে এদেশে তারবিয়া-তাসফিয়া পদ্ধতির অনুসারীদেরকে দেখা যায়, তাগুতের প্রতি এক ধরনের নমনীয়তা বরং ইনিয়ে-বিনিয়ে তাগুত শাসকদেরকে মুসলমান প্রমাণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্যঃ যে শাইখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব (রঃ) এবং তার প্রতিষ্টিত নজদী দাওয়াহ এর অনুসারী আলেমদেরকে অনুসরণের দাবী তারা করেন, সেই শাইখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব (রঃ) ‘যা জানা ওয়াজিব’ রিসালায় তাগুতের প্রকারভেদ উল্লেখ করেছেনঃ
“দ্বিতীয়. আল্লাহর বিধান পরিবর্তনকারী যালিম শাসক : এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী :
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُواْ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُواْ إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُواْ أَن يَكْفُرُواْ بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُضِلَّهُمْ ضَلاَلاً بَعِيدًا
অর্থ : আপনি কি তাদের দেখেননি যারা ধারণা করে যে, তারা আপনার প্রতি অবতীর্ণ এবং আপনার পূর্বে অবতীর্ণ ওয়াহীর প্রতি ঈমান এনেছে। তারা তাগুতকে বিচারক বলে মানতে চায়। অথচ তাদের সেটিকে অস্বীকার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর শয়তান তাদের সুদূর ভ্রান্তিতে ফেলতে চায়। (সূরা-নিসা : ৬০)
তৃতীয় : যে ব্যাক্তি আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে অন্য কোন বিধান অনুযায়ী শাসন করে। আল্লাহর বাণী :
وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ
অর্থ : যারা আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান অনুযায়ী শাসন করল না তারাই কাফির। (সূরা-মায়িদাহ : ৪৪)”
অর্থাৎ, তিনি তাগুতের ৫ প্রকারের মধ্যে ২ প্রকারকেই রেখেছেন আল্লাহ্র আইন পরিবর্তনকারী শাসক ও আল্লাহ্র বিধান বাদ দিয়ে অন্য বিধানে শাসন করা শাসকদেরকে। অথচ শাইখ আলবানী (রঃ) তার ‘ফিতনাতুত তাকফীর’ রিসালায় বর্তমান শাসকদেরকে কাফির মনে করাকে খারেজীপনা হিসেবে প্রমাণ করতে চেয়েছেন।
আর ইরজায়ী রোগে আক্রান্ত তারবিয়া-তাসফিয়ার অনুসারীরা তাই শাইখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব এর গুরুত্বপূর্ণ এসকল রিসালাহ যেমনঃ যা জানা ওয়াজিব, সংশয় নিরসন (কাশফুশ শুবুহাত) এ সকল রিসালাহকে বেশী প্রচার করেন না। হয়তো এগুলোতে এ সকল ইরজায়ী রোগের বেশ কিছু চিকিৎসা করা হয়েছে – এ কারণে। এর বদলে তারা বর্তমান সৌদি রাজার মদদপুষ্ট আলেমদের ফতোয়াকে বেশী বেশী সামনে নিয়ে আসেন।
আল্লাহ তৌফিক দিলে এগুলো থেকে শিক্ষা ভবিষ্যতে সামনে আনার ইচ্ছা আছে ইনশাআল্লাহ।