১। শাহ পালোয়ান মাতঙ্গী
উনি বাংলার শেষ স্বাধীন সুলতান, সুলতানউস সুলতান মুসা খানের তাঁবে মাতং বিভাগের শাসক আছিলেন। মাতং কোন জোয়ার তা ঠিক জানা না গেলেও ইতিহাসের বিচারে ধারনা করা হয় মাতং সিলেটের তরফের দখিনপূবে আছিল। সম্ভবত মাতংয়ের বেশীরভাগ হালের বাংলাদেশের বাইরে।
শাহ পালোয়ান মুঘলদের আড়ে যুদ্ধে শহীদ হন। এইখানে একটা দুঃখের গপ্প আছে।
মুসা খানের আরেকজন শাসক আছিলেন সোনারগাঁওয়ের আমির হাজী শামসুদ্দীন বাগদাদী। যুদ্ধে মুঘলগো কাছে হাইরা হাজী শামসুদ্দীন বাগদাদী মুঘলগো চাকরি নেন। মুঘল সুবেদার ইসলাম খান হাজী শামসুদ্দীনকেই পালোয়ানের আড়ে পাঠায়।
এর আগে পাঠান নেতা খাজা ওসমান লোহানী মুঘলগো তাড়া খাইয়া মোমেনশাহীর বুকাইনগরে উনার রাজধানী করছিলেন ও পরে সিলেট যান।
হাজী শামসুদ্দীন যেইকালে পালোয়ানের সাথে যুদ্ধ করতে আহেন খাজা ওসমানের ভাই খাজা মালহী লোহানী ও ছেলে মোমরিজ খান লোহানী সিলেটের তরফে আছিলেন। উনারা শাহ পালোয়ানের দলে যোগ দেন ও বারবার হাজী শামসুদ্দীন বাগদাদীর গড়া মুঘল ক্যাম্পে হামলা করেন। তিনবার ক্যাম্পের ভিতরে ঢুইকা মুঘলগো সাথে হাতাহাতি যুদ্ধ করেন।
শেষে একটা যুদ্ধ হয় শাহ পালোয়ানের রাজধানীর কাছে। এই যুদ্ধে পালোয়ান ও বাগদাদী একে অপরকে বর্শা বিদ্ধ করেন ও দুইজনেই মারা যান।
মোমেনশাহীর সংযোগ থাকায় শহীদ ও বন্দীগো পরিবারের কেউ মোমেনশাহীতে বাস নিতে পারে।
২। সেকারার শাহ পালোয়ান
উনার সুবাদে বেশ জানা যায়। মীর মশাররফ হোসেনের পূবপুরুখ শাহ সাদুল্লাহ উনার মেয়ের জামাই আছিলেন। সেকারা (শেখআড়া) রাজবাড়ি জেলায়। আম্রা শেখআড়া কই না কারণ সন্দ হয় সেকারা নামটা শাখরগঞ্জ থিকা আইছে। শাখরগঞ্জ কিছু বয়ানে হজরত ফরিদুদ্দীন গঞ্জেশাখরের (রঃ) নাম। এমতে নামটার ব্যাভার ফারসীতে ভুল হইতে পারে। তয় পশতু, পাঞ্জাবী, উর্দু-হিন্দুস্তানী, বাংলা জবানের মেলা লোক উনার ভক্ত আছিল।
থানের নাম হজরত ফরিদুদ্দীনের নামে শাখরগঞ্জ হইতে পারে। সাপটা ধারনা যে এই শাহ ফরিদের নাম ফরিদপুর নামটা ঘটায় ।
তরুন শাহ ফরিদ (জিওনকাল আন্দাজ ১১৭৫-১২৬৫ সাল) ফিলীস্তীনে আছিলেন ও সম্ভবত সালাহউদ্দীনের (পয়াণ ১১৯৩ সাল) সুফী ঠাটে যুদ্ধ করছেন। মাঝের পূবের আতাবেগ পেহলেভান কারো সাথে উনার পরচা থাকা সহজ।
কওয়া হয় শাহ পালোয়ান ও সাদুল্লাহ বাগদাদ থনে আইছেন।
৩। শাহ পালোয়ান
এই শাহ পালোয়ান ভাওয়ালের গাজীগো পূবপুরুখ। উনার মাজার লাখিয়া গাঙের পাশে চৌরায়, কাপাশিয়ার দখিনপচিমে। জানিনা চৌরা এখনো আছে কিনা। গাঙেও পড়তে পারে। চৌরা দেখা হয় নাই যদিও বাসার কাছেই।
লাখিয়া ও সুতিয়ার তফাৎ ঠিক বুঝা নাই। মনে হয় নাম দুইটাকে এক কইরা শীতলক্ষ্যা বানান হইছে ইংরেজ আমলে। লাখিয়া ও বানার (পনার) গাঙের পানি মিশা শীতলক্ষ্যার ছিষ্টি। ১৯৬০ সালের পরেও সুতিয়া গোফরগাঁও এলাকায় বড় গাঙ
আছিল।
ঢাকার লোকও যে সুতিয়া নামটা মনে রাখছে তা গাজীপুর আইয়া জানলাম।
শাহ পালোয়ান মনে হয় বুড়া বয়সে ছেলে কারফরমা শাহের সাথে বাংলাদেশ আইছিলেন ১৩৩৩ সালের দিকে। কারফরমা শাহ ভাওয়ালের (বাজু) জায়গীর পান। ঢাকার ইতিহাস (শ্রীযামিনীমোহন রায়, ১ম খণ্ড ভূমিকা) লিখছে চৌরায় শাহ পালোয়ান ও কায়েম গাজীর মাজার আছে। কারফরমা কায়েম নামের ভুলপাঠ না কায়েম নাম ভুলপাঠ তা জানা নাই।
৯৪৫ হিজরীতে (শুরু হইছে ১৫৪২ সালে) ফজল গাজী শের শাহকে একটা কামান পাঠান। ফজল গাজী থিকা শাহ পালোয়ানের ৮ পুরুখ। ভাওয়ালের গাজী পরিবার বাংলাদেশের একটা পুরান পরিবার।
৪। টীকা
মনে হয় ইনারা খেলোয়ার কিংবা কুস্তীর ওস্তাদের মানেতে পালোয়ান আছিলেন না যদিও কিছু পালোয়ান খুবি জনপিয় ও তারা (celebrity) আছিলেন। সেলজুক তুর্কিগো কালে ওগো মেলা গভর্নর আতাবেগের টাইটেল আছিল পালোয়ান। এইটার সিরজন হইছে ইরানী ও তুরানী সেনা তমুদ্দনের মিশালে। দুর্বল আব্বাসী খলিফারা দালমানের ইরানী ও সগদিয়ার তুর্কী সেনাগো ব্যাভার করত।
আতাবেগ মানে বাবা ও রক্ষক। বাংলাদেশে লালার মত এগো এক কাজ আছিল শাহজাদাগো শিখান। যেমতে রাজশাহীর জায়গীরদার উদয়নারায়ণ খান ভাদুরী আছিলেন একজন লালা। উনার ইতিহাস বিকার করা হইছে কালাপাহাড়ের ইতিহাসের সাথে।
আতাবেগগো মাঝে একজন আছিলেন নামকরা ইমামুদ্দীন জেঙ্গী পালোয়ান। ১লা ও ২রা ক্রূসেডের মাঝখানে রোধ, পুনরুদ্ধার ও জয়ের শুরু করেন ইমামুদ্দীন জেঙ্গী। সুলতান গাজী সালাহউদ্দীন আউয়ুবীরও মনে হয় পালোয়ান (Pehlevan) টাইটেল আছিল। সালাহউদ্দীন ও উনার মেলা অফিসার ও কমরেড কুর্দী আছিলেন।
আম্রা তো সালাহউদ্দীনের ইতিহাস শুধু আরব লেখকগো কাছ থিকা শুনি। ফারসীতে লিখা শামসুদ্দীন বিলদিসীর সফরনামায় পেহলেয়ান (Pehlevan) কথাটা খুঁজার সুযোগ হয় নাই। বিলদিসী কুর্দী আছিলেন। তয় উনার মা তুর্কী।
লেবাননের আউয়ুবীরা ভুইলা গেছিল যে সালাহউদ্দীন আরব আছিলেন না। পূব তুরস্কের হাসানকেইফের কুর্দী মালিকরাও সালাহউদ্দীনের বংশধর।
তুর্কী শব্দকোষ থিকাও মনে হয় Pehlevan য়ের একটা মানে নম্বর ওয়ান, বাংলায় পয়লা ও সেই মানেতে leader।