একাত্তরেরফিতনা ও গাদ্দারীর নাশকতা

2 views
Skip to first unread message

Firoz Kamal

unread,
Aug 24, 2025, 6:21:12 PM (14 days ago) Aug 24
to

একাত্তরের ফিতনা ও গাদ্দারীর নাশকতা

ফিরোজ মাহবুব কামাল

www.drfirozmahboobkamal.com/blog/একাত্তরের-ফিতনা-ও-গাদ্দা/

 

 

একাত্তরের ফিতনা ও নাশকতা

 

ইসলাম শুধু কুর’আন পাঠ, নামাজ-রোজা ও  হজ্জ-যাকাতের  বিধানই দেয়নি; বরং দিয়েছে রাজনীতি, রাষ্ট্র নির্মাণ, প্রশাসন, বিচার-আচার ও যুদ্ধবিগ্রহ পরিচালনার ক্ষেত্রেও কিছু অলংঘনীয় নীতি মালা। নবীজী (সা:) নিজ হাতে রাষ্ট্র নির্মাণ করে এবং ১০টি বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করে সেগুলি সাহাবাদের সরাসরি শিখিয়ে গেছেন। সেটিই নবীজী (সা:)’র শ্রেষ্ঠতম সূন্নত। ইসলামে যেমন হারাম রাজনীতি আছে, তেমনি আছে ফরজ রাজনীতি। ফরজ রাজনীতি হলো জিহাদের রাজনীতি।  এ রাজনীতিতে দেশের ভূগোলকে সুরক্ষা দেয়া এবং ভূগোলে বৃদ্ধি আনা ইবাদত; এবং দেশ ভাঙ্গা হারাম। এ রাজনীতিতে গুরুত্ব পায় প্যান-ইসলামী মুসলিম ভাতৃত্ব। এবং চরম গাদ্দারী   গণ্য হয় ভাষা, বর্ণ, গোত্র ও অঞ্চলের নামে কোন মুসলিম দেশকে খণ্ডিত করা। এবং হারাম গণ্য হয় কাফের শক্তির অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামা। অথচ একাত্তরে মুক্তি বাহিনী ও মুজিব বাহিনীর লোকেরা তো সেটিই করেছে।

 

পবিত্র কুর’আনে মহান আল্লাহতায়ালা ফিতনাকে মানব হত্যা বা গণহত্যার চেয়েও গুরুতর পাপকর্ম বলেছেন। যেমন বলা হয়েছে:

 

وَٱلْفِتْنَةُ أَكْبَرُ مِنَ ٱلْقَتْلِ

 

অর্থ: “এবং ফিতনা মানব হত্যার চেয়েও গুরুতর অপরাধ।” –(সুরা বাকারা, আয়াত ২১৭) ।

 

মানব হত্যা বা গণহতার ন্যায় অপরাধে বহু লোকের প্রাণনাশ হয়। এরূপ মানব হত্যা বা গণহতার কাণ্ড উমাইয়া, আব্বাসীয় এবং উসমানিয়া খলিফাদের আমলেও হয়েছে। কিন্তু সে প্রাণনাশের ফলে মুসলিম উম্মাহ সেদিন ভূগোল টুকরো টুকরো হয়নি। কোন মুফতি বা আলেম সে গণহত্যা বা জুলুমকে অজুহাত বানিয়ে মুসলিম রাষ্ট্রকে খণ্ডিত করার ফতওয়া দেননি। ফলে মুসলিম উম্মাহ দুর্বল হয়নি; স্বাধীনতাও হারায়নি।  অথচ ফিতনার কারণে মুসলিম টুকরো টুকরো হয় এবং মুসলিম ভূমি পরাধীন হয় -যেমনটি একাত্তরে পাকিস্তানের ক্ষেত্রে হয়েছে।

 

প্রশ্ন হলো ফিতনা কি? ফিতনা তো তাই যা মুসলিম উম্মাহর নিরাপত্তা, ঐক্য, স্বাধীনতা, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে। এবং যা অসম্ভব করে পূর্ণ ইসলাম পালন। তাই একাত্তরের ২৫ মার্চের রাতে পাকিস্তান আর্মির অপারশনে মুসলিম উম্মাহর যতটা ক্ষতি হয়েছিল, তার চেয়ে বহু শত গুণ অধিক ক্ষতি হয়েছে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বাহিনী ও তাদের প্রভু হিন্দুত্ববাদী ভারতের হাতে পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়াতে। অখণ্ড পাকিস্তান বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ ভারতের অধিনত গোলাম রাষ্ট হতো না। ৫৪টি নদীর পানি ভারতের হাতে লুণ্ঠিত হতো না। গণতন্ত্রকে কবরে যেত হতো না। এবং আলেমদের গণহত্যা ও ফাঁসির মুখে পড়তে হতো না। দেশের সেনানীবাসে নির্মিত হতো না আয়না ঘর। সংঘটিত হতো না পিলখানায় ৫৭ জন অফিসার হত্যা এবং শাপলা চত্বরের গণহত্যার কাণ্ড। অখণ্ড পাকিস্তান বেঁচে থাকলে দেশটি পরিণত হতো ৪৪ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পারমানবিক রাষ্ট্রে। তখন দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠি রূপে বাঙালি মুসলিমগণ সুযোগ পেত বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব ফেলার সুযোগ। সর্বোপরি মুসলিম উম্মাহ পেত পারমানবিক অস্ত্রধারী একটি অভিভাবক রাষ্ট্র। সে অখণ্ড পাকিস্তানের মৃত্যুতে বাঙালি মুসলিমের একটি বিশাল সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটেছে। আর এজন্যই যারা ইসলাম, মুসলিম উম্মাহ ও বাঙালি মুসলিমের প্রকৃত শত্রু তারা ১৬ ডিসেম্ব এলে ভারতের ন্যায় হিন্দুত্ববাদী শক্তির সাথে পাকিস্তান ভাঙ্গা নিয়ে এতো উৎসব করে।

 

 

মুজিবের অপরাধ ও মীর জাফরের অপরাধ

 

মুসলিম হওয়ার শর্ত হলো, মেনে চলতে হয় ইসলামের শতকরা শতভাগ বিধান। একটি বিধান অমান্য করাতে ইবলিস অভিশপ্ত শয়তানে পরিণত হয়েছে। বাঙালি সেক্যুলারিস্টদের জীবনে ইসলামী বিধানের প্রতি সে আনুগত্য থাকলে তারা কি ১৯৭১য়ে ভারতের ন্যায় একটি শত্রু দেশের কোলে গিয়ে উঠতো? সে দেশের কাফের শক্তিকে বিজয়ী করে তাদের মুখে কি হাসি ফোটাতো? সুরা আল ইমরানের ২৮ নম্বর আয়াতে এবং সুরা মুমতাহেনার ১ নম্বর আয়াতে কাফিরদের বন্ধু রূপ গ্রহণ করাকে হারাম করা হয়েছে। ১৯৭১য়ে যারা ভারতে আশ্রয় এবং ভারতীয় প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র নিয়ে ভারতীয় সেনাদের সাথে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে যুদ্ধ করে, তাদের কাছে কি গুরুত্ব পেয়েছিল সে কুর’আনী হুকুম? কাফিরদের বিজয় বাড়ানো তো শয়তানের কাজ, ঈমানদারের নয়। অথচ শয়তানের সে কাজকেই বেছে নিয়েছিল বাঙালি ফ্যাসিস্ট, বাঙালি জাতীয়তাবাদী, সেক্যুলারিস্ট ও কম্যুনিস্টগণ। এবং আজও সে ঘৃণ্য অপরাধ নিয়ে তাদের গর্ব।

 

ঈমানদারকে সুস্পষ্ট চেনা যায় কাকে সে বন্ধু এবং কাকে সে শত্রুরূপে গ্রহণ করলো –তা দেখে। ঈমানদার  কখনোই কোন কাফেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করে না। সে হারাম কাজটি করেছিল নবাব সিরাজুদ্দৌলার সেনাপতি মীর জাফর। সে বন্ধু রূপে গ্রহণ করেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর রবার্ট ক্লাইভকে। এতে ইংরেজদের হাতে লুন্ঠিত হয় বাংলার স্বাধীনতা। আর শেখ মুজিব বন্ধু রূপে গ্রহণ করেছিল ভারতীয় কাফের ইন্দিরা গান্ধিকে। মুজিবের সে বিশ্বাসঘাতকতার ফলে পরাধীনতা নেমে আসে বাংলাদেশীদের জীবনে। বাংলাদেশ পরিণত হয় ভারতের আশ্রিত রাষ্ট্রে (vassal state)। ১৭৫৭’য়ে মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতাটি হলো বাঙালি মুসলিম সমগ্র ইতিহাসে সবচেয়ে কলংকিত অধ্যায়কলংকের কারণ, তৎকালীন বিশ্বের অতি সমৃদ্ধতম দেশ বাংলা বিশাল কোন রাজকীয় বাহিনীর হাতে পরাজিত হয়নি, পরাজিত হয়েছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর ন্যায় একটি মাত্র কোম্পানীর ৪ হাজার সৈন্যের হাতে। এই হলো একটি দেশের শীর্ষ পর্যায়ের লোকদের গাদ্দারীর খেসারত। মীর জাফরের ন্যায় একই রূপ অপরাধের অপরাধী হলো শেখ মুজিব ও তার অনুসারীরা।  ভারতের প্রতি তাদের দাসসুলভ চরিত্র আজ আর কোন গোপন বিষয় নয়। শেখ হাসিনার হাতে বাংলাদেশে যা কিছু ঘটেছে -তা তো তার পিতার অপরাধেরই ধারাবাহিকতা

 

 

সবচেয়ে বড় নাশকতা দেশভাঙ্গা

 

নাশকতা কি শুধু আপন জনের মৃত্যু, ঘর ভাঙ্গা, দোকান ভাঙ্গা ও কৃষিক্ষেতের ক্ষয়ক্ষতি? বরং নাশকতার সবচেয়ে বড় কাণ্ডটি হলো দেশ ভাঙ্গা। কারণ দেশ ভাঙ্গলে বিপন্ন হয় দেশবাসীর স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও ইজ্জত। অথচ পরম পরিতাপের বিষয় হলো, মুসলিমগণ দেশ ভাঙ্গার ন্যায় নিজ হাতে সংঘটিত আত্মঘাতী নাশকতা নিয়েও উৎসব করে। দেশ ভাঙ্গাতে দেশ দুর্বল হয়; তখন ঘাড়ের উপর চেপে বসে শত্রু শক্তির গোলামী। তখন অসম্ভব হয় পূর্ণ ইসলাম পালন এবং কুর’আন থেকে জ্ঞানার্জন -যেমনটি মধ্য এশিয়ার মুসলিমদের জীবনে দেখা গেছে সোভিয়েত রাশিয়ায় কম্যুনিস্ট শাসনামলে। তখন অসম্ভব হয় সিরাতাল মুস্তাকীমে চলা। কারণ, সিরাতাল মুস্তাকীমে চলতে হলে তো তার রোডম্যাপ কুর’আন বুঝতে হয়। কিন্তু ইসলাম বিরোধী দখলদার শক্তি সে কুর’আনী জ্ঞানার্জনের কাজটি স্কুল-কলেজে হতে দেয় না। তাই বাংলাদেশের ছাত্ররা তাদের বিশ-বাইশ বছরের শিক্ষা জীবন শেষ করে কুর’আন বুঝার সামর্থ্য অর্জন না করেই। অথচ প্রতিটি মুসলিমের উপর কুর’আনী জ্ঞানার্জনের কাজটি নামাজ-রোজার ন্যায় ফরজ। এ ফরজের কোন ক্বাজা বা কাফ্ফারা নাই। এভাবেই শয়তানী শক্তির দখলদারিতে বাধাগ্রস্ত বা অসম্ভব হয় প্রকৃত মুসলিম রূপে বেড়ে উঠার কাজ। তখন অনিবার্য হয় শত্রুর হাতে পরাজয় ও পরাধীনতা।

 

 

বিভক্তি পরাধীনতা বাড়ায়

 

মুসলিম উম্মাহ আজ যে কারণে স্বাধীনতাহীন, নিরাপত্তাহীন ও ইজ্জতহীন -তার কারণ তাদের জনসংখ্যার বা সম্পদের কমতি নয়, বরং ৫০টির বেশী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বিভক্ত মুসলিম উম্মাহ খণ্ডিত ভূ-রাজনীতি। ক্ষুদ্র হওয়ার কারণে এ মুসলিম রাষ্ট্রগুলির স্বাধীনতা বাঁচানো সামর্থ্য নাই; ফলে দেশগুলির উপর চলছে শয়তানী শক্তির পরোক্ষ দখলদারি। এসব ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলির কোন একটিতে নবীজী (সা:)’র  অনুসরণে ইসলামী রাষ্ট্র নির্মিত হলে অসম্ভব হবে সেটিকে শয়তান শক্তির আগ্রাসন থেকে বাঁচানো। তখন সে ইসলামী রাষ্ট্র ইসলামবিরোধী সকল শক্তির লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত হবে। কারণ শয়তানী শক্তিবর্গ মুসলিম বিশ্বে ফ্যাসিবাদী, জাতীয়তাবাদী, রাজতন্ত্রী ও স্বৈরাচারি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠ নিয়ে কোন আপত্তি করে না, বরং তাদের সাথে সহযোগিতার নীতিই অবলম্বন করে। কারণ সে সেক্যুলার মুসলিম রাষ্ট্রগুলি তাদের এজেন্ডা ও মূল্যবোধের বিরুদ্ধে কোন চ্যালেঞ্জ খাড়া করে না। কিন্তু তারা কোন ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা মেনে নিতে রাজী নয়।  যে কোন ইসলামী রাষ্ট্রকে তাদের নিজ নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে।

 

তাছাড়া স্বাধীনতার সুরক্ষার জন্য আবশ্যকীয় লোকবল এবং অর্থনৈতিক ও সামরিক বল ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের থাকে না। এজন্যই মহান আল্লাহতায়ালা একতাকে ফরজ করেছেন এবং দেশ ভাঙ্গাকে হারাম করেছেন। মুসলিম উম্মাহর বিভক্তি এবং ক্ষুদ্র ভূগোল তাদের স্বাধীন ভাবে বাঁচাকে অসম্ভব করেছে। অথচ শয়তানী শক্তিবর্গ সেটিই চায়। বৃহৎ মুসলিম দেশগুলি ভেঙ্গে ক্ষুদ্রতর করা তাই শয়তানী শক্তিবর্গের প্রধান কৌশল। সে লক্ষ্য অর্জনে কাফির শক্তির সবচেয়ে বেশী বিনিয়োগ তাই মুসলিম দেশের সামরিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গণে। সে জন্য তারা যুদ্ধও করে। ১৯৭১’য়ে হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় কাফিরগণ তেমন একটি যুদ্ধ করেছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশ পাকিস্তান ভাঙ্গতে।  পাকিস্তান ভাঙ্গার সে হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পে যোগ দিয়েছে ইসলামী চেতনাশূণ্য ফ্যাসিস্ট মুজিব ও তার দল আওয়ামী লীগ। মুজিবের সাফল্য, হেমিলিয়নের বংশীবাদকের ন্যায় সে সাথে নিতে পেরেছিল ইসলামী চেতনাশূণ্য কোটি কোটি বাঙালি মুসলিমকে। মুজিবের সে নাশকতায় কাজে যোগ দিয়েছিল ইসলামচ্যুৎ সেক্যুলারিস্ট ও বামধারার বাঙালিগণও।

 

অথচ পাকিস্তান শুধু পাঞ্জাবী, পাঠান, সিন্ধি ও বেলুচদের দেশ ছিল, দেশটি ছিল বাঙালি মুসলিমদেরও। বরং পাকিস্তানের সংখ্যগরিষ্ঠ নাগরিক ছিল তারাই। এবং মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কাজে সবচেয়ে বড় ভূমিকাটি ছিল বাঙালি মুসলিমদের। ফলে সে দেশটির প্রতিরক্ষার সবচেয়ে বড় দায়িত্বটিও ছিল তাদেরই। কিন্তু সে দায়িত্ব তারা পালন না করে তারা বরং চিহ্নিত শত্রু শক্তি ভারতের সহযোগী হয়েছে এবং ভারতকে বিজয়ী করেছে। এটি ছিল নিজ দেশের সাথে তাদের গাদ্দারী

 

 

 

দেশ ভাঙ্গা কোন সমাধান নয়, এটি বিপর্যয়

 

প্রতি দেশেই নানা রূপ সমস্যা থাকে -যেমন সমস্যা রয়েছে আজকের বাংলাদেশে। তবে সে সব সমস্যার সমাধানও থাকে। দেশ ভাঙ্গা কোন সমাধান নয়‌ এটি বিপর্যয়। কেড়ে নেয় প্রতিরক্ষার সামর্থ্য। সমস্যার সমাধানো সচেষ্ট না হয়ে মুসলিম দেশভাঙ্গা তাই জায়েজ নয়। তাতে শক্তিহানী হয় ও শত্রুর গোলাম হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এজন্যই ইসলামে মুসলিম দেশ ভাঙ্গা হারাম। তাই একাত্তরে কোন ইসলামী দল, কোন আলেম, কোন ইমাম, কোন হাক্কানী  পীর পাকিস্তান ভাঙ্গাকে সমর্থন করেনি। 

 

দেশের সমস্যা সমূহের সমাধান করতে হয় দেশের অখণ্ডতা বাঁচিয়ে রেখে; দেশকে ভেঙ্গে এবং শত্রুর হাতে তুলে দিয়ে নয়। অথচ মুজিব ও তার অনুসারীগণ সেটিই করেছে। এবং এরাই বছর ঘুরে ১৬ ডিসেম্বর এলে ভারতের সে বিজয় নিয়ে উৎসব করে।  পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ নির্মাণে লাভবান হয়েছে ভারত। ভারত দুর্বল করতে পেরেছে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দী পাকিস্তানকে এবং পূর্ব সীমান্তে পেয়েছে সুরক্ষিত ১৭ কোটি মানুষের এক বিশাল বাজার। আর উপমহাদেশের মুসলিমগণ হারিয়েছে পাকিস্তানের ন্যায় একটি অভিভাবক রাষ্ট্রের – যা ছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র।        

 

 

মুসলিম হওযার অর্থই কসমোপলিটান তথা বিশ্বময়ী হওয়া

 

মুসলিম হওয়ার অর্থ একাকী নামাজ-রোজা পালন নয়, বরং প্রবল আগ্রহ থাকতে হয় ভিন্ ভাষী, ভিন্ বর্ণের ও ভিন্ এলাকার মুসলিমের সাথে একই জায়নামাজে দাঁড়িয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ পড়ায়। একই রূপ আগ্রহ থাকতে হয় তাদের মত ভিন্ ভাষী, ভিন্ বর্ণের ও ভিন্ এলাকার মুসলিমের সাথে কাঁধ কাঁধ মিলিয়ে অখণ্ড রাষ্ট্র নির্মাণের ও সে রাষ্ট্রে শান্তিপূর্ণ বসবাসের। নবীজী (সা:) ও সাহাবাদের যুগে তো তেমনটিই দেখা গেছে। ইসলামের সেটি এক কসমোপলিটান তথা বিশ্বময় ভাবনা। সে বিশ্বময় ভাবনা না থাকলে বুঝতে হবে মুসলিম রূপে বেড়ে উঠায় সমস্যা রয়েছে। সমস্যা রয়েছে ঈমানে। কিন্তু বাঙালি মুসলিমগণ নবীজী (সা:) ও সাহাবাদের সে সূন্নত নিয়ে বাঁচতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। তারা বরং মূর্তিপূজারি ভারতীয় কাফিরদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধে নেমেছে; এবং সেটি পাকিস্তানের ন্যায় একটি মুসলিম দেশ ভাঙ্গতে এবং অবাঙালি মুসলিম ভাইদের হত্যা করতে ও তাদের ঘরবাড়ি দখলে নিতে। মহান আল্লাহ তায়ালার এর চেয়ে অধিক গর্হিত কাজ আর কি থাকতে পারে?

 

প্রশ্ন হলো, কোন মুসলিম কি মুসলিমের ঘরভাঙ্গা নিয়ে উৎসব করতে পারে? এরূপ অসুস্থ রুচির মানুষ নামায়-রোজা ও হজ্জ-যাকাত যত পালন করুক না কেন, তাকে কি ঈমানদার বলা যায়? অথচ মুসলিমের ঘর ভাঙ্গার চেয়ে বহু লক্ষ গুণ অধিক ক্ষতিকর হলো কোন মুসলিম দেশ ভাঙ্গা। কারণ কোন মুসলিম দেশকে দুর্বল করার অর্থ মুসলিম উম্মাহকে দুর্বল করা। তাই সেটি শত শত হারাম কাজের মধ্যে অতি জঘন্যতম হারাম। এজন্যই বিশ্বের কোন মুসলিম রাষ্ট্র ১৯৭১’য়ে পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ সৃষ্টির স্বীকৃতি দেয়নি। স্বীকৃতি দিয়েছে ভারত ও ভারত অনুগত ভূটানের ন্যায় কিছু কাফির রাষ্ট্র। কোন ঈমানদার কি একটি মুসলিম দেশ ভাঙ্গা নিয়ে উৎসব করতে পারে? অথচ ১৬ ডিসেম্বর এলে মুসলিম নামধারী বহু বাঙালি ভারতীয় পৌত্তলিক কাফিরদের সাথে মিলে পাকিস্তান ভাঙ্গার উৎসব করে। এ থেকে বুঝা যায় বিপুল সংখ্যক বাঙালি মুসলিম কতটা ব্যর্থ হয়েছে ইসলামের ভূ-রাজনৈতিক দর্শন ও প্যান-ইসলামী ভাতৃত্ব নিয়ে বেড়ে উঠতে।

Reply all
Reply to author
Forward
0 new messages