আগরতলা ষড়যন্ত্রের বিজয়, আওয়ামী লীগের ভারত সেবা এবং বাঙালি মুসলিমের যুদ্ধের দায়

2 views
Skip to first unread message

Firoz Kamal

unread,
Sep 23, 2025, 7:08:15 PMSep 23
to

আগরতলা ষড়যন্ত্রের বিজয়, আওয়ামী লীগের ভারত সেবা

এবং বাঙালি মুসলিমের যুদ্ধের দায়

ফিরোজ মাহবুব কামাল

www.drfirozmahboobkamal.com/blog/আগরতলা-ষড়যন্ত্রের-বিজয়-আ/

 

শয়তান লোক চিনতে ভুল করেনা

শয়তান তার অতি পছন্দের কাজের লোকটি চিনতে কখনোই ভুল করেনা। তেমন লোক চিনতে ভুল করেনা ভারতের ন্যায় শয়তানের খলিফা পৌত্তলিকাও। শয়তান ও তার পৌত্তলিক খলিফা লোক বাছাইয়ে যে কতটা নির্ভুল -সেটি বুঝা যায় শেখ মুজিবকে বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে। যে রাজনৈতিক লক্ষ্যকে সামনে রেখে ভারত মুজিবকে রিক্রুট করেছিল, ভারত তার সবটুকুই মুজিব থেকে পেয়েছে। মুজিব ভারতের এজেন্ডা পূরণে সামান্যতম ত্রুটি করেনি। অপর দিকে শয়তান ও তার খলিফা পাকিস্তানকে চিনতেও ভুলতে করিনি। পাকিস্তানই যে ভবিষ্যতে ইসলামী ন্যাটোর মূল শক্তি হয়ে দাঁড়াবে সেটি শয়তান ও তার পৌত্তলিক খলিফা ভারত ১৯৪৭ সালেই বুঝতে পেরেছিল। তাই ভারতের মূল এজেন্ডা হয় পাকিস্তান ভাঙা।

মুজিব তার দায় ভারতের প্রতি সফল ভাবেই পালন করেছে। এজন্যই মুজিব ও তার পরিবারে সদস্যদের প্রতি ভারতের এতো কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসা। মনিব যেমন তার বিশ্বস্ত প্রিয় কুকুরকে আদর ভরে কোলে তুলে নেয়, ভারতও তেমনি কোলে তুলে নিয়েছে মুজিব-হাসিনাকে। তাই বিশ্বের অন্য কোন রাষ্ট্র খুনি হাসিনাকে স্থান দিতে না চাইলেও ভারত তাকে বেশ আদর যত্নে রেখেছে। যারা রাজনৈতিক আশ্রয় চায় -তাদেরকে বসবাসের স্থান দিলেও কোন দেশই রাজনীতির অধিকার দেয় না। ভারতে আশ্রয় নেয়া তিব্বতের দালাই লামার সে অধিকার মেলেনি। অথচ ভারত সরকার হাসিনাকে রাজনীতির পূর্ণ অধিকার দিয়েছে।

১৯৪৭ সালে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীগণ এবং তাদের সংগঠন কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভা পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা রুখতে পারিনি। কিন্তু তাতে ভারত থেমে থাকেনি। শুরু হয় উপমহাদেশের মুসলিমদের পাকিস্তান প্রজেক্ট ব্যর্থ করে দেয়ার নতুন ষড়যন্ত্র এবং শুরু হয় নতুন যুদ্ধ। সে লক্ষ্যপূরণে শুরু বাঙালি মুসলিমদের মধ্য থেকে অনুগত সেপাই রিক্রুটমেন্ট। পূর্ব পাকিস্তানের থেকে যাওয়া বাঙালি হিন্দুরা ছিল ভারতের জন্য অতি বিশ্বস্থ রিজার্ভ ফোর্স। ১৯৪৭’য়ের পর তারা পাকিস্তানের থেকে গেলেও ভোট দিত এবং রাজনীতি করতো ভারতীয় স্বার্থের দিকে নজর রেখে। তাদের অনেকে কম্যুনিস্ট পার্টিতে যোগ দেয়। কম্যুনিস্টগণ শুরু থেকেই পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে ছিল; পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তাদের এজেন্ডা হয় পাকিস্তান ভাঙায়। ভারতের পাকিস্তান বিরোধী এজেন্ডার সাথে তারা একাত্ম হয়। কম্যুনিস্টরাই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে পাকিস্তান ভাঙার আন্দোলনে পরিণত করে -যেমনটি বলেছেন কম্যুনিস্ট বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমর। তাজুদ্দীন ও অলি আহাদের মত কম্যুনিস্ট ভাবাপন্ন ব্যক্তিগণ আওয়ামী লীগকে পাকিস্তান বিরোধী করতে সে দলে প্রবেশ করে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মুসলিম লীগের যেসব লোকেরা সরকারের অন্দর মহলে স্থান না পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়েছিল, ভারতের টার্গেট হয় তাদের মধ্য থেকে এজেন্ট রিক্রুট করা। মাওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবসহ আওয়ামী লীগের বহু নেতা ছিল সে গোত্রের।  ভাসানী ১৯৫৭ সালেই আওয়ামী লীগের কাগমারী সম্মেলনে পশ্চিম পাকিস্তানকে বিদায়ী সালাম জানিয়ে দেয়। ভাসানীভক্ত কম্যুনিস্টরা বলে এটি ছিল ভাসানীর স্বাধীনতার ঘোষণা।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়। কিন্তু সে নির্বাচনে জনগণ থেকে পাকিস্তান ভাঙার পক্ষে রায় নেয়া হয়নি।  বরং মুজিব সকল জনসভায় পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দিয়েছে।  ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান সৃষ্টি করা হয়েছিল জনগণের রায় নিয়ে অথচ দেশটিকে ১৯৭১ সালে ভাঙ্গা হলো জনগণের রায় না নিয়েই। কোন মুসলিম দেশ ভাঙ্গা শরীয়তে হারাম। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, শরীয়তে যা হারাম -তা কখনোই ভোট দিয়ে হালাল করা যায় না। ‌ যেমন মদ্যপান, জ্বিনা, সু, শুকরের গোশতো ভোট দিয়ে হালাল করা যায় না। তাই ১৯৭০ সালের ‌ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়কে আওয়ামী লীগের পাকিস্তান ভাঙার গুপ্ত এজেন্ডা হালাল হয়ে যায় না। 

পাকিস্তান ভাঙ্গার সিদ্ধান্তটি ছিল আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, কম্যুনিস্টপার্টির ন্যায় ভারতপন্থী এবং ইসলাম থেকে দূরে সরা রাজনৈতিক দলগুলির; কোন ইসলাম পন্থী দল, কোন আলেম, কোন মুফতি, কোন পীর সাহেব এর সাথে জড়িত ছিল না। একটি দেশে জুলুম, নির্যাতন, বৈষম্য, অবিচার থাকলেই সে দেশ ভাঙা জায়েজ হয়না। তাছাড়া বিশ্বে এমন কোন দেশে সে জুলুম, বৈষম্য  অবিচার নাই? বৈষম্য ও জুলুম তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতেও আছে। তাছাড়া বাংলাদেশে যেরূপ বীভৎস রকমের গুম, খুন জুলুম, নির্যাতন, আয়না ঘর, ফাঁসি ও গহত্যা হয়েছে -তা তো যুদ্ধকালিন ৯ মাস ছাড়া পাকিস্তান আমলে কখনোই হয়নি। জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াই করা জায়েজ, কিন্তু সেটিকে বাহানা বানিয়ে দেশ‌ ভাঙ্গা হারাম। ইসলাম সেটির অনুমতি দেয় না। এমন কি আন্তর্জাতিক আইনও তার অনুমতি দেয় না। সে অনুমতি দিলে বিশ্বের বহু দেশে যুদ্ধ লেগে যেত।  একটি দেশে রাজনৈতিক বিরোধ থাকতেই পারে। সেটির নিষ্পত্তি কখনোই দেশ ভাঙার মধ্য দিয়ে হতে পারেনা।

 

যেভাবে বিজয় পেল আগরতলা ষড়যন্ত্র

একাত্তরের যুদ্ধটি ছিল মূলত আগরতলা ষড়যন্ত্রের বিজয়। ষাটের দশকে শেখ মুজিবসহ কিছু বাঙালি সামরিক অফিসারদেরকে নিয়ে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা RAW পাকিস্তান ভাঙার লক্ষ্যে ষড়যন্ত্র শুরু করে। সেটিই ইতিহাসে আগরতলা ষড়যন্ত্র নামে পরিচিত। কিন্তু সে ষড়যন্ত্র পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দাদের কাছে প্রকাশ পায়, ফলে সে ষড়যন্ত্র সে মুহুর্তে ব্যর্থ হয়। কিন্তু ভারত বসে থাকেনি । বসে থাকাটি কখনো ষড়যন্ত্রকারীদের এজেন্ডা হয়না; তারা অন্য রাস্তা খুঁজে। ১৯৬৯ সালে শুরু হয় আইয়ুব বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আইয়ুব সরকার সরকার তখন উন্নয়নের দশক উদযাপন করছে। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে লোক আসছিল অর্থনৈতিক উন্নয়ের পাকিস্তানী মডেল দেখতে। পাকিস্তানের উন্নয়নের প্রশংসা করে প্রখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনে প্রচ্ছদ নিবন্ধ ছাপা হচ্ছে। ভারতে তখন প্রতিবছর দুর্ভিক্ষ। ভারতীয় জিডিপি তখন পাকিস্তানের নিচে।  

১৯৬৯’য়ের ছাত্র আন্দোলন ভারতের হাতে মোক্ষম হাতিয়ার তুলে দেয়। ভারত বিপুল বিনিয়োগ করে ছাত্র লীগের নেতা-কর্মীদের উপর। এ বিনিয়োগের ফল হলো, ছাত্র লীগের নেতাকর্মীরা ভারতমুখী হয় এবং ভারতের পাকিস্তান ভাঙা প্রকল্পের সৈনিকে পরিণত হয়। ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল আলম খান ছিল ষাটের দশকের শুরু থেকেই ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা RAW’য়ের নিজস্ব লোক। সে কলকাতায় গেলে RAW’য়ের লোক চিত্তরঞ্জণ সুতোরের বাসায় উঠতো। সিরাজুল আলম খান তার সাথী আব্দুর রাজ্জাক, কাজী আরেফ এবং আরো কিছু লোককে নিয়ে নিউক্লিয়াস নামে একটি গুপ্ত প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিল। তার লক্ষ্য হয় পাকিস্তান ভাঙা। এরা স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে গোপনে প্রচারপত্র বিলি করতো। মুজিব ও নিউক্লিয়াস একই লক্ষ্যে কাজ করতো।

১৯৬৯’য়ের ছাত্র আন্দোলনের উপর সিরাজুল আলম খান ও তার সাথীদের প্রচুর প্রভাব ছিল। ভারত তাদেরকে নিজ লক্ষ্য অর্জনে ব্যবহার করে। ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের পক্ষ থেকে আগরতলা মামলা প্রত্যাহার এবং মামলার প্রধান আসামী শেখ মুজিবের মুক্তির দাবী উত্থাপন করা হয়। ভারতের কৌশল সফল হয়। আইয়ুব খান সে দাবী মানতে বাধ্য হয়। ফলে মুজিবের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ভাঙার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার যে গুরুতর অভিযোগ ছিল -সেটির বিচার না করেই মুজিবের মুক্তি দেয়া হয়। এটিই হলো আগরতলা ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের পথে ভারতের প্রথম বিজয়। ভারত সফল হয় তার একজন নিজস্ব এজেন্টকে আসন্ন ফাঁসি থেকে মুক্তি দিতে। বিচারকার্য সফল হলে মুজিবের নিশ্চিত ফাঁসি হতো এবং পাকিস্তান বেঁচে যেতে ১৯৭১’য়ে বিচ্ছিন্ন হওয়া থেকে। কারণ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা যে সত্য ছিল তার অকাঠ্য প্রমাণ ছিল। আগরতলা ষড়যন্ত্রকে সত্য বলে সাক্ষী দিয়েছিল  সে মামলার আরেক আসামী লে.কর্নেল শওকত আলী বাংলাদেশের সংসদে দাঁড়িয়ে। শওকত আলী ছিল আওয়ামী লীগ দলের নেতা এবং সংসদের ডিপুটি স্পীকার।   

মুজিব যেভাবে ব্যর্থ করে পাকিস্তান বাঁচানোর শেষ চেষ্টা এবং অনিবার্য করে যুদ্ধ

 পাকিস্তানের  তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালে নির্বাচনে পূর্ব ‌পাকিস্তানীদের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার রাস্তা খুলে দেন। এক ব্যক্তি এক ভোটের ভিত্তিতে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ তথা পার্লামেন্টের বেশিরভাগ আসন পুরো পাকিস্তানিদের জন্য বরাদ্দ করেন -পার্লামেন্টের ৩০০ আসনের পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ১৬৮ আসন এবং পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য ১৩২ আসনফলে সুযোগ আসে সমগ্র পাকিস্তানের উপর পূর্ব পাকিস্তানিদের শাসনের অধিকার। কিন্তু মুজিবের তাতে কোন আগ্রহ ছিল না। মুজিবের একমাত্র লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানকে খন্ডিত করা; এবং সে পরিকল্পনা নিয়ে মুজিব ভারতের সাথে পূর্ব থেকেই কাজ করছিল। এবং সে লক্ষ্যে মুজিব ভারতী গুপ্তচর সংস্থা RAW’য়ের সাথে মিলে আগরতলা ষড়যন্ত্র রচনা করেছিল। অথচ অখণ্ড পাকিস্তান বেঁচে ইসলামী ন্যাটো চালকের আসনে বসতো বাঙালি মুসলিম নেতৃবৃন্দ।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে ভারত সরকার আওয়ামী লীগের জন্য নির্বাচনী বিজয় সুনিশ্চিত করতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে। সে অর্থে  আওয়ামী লীগ দেশের গুন্ডা প্রকৃতি বিপুল লোকদের নিজ দলে শামিল করে। মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলাম,  নিজামে ইসলামী, নুরুল আমিন ও শাহ আজিজ সাহেবদের পাকিস্তান ডিমোক্রাটিক পার্ট (পিডিপি) - এ দলগুলোর কোনটির হাতেই এরকম গুন্ডা প্রকৃতির কেউ ছিল না। ফলে আওয়ামী ও ছাত্র লীগের গুন্ডারা নির্বাচনের আগেই রাজপথ দখলে নেয়। ‌ নির্বাচনী কেন্দ্রগুলিতে আওয়ামী লীগের পক্ষে জাল ভোট রুখার কেউ ছিলনা। ফলে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা ইচ্ছামত জাল ভোট দিয়েছে।  প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে শত শত জাল ভোট দেয়া হয়েছে। ইয়াহিয়া খানকে শেখ মুজিব শাসনতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট বানানোর ওয়াদা দিয়েছিল। সে প্রলোভনের ফলে  সরকারি প্রশাসন আওয়ামী লীগের জন্য সন্ত্রাসের রাস্তা খুলে দিয়েছিল। এর ফল দাঁড়ায় আওয়ামী লীগ অন্য কোন দলকে শান্তিপূর্ণভাবে কোন মিটিং-মিছিল করতে দেয়নি। 

কিন্তু নির্বাচনী বিজয় লাভের পরে শেখ মুজিব তার গোলপোস্ট পাল্টিয়ে ফেলে। সে নির্বাচনে পাকিস্তান ভাঙার পক্ষে রায় হিসেবে চালিয়ে দেয়। পরিকল্পনা নেয়, পাকিস্তানের রাজনৈতিক জটিলতা সমাধানের লক্ষ্যে সকল আলোচনার ব্যর্থ করে দেয়ার। পাকিস্তানের পাঁচটি প্রদেশের মধ্যে শেখ মুজিবের দল আওয়ামী লীগ মাত্র একটি প্রদেশ থেকে বিজয়ী হয়। ‌ ফলে জরুরী ছিল কোয়ালিন সরকার গঠনের। ‌ কিন্তু শেখ মুজিবের তাতে কোনই আগ্রহ ছিল না। মুজিব জিদ ধরেছিল এককভাবে কেন্দ্রে সরকার গঠনে -যা পাকিস্তানের অন্য চারটি প্রদেশের কাছে ছিল সম্পূর্ণ অগ্রনযোগ্য। মুজিব সেটি জানতো। জানতো বলেই মুজিব জিদ ধরেছিল এবং কোন কোয়ালিশন সরকার গঠনে যায়নি । মুজিব সেটি করেছিল পাকিস্তানে কোন রাজনৈতিক সরকার গঠনের চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়ার‌ কৌশল রূপে। মুজিব দাবী করে পূর্ব পাকিস্তান থেকে সামরিক আইন ও সামরিক বাহিনী তুলে নিয়ে তার হাতে শাসন ক্ষমতা দিতে।  ইয়াহিয়া সেটিকে বিনা যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতা মনে করে এবং সে দাবী প্রত্যাখান করে। আলোচনা ভেঙে যায়। আওয়ামী লীগ যুদ্ধের পথ বেছে নেয়। একাত্তরের যুদ্ধ ছিল বস্তুত আগরতলা ষড়যন্ত্রের পরিকল্পিত চুড়ান্ত ধাপ।

 

 

মুজিবের মরণোত্তর বিচার কেন জরুরি? 

আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই ছিল অপরাধীদের দল। মুজিব-হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে আওয়ামী লীগের অপরাধ কর্মের চিত্রটি জনগণ স্বচোখে দেখেছে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের নামে ভোট নিলেও গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়েছে এবং একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। সোনার বাংলা বানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ডেকে এনেছে -যাতে মৃত্যু হয় ১৫ লাখের বেশী মানুষের। স্বাধীনতার নাম নিয়ে বাংলাদেশকে ভারতের গোলাম বানিয়েছে।  দিনের ভোট রাতে ডাকাতি করে নিয়েছে। শত শত মানুষকে গুম করে ও খুন করে লাশ পচিয়ে দিয়েছে। বার বার গণহত্যা চালিয়েছে। ব্যাংক লুট, শেয়ার মার্কেট লুট, প্রকল্পের অর্থ লুট -এধরণের লুটতরাজ দলটির সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছিল। দেশ থেকে বিপুল হারে বিদেশে অর্থপাচার করেছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শুধু পাকিস্তানই নাশকতার শিকার হয়নি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশও। লাভবান হয়েছে কেবল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও হিন্দুত্ববাদী ভারত।

শেখ মুজিব ও তার দল আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অপরাধটি হলো একাত্তরে পাকিস্তান ভাঙ্গা। সে নাশকতাটি ছিল শুধু বাঙালি মুসলিমদের বিরুদ্ধে নয়, বরং সমগ্র মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে। অপরাধটি মুসলিম উম্মাহর মেরুদণ্ড ভাঙার। এ অপরাধ থেকে শেখ মুজিব ও তার দল মাফ পেতে পারেনা। । শরিয়া আইন স্রেফ তেলাওয়াতের জন্য নাযিল হয়নি। শরিয়া অপরাধীর বিচারের হুকুম দেয়। এবং মহান রব ফরজ করেছেন শরিয়ার প্রয়োগ। তাই অপরাধীর বিচার না করাই বড় অপরাধ। তখন বিলুপ্ত হয় আইনে শাসন। তাই আগরতলা ষড়যন্ত্রের বিচার না করাই ছিল বড় অপরাধ। আর তাতে বিজয়ী হয়েছে পাকিস্তান ভাঙার ভারতী এজেন্ডা।

একাত্তরের যুদ্ধ ছিল মূলত আগরতলা ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের যুদ্ধ। আগরতলা ষড়যন্ত্র নিয়ে মুজিবের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত পুরনো মামলাটি তাই নতুন করে শুরু হওয়া উচিত। মুজিবের ‌ মরণোত্তর বিচার হওয়া উচিত। কারণ এ অপরাধীর বিচার না করাটিই হবে বাংলাদেশীদের বড় অপরাধ।  ‌বাংলাদেশের স্বার্থে ইতিহাসের সত্য উন্মোচিত হওয়া উচিত। কারণ মুজিবের আসল চরিত্র জনগণের সামনে অবশ্যই আসা উচিত। নইলে এ অপরাধী দুর্বৃত্তটি অনেকের কাছে পূজণীয় থেকে যাবে। তার অপরাধী চরিত্র তখন আরো অনেককেই অপরাধী হতে উৎসাহ জুগাবে। আর অপরাধ প্রকাশ পেলে অন্যরা তার মত গাদ্দার হতে ভয় পাবে।

 

যে যুদ্ধের শেষ নাই

মুজিবের পতন ঘটেছে। দুর্বৃত্ত ফাসিস্ট হাসিনা পলায়ন করেছে। আওয়ামী লীগও নিষিদ্ধ হয়েছে।‌ কিন্তু ভারতসেবী চেতনা বাংলাদেশে এখনো বেঁচে আছে। এবং শেষ হয়নি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ। এখানের বাংলাদেশের সংকট।ভারতের  ন্যায় সদা আগ্রাসী শত্রুর যুদ্ধ কখনোই শেষ হয় না; শত্রু শুধু যুদ্ধের ময়দান, কৌশল ও সৈনিক পাল্টায়। ভারত এখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এক নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কারণ, বাংলাদেশ তাদের জন্য অতি আকর্ষণীয় টার্গেট। বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক গুরুত্বের কারণে অতীতে পর্তুগীজ, ডাচ, ফরাসী ও ইংরেজীদের কাছেও আকর্ষণীয় ছিল। ভারতও দখলে নিতে যুদ্ধ করবে -সেটিই তো স্বাভাবিক। তাই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভারত আবার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের যুদ্ধে নামাচ্ছে। কারণ বাংলার মাটিতে তারাই হলো ভারতের বিশ্বস্ত তাঁবেদার সৈনিক।

বিষাক্ত সাপ যেমন সুযোগ পেলেই গর্ত থেকে বেরিয়ে ছোবল মারে, এরাও তেমনি ছোবল মারার চেষ্টায় আছে।  ঢাকার রাস্তায় মাঝে মাঝে ঝটিকা মিছিল তো তারই আলামত। ভারত এদের পক্ষে সোচ্চার। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে ভারতের সেবাদাস এই আওয়ামী লীগকে প্রতিরোধ করতেই হবে। নইলে বিপদ আসন্ন। বুঝতে হবে আওয়ামী লীগ স্রেফ একটি দলের নাম নয়, বরং এটি এক বিষাক্ত ঈমাননাশী চেতনার নাম। এদের নাশকতার লক্ষ্য শুধু স্বাধীন পাকিস্তান ছিল না, স্বাধীন মুসলিম বাংলাদেশও। এরা শুধু আওয়ামী লীগ নামে হাজির হয় না, হাজির হয় নানা নামে ও নানা পরিচয়ে। জাতীয় পার্টিসহ ১৪টি দল তো সে অভিন্ন আওয়ামী চেতনারই ধারক-বাহক। সে আওয়ামী চেতনার মূল কথা ভারত-সেবা এবং ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। হাসিনার বিগত ১৬ বছরের শাসনামলে তারা ভারতের সেবাদাস রূপে কাজ করেছে। এরাই বাংলাদেশের শত্রু শক্তি। এদের সনাক্ত করতে হবে এবং নির্মূল করতে হবে।

ভারতসেবী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইটি ‌প্রতিটি দেশপ্রেমিক বাংলাদেশী নাগরিকের নিজস্ব লড়াইদেহ বাঁচাতে পানাহার চাই। তেমনি স্বাধীনতা ও ইজ্জত-আবরু নিয়ে বাঁচতে হলে নিয়মিত যুদ্ধ চাই। নামাজের কাজা আছে, কিন্তু এ যুদ্ধের কাজা নাই। কারণ, শত্রু শক্তি সেগুলি কেড়ে নিতে তৎপর। সে লক্ষ্যে অর্জনে শত্রু শক্তির যুদ্ধ প্রতিনিয়ত। এজন্যই মহান আল্লাহ তায়ালা শুধু নামাজ-রোজা ও হ্জ্জ-যাকাত ফরজ করেননি; জিহাদও ফরজ করেছেন -যাতে মানুষ যুদ্ধ নিয়ে বাঁচতে শেখে। যতদিন ভারতে হিন্দুত্ববাদীদের শাসন আছে, বুঝতে হবে ততদিন বাঙালি মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধও আছে। তাই ভারতের পাশে স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচতে হলে যুদ্ধ নিয়েই বাঁচতে হবে। এর বিকল্প নাই। নইলে অনিবার্য হবে দুর্বিষহ গোলামী -যেমনটি হয়েছিল হাসিনার আমলে। তখন সমগ্র বাংলাদেশ পরিণত হবে কাশ্মীর, গাজা বা আয়না ঘরে। ২৩/০৯/২০২৫    

 

Reply all
Reply to author
Forward
0 new messages