মুসলিম উম্মাহর ব্যর্থতার মূল কারণ
ফিরোজ মাহবুব কামাল
www.drfirozmahboobkamal.com/blog/মুসলিম-উম্মাহর-ব্যর্থতা-2/
অজ্ঞতা যেখানে নিজের ঈমানী দায় ও আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডা নিয়ে
মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে তাঁর নিজের সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানবের মর্যাদা কি? তাদের নিয়ে মহান রব’য়ের এজেন্ডা কি এবং তাদের থেকে তাঁর প্রত্যাশাই কি? কি ভাবে সে এজেন্ডা বিজয়ী হবে এবং কিরূপে সে প্রত্যাশা পূরণ হবে -সে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি কোন গোপন বিষয় নয়। পবিত্র কুর’আনের বহুবার সেগুলি আলোচিত হয়েছে। এ বিশ্বজগতে মহান আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য সৃষ্টি; কিন্তু কোন সৃষ্টিই মহান রবের এজেন্ডার কথাটি বলে না। মানব সৃষ্টির পিছনে মহান রব’য়ের প্রত্যাশা কি -সে কথাটিও কেউ বলে না। অথচ সে কথাগুলি স্পষ্ট ভাবে ও বিস্তারিত ভাবে ঘোষিত হয়েছে পবিত্র কুর’আন। এজন্যই পবিত্র কুর’আন অনন্য ও তার অপরিসীম গুরুত্ব। তাই যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রিয় হতে চায়, তাকে তো সর্ব প্রথম জানতে হয় তাঁর নিজের মর্যাদার কথা এবং সে সাথে তাকে নিয়ে মহান রবের এজেন্ডার কথা। সে মর্যাদা ও এজেন্ডাটি জানার সাথে সাথে তাকে অবশ্যই একাত্ম হতে সে এজেন্ডার সাথে। যে ব্যক্তি একাত্ম হয়, তাকে আখেরাতে পুরস্কৃত করা হয় জান্নাত দিয়ে।
মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষের মর্যাদাটি জানিয়েছেন নিচের আয়াতে:
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَـٰٓئِكَةِ إِنِّى جَاعِلٌۭ فِى ٱلْأَرْضِ خَلِيفَةًۭ ۖ قَالُوٓا۟ أَتَجْعَلُ فِيهَا مَن يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ ٱلدِّمَآءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ ۖ قَالَ إِنِّىٓ أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ ٣٠
অর্থ: “আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফেরেশতাদেরকে বললেন, “নিশ্চয়ই আমি পৃথিবী পৃষ্ঠে খলিফার নিয়োগ দিচ্ছি; তখন তারা (ফেরেশতাগণ) বললো, “আপনি কি সেখান এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যারা সেখানে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? আর আমরা তো আপনার প্রশংসা তাসবিহ পাঠ করছি এবং আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তিনি (মহান রব) বললেন, আমি যা জানি, তোমরা তা জান না।” –(সুরা বাকারা, আয়াত ৩০)।
উপরিউক্ত আয়াতে ঘোষিত হয়েছে মানবের বিশেষ মর্যাদাটি। সে মর্যাদাটি হলো মহান রবের খলিফার। কোন রাজার বা শাসকের খলিফা হওয়াকে মানুষ কত সম্মানজনক মনে করে। আর এখানে মানুষকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর খাস খলিফা রূপে। এ মর্যাদাটি আর কোন সৃষ্টির মেলেনি -এমন কি ফিরেশতাদেরও মেলেনি। ফলে মানবের জীবন একমাত্র তখনই সফল হয়, যখন মহান রবয়ের প্রত্যাশাটি পূরণ হয়। খলিফার কাজ এ নয় যে, সে শুধু তার রবয়ের উদ্দেশ্যে তাসবিহ পাঠ করবে এবং তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করবে। সে কাজটি তো ফেরেশতাকুল দিবারাত্র করছে। খলিফার কাজটি কিরূপ হবে -সে বর্ণনাটি এসেছে নিম্নের আয়াতে:
يَـٰدَاوُۥدُ إِنَّا جَعَلْنَـٰكَ خَلِيفَةًۭ فِى ٱلْأَرْضِ فَٱحْكُم بَيْنَ ٱلنَّاسِ بِٱلْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ ٱلْهَوَىٰ فَيُضِلَّكَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ ۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَضِلُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ لَهُمْ عَذَابٌۭ شَدِيدٌۢ بِمَا نَسُوا۟ يَوْمَ ٱلْحِسَابِ ٢٦
অর্থ: “(আল্লাহ) বললেন, হে দাউদ, নিশ্চয়ই আমি এ পৃথিবী পৃষ্ঠে তোমাকে খলিফা বানিয়েছি; অতঃপর তুমি মানুষের মধ্যে ন্যায় বিচার করো এবং নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবে না -কেননা তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয় তাদের জন্য কঠিন আযাব রয়েছে -কারণ তারা হিসাব দিবসকে ভুলে গিয়েছিল।” –(সুরা ছোয়াদ, আয়াত ২৬)।
খলিফার অর্থ: সে সার্বভৌম ও স্বেচ্ছাচারি হবে না, বরং কাজ করবে তার প্রভুর প্রতিনিধি রূপে। প্রভুর এজেন্ডা হবে তার নিজের এজেন্ডা। তার নিজের কোন রাজনীতি ও যুদ্ধ থাকবে না। প্রভুর রাজনীতি ও যুদ্ধ হবে তার নিজের রাজনীতি ও যুদ্ধ। তাই আল্লাহ তায়ালার খলিফা রূপে প্রতিটি মুসলিমের উপর অর্পিত দায়িত্ব হলো, সে পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে দুর্বৃত্তির নির্মূল ঘটাবে এবং প্রতিষ্ঠা দিবে ন্যায় বিচারের -যার নির্দেশনা এসেছে উপরিউক্ত আয়াতে। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার হবে শরিয়া আইন। তাই জীবনের পথচলায় ঈমানদার কখনোই তাঁর নিজের খেয়াল-খুশি ও প্রবৃত্তির লালসাকে অনুসরণ করবে না, বরং সে অনুসরণ করবে সিরাতাল মুস্তাকীম। আর সে সিরাতাল মুস্তাকীমটি হলো পবিত্র কুর’আন। এখানেই মুসলিমদের মূল ব্যর্থতা। তারা যেমন ব্যর্থ হয়েছে নিজের মর্যাদা ও মহান আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডার কথাটি জানতে, তেমনি ব্যর্থ হয়েছে সে মর্যাদার সুরক্ষায় এবং তাঁর সে মহান এজেন্ডার সাথে একাত্ম হতে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ হলো বাঙালি মুসলিমদের নিদারুন ব্যর্থতা শো’কেস। তবে ব্যর্থতা বিশ্বের অন্যান্য মুসলিমেরও কম নয়।
অপরিহার্য কেন কুর’আনের জ্ঞান?
মানব তাঁর নিজের মর্যাদা এবং মহান আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডা ও প্রত্যাশার বিষয়টি তো একমাত্র তখনই জানতে পারে যখন সে পবিত্র কুর’আন বুঝার সামর্থ্য অর্জন করে। কুর’আন না বুঝে শত বার পাঠ করলেও তাতে মহান রব’য়ের এজেন্ডা ও প্রত্যাশা জানার কাজটি হয় না। আর যে ব্যক্তি তাঁর এজেন্ডা ও প্রত্যাশাকে জানলো না -সে ব্যক্তি উক্ত এজেন্ডার সাথে একাত্ম হবে কি করে? তাঁর প্রত্যাশাই বা পূরণ করবে কিরূপে? এমন অজ্ঞ ব্যক্তিরাই পরিণত হয় শয়তানের খলিফায় এবং একাত্ম হয় শয়তানের এজেন্ডার সাথে। এবং তারা পূরণ করে শয়তানের প্রত্যাশা। তাদের পথটি হলো সিরাতাল মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুতির পথ। বিচ্যুতির প্রতিটি পথই তো জাহান্নামের পথ। প্রশ্ন হলো, এমন ব্যক্তিরা কি কখনো মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রিয় হতে পারে? ব্যক্তির জীবনে সাফল্য ও শান্তি তো একমাত্র তখনই আসে যখন বান্দার এজেন্ডা এবং তার রব’য়ের এজেন্ডা একাত্ম হয়। সে সংহতিটি অপরিহার্য পরকালে জান্নাত পাওয়ার জন্য।
বিজয় শয়তানের এজেন্ডার এবং পরাজয় আল্লাহর এজেন্ডার
অথচ রূঢ় বাস্তবতা হলো, মহান আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডার সাথে একাত্ম হওয়ার বদলে অধিকাংশ মুসলিম একাত্ম হয়েছে নিজ নফসের এজেন্ডা, গোত্রীয় এজেন্ডা, দলীয় এজেন্ডা, শাসকের এজেন্ডা ও শয়তানের এজেন্ডার সাথে। এবং পূরণ করছে গায়রুল্লাহর প্রত্যাশা। ফলে বাংলাদেশের মত মুসলিম দেশে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ন্যায় ফ্যাসিস্ট এবং ইসলাম বিরোধী দুর্বৃত্তের পক্ষে লাখ লাখ খলিফা পেতে কোন অসুবিধা হয়নি। এমন কি একাত্তরে বহু লক্ষ অনুগত খলিফা সৈনিক পেয়েছ পৌত্তলিক ভারত। এবং ব্রিটিশ শাসনামলে লক্ষ লক্ষ খলিফা পেয়েছে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশগণ। এমন কি খলিফা পেয়েছে সোভিয়েত রাশিয়া এবং চীনের কম্যুনিস্টগণ। বিপুল সংখ্যায় খলিফা পাচ্ছে ধর্মব্যবসায়ীরাও। অতি পরিতাপের বিষয় হলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই বাংলাদেশে নিদারুন অভাব হলো মহান আল্লাহ তায়ালার খফিফার। ফলে এ মুসলিম দেশে সম্ভব হয়নি তাঁর সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়ার প্রতিষ্ঠা। এদেশে বিজয় শয়তানের খলিফাদের।
কুর’আনকে যে আঁকড়ে ধরে একমাত্র সেই পায় জান্নাত
মহান আল্লাহ তায়ালার খলিফা রূপে একমাত্র তারাই সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারে যাদের মজবুত বন্ধনটি পবিত্র কুর’আনের সাথে। কারণ খেলাফতের দায়িত্ব পালনে একমাত্র পথ দেখায় পবিত্র কুর’আন। এটিই হলো জান্নাতের একমাত্র রোডম্যাপ। তাই মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্ম হলো অর্থ বুঝে পবিত্র কুর’আন অধ্যয়ন। সেটি শুধু সওয়াবের আশায় নয়, বরং সেটি খলিফার দায়িত্ব পালনে এবং জীবনের পথ চলায় সঠিক রাস্তা তথা সিরাতাল মুস্তাকীম খুঁজে পেতে। যে ব্যক্তি কুর’আনকে আঁকড়ে ধরে, একমাত্র সেই পায় সিরাতাল মুস্তাকীম। তাই কুর’আনের বিকল্প নাই। এ বিষয়টিকে মহান আল্লাহ তায়ালা অতি স্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন পবিত্র কুর’আনের নিচের আয়াতে:
وَمَن يَعْتَصِم بِٱللَّهِ فَقَدْ هُدِىَ إِلَىٰ صِرَٰطٍۢ مُّسْتَقِيمٍۢ
অর্থ: “যে শক্ত ভাবে ধরে আল্লাহকে (তথা আল্লাহর কুর’আনকে) সে পরিচালিত হয় সিরাতুল মুস্তাকীমের পথে।”-(আল-ইমরান, আয়াত ১০১)।
উপরিউক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা কুর’আনের মাঝে তাঁর নিজের আত্মসত্ত্বার প্রকাশ বুঝিয়েছেন। তাই যারা কুর’আনকে আঁকড়ে ধরে তারা আঁকড়ে ধরে আল্লাহ তায়ালাকে। সুরা আল-ইমরানের ১০৩ নম্বর আয়াতে পবিত্র কুর’আনকে আল্লাহ তায়ালা তাঁর নিজের রশি রূপে আখ্যায়ীত করা হয়েছে। বলা হয়েছে,
وَٱعْتَصِمُوا۟ بِحَبْلِ ٱللَّهِ جَمِيعًۭا وَلَا تَفَرَّقُوا۟ ۚ
অর্থ: “এবং তোমরা আল্লাহর রশি (কুর’আন) কে শক্ত ভাবে ধরো এবং বিভক্ত হয়ো না।”
খলিফার দায়িত্ব কেবল প্রভুর ইচ্ছা পূরণ
মহান রব চান, তাঁর খলিফাদের মাঝে প্রতিষ্ঠা পাক সীসাঢালা দেয়ালসম একতা। শয়তান চায় বিভক্তি। তাই যারা একতাবদ্ধ হয় তারা পূরণ করে মহান আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছাকে; আর যারা বিভক্ত হয় তারা পূরণ করে শয়তানের ইচ্ছাকে। ৫০টির অধিক রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে মুসলিমগণ বস্তুত শয়তানের ইচ্ছাকেই পূরণ করেছে। বিভক্ত মুসলিমদের পক্ষে অসম্ভব হলো খেলাফতের দায়িত্ব পালন। এবং অসম্ভব হলো দ্বীনের বিজয়। এজন্যই মুসলিম বিশ্বের কোথাও সম্ভব হয়নি নবীজী (সা:)’র অনুকরণে ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ। তারা বরং প্রতিষ্ঠা দিয়েছে জাতীয়তাবাদী, গোত্রীয়, রাজতন্ত্রী, স্বৈরাচারী ও সেক্যুলার রাষ্ট্র। একতাবদ্ধ হওয়া তাই ফরজ। এবং বিভক্তি হলো হারাম।
উপরিউক্ত আয়াত অনুযায়ী মুসলিমদের একতার ভিত্তি কোন ভাষা, বর্ণ, গোত্র বা আঞ্চলিকতার বন্ধন নয়, বরং সেটি হবে পবিত্র কুর’আন। পবিত্র কুর’আনকে আল্লাহ তায়ালার পবিত্র রশি বলা হয়েছে। ফলে কুর’আন থেকে দূরে থাকা বা কুর’আন বুঝতে ব্যর্থ হওয়ার অর্থ: মহান রব’য়ের সাথে সম্পর্কহীনতা। ফলে বিপদটি ভয়ানক। বিপদটি জান্নাতের বদলে জাহান্নামে পৌঁছার। তবে কুর’আনকে শক্ত ভাবে ধরার অর্থ না বুঝে কুর’আন বুকে জড়িয়ে চুমু খাওয়া নয়, না বুঝো তেলাওয়াত নয়। বরং সেটি হলো মহান আল্লাহ তায়ালার এ সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থকে বুঝা এবং তা পদে পদে অনুসরণ করা। যারা জান্নাতে যেতে চায় তাদের জন্য পবিত্র কুর’আন বুঝা ও তা অনুসরণের কোন বিকল্প নাই।
যে পথটি অনিবার্য ব্যর্থতার
ব্যক্তির ব্যর্থতা তখনই অনিবার্য হয় যখন সে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয় মহান আল্লাহ তায়ালা যা চান, সেটি পূরণে। তবে সে ব্যর্থতার শুরুটি হয় মহান আল্লাহ তায়ালা কি চান সেটি সঠিক ভাবে অনুধাবন করার ব্যর্থতা থেকে। আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দা থেকে কি চান -সেটি সরাসরি জানতে হয় খোদ আল্লাহ তায়ালা থেকে। আর সেটি জানতে হলে কুর’আন বুঝতে হয়। কারণ, সেটি তিনি জানিয়ে দিয়েছেন একমাত্র পবিত্র কুর’আনে।
আল্লাহ তায়ালার চাওয়াটি অতি স্পষ্ট। তিনি চান, প্রতিটি মুসলিম হবে তাঁর আজ্ঞাবহ সৈনিক। বস্তুত মুসলিম হওয়ার অর্থই হলো মহান আল্লাহ তায়ালার সৈনিক হয়ে যাওয়া। পবিত্র কুর’আনে মুসলিম উম্মাহকে “হিজবুল্লাহ” তথা আল্লাহর দল বলা হয়েছে। আর যারা তার সৈনিক নয়, পবিত্র কুর’আনে তাদের পরিচয়টি “হিজবুশ শায়তান” তথা শয়তানের দল। প্রশ্ন উঠতে পারে, সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ তায়ালা আবার দলের বা সৈনিকের প্রয়োজন কি? তিনি যা ইচ্ছা করেন -সেটিই তো সাথে সাথে হয়ে যায় (কুন, ফা ইয়াকুন)। তাছাড়া বিশ্বজগতের সব কিছুই তো মহান আল্লাহ তায়ালার সৈনিক। পবিত্র কুর’আনে সে বর্ণনা এসেছে এভাবে,
وَلِلَّهِ جُنُودُ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۚ وَكَانَ ٱللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا
অর্থ: “এবং আল্লাহর জন্যই আসমান ও জমিনের সৈন্যরা। তিনিই সর্বক্ষমতাবান ও সর্বজ্ঞানী”-(সুরা ফাতাহ, আয়াত ৭)।
মহান আল্লাহ তায়ালা মুসলিমদেরকে নিজের সৈনিক রূপে দেখতে চান দুটি প্রয়োজনে। এক). মহান আল্লাহ তায়ালার রয়েছে নিজস্ব এজেন্ডা। সেটি হলো পৃথিবী পৃষ্ঠে তাঁর সার্বভৌমত্ব ও আইনের প্রতিষ্ঠা; এবং সকল ধর্ম ও জীবন দর্শনের উপর ইসলামের বিজয়। তিনি চান, ইসলামকে বিজয়ী করার কাজটি কোন ফেরেশতা বাহিনী বা অন্য কোন সৃষ্টি করবে না, সেটি করবে তার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানব। দুই). করুণাময় আল্লাহ তায়ালা তার সর্বশ্রেষ্ঠ মানবসৃষ্টির জন্য সৃষ্ঠি করেছেন অপূর্ব নিয়ামত ভরা আরেক শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি -সেটি হলো জান্নাত। তবে সে জান্নাত সবার জন্য নয়। জান্নাত দেয়ার আগে তিনি ঈমান ও আমলের পরীক্ষা নিতে চান। দুনিয়ার এ জীবন হলো মূলত সে পরীক্ষাস্থল। ঈমানের পরীক্ষা নেয়া হয় জিহাদের ময়দানে। সেটি জান ও মালের কুরবানীর মধ্য দিয়ে। ঈমানের সে পরীক্ষায় যারা পাশ করবে -একমাত্র তাদেরকেই তিনি জান্নাত দিয়ে পুরস্কৃত করবেন। যারা ফেল করবে তাদের জন্য বরাদ্দ হলো জাহান্নাম।
মুমিনদের থেকে কাফির-মুনাফিকদের বাদ দেয়ার কাজে জিহাদের এ পরীক্ষা ছাঁকুনির কাজ করে। পরীক্ষায় তো তারাই পাশ করে -যারা তাঁর কুর’আনে ঘোষিত এজেন্ডাকে বিজয়ী করতে নিজেদের জান, মাল, মেধা ও শ্রমের বিনিয়োগ করে। তাই মুসলিমকে শুধু নামাজী, রোজাদার ও হাজী হলে চলে না, অবশ্যই তাকে মহান আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করার কাজে সৈনিক হতে হয়। সে লড়াই হলো মুমিনের জিহাদ। নামাজ-রোজা যেমন প্রতিটি মুসলিমের ফরজ; তেমনি ফরজ হলো এ জিহাদ। নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত পালন করে মানুষ মুনাফিক হতে পারে -যদি তাদের জীবনে সে জিহাদ না থাকে। মুনাফিক সরদার আব্দুল্লাহ বিন উবাইকে মুনাফিক বলার কারণ তো এই জিহাদশূণ্যতা।
অথচ বিপুল সংখ্যক মুসলিম হলো সেক্যুলারিস্ট; তারা যুদ্ধ করে ভাষা, বর্ণ ও নিজ নিজ বিভক্ত ভূগোলের নামে। কিন্তু তাদের সামান্যতম আগ্রহ নাই আল্লাহর পথে জিহাদে। তাদের আগ্রহ নাই তাঁর শরিয়তকে রাষ্ট্রের বুকে প্রতিষ্ঠা দেয়ায়। বরং তাদের রাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সশস্ত্র লড়াইটি শরিয়ত প্রতিষ্ঠার প্রতিরোধে। মহান আল্লাহ তায়ালার সৈনিক হওয়ার বদলে তার সৈনিক হয় স্বৈরাচারী শাসকের, রাজার বা সেক্যুকলার রাষ্ট্রের -এমন কি বিদেশী কাফির শক্তির। নামে মুসলিম হলেও তারা বাঁচছে মহান আল্লাহ তায়ালার সাথে গাদ্দারী নিয়ে। সে গাদ্দারীর সংস্কৃতিই মুসলিম বিশ্বে মহামারীর রূপ ধারণ করেছে। মুসলিম উম্মাহর পরাজয়ের মূল কারণ এই বিপুল সংখ্যক গাদ্দার তথা বিশ্বাসঘাতক মুসলিম।
প্রশ্ন হলো, যারা মহান রব’য়ের সৈনিক হতে যারা ব্যর্থ, তারা কি মুসলিম হতে পারে? আজকের মুসলিমদের সকল ব্যর্থতার মূল কারণ এখানেই। তাদের ব্যর্থতা যেমন সত্যিকার মুসলিম হওয়ায়, তেমনি ঈমানের পরীক্ষায় পাশ করায়। পাশ করা দূরে থাক, অধিকাংশ মুসলিম তো ঈমানের পরীক্ষা পর্ব তথা জিহাদের পর্ব থেকে ইচ্ছা করেই দূরে থাকছে। অনেকে সেটিকে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সন্ত্রাস বলছে। তারা নিজেদের ধর্মকর্ম স্রেফ কালেম পাঠ, নামাজ, রোজা, হজ্জ,যাকাত ও দোয়াদরুদের মাঝে সীমিত। নবীজী (সা:) এবং তাঁর প্রতিটি সাহাবী যে জিহাদে অংশ নিলেন এবং অর্ধেকের বেশী সাহাবা শহীদ হলেন -সে পথে তারা হাঁটতে রাজী নয়। অথচ সেটিই তো একমাত্র জান্নাতের পথ তথা সিরাতাল মুস্তাকীম। জান্নাতের পথের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটুকুর গতিপথ তো জিহাদের মধ্য দিয়ে। বিস্ময়ের বিষয় হলো, পরীক্ষা পর্বে তথা জিহাদের অঙ্গণে প্রবেশ না করেই তারা জান্নাতে প্রবেশের প্রমোশন চায়। সেটি তো অনিবার্য ব্যর্থতার পথ।