স্বাধীনতার মূল্য ও বাঙালি মুসলিমের সামনে চ্যালেঞ্জ

2 views
Skip to first unread message

Firoz Kamal

unread,
Oct 22, 2025, 8:00:35 PMOct 22
to

স্বাধীনতার মূল্য ও বাঙালি মুসলিমেসামনে চ্যালেঞ্জ

ফিরোজ মাহবুব কামাল

www.drfirozmahboobkamal.com/blog/স্বাধীনতার-মূল্য-ও-বাঙাল/

আলু-পটলও মূল্য দিয়ে কিনতে হয় সে তুলনায় স্বাধীনতা, জান-মালের নিরাপত্তা, ইজ্জত ও সভ্য জীবনের মূল্য তো অনেক বেশী। সেগুলি ভোগ করতে হলে অর্থ ও রক্ত ব্যয়ে যুদ্ধ করে সে সবের মূল্য পরিশোধ করতে হয়যাদের সে সামর্থ্য নাই তাদের বাঁচতে হয় গোলামী নিয়ে। সে মূল্য প্রতি দিন পরিশোধ করছে ফিলিস্তিনীরা মূল্য পরিশোধ করছে কাশ্মীর ও আরাকানের মুসলিমরাবাঙালি মুসলিমদের সামনে বিশাল চ্যালেঞ্জ। কারণ, দেশটির স্বাধীনতার অসংখ্য শত্রু যেমন দেশের ভীতরে রয়েছে, তেমনি বাইরেও রয়েছে। একাত্তরে ভারত একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী বাংলাদেশ বানানোর জন্য যুদ্ধ করেনি। ভারত কখনোই চায় না, বাংলাদেশ আরেক শক্তিশালী পাকিস্তানে পরিণত হোক। ভারত চেয়েছে বিচ্ছিন্ন বাংলাদেশ প্রতিক্ষণ বাঁচবে ভারতের রাডারের নীচে।

ভারত কিরূপ বাংলাদেশ চায় -সেটি একাত্তরে অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী তাজুদ্দীনের সাথে ভারত সরকারের স্বাক্ষরিত ৭ দফা চুক্তি করলেই  বুঝা যায়। সে চুক্তিতে স্পষ্ট ঘোষণা ছিল, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী থাকবে না; স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতিও থাকবে না। প্রশাসনে থাকবে ভারতীয়রা। দুই দেশের মধ্যে থাকবে মুক্ত বাণিজ্য। ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশের বাজারে পাবে অবাধ প্রবেশের সুযোগ।  সেনাবাহিনীর বদলে থাকবে পুলিশের ন্যায় মিলিশিয়া বাহিনী। এবং ভারতের পররাষ্ট্র নীতিই হবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি। ভারত কিরূপ বাংলাদেশ চায় সেটি আরো প্রকাশ পায় ফ্যাসিস্ট মুজিব ও ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসিত পরাধীন বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সমর্থন দেখে।

২০২৪ সালের  জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যেভাবে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি হলো, সেটি ভারতের কাছে আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। সেটি বুঝা যায়, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় মিডিয়া পরিচালিত যুদ্ধ দেখে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যেন তাদের  কাছে অসহ্য। বাঙালি মুসলিমগণ ইসলাম নিয়ে বেড়ে উঠুক এবং ইসলামী বিধান প্রতিষ্ঠা দিক -সেটিও ভারত হতে দিতে রাজী নয়। কারণ, তাদের রয়েছে প্রচণ্ড ইসলাম ভীতি। তারা চায়, মুজিব-হাসিনার ন্যায় ভারতের সেবাদাসদের শাসিত এক পরাধীন বাংলাদেশ। বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে কিছু আছে -তা ভারত মানতে রাজী নয়। তাদের কথা বাংলাদেশের যা কিছু অভ্যন্তরীণ বিষয় তা ভারতেরও অভ্যন্তরীণ বিষয়। সে কথাটি সম্প্রতি বলেছে ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও বিজিপি দলীয় রাজ্য সভার সদস্য হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।     

ভারতের পাকিস্তান ভাঙাএজেন্ডাটি ছিল ১৯৪৭ সাল থেকেই সে কাজে মুক্তিবাহিনীর প্রয়োজন ছিল না, পাকিস্তান ভাঙাসামর্থ্য ভারতের একারই ছিল তাছাড়া মুক্তবাহিনী নভেম্বর অবধি যুদ্ধ করে একটি জেলা বা মহকুমা দূরে থাক একটি থানাও স্বাধীন করতে পারিনি। ভারত মুক্তি বাহিনীকে সাথে রেখেছে বিশ্ববাসীকে ধোকা দেয়ার জন্য। সেটি নিজেদের পাকিস্তান ভাঙার এজেন্ডাকে লুকানোর জন্য। বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র হওয়ার কারণে মুসলিম উম্মাহর কাছে পাকিস্তানের আলাদা মর্যাদা ছিল। ইন্দোনেশিয়া থেকে পাশ্চাত্য বিশ্ব যখন পুর্ব তিমুরকে বিচ্ছিন্ন করে, তখন বিশ্বের তাবত মুসলিম দুঃখ পেয়েছিল। দুঃখ পেয়েছিল তখনও যখন আফ্রিকার সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র সূদানকে পাশ্চাত্য শক্তিবর্গ বিভক্ত করে। একটি মুসলিম রাষ্ট্র খণ্ডিত হবে এবং মুসলিমদের মন বেদনাসিক্ত হবেনা -সেটি হতেই পারেনা। সে বেদনাটুকুই তো ঈমানের লক্ষণ। কারণ, নবীজী (সা:)’র হাদীস, মুসলিম উম্মাহ একটি দেহের মত। এক অঙ্গে আঘাত লাগলে সারা দেহ ব্যথীত হয়।  মুসলিম দেশ ভাঙা দূরে থাক, মুসলিমে ঘর ভাঙলেও তো অন্য মুসলিম কষ্ট পায়। তাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের আক্রমণে তাবত দেশের মুসলিমরা বিক্ষুব্ধ হয়েছে। মুক্তিবাহিনীকে দেখিয়ে মুসলিম বিশ্বের কাছে ভারত বলেছে, পাকিস্তান ভাঙার জন্য ভারত দায়ী নয়। পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা পেতে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি মুসলিমরা নিজেরাই যুদ্ধ করেছে।

স্বাধীনতা নিয়েও কি মিথ্যাচার কম হয়েছে? স্বাধীনতা অর্থ হলো ভোটের অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার ও মিটিং-মিছিলের অধিকার নিয়ে বাঁচা সে অধিকার পাকিস্তান আমলেও ছিল মুজিব নিজে ইচ্ছামত জনসভা করার যে স্বাধীনতা পাকিস্তানে পেয়েছে -সে সুযোগ কি কোন বিরোধী দলীয় নেতা মুজিবের শাসনামলে বা হাসিনার আমলে বাংলাদেশে পেয়েছে? অথচ বাঙালি মুসলিম সে স্বাধীনতা হারিয়েছে একাত্তরের পর এবং সেটি ফ্যাসিস্ট মুজিব ও ফ্যাসিস্ট হাসিনার হাতে বিনিময়ে পেয়েছে গুম, খুন, চুরি-ডাকাতি, ধর্ষণ, হত্যা, গণহত্যা, আয়নাঘর ও সন্ত্রাসের রাজনীতি শুধু বাঙালি হলেই মানুষ হওয়া যায় না; মানুষ হতে হলে তো আরো অনেক দূর এগুতে হয়মানবিক গুণে বেড়ে উঠতে হয়। ফ্যাসিস্ট হলে তো মানুষ হওয়া যায়না। সেটি তো পশুত্বের নৃশংস রূপ। ঈমানদারের পর্যায়ে পৌঁছতে হলে তো ইসলামকে বিজয়ী করার জিহাদে নামতে হয়। কিন্তু বাঙালি মুসলিম জীবনে সে এগুনোর চেষ্টা কই? মানুষ রূপে না বাড়লে গণতন্ত্রের প্রতি রুচিই বা সৃষ্টি হবে কী করে? আর ভাল রুচি না সৃষ্টি হলে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই বা হবে কিরূপে?

প্রতিটি মুসলিম দেশেই ইসলামের পক্ষের ও বিপক্ষের শক্তির মাঝে লাগাতর যুদ্ধ থাকে। সেসব যুদ্ধে কাফের শক্তির বিপুল বিনিয়োগও থাকে। কারণ মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে নীরব ও নিষ্ক্রিয় থাকাটি শয়তানের রীতি নয়। ১৯১৭ সালে আরব বিশ্বে কাফের শক্তির বিনিয়োগটি ছিল বিশাল। তাদের স্ট্রাটেজী ছিল আরব জাতীয়তাবাদী ও গোত্রবাদীদের সাথে নিয়ে উসমানিয়া খলিফাকে বিলুপ্ত করা। সে লক্ষ্য অর্জনে তারা সফল হয়েছে। ফলে বিভক্ত আরব মানচিত্রের মাঝে প্রতিষ্ঠা পায় ইসরাইল। আজকের ফিলিস্তিন সংকটের জনক ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ এবং সে সংকটের শুরু ১৯১৭ সালে ব্রিটিশদের দখলদারি পর থেকে। উসমানিয়া খেলাফত ভাঙতে অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র ব্রিটেন এবং ফ্রান্স। পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে ইসরাইল হলো তাদের proxy state; মুসলিম বিশ্বে পাশ্চাত্যের স্বার্থ দেখাই ইসরাইলে মূল কাজ। তাই সাবেক মার্কিন প্রসেডেন্ট জো বাইডেন বলেছিল, ইসরাইল না থাকলে আমাদের ইসরাইল নির্মাণ করতে হতো।  

একাত্তরে পাকিস্তান ভাঙতে ভারত যুদ্ধ করেছে। ভারত চেয়েছে, বাংলাদেশ হবে ভারতের proxy state; শুধু বাংলাদেশে নয় সমগ্র উত্তর পূর্ব ভারতের ৭ রাজ্যে ভারতীয় স্বার্থের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিবে বাংলাদেশ। ভারত চায়, সে কাজে বাংলাদেশ তার নিজের বুক চিরে করিডোর দিবে, লজিস্টিক পারাপারের সুবিধা দিবে এবং নদী ও সমুদ্র বন্দরের সুবিধা দিবে। অনুপ চেটিয়ার মত কোন বিদ্রোহী নেতা বাংলাদেশে আশ্রয় নিলে বাংলাদেশ তাকে ভারতে হাতে তুলে দিবে। এবং কঠোর ভাবে দমন করবে ইসলামপন্থীদের উত্থানকে। হাসিনা তো সেটিই করেছে।

ভারতের proxy state’য়ের দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই হাসিনার আমলে RAW য়ের অফিস স্থাপিত হয়েছিল ক্যান্টনমেন্টেগুলির মধ্যে। ভারতের এজেন্টরা কাজ করেছে NSI ও  DGFI য়ের অফিসারদের সাথে মিলে মিশে। বস্তুত  proxy state হওয়ার কারণেই বাংলাদেশের সমালোচনায় করায় আবরার ফাহাদকে লাশ হতে হয়েছে। এবং মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে আসা পিরোজপুরের সুখ রঞ্জন বালিকে হাইজ্যাক করে কলকাতায় রাখা হয়েছে। এবং বিএনপির সালাউদ্দীন আহমেদকে উঠিয়ে নিয়ে ভারতের শিলংয়ে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হলে ভারতীয় গোয়েন্দা এজেন্টগণ কি এরূপ স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারতো। তাই বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ হলো proxy state থেকে স্বাধীন দেশে উন্নীত হওয়ার। স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও ইজ্জত নিয়ে বাঁচতে হলে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই বাঁচতে হবে। বিকল্প পথ নাই।

Reply all
Reply to author
Forward
0 new messages