জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের যে স্লোগান হাসিনার পতন ঘটায় এবং দেশী-বেদেশী ষড়যন্ত্রের মুখে বাংলাদেশ

0 views
Skip to first unread message

Firoz Kamal

unread,
Aug 27, 2025, 3:12:46 PM (12 days ago) Aug 27
to

জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে যে স্লোগান হাসিনার পতন ঘটায়

এবং দেশী-বেদেশী ষড়যন্ত্রের মুখে বাংলাদেশ

                                                                                                                                      ফিরোজ মাহবুব  কামাল 

                                                                                                     www.drfirozmahboobkamal.com/blog/জুলাই-আগস্ট-বিপ্লবের-যে-স/


             

 

স্লোগানের শক্তি ও হাসিনার পলয়ন

জুলাই আগস্ট বিপ্লবের সবচেয়ে বিপ্লবী স্লোগান ছিল "আমি কি তুমি কি? রাজাকার, রাজাকার"। এ স্লোগান দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী যখন বীর দর্পে গর্জে উঠে, তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীগণ হল থেকে দ্রুত লেজগুটিয়ে পালায়ন করে। এরপর তারা আর নিজ আস্তানায় ফিরে আসতে পারিনি। এভাবেই সেদিন পতন ঘটে হাসিনার সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গের -যে দুর্গের সেপাইরা এতো কাল ঢাকার রাজপথকে নিয়ন্ত্রণে রাখতো। দুর্গের পতন ঘটলে, শাসককেও যেতে হয়। এ স্লোগান হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে অপ্রতিরোধ্য জোয়ার আনে এবং বিপ্লবের গতি দ্রুত পাল্টে দেয়। কয়েক দিনের মধ্যেই হাসিনা প্রাণ ভয়ে পালাতে বাধ্য হয়। এই হলো স্লোগানের শক্তি।

স্লোগানের মধ্য দিয়ে একটি চেতনা, দর্শন ও তাড়না কথা বলে। ব্র্রিটিশ শাসনামলে সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিমগণ রাজপথ কাঁপিয়ে তুলেছিল “লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান (অর্থ:যুদ্ধ করে নিব পাকিস্তান) এই স্লোগান দিয়ে। ব্রিটিশ সরকার ও ভারতীয় কংগ্রেস তখন সে স্লোগানের কাছে নতি স্বীকারে বাধ্য হয়েছিল। এ স্লোগানের মাঝে ছিল জিহাদের দর্শন ও জজবা -যা দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিমদের একতাবদ্ধ করেছিল। ব্রিটিশ সরকার বুঝতে পেরেছিল, মুসলিমদের পাকিস্তান দাবী না মানলে  চট্টগ্রাম থেকে পেশোয়ার ব্যাপী যে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হবে সেটিকে সামাল দেয়ার সামর্থ্য তাদের নাই। ১৯৪৬ সালে কলকাতা, নোয়াখালী ও বিহারে হিন্দু ও মুসলিমদের মাঝে যে দাঙ্গা শুরু হয় সেটি সামাল দিতেই ব্রিটিশ সরকার হিমসিম খাচ্ছিল। চৌকশ ব্রিটিশদের বিদায়ের পর মুসলিমদের স্বাধীনতা লড়াইকে দমিয়ে রাখা যে কংগ্রেস সরকারের পক্ষে অসম্ভব হবে সেটি কংগ্রেস নেতারা সহজেই বুঝতে পারে। ফলে ব্রিটিশ ও কংগ্রেস -এ উভয় পক্ষই দ্রুত পাকিস্তান দাবী মেনে নেয়। এই ছিল “লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান” স্লোগানের শক্তি।     

 

কারা ছিল রাজাকার এবং কি ছিল তাদের দর্শন?

রাজাকার শব্দের মধ্যেও একটি দর্শন, জজবা ও তাড়না ছিল। সেটি ছিল ভারতী আগ্রাসী আধিপত্যবাদে বিরুদ্ধে জিহাদের এবং সে জিহাদে প্রাণদানের। একাত্তরের রাজাকারগণ ছিল ইসলামী চেতনায় উজ্জীবিত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার বহু হাজার ছাত্র। তখন ইসলামী ছাত্র সংঘ এবং জমিয়তে তালাবিয়ায়ে আরাবিয়া নামে দুটি ইসলামপন্থী ছাত্র সংগঠন কাজ করতো। ইসলামী ছাত্র সংঘ ছিল স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সংগঠন। এরাই পরবর্তীতে ইসলামী ছাত্র শিবিরের জন্ম দেয়। এবং জমিয়তে তালাবিয়ায়ে আরাবিয়া ছিল মাদ্রাসা ছাত্রদের। রাজনীতির ময়দানে এরা ছিল জামায়াত সমর্থক। এদের হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়। রাজাকার বাহিনীতে সাথে যোগ দেয় কওমী মাদ্রাসার ছাত্ররাও। এরা ছিল দেওবন্দী উলামাদের সংগঠন নিজামে ইসলামী পার্টির সমর্থক। নিজামে ইসলামী পার্টির কেন্দ্রী নেতা পটিয়া মাদ্রাসার মাওলানা সিদ্দিক আহমেদ এবং কিশোর গঞ্জের মাওলানা আতাহার আলী সাহের পাকিস্তান ভাঙ্গাকে হারাম বলে ফতোয়া দেন। পাকিস্তান বাঁচানোর যুদ্ধকে তারা জিহাদ বলে ফতোয়া দেন। এছাড়া রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয় মুসলিম লীগসহ অন্যান্য পাকিস্তানপন্থী দলের কর্মীরাও। সে সময় অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদ ছিল মুসলিম লীগের সমর্থক গ্রাম্য মাতবরদের। রাজাকার বাহিনী গড়ে তোলায় তাদেরও ভূমিকা ছিল। যারা বলে, রাজাকার দলে শামিল হয়েছিল অর্থের লোভে কিছু বেকার ভবঘুরে দরিদ্র যুবক -তারা সত্য বলে না। তারা রাজাকারদের চরিত্রহানী করে মাত্র।    

রাজাকরগণ ভারতীয় আগ্রাসন ও হিন্দুত্ববাদের বিপদ বুঝতো। তারা জানতে ভারত কখনোই বাঙালি মুসলিমদের স্বাধীনতা দিতে যুদ্ধ করবে না। যুদ্ধ করবে কেবল স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে গোলাম বানাতে এবং লুণ্ঠন করতে। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের পর ভারতীয় বাহিনী সীমাহীন লুণ্ঠনের মধ্য দিয়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ উপহার দিয়ে সেটাই প্রমাণ করেছে। রাজকারদের বীরত্ব পূর্ণ ভূমিকার কারণেই মুক্তিবাহিনী তাদের ৯ মাসের যুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একটি জেলা বা মহকুমা দূরে থাক, একটি থানাও দখলে নিতে পারিনি। তাদের অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে ডিসেম্বরের প্রথম দিকে আড়াই লাখ সৈন্যের বিশাল ভারতীয় স্থল বাহিনী, সে সাথে বিশাল বিমান ও নৌ বাহিনীর সর্বাত্মক হামলার।

 

কি ভাবে শুরু হলো “আমি কে? তুমি কে? রাজাকার, রাজাকার” এ স্লোগান?       

স্লোগান হাওয়াই জন্ম নেয়। বরং উত্তপ্ত পরিস্থিতি স্লোগানের জন্ম দেয়। স্লোগান মূলত এমন এক রণহুংকার -যা সৈনিকদের উজ্জীবিত করে। প্রশ্ন হলো, কি ভাবে শুরু হলো “আমি কে? তুমি কে? রাজাকার, রাজাকার” এ স্লোগানের?  যারা শাহাবাগী চেতনার ধারক তারা কখনোই এমন‌ স্লোগান মুখে আনবে না। যারা ছাত্র লের সদস্য, তারাও কখনো "আমি রাজাকার" বলবে না। কারণ তারা তো একাত্তরের চেতনার ধারক; রাজাকার মাত্রই তো তাদের শত্রু। যারা বাম ঘরানার, তারাও এ স্লোগান কখনো মুখে আনবে না। কারণ এ স্লোগানের মাঝে তারা ইসলাম ও উর্দু-ফার্সীর গন্ধ পায়। এমনকি যারা ইসলামী ছাত্র শিবিরের সদস্য তারাও "আমি রাজাকার" এ স্লোগান দিবে না। কারণ তারা তো একাত্তরের চেতনাকে ধারণ করে বাঁচতে ব্যস্ত এবং ১৬ ডিসেম্বরে প্রতি বছর বিজয় উৎসব করে। রাজাকার শব্দটি তাদের কাছে এখন অসহ্য গালি। জামায়াতের নেতা ডা. শফিকুর রাহমানকে এক ব্যক্তি রাজাকার বলে গালি দিয়েছিল। তাতে তিনি এতটোই রাগে ফেটে পড়েছিলেন যে, সে ব্যক্তির জিহবাকে তিনি নিজের পায়ের নিচে ফেলে থেললে দিতে চিয়েছিলেন। নিজের ভাই যে মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার ছিলেন -সে কথাও সেদিন তিনি গর্ব ভরে শুনিয়েছিলেন। এ থেকে বুঝা যায়, ডা. শফিকুর রাহমানের কাছে রাজাকার কত ঘৃণার এবং একাত্তরের চেতনাধারীরা কত গর্বের। তাঁর সে কথার ভিডিও ক্লিপ ইউ টিউবে দেখা যায়। অথচ এমন রাগ বাংলাদেশের সাবেক প্রধান মন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমানের মাঝে কোন দিন দেখা যায়নি। অথচ তাকে সংসদে আওয়ামী লীগের সদস্যদের পক্ষ থেকে নিয়মিত রাজাকার বলা হতো। শাহ আজিজুর রহমান রাজাকারের মর্যাদা ও কুরবানী বুঝতেন। তিনি ১৯৭১’য়ে জাতিসংঘ অধিবেশনে পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলতে জুলফিকার আলী ভূট্টোর সাথে জাতিসংঘে গিয়েছিলেন। একাত্তরে যারা পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিলেন তারা যে বাংলাদেশের শত্রু নয় তা জনাব শাহ আজিজ, সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুর রহমান বিশ্বাস, সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী মশিউর রহমান এবং সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলীমের ন্যায় অনেকেই প্রমাণ করেছেন।  

বস্তুত এ স্লোগানটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে  দিয়েছিল ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্ররা।‌ এরাই হলো ছাত্রদের শতকরা ৯ ভাগ -যারা ছাত্র দল, ইসলামী ছাত্র শিবির, ছাত্র ইউনিয়নসহ কোন দলের সদস্য বা নেতা-কর্মী নয়। ফলে এ স্লোগানের মাঝে ছিল দলীয় প্রভাবমুক্ত সম্মিলিত চেতনার বহিঃপ্রকাশ। সে চেতনার মাঝে ছিল ইসলামের প্রতি প্রবল অঙ্গীকার এবং ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধের যুদ্ধের প্রতিশ্রুতি। বাংলাদেশের এরাই ভবিষ্যৎ।

এটি নিশ্চিত যে, "আমি কে? তুমি কে? রাজাকার, রাজাকার" -ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের স্বতঃস্ফুর্ত স্লোগানটি ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির ও মাস্টার মাইন্ড নামে পরিচিত নেতা-কর্মীদের কাছে আদৌ ভালো লাগেনি। এ স্লোগান তাদের একাত্তরের বয়ানের প্রতিনিধিত্ব করেনা। তাই পরে স্লোগানে তারা দ্রুত পরিবর্তন আনে। "আমি কে? তুমি কে? রাজাকার, রাজাকার" এর সাথে যোগ করে "কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার" এ অংশটুকু। এভাবে তারা ছাত্রদের দেয়া স্বতঃস্ফুর্ত স্লোগানকে নিজেদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে নেয়। এ থেকে বুঝা যায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীগণ সাধারণ ছাত্রদের চেতনা ও আশা-আকাঙ্খার সাথে একাত্ম হতে শেখেনি। তাদের চেতনাকে সম্মান করতেও শেখেনি। তারা মতলব, আন্দোলনকে নিজ স্বার্থ ব্যবহার করা। ছাত্ররা সেটি বুঝে। এরই পরিণাম হলো, সাধারণ ছাত্ররা এসব দলবাদী নেতাদেরকে আপন করে নিতে পারিনি। ফলে দূরত্ব রয়ে গেছে। এজন্যই কিছু ছাত্র নেতা জুলাই-আগস্ট আন্দোলনকে পুঁজি করে জাতীয় নাগরিক পার্টি নামক একটি সংগঠন খাড়া করলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্ররা সে দল থেকে নিজেদের দূরে রাখছে।   

 

চলছে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি 

এখনো একই রূপ ষড়যন্ত্র চলছে দেশটির সাধারণ মানুষের ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষার সাথে। পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলই সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করেনা। প্রতিটিরাজনৈতিক লের রয়েছে নিজস্ব এজেন্ডা, নিজস্ব সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগী শ্রেণী (stake holders) এবং নিজস্ব রাজনৈতিক দর্শনপ্রতিটি দল পরিণত হয়েছে একেকটি ট্রাইবে। ফলে তাদের হাতে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে ট্রাইবাল স্বার্থ চেতনার রাজনীতি। ফলে রাজনীতির নামে বাড়ছে বিভক্তি। আর সে বিভক্তির কারণে বিপদ বাড়ছে দেশের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার। ফলে সাধারণ জনগণ রাজনৈতিক দলগুলির ট্রাইবাল রাজনীতির সাথে একাত্ম হতে পারছে। সেটি বুঝা যায় সম্প্রতি ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষ বিভাগ থেকে পরিচালিত মাঠ পর্যায়ের জনমত যাচাই থেকে। দেখা যায়, দেশের প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি আগামী নির্বাচনে কোন দলকে তারা ভোট দিবে। এ থেকে বুঝা যায়, তারা কোন দলের নীতির প্রতি এখনো সন্তুষ্ট হতে পারেনি।

এ তো গেল ভোটদানের বিষয়। সম্ভবত বাংলাদেশের শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য নয় এবং জড়িত নয় কোন দলের রাজনীতির সাথে। অথচ রাজনীতি হলো নবীজী (সা:)’র গুরুত্বপূর্ণ সূন্নত। তিনি ১০ বছর রাষ্ট্র প্রধান ছিলেন। মুসলিমের কাছে রাজনীতি হলো ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র পাল্টানোর হাতিয়ার। তাই এটি ফরজ। ফলে একজন ব্যক্তি মুসলিম হলো, অথচ তাঁর রাজনীতি থাকবে না সেটি কি ভাবা যায়? মুসলিম মাত্রই ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র পাল্টানোর সদা সক্রিয় কারিগর। তাছাড়া যাদের দর্শন থাকে এবং সে দর্শন অনুসারে দেশ ও সমাজ পাল্টানোর তাড়না থাকে -তাদের জীবনে অবশ্যই রাজনীতি থাকে। ঈমানদার মাত্রই তো দর্শন ও তাড়নাসমৃদ্ধ মুজাহিদ -যেমন ছিলেন নবীজী (সা:) সাহাবাগণ। মুসলিমের সে দর্শনটি তো ইসলামের। ফলে সে রাজনীতিতে থাকবে না -সেটি কি আদৌ ভাবা যায়? অথচ বিস্ময়ের বিষয় হলো, বাংলাদেশের শতকরা ৯৫ ভাগের বেশী মানুষ কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত নয়। এর কারণ, রাজনৈতিক দলগুলি যেমন সাধারণ জনগণের চেতনাকে নাড়া দিতে পারিনি, তেমনি পারিনি তাদের চেতনার প্রতিনিধিত্ব করতে।    

জনগণের সাথে রাজনৈতিক দলগুলির নেতাকর্মী ও রাষ্ট্রের deep state য়ের কর্তা ব্যক্তিদের দূরত্বের সাম্প্রতিক উদাহরণ দেয়া যাক। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ পাকিস্তানসহ সকল মুসলিম দেশের সাথে সুসম্পর্ক চায়। এটি বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষের মনের কথা। কিন্তু সেটি শাহবাগীরা চায় না। শাহবাগীদের চেতনাটি হলো একাত্তরের চেতনা। এ চেতনার মূল কথা, বাংলাদেশের সম্পর্ক থাকবে একমাত্র ভারতের সাথে। এবং চির শত্রু গণ্য করতে হবে পাকিস্তানকে। এ চেতনার কথা, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিকে হতে হবে ভারতের অভ্যন্তরীণ নীতি। তাদের কথা, ভারতের স্বার্থহানী হবে ও নিরাপত্তায় সংকট হবে -এমন কিছু করা যাবে না। তাই পাকিস্তানের সাথে ভাল সম্পর্ক একাত্তরের চেতনাধারী বিএনপি যেমন চায়না, তেমনি ছাত্রদলও চায় না। কারণ তারা ভাবে, তাতে ভারতের সাথে তাদের সম্পর্ক বিনষ্ট হবে। পাছে রাজাকার বলে গালি দেয় -এ ভয়ে ইসলামী ছাত্রশিবির এবং জামায়াতে ইসলামীপাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে জোর গলায় কিছুলে না। একাত্তরের তারা অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। এখন সে ভূমিকাকে দলটির অনেক নেতা রাজনৈতিক ভুল মনে করে; কেউ কেউ সেজন্য মাফ চাওয়ার জন্য ওকালতি করে। অথচ সেটি ঈমান ও ইসলামী চেতনার সাথে গাদ্দারী। কারণ মুসলিমের কাছে কোন মুসলিম দেশের বিভক্তি কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। সেটি হারাম। কারণ মহান আল্লাহ তায়ালা বিভক্তিকে হারাম করেছেন এবং একতাকে ফরজ করেছেন। এজন্যই একাত্তরে কোন ইসলামী দল, কোন আলেম, কোন হাক্কানী পীর পাকিস্তান ভাঙ্গাকে সমর্থন করেনি। অথচ পরিতাপের বিষয় হলো, স্রেফ রাজনৈতিক স্বার্থে ও সেক্যুলারিস্টদের কাছে গ্রহনযোগ্যতা বাড়াতে কোন কোন ইসলামী দলী ও আলেম একাত্তরে পাকিস্তান ভাঙ্গাকে জায়েজ বলছে।  

এর ফল হলো, পাকিস্তান সরকার যেভাবে বাংলাদেশের সাথে এগিয়ে এসে বন্ধুত্ব করতে চাচ্ছিল তাতে বাধা পড়ছে। অথচ বাংলাদেশের স্বাধীনতা বাঁচিয়ে রাখার জন্য পাকিস্তানের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা অতি গুরুত্বপূর্ণ।‌ জরুরি হলো পাকিস্তানের সাথে সামরিক সহযোগিতা গড়ে তোলাবাংলাদেশের একার পক্ষে ভারতের আগ্রাসনের মোকাবেলার সামর্থ্য নাই। এক্ষেত্রে পাকিস্তান হতে পারে বাংলাদেশে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বন্ধু। তাছাড়া পারমাণবিক শক্তিধারী দেশটির রয়েছে সামরিক সাহায্য দেয়ার সামর্থ্য। কিন্তু ভারত সেটি হতে দিতে রাজী নয়। তাই ভারত উঠে পড়ে নেমেছে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ককে বাধাগ্রস্ত করতে। এক্ষেত্র বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলি এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকা ভারতপন্থী deep state য়ের উপর ভারতের পুঁজি বিনিয়োগটি বিশাল। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর নিয়ে এরাই পাকিস্তানকে একাত্তরের জন্য মাফ চাওয়ার দাবি তুলছে। তা নিয়ে সোচ্চার বাংলাদেশের একাত্তরের চেতনাধারী মিডিয়া। এটি হলো মূলত পাকিস্তানের সাথে সুসম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে বাধা দেয়ার ষড়যন্ত্র।

 

ইসহাক দারের আবিষ্কার ও নসিহত

জনাব ইসহাক দার বাংলাদেশকে পাকিস্তানের হারিয়ে যাওয়া ভাই বলেছেন। সে ভাইকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে সম্পর্ক মজবুত করতে চান। তবে তিনি আবিষ্কার করেছেন, বাংলাদেশীদের মগজে এখনো যে চেতনাটি শক্ত ভাবে বসে আছে সেটি হলো একাত্তরের ভারতীয় বয়ান। এটি এক বিষাক্ত বয়ান। এ বয়ান ভারতকে বন্ধু এবং পাকিস্তানকে শত্রু ভাবতে শেখায়। এ বয়ান অবাঙালিদের হত্যা, ধর্ষণ ও তাদের গৃহ ও সম্পদের উপর ডাকাতি করতে শেখায়। যার শিকার প্রায় ৬ লাখ বিহারী। এজন্যই জনাব ইসহাক দার নসিহত করেছেন, সামনে এগুতে হলে বাংলাদেশীদের দিল সাফ করতে হবে। তিনি বুঝতে পেরেছেন, বাঙালি চেতনায় যত দিন একাত্তরের চেতনা বেঁচে থাকবে ততদিন পাকিস্তানের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে উঠা অসম্ভব। এ চেতনায় একমাত্র ভারতের সাথেই বন্ধুত্ব সম্ভব, পাকিস্তানের সাথে নয়।

ভারত এবং তার সেবাদাসগণ সে বিষাক্ত চেতনাটি বাঙালি মুসলিমের চেতনায় যুগ যুগ বাঁচিয়ে রাখতে চায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানে দুইবার পারমাণবিক বোমা বর্ষণ করেছে, এরপরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের ঘনিষ্টতম বন্ধু।  ইতিহাসে বহু যুদ্ধ হয়েছে জার্মান ও ফ্রান্সের মাঝে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফান্স অধিকৃত হয়েছিল জার্মানীর হাতে, জার্মানদের হাতে সেখানে বহু ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যাও হয়েছে। কিন্তু এরপরও জার্মান ফান্সের ঘনিষ্ট বন্ধু। সে বন্ধুত্বের কারণ, জাপানী ও ফরাসীদের মগজে একাত্তরের চেতনার ন্যায় কোন ভারতীয় চেতনা বসে নাই।     

পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশ এখন সম্পদের ভাগ চায়। সেটি তো আপোষে শান্তিপূর্ণ মীমাংস করে নেয়ার বিষয় ছিল, সেটি তো যুদ্ধ করে অর্জনের পথ নয়। কিন্তু বাংলাদেশ সে পথ পরিহার করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পথ বেছে নেয়। যুদ্ধের পথ বেছে নিলে যুদ্ধ করেই সেটি অর্জন করতে হয়। একাত্তরের চেতনাধারী ভারতীয় সেনাবাহিনীকে পূর্ব পাকিস্তানের বুকে ডেকে এনে যুদ্ধ করে এবং ৯৩ হাজার পাকিস্তানীকে বন্দী করে ভারতের হাতে তুলে দেয়। এভাবে ভারতের হাত দিয়ে পাকিস্তানকে যারা পরাজিত ও অপমানিত করলো, তারা কি সম্পদের ভাগ পায়?  পাক বাহিনীর গণহত্যার প্রসঙ্গ তোলে। অথচ বাংলাদেশে প্রায় দুই লক্ষ বিহারীকে যেভাবে হত্যা করলো, হাজার হাজার বিহারী নারীদের ধর্ষণ করলো এবং তাদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকুরি-বাকুরি দখলে নেয়া হলো -সে গণহত্যা, গণধর্ষণ ও গুরুতর মানবতা বিরোধী অপরাধ নিয়ে এ বাঙালি মানবতাবাদীগণ একটি বাক্য উচ্চারণ করতে রাজী নয়।

 

ময়দানে বিপুল সংখ্যক RAWএজেন্ট

হাসিনা পলায়ন করলেও বাংলাদেশে এখনো সক্রিয় রয়ে গেছে বহু হাজার ভারতীয় RAWএজেন্ট এবং তাদের বাংলাদেশী দালালেরা। এরা রয়েছে বাংলাদেশের প্রতিটি বড় বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে। এরা রয়েছে সামরিক ও বেসামরিক অফিসারদের মাঝে। দেশ এরাই চালাচ্ছে। এরা কখনোই চায়না বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠুক। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র বাংলাদেশে আসাতে তারা আরো সক্রিয় হয়েছে। এটি হলো দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমানদের বিভক্ত ও দুর্বল রাখার ভারতীয় স্টাটেজী। এরাই বাংলাদেশের ঘরের শত্রু। বাংলাদেশের স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে যুদ্ধ শুধু বিদেশী শত্রুর বিরুদ্ধে হলে চলবে না, লাগাতর যুদ্ধ নিয়ে বাঁচতে হবে দেশী শত্রুদের বিরুদ্ধেও। স্বাধীনতার সুরক্ষার এর বিকল্প নাই। ২৭/০৮/২০২৫

 

Reply all
Reply to author
Forward
0 new messages