আর চৌধুরীর নিবন্ধঃ আমি জিয়া বলছি

2 views
Skip to first unread message

Outlook Team

unread,
May 19, 2024, 3:44:24 PMMay 19
to pfc-f...@googlegroups.com, la-dis...@googlegroups.com, na...@googlegroups.com
From: Zoglul Husain (zog...@hotmail.co.uk

["আমি জিয়া বলছি" নিবন্ধটি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষাপট, ১৫ আগস্ট ও ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ এর গৌরবময় সেনা-জনতার অভ্যুত্থান, দেশ রক্ষা, জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণ ও দেশের ভাগ্য পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট নিয়ে ১৯১১ সালে লেখা। লেখাটি ইউরোপীয় একটি বাংলা পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে নিউ ইয়র্ক এর ঠিকানা ও অন্যান্য কাগজে ও গ্রন্থে প্রকাশিত হয়। আর চৌধুরী ৭১-এর বীর মুক্তিযোদ্ধা, পরবর্তী কালের উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও উপ-রাষ্ট্রদূত, এবং বর্তমানে একজন সুপরিচিত লেখক, তিনি ৫ টি বই প্রকাশ করেছেন, এবং তিনি আরও ৭ টি বইয়ের সহ-লেখক। বর্তমান লেখাটি নীচে দেখুনঃ]   

আমি জিয়া বলছি   
আর চৌধুরী        

image.png
 
জিয়া তুমি আছ মিশে,
সারা বাংলার ধানের শীষে।
 
বাংলাদেশের আনাচে কানাচে সর্বদা বেজে উঠছে-- “আমি জিয়া বলছি… ।
 
“In that case, we revolt”- Major Ziaur Rahman (25th March 1971) 


“আমি জিয়া বলছি” এই ঘোষনার মাধ্যমেই অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্টের তৎকালীন ২য় অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দিযেছিলেন। দিনটি ছিলো ২৭শে মার্চ ১৯৭১। 

 প্রথম ঘোষণাটি জিয়ার নামেই গিয়েছলো, পরে সংশোধন করে তা শেখ মুজিবুর রহমানের নামে করা হয়। সেটাই ছিলো স্বাধীনতার প্রথম ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধের ডাক। পতেঙ্গার অদূরে অবস্থিত একটি জাপানী জাহাজের বদৌলতে দেশ বিদেশের লক্ষ কোটি মানুষ তা শুনেছে। এর পূর্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার কোন ঘোষণা    হয়েছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিছু আওয়ামী লীগ সমর্থিত লোকের মতে শেখ মুজিবুর রহমানের নামে সই করা ঘোষণাপত্র দেখা গিয়েছিল বাজারে, তার সত্যতা এবং যথার্থতার যথেষ্ট অবকাশ আছে। শেখ মুজিবুর রহমান কোন ঘোষণা দেবার পূর্বেই পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে বন্দী হন, অনেকের মতে আত্মসমর্পণ করেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় যে, একাত্তরের ২৫শে মার্চ রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমেদ, তৎকালীন তুখোড় ছাত্রনেতা আ স ম আব্দুর রব ও অন্যান্যরা শেখ মুজিবের ধানমন্ডিস্থ ৩২ নম্বর বাসভবনে গিয়েছিলেন তাকে অনুরোধ করার জন্য যে অবিলম্বে  স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে তিনি যেন আত্মগোপন করেন। কিন্তু  শেখ মুজিবুর রহমান তাতে রাজী না হয়ে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন। ইতিপূর্বে তিনি ইসলামাবাদে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফারল্যান্ডের সংগে ফোনে কথা বলে শর্তাবলী ঠিক করে রেখেছিলেন। তার পরিবারকে নিজ বাড়িতে অথবা আশেপাশে কোথাও সেনা প্রহরায়  থাকতে দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯ মাস শেখl পরিবার ধানমন্ডির ১৮ নম্বর বাড়ীতে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে এবং মোটা অংকের ভাতা নিয়ে সহি সালামতে ছিল। শেখ হাসিনা সে সময়েই পুত্র জয়কে ঢাকা সেনানিবাসে পাকিস্তানিদের আনন্দ উৎসবের মাঝে প্রসব করেন।  

শেখ মুজিবের আজীবন সংগ্রাম ছিল পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসনের জন্য, স্বাধীনতার জন্য নয়। একাত্তরের ২৪শে মার্চ পর্যন্ত তিনি ঢাকায় পাকিস্তানী নেতাদের সংগে পাকিস্তানের অখন্ডতা এবং তার ভবিষ্যৎ রুপরেখা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। দৈনিক ইত্তেফাক, করাচীর ডন পত্রিকা ও অন্যান্য খবরের (২৬/২৭শে মার্চ, ১৯৭১) বরাতে জানা যায় তিনি তার আলোচনা ফলপ্রসূ বলে আখ্যায়িত করেছেন। 

কিছু মুজিব ভক্তেরা বলে থাকে যে, ৭ই মার্চের ভাষণই স্বাধীনতার ঘোষণা। প্রথমতঃ “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম …”  স্বাধীনতার ঘোষণা নয়, সংগ্রামের ডাক। দ্বিতীয়তঃ তা স্বাধীনতা হলে শেখ মুজিব কেন পাকিস্তানী নেতাদের সংগে ১৫-২৫শে মার্চ (১৯৭১)  বৈঠক করেছিলেন?  অথচ এ বৈঠক চলাকালেই ইয়াহিয়া-হামিদ-টিক্কা চক্র বিমান ও  নৌ পথে সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম এনে পূর্ব পাকিস্তানে জমায়েত করছিল ”বাংগালীদের উচিৎ শিক্ষা” দেবার জন্য। একজন  রাজনীতিবিদ হিসাবে শেখ মুজিবের পক্ষে পাকিস্তানীদের এ খেলাটা অনুধাবন করা কি অসুবিধা ছিল? নিশ্চয়ই নয়। অতএব সন্দেহের উদ্রেক হওয়া বিচিত্র নয় যে  “বাংগালীদের উচিৎ শিক্ষা” দেয়া, তথা বাংগালী নিধনের এই যড়যন্ত্রে শেখ মুজিবের পক্ষান্তরে সায় ছিল? 

মেজর রফিকুল ইসলামের ”লক্ষ প্রাণের বিনিময়” এবং এয়ার ভাইস মার্শাল খন্দকারের  "১৯৭১ ভিতরে বাইরে" বইয়ের বরাতে জানা যায় চট্টগ্রামে পাকিস্তান সেনাদের  “বাংগালী নিধন” পরিকল্পনা জানতে পেরে কর্নেল এম, আর, চৌধুরী এবং মেজর জিয়াউর রহমান ক্যাপ্টেন আমীন আহমেদ চৌধুরীকে ঢাকা পাঠান। ১৭ কি ২৩শে মার্চ কর্নেল ওসমানীর মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানকে জানান হল যে, চট্টগ্রামে পাকিস্তানি বাহিনী যে কোন সময় বাংগালীদের উপর আক্রমন করতে পারে। রাজনৈতিক নির্দেশ পেলে সেখানকার বাংগালী সেনারা এখনই তা প্রতিহত করার বন্দোবস্ত করতে পারে বা পাকিস্তানীদেরকে পাল্টা আক্রমণ করতে পারে। শেখ মুজিব কখনও সৈনিকদেরকে ভরসার চোখে দেখেননি এবং পাত্তা দেননি, এবারও না। তিনি নাকি ধমকের স্বরে জবাব দিয়েছিলেন, "আমি পাকিস্তানীদের সাথে বুঝাপড়া করছি এবং তার যথেষ্ঠ অগ্রগতি হচ্ছে। এমতাবস্থায়  আমাদের তরফ থেকে কোনরূপ সামরিক অগ্রিম কার্যকলাপ বা ঔদ্ধত্য বরদাস্ত করা হবে না।”  

ক্যাপ্টেন আমীন বিফল মনে চট্টগ্রামে ফেরৎ এলেন। এই প্রেক্ষিতে ২৫শে মার্চের কাল রাতের  বিভীষিকার জন্য শেখ মুজিবকে আংশিকভাবে হলেও দায়ী করা যায়। সময়োচিত পাল্টা ব্যবস্থা  নিলে হাজার হাজার প্রাণ বাঁচতে পারত। বাঙ্গালী সেনা, পুলিশ, বিডিআর, আনসার ছাড়াও ছাত্রজনতা পাল্টা ব্যবস্থার জন্য তৈরী ছিল। পরিতাপের  বিষয়, তারা সে সময় কোনোরূপ  রাজনৈতিক নির্দেশনা পায়নি। অ্যাকারণ শেখ মুজিব ২৫শে মার্চ পর্যন্ত আ অপেক্ষা করেছিলেন একটা বুঝাপড়া হবে যাতে তিনি অখন্ড পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন l

জিয়াউর রহমানের কথায় ফিরে আসা যাক। সমুদ্র জাহাজ “সোয়াত”  চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়ে আছে অনেকদিন থেকে। তাতে আছে চীন থেকে আনা  আধুনিক অস্ত্র, গোলা-বারুদ। বাংগালী বন্দর শ্রমিকরা তা নামাতে দেবে না, আর চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিতে দেবে না। বন্দর থেকে পথে পথে অসংখ্য বাধা-ব্যারিকেড তৈরি করে রেখেছে। সেনানিবাসের  কমান্ডান্ট  ব্রিগেডিয়ার আনসারী কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে চাইলেন। জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ৮ম বেংগলের  সৈনিকদের দিয়ে অস্ত্র উঠাবেন। প্রথম দিকে জিয়াউর রহমান এই শ্রমিক তদারকি কাজে যেতে কিছুতেই রাজী ছিলেন না। তাছাড়া, তিনিও চাচ্ছিলেন না যে অস্ত্র পাকিস্থানীদের হাতে আসুক। কারন এইসব অস্ত্রশস্ত্র পক্ষান্তরে বাঙ্গালীদের উপরই প্রয়োগ করা হবে। পরে কতেকটা জোরপূর্বক তাকে বন্দরে পাঠানো হল। পতেংগা থেকে একজন পাকিস্তানী নৌ অফিসার এসেছেন জিয়াকে নেবার জন্য। ৮ম বেংগলের অধিনায়ক কর্ণেল রশিদ জানজুয়া একজন পাকিস্তানী  ক্যাপ্টেনকে জিয়ার এসকর্ট (Escort) হিসাবে সংগে দিলেন। অনেকের মতে, সেটাই হত জিয়ার শেষ যাত্রা! 

তখন রাত হয়ে গেছে। খবর এলো চট্টগ্রাম সেনানিবাসে বাংগালী নিধন শুরু হয়ে গেছে এবং পাকিস্তানীরা ষোলশহরে অবস্থিত ৮ম বেংগল রেজিমেন্ট এবং শহরের দিকে এগুচ্ছে। ক্যাপ্টেন চৌধুরী খালেকুজ্জামান ছুটে গেলেন জিয়াকে ফেরৎ আনতে। জায়গায় জায়গায় ব্যারিকেড থাকাতে জিয়ার বন্দর-গমন ধীর গতিতে চলছিল। খালেকুজ্জামান জিয়াকে পেলেন আগ্রাবাদ সড়কে, দেওয়ান হাটের অদূরে। জিয়া থামানো ট্রাকের পাশে চিন্তিত মনে দাড়িয়ে  ছিলেন, ট্রাকের ইঞ্জিন চলছিল। অদূরে নৌ ও ৮ম বেংগল রেজিমেন্টের  সেনারা ব্যারিকেড সরাচ্ছে, অফিসার দুজন তা তদারকি করছেন। খালেকুজ্জামান চুপি চুপি গিয়ে জিয়াকে  সেনানিবাসের পরিস্থিতি বর্ণনা করলেন,  আরো জানালেন  ৮ম বেংগল রেজিমেন্ট তার আদেশের অপেক্ষায় আছে। কিছুক্ষণ দম ধরে থেকে জিয়া নীচুস্বরে হুংকার দিলেন, “In that case, we revolt,  আমরা বিদ্রোহ  ঘোষণা করছি।” 

দুজনে মিলে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করলেন; খালেকুজ্জামান এগিয়ে গিয়ে নৌ ও ৮ম বেংগল রেজিমেন্ট অফিসারদ্বয়কে জানালেন যে তিনি কমান্ডান্ট ও কর্নেল  জানজুয়ার সনদ নিয়ে এসেছেন। ৮ম বেংগল রেজিমেন্টের লোকদের বন্দরে যাবার প্রয়োজন নেই, জিয়াকেও যেতে হবে না। পাকিস্তানী নৌ অফিসার তা মেনে নিয়ে পতেঙ্গার দিকে চলে গেলেন। 

জিয়ার দল ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টে ফেরৎ এল। প্রথমেই জিয়া তার পাকিস্তানী এসকর্ট অফিসারকে বন্দি করে কোয়ার্টার গার্ডে পাঠালেন । পরে কর্ণেল জানজুয়ার  বাসায় গিয়ে তাকে বন্দি করে আনলেন। অন্যান্য পাকিস্তানী অফিসারদেরকেও বন্দি করা হলো। এক পর্যায়ে এক তরুন বাঙ্গালী অফিসার রাগান্বিত  হয়ে এদের সবাইকে গুলি করে।

ইতিমধ্যে ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপর পাকিস্তানী কমান্ডো বাহিনীর হামলা শুরু হয় এবং জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে তা প্রতিহত করা হয়। সে যুদ্ধে বেশ হতাহত হয় । অবস্থা বেগতিক দেখে পাল্টা  আক্রমণ করতে করতে  জিয়া বাহিনী কালুর ঘাটের দিকে যায় এবং সেখানেই ২৭ই মার্চ (১৯৭১) জিয়াউর রহমান বেতার স্টেশন থেকে ঐতিহাসিক স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সারা দেশবাসী এবং বহু বিশ্ববাসী তা সরাসরি অথবা পর্যায়ক্রমে শুনতে পায় এবং জানতে পারে।

মুক্তিযুদ্ধ ২৫শে মার্চ শুরু হলেও মূলতঃ এই ঘোষণার মাধ্যমেই যোদ্ধারা একটি দিক নির্দেশনা পায় – যা ইতিপূর্বে ছিলো না- এবং সংঘবদ্ধ হয়। রাজনৈতিক নেতারা যেখানে ব্যর্থ হয়েছিলেন, মেজর জিয়াই সেখানে মুক্তিযুদ্ধের ডাক ও দিক-নির্দেশনা দিয়ে সফল নেতৃত্বের পরিচয়  দিয়েছিলেন।

বর্তমান আওয়ামী সরকার জিয়াউর রহমানকে অবহেলা-অবজ্ঞা করে, আইন করে শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার “ভুতুড়ে” ঘোষক বানিয়েছে কোন দলিল প্রমাণ ছাড়াই। কি জঘণ্য ইতিহাস বিকৃতি! শেখ মুজিব নিজে কখনও জিয়াউর রহমানের ঘোষণাকে অস্বীকার করেন নি বা নিজেকে ঘোষক হিসাবে দাবী করেননি। তবে জিয়ার এই দুর্লভ কৃতিত্বে  তিনি খুব একটা খুশীও ছিলেন না।  

শেখ মুজিবের অবর্তমানে, অনুপস্থিতিতে বাংলার আপামর জনতা ৯ মাস সংগ্রাম করে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতার রঙ্গিন সূর্য অর্জন করে। এই সশ্রস্ত্র সংগ্রামের নায়ক হয়ে রইলেন জিয়াউর রহমান। পরোক্ষ শাস্তি হিসাবে ১৯৭২ সালে জিয়াউর রহমানকে ডিঙ্গিয়ে তারই জুনিয়র সফিউল্লাহকে বানালেন সেনাপ্রধান। তবে জিয়ার সুখ্যাতি, সততা এবং জনপ্রিয়তা অগ্রাহ্য করার উপায় ছিল না। তাই সেনা উপ-প্রধানের পদ সৃষ্টি করে জিয়াকে সেখানে স্থান দেওয়া হল। 

১৯৭৫ সনের ১৫ই আগষ্টের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন পর  জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান হিসাবে তার যোগ্য স্থানে বসানো হয়। অতি উচ্চাকাংখী ব্রিগেডিয়ার খালেদ  মোশাররফ তা মেনে নিতে পারেন নি। সেনা প্রধানের আসনটি বাগিয়ে নেবার জন্যে তিনি তলে তলে ১৫ই আগষ্টের নায়কের সাথে  মিতালী করেছিলেন। কিন্তু তার ভাগ্যে শিকা  ছিড়েনি। গোসসা হয়ে তিনি সাঙ্গো পাঙ্গ নিয়ে ঘটালেন ৩রা নভেম্বর (১৯৭৫) পাল্টা ক্যু। বন্দি করলেন রাষ্ট্রপতি মোশতাক আহমেদকে এবং সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে। খালেদ কিন্তু সে ক্যু ধরে রাখতে পারেন নি। আওয়ামী লীগ এবং ভারত-অনুসারী হিসাবে চিহ্নিত তার যড়যন্ত্রমূলক সামরিক কারসাজি বাংলাদেশের জনগন গ্রহণ করতে পারে নি। বিগ্রেডিয়ার খালেদ, কর্নেল হুদা ও হায়দার  সহকারে পালাবার সময়ে তারই হাতে গড়া ১০ম বেঙ্গলের কাছে  ধরা পড়েন এবং মারা যান। 

“পনের আগস্টের পর একটু শান্তির ছোয়া পেয়েছিলাম, আজ তাও হারিয়ে গেল ”,  বলেছিলেন ঢাকা ফার্মগেটের এক পথচারী ৪ঠা নভেম্বরে।

৭ই নভেম্বর সিপাহী জনতা বিদ্রোহ করে মোশতাক-জিয়াকে মুক্ত করে।এই বিদ্রোহে কর্নেল আবু তাহেরের একটি কার্যকরী ভূমিকা ছিল। তবে তা ছিল তার উগ্র মতবাদের স্বার্থে। কিন্তু সাধারণ সিপাহী জনতা তাহেরের পথে না গিয়ে আন্দোলন ভিন্ন দিকে অথবা সঠিক পথে নিয়ে গেছে। এখানে তার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া সম্ভব নয়।

৭ই নভেম্বর জিয়াউর রহমান পুনরায় ডাক দিলেনঃ “আমি জিয়া বলছি …।” জনতা শান্ত হলো, দেশে স্থিতি এল। ক্রমান্বয়ে জিয়া দেশের কর্ণধার পদে অধিষ্ঠিত হলেন। দেশে বহুদলীয় রাজনীতি শুরু হল, গণতন্ত্র চালু হল, দেশ উন্নতির দিকে ধাবিত হল। শেখ মুজিবের “তলা বিহীন ঝুড়ির” বাংলাদেশ চাল-রপ্তানীর দেশে পরিণত হল। বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের মান-সন্মান বাড়ল।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের এই সাফল্য আওয়ামী লীগের কাছে, বিশেষ করে মুজিব কন্যা শেখ হাসিনার কাছে, বিষফোড়া হয়ে দাড়ালো। অথচ জিয়াউর রহমানই  হাসিনাকে তার স্বেচ্ছায় বর্হিবাস থেকে দেশে ফেরার অনুমতি দিয়েছিলেন। আশ্চর্য এবং পরিতাপের বিষয় যে, শেখ হাসিনা দেশে ফেরার কয়েক সপ্তাহের মাথায় জিয়াকে হত্যা করা হল চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে, ১৯৮১ সালের ৩০শে মে। হাসিনার এককালীন সুহৃদ মতিউর রহমান রেন্টুর বই, “আমার ফাসি চাই”র মতে জিয়ার মৃত্যুর পরিকল্পনা হাসিনার নির্দেশেই হয়েছিল। কথিত আছে, জিয়া হত্যাকান্ডের পর পরই শেখ হাসিনা কুমিল্লার কসবা হয়ে আগরতলা (ভারত) পালানোর সময় ধরা পড়েন। প্রশ্ন জাগে, হাসিনা কি করে আগেভাগে জানলেন যে সেদিন জিয়া খুনহবে? তাই তিনি কসবা বর্ডারে অপেক্ষারত।

শেখ মুজিবের মৃত্যুতে কোথায়ও ইন্নালিল্লাহ শোনা যায় নি, জানাজার জন্য লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অথচ জিয়ার জানাজায় বিশ লাখের উপর শোকার্ত লোকেরা জমায়েত হযেছিল। দুই নেতার মৃত্যুকালীন জনপ্রিয়তার নিদর্শন আর কি হতে পারে? 

শেখ হাসিনার আওয়ামী সরকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউরের নাম যতই মুছে ফেলার চেষ্টা করুক না কেন, জিয়া আছে মিশে, সারা বাংলার ধানেরশীষে। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে, সর্বদা বেজে উঠছে- “আমি জিয়া বলছি… ।"

আর চৌধুরী (এ ও চৌধুরী)  
মার্চ ২০১১ইং 

(মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় লেখক পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন  ছিলেন। তিনি  লাহোর থেকে পালিয়ে এসে কর্ণেল জিয়াউর রহমানের জের্ড ফোর্সে  যুদ্ধ করেন। ) 



Reply all
Reply to author
Forward
0 new messages