একাত্তরের যে শহীদের কথা আজ আর কেউ বলে না

2 views
Skip to first unread message

Firoz Kamal

unread,
Aug 29, 2025, 12:55:11 PM (9 days ago) Aug 29
to

একাত্তরের যে শহীদের কথা আজ আর কেউ বলে না

ফিরোজ মাহবুব কামাল

www.drfirozmahboobkamal.com/blog/একাত্তরের-যে-শহীদের-কথা-আ/

 

অজ্ঞতা শত্রু মিত্র চেনায়

বাঙালি মুসলিমদের বড় সমস্যা হলো, তারা তাদের শ্রেষ্ঠ বীরদের চিনতেই ভুল করে এবং সে সাথে ভুল করে শত্রুদের চিনতেও। সুস্বাস্থ নিয়ে বাঁচতে হলে কোনটি খাদ্য আর কোনটি অখাদ্য -সে জ্ঞানটুকু অবশ্যই থাকতে হয়। নইলে বিপদ বাড়ে। সে সামর্থ্য না থাকাতে অবুঝ শিশু অনেক সময় মলকে খাদ্য মনে করে মুখে দেয়। মুসলিমদের অবশ্যই জানতে হয় কারা স্বাধীনতার সৈনিক এবং জান্নাতের পথের শহীদ; এবং আর কারা জাহান্নামের পথের বেঈমান দুর্বৃত্ত। বাঙালি মুসলিমের সে সামর্থ্য না থাকাতে মুজিবের ন্যায় ফ্যাসিস্ট, গণতন্ত্রের খুনি, দুর্ভিক্ষের জনক, ধর্মে অঙ্গীকারহীন সেকুলারিস্টভারতীয় এজেন্টকে জাতির পিতা, নেতা ও বন্ধুর খেতাব দিয়ে মাথায় তুলেছে। অপর দিকে একাত্তরের যারা পৌত্তলিক ভারতের অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে হিন্দুত্ববাদীদের বিজয়ী করার যুদ্ধে নিহত হলো তাদেরকে এরা শহীদ বলে। আর স্বাধীনতার শত্রু বলে সে সব ইসলামপন্থীদের যারা ভারতীয় আগ্রাসন থেকে স্বাধীনতা বাঁচাতে একাত্তরে জীবন দিয়েছে।

একাত্তরে বহু ধর্মপ্রাণ বাঙালি মুসলিম হিন্দুত্ববাদী ভারতের আগ্রাসী অভিলাষ ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদের ষড়যন্ত্র ও নাশকতার কথা অতি সঠিক ভাবেই বুঝতে পেরেছিল। তারা চিনতে পেরেছিল ভারতের দোসর আওয়ামী ফ্যাসিস্ট, দূর্বৃত্ত সেক্যুলারিস্ট এবং নাস্তিক কমিউনিস্টদের ষড়যন্ত্রের কথাও। ফ্যাসিস্ট মুজিব ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনকালে বাংলাদেশের মানুষ যে নৃশংসতা, যে সীমাহীন দুর্বৃত্তি ও ভারতের প্রতি যে নতজানু আত্মসমর্পণ স্বচোখে দেখেছে, তারা সেটি একাত্তরেই বুঝতে পেরেছিল। এ থেকে প্রমাণ মেলে তাদের প্রখর প্রজ্ঞা ও দুরদৃষ্টি

 

ঈমানদার রূপে স্বপ্ন দেখাই যখন অপরাধ

ঈমানদারের ঈমান দেখা যায় তার স্বপ্ন ও আমলের মাঝে। তেমনি জাহিল কাফির, জালিম ও মুনাফিকের বেঈমানীও ধরা পড়ে তার স্বপ্ন ও আমলের মাঝে। আর সেটি প্রকাশ করে দেয়াই সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহ তায়ালারও ঘোষিত নীতি। তাই তার বয়ান:

وَلَيَعْلَمَنَّ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَلَيَعْلَمَنَّ ٱلْمُنَـٰفِقِينَ ١١

অর্থ: “এবং আল্লাহ অবশ্যই প্রকাশ করে দিবেন কারা ঈমানদার এবং কারা মুনাফিক।”

ঈমানদারীর ন্যায় বেঈমানী ও মুনাফিকব তাই গোপন থাকার বিষয় নয়। বেঈমানদের বেঈমানী প্রকট ভাবে ধরা পড়ে তার গোত্রবাদী, বর্ণবাদী, দলবাদী, অঞ্চলবাদী চেতনার মাঝে। এমন বেঈমানগণ কখনোই মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ নিয়ে স্বপ্ন দেখতে পারে না। তারা বরং কাফির শত্রুদের সাথে জোট বেধে মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে নাশকতায় নামে। যেমন বাঙালি বেঈমানগণ জোটি বেধেছিল ভারতীয় পৌত্তলিক কাফিরদের সাথে। মুসলিম উম্মাহ আজ ৫০টির বেশী রাষ্ট্রে বিভক্তি তো এসব বেঈমানদের নাশকতার কারণেই। পাকিস্তান ভেঙেছে এদের কারণেই।

একাত্তরে যারা পৌত্তলিক ভারতের আগ্রাসন থেকে পাকিস্তান বাঁচাতে যুদ্ধে নেমেছিল তাদের কাছে গুরুত্ব পেয়েছিল স্রেফ বাঙালি রূপে বেড়ে উঠা নয়; বরং সেদিন কাজ করেছিল মুসলিম উম্মাহর সদস্য রূপে দায়িত্ব পালনের প্রবলতম এক তাড়না। তাদের রাজনীতিতে গুরুত্ব পেয়েছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানকে মুসলিম উম্মাহর দুর্গ রূপে গড়ে তোলার এক স্ট্রাটেজিক ভিশন। সে তাড়না ও স্বপ্ন বাঙালি ট্রাইবাল চেতনার ধারক আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের মাঝে ছিল না। আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের কাছে ইসলাম নিয়ে এরূপ স্বপ্ন দেখাই ছিল অপরাধ। সেটি গণ্য হতো সাম্প্রদায়িকতা রূপে।

তবে ১৯৭১ থেকে ২৩ বছর আগে সে অভিন্ন স্বপ্নটি দেখেছিল সে সময়ের প্রাজ্ঞ বাঙালি মুসলিম নেতাগণ যারা ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তারা ছিলেন হোসেন শহীদ সহরোওয়ার্দী, খাজা নাজিমুদ্দীন, মৌলবী তমিজুদ্দীন, নুরুল আমীন, মাওলানা আকরম খাঁ, মহম্মদ আলীর বোগরা, ফজলুল কাদের চৌধুরীর  মত বাঙালি মুসলিম নেতারা। তারা ভেবেছিলেন পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক রূপে বাঙালি মুসলিমগণ পাবে স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা এবং বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব ফেলার অপূর্ব সুযোগ। পাকিস্তানকে তারা বাঙালি মুসলমানদের স্বাধীনতার রক্ষাকবচ ভেবেছিলেনপাকিস্তানের ২৩ বছরে ৪ প্রধানমন্ত্রী, ২ জন রাষ্ট্রপতি, ৩ জন স্পীকার এবং বহু কেন্দ্রী মন্ত্রী হয়েছিল বাঙালি।

 

বন্ধুদের বানানো হলো ভিলেন; আর শত্রুকে বানানো হলো বন্ধু

অতি পরিতাপের বিষয় হলো, যে দেশপ্রেমিক প্রজ্ঞাবান মুসলিম লীগ নেতাগণ ১৯৪৭’য়ে বাঙালি মুসলিমদের স্বাধীনতা এনে দিল, গণতন্ত্র দিল, জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত করে কৃষকদের জমির মালিক বানালো, লর্ড মাউন্ট ব্যাটনের কথিত পূর্ব বাংলার ন্যায়  rural slum তথা গ্রামীন বস্তিতে শতাধিক শিল্প কল কারখানা গড়লো, অর্থনৈতিক উন্নয়নের রূপে খাড়া করলো, অ।নেকগুলি বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনীয়ারি ও টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), বিশাল কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, অ।নেকগুলি মেডিকেল কলেজ এবং বহু ক্যাডেট কলেজ নির্মাণ করলো -তাদেরকে ভিলেন বানানো হলো। বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে তাদের নাম বিলুপ্ত করা হলো। যেন বাংলাদেশের ইতিহাসের শুরু ১৯৭১ থেকে। এই হলো বাঙালি সেক্যুলারিস্টদের কৃতজ্ঞতাবোধ।

উল্লেখ্য যে, পাকিস্তানের ২৩ বছরে পূর্ব পাাকিস্তানে একবারও দুর্ভিক্ষ আসেনি। অপর দিকে যে দুর্বৃত্ত মুজিব ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করলো এবং সে দুর্ভিক্ষ ১৫ লাখ মানুষের মৃত্যু দিল, গণতন্ত্রকে কবরে পাঠালো, বাকশালী ফ্যাসিবাদ দিল, দেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে ভিক্ষার তলাহীন ঝুলি বানালো, ৩০ হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে খুন করলো তাকে বঙ্গ বন্ধু ও জাতির পিতা বানালো! এই হলো বাঙালির রুচিবোধ ও বিচারবোধ।   

 

বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নভগ্ন

 আজ অখণ্ড পাকিস্তান তার ৪৪ কোটি জনসংখ্যা ও পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে বেঁচে থাকলে সে রাষ্ট্রের চালকের সিটে বসতো বাঙালিরাই। একটি দেশে যেমন ভূমিকম্প, মহামারি, ঘুর্ণিঝড়, সুনামী আসতে পারে, তেমনি আসতে পারে গণহত্যা, গৃহযুদ্ধ, জুলুম, দুঃশাসন, বৈষম্য। বহু দেশেই এমন বিপর্যয় বার বার এসেছে। সেগুলি দেশভাঙ্গার ন্যায় ফিতনা সৃষ্টির দলিল হতে পারে না। মুসলিম দেশভাঙ্গার অর্থ মুসলিম উম্মাহর মেরুদণ্ড ভাঙ্গা তথা নিজ পায়ে খাড়া হওয়ার সামর্থ্য কেড়ে নেয়া। ঘর ভাঙ্গলে যেমন পথে বসতে হয়, তেমনি দেশ ভাঙ্গলে পরাধীন হতে হয়। ১৯৭১’য়ের পর থেকেই বাংলাদেশ ভারতের অধিনত এক গোলাম রাষ্ট্রে পরিণত হয়। হাসিনা পালিয়েছে, কিন্তু ভয় কি কমেছে? ভারত যখন তখন দখল করে নিতে পারে। দখল করে নিলে ভারতকে হঠানো কি সহজ হবে? ভারতকে হারানো সামর্থ্য কি বাংলাদেশের আছে? মনে রাখতে হবে, ভারত একবার দখলে নিলে কেউই ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসবে না। সে যুদ্ধ নিজেদেরই লড়তে হবে।

এজন্যই ইসলামে যে কোন মুসলিম দেশ ভাঙ্গা হারাম। দশ-বিশ লাখ মানুষ কোন দুর্যোগে মারা গেলেও একটি জাতির এতো ক্ষতি হয়না -যা হয় দেশ ভেঙ্গে গেলে। মুসলিম দেশের খণ্ডিতকরণ তাই একটি গুরুতর ফিতনা। এমন ফিতনা মুসলিম উম্মাহর স্বাধীনতা, ইজ্জত-আবরু ও জান-মালের নিরাপত্তাকেই শুধু বিপন্ন করে না, বরং অসম্ভব হয় মুসলিম উম্মাহর স্বপ্নপূরণ। তাই বাঙালি মুসলিম ১৯৪৭’য়ে যে স্বপ্ন দেখেছিল, সেটি চুরমার হয়েছে ১৯৭১’য়ে। ১৯৪৭’য়ের স্বপ্ন ছিল পাকিস্তানকে মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি সিভিলাইজেশন স্টেট রূপে গড়ে তোলা -যেমন ভারত হিন্দুদের, ইসরাইল  ইহুদীদের এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খৃষ্টানদের। একাত্তরে ফিতনা সেটি ধুলিস্যাৎ করে। এজন্যই মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুর’আনে ফিতনাকে মানব হত্যার চেয়েও ভয়ংকর বলেছেন। আওয়ামী ও বাম কাপালিকগণ সেটি না বুঝলেও ঈমানদার সেটি বুঝতেন। এজন্যই পূর্ব পাকিস্তানের কোন ইসলামী দলী, কোন আলেম, কোন পীর, কোন মুহাদ্দিস ও কোন মুফতি একাত্তরে পাকিস্তান ভাঙ্গাকে জায়েজ বলেননি; বরং সেটি হারাম বলেছেন।   

কিন্তু বাঙালি ফ্যাসিস্টদের কাছে‌ বৃহৎ ও শক্তিশালী পাকিস্তান ভাল লাগেনি; এবং ভাল লাগেনি অখণ্ড পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতায় বাঙালির মর্যাদা। এর কারণ, পাকিস্তান ছিল তাদের রাজনৈতিক প্রভু ভারতের শত্রু। ভারতের এজেন্ডাই ছিল আওয়ামী লীগ ও বামদের এজেন্ডা। আজও অবিকল সেটিই। অতি বিস্ময়ের বিষয় হলো, এমন কি আজকের অনেক ইসলামপন্থী নেতা-কর্মীদের কাছেও একাত্তরে ইসলামপন্থীদের পাকিস্তানের পক্ষ নেয়াটি অপরাধ গণ্য হচ্ছে! সেদিন যারা অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল তাদের সিদ্ধান্তকে আজ তারা ভুল বলছে।  ভারত ও বাকশালীদের বয়ানই আজ তাদের বয়ান। তাই কোন কোন ইসলামী সংগঠনের পক্ষ থেকে সে ভুলের কাফফারা আদায় করা হচ্ছে প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর এলে বিজয় মিছিল বের করে। অথচ সেদিনটি হলো ভারতীয় পৌত্তলিক বাহিনীর বিজয়ের দিন এবং পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণের দিন।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ফেরেশতাদের বাহিনী ছিলনা। তারা অনেক অপরাধ করেছে। কিন্তু এটিও তো সত্য, তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর ন্যায় পৌত্তলিক কাফির বাহিনী ছিল না। তাই পাকিস্তান সেনা বাহিনীর অপরাধ কি পৌত্তলিক ভারতের কোলে উঠাকে জায়েজ করে? যার হৃদয়ে শরিয়ার দানা পরিমান ঈমান আছে সে কি কখনো পৌত্তলিক বাহিনীর সাথে মিলে কোন মুসলিম বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে? মুক্তিবাহিনী তো সেটিই করেছে। মুসলিম অপরাধী হতে পারে, কিন্তু সে তো মুসলিম ভাই। ভাইয়ের সে পরিচয়টি অন্য কারো দেয়া নয়, সেটি  তো মহান আল্লাহর তায়ালার দেয়া। সে ভাতৃত্বের পরিচয় নিয়েই তো বাঙালি মুসলিমগণ পাঞ্জাবী, সিন্ধি, পাঠান, বেলুচ ও অন্যান্যদের নিয়ে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নির্মাণ করেছিল। সে অবাঙালি মুসলিম ভাইয়ের চেয়ে কোন পৌত্তলিক কাফির উত্তম হতে পারে না।

 

কাফিরদে বিজয় নিয়ে উৎসব!

প্রশ্ন হলো, যার মাঝে ঈমানের লেশ মাত্র আছে সে কি পৌত্তলিক কাফির বাহিনীর সামনে মুসলিম বাহিনীর আত্মসমর্পণের ঘটনা নিয়ে উৎসব করতে পারে? ঈমানদারের  কাছে তো সেটি মাতমের দিন। সারা বিশ্বের মুসলিমগণ তাই ১৯৭১’য়ের ঐদিনে মাতম করেছে। অথচ পরিতাপের বিষয় হলো, ১৬ ডিসেম্বর এলে বাংলাদেশে তা নিয়ে বিজয় উৎসব করে ছাত্র শিবিরের ন্যায় তারাও যারা নিজেদের ইসলামী বলে দাবী করে! যতদিন মুসলিমগণ তাদের বিভক্ত মানচিত্র নিয়ে গর্ব ও উৎসব করতে থাকবে, ততদিন কি তারা মহান আল্লাহ তায়ালার রহমত পাবে? মহান আল্লাহ তায়ালা শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত দেখেন না, দেখেন ব্যক্তির ভূ-রাজনৈতিক বিচার বোধ এবং দেখেন মুসলিম উম্মাহর একতার ভাবনা। উম্মাহর বিভক্তিকরণ তো শয়তানের এজেন্ডা। যারা ১৬ ডিসেম্বরের বিভক্তি নিয়ে উৎসব করে তারা তো শয়তানের এজেন্ডার বিজয়কে মহামান্বিত করে। সেটি কি মূর্তিপূজার চেয় কম ক্ষতিকর?

আল্লাহ তায়ালা তো চান মুসলিম উম্মাহর ভূ-রাজনৈতিক একতা -যা নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম প্রতিষ্ঠা দিয়ে গেছেন। তখন আরব, ইরানী, তুর্কি, কুর্দি, মুর, হাবশী একত্রে এক মানচিত্রে বসবাস করেছে। নবীজী (সা:) সে সূন্নত নিয়েই ১৯৪৭ সালে বাঙালি, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, পাঠান, বেলুচ, গুজরাতি, বিহারি ইত্যাদি ভাষার মুসলিমগণ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল। কিন্তু সেটি শয়তানের পৌত্তলিক এজেন্ট ভারতীয় হিন্দুদের ভাল লাগেনি। ভাল লাগেনি শয়তানের বাঙালি খলিফা বাঙালি ফ্যাসিস্ট, বাঙালি সেক্যুলারিস্ট ও বাঙালি কম্যুনিস্টদের। তাই তারা একাত্তরে পাকিস্তান ভাঙতে যুদ্ধে নেমেছিল। বিস্ময়ের বিষয় হলো একাত্তরের সে যুদ্ধে কাফির শক্তির বিজয় নিয়ে বাংলাদেশে ইসলামপন্থীরাও আজ উৎসব করছে।

তাই পচন শুধু বাঙালি ফ্যাসিস্ট ও সেক্যুলারিস্টদের মগজে বাসা বাধেনি, সে পচন পচিয়ে তুলেছে ইসলামপন্থীদেরও। মুসলিম উম্মাহর জীবনের সবচেয়ে বড় বিদয়াত হলো বিভক্ত মানচিত্রের বিদয়াত।  এমন মানচিত্র নবীজী (সা:) ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে ছিল না। পরে যোগ হয়েছে। বিস্ময়ের বিষয় হলো, আলেমগণ বড় বড় বিদয়াত নিয়ে দীর্ঘ ওয়াজ করলেও সবচেয়ে ক্ষতিকর এই বিদয়াত নিয়ে তারা নিশ্চুপ। বিভক্তির প্রতিটি পথই তো সিরাতাল মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুতির পথ। মুসলিমগণ কি তবে সে বিচ্যুতি নিয়ে বাঁচবে?

 

সে সাহস ও কুরবানীর কথা কেউ বলে না

একাত্তরে ইসলামপ্রেমী বাঙালি মুসলিমদের সংখ্যা ও সামর্থ্য ‌ছিল অতি সীমিত। তাদের সামনে ছিল আওয়ামী ফ্যাসিস্ট ও বামপন্থী জাহেলদের বিশাল জনবল। তারা গড়ে তুলেছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদী উম্মাদনার বিশাল প্লাবন। তবে সে প্লাবন রুখবার দুর্বার সাহস সেদিন ইসলামপন্থীরা দেখিয়েছিল। সে সীমিত সামর্থ্য নিয়েই তারা সেদিন হিন্দুত্ববাদী ভারত, বাঙালি ফ্যাসিস্ট, রুশ কম্যুনিস্ট ও বাঙালি বামপন্থীদের সম্মিলিত জোটের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে খাড়া হয়েছিল। সেটি ছিল বাঙালি মুসলিমদের বিরল ইতিহাস। তাদের বীরত্বের কারণে বিশাল মুক্তিবাহিনী তাদের ৯ মাসের যুদ্ধে কোন জেলা শহর বা মহকুমা শহর দূরে থাক কোন থানা শহরও দখলে নিতে পারিনি। দখলে নিতে প্রয়োজন পড়েছিল আড়াই লাখ সৈন্যের বিশাল ভারতীয় বাহিনীর। তখন পাক বাহিনীতে ছিল মাত্র ৪৫ হাজার সৈনিক। সে কঠিন সময়ে পৌত্তলিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যারা সেদিন বীরদর্পে খাড়া হয়েছিল তারাই হলো সর্বকালে শ্রেষ্ঠ বাঙালি মুসলিম সন্তান। সে সাহস বাঙলি মুসলিম ১৭৫৭ সালে পলাশীতে দেখালে ইংরেজ কোম্পানীর ৪ হাজার সৈন্য বিজয় পেত না। কিন্তু তাদের সে সাহস ও কুরবানির কথা আজ আর কেউ বলে না। বরং বলে সেসব কাপালিকদের কথা যারা পৌত্তলিক ভারতীয় কাফির কোলে প্রশিক্ষণ ও প্রতিপালন পেয়েছিল।

 

বাঙালি সেক্যুলারিস্টদের অপরাধনামা

শত্রুশক্তির সে বিশাল কোয়ালিশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসলামপন্থী ও পাকিস্তানপ্রেমীরা সেদিন পরাজিত হয়েছিল। সে পরাজয়ের পর  ‌হাজার হাজার মাছুম মানুষদের উপর শুরু হয় আওয়ামী ফ্যাসিস্ট ও তার সহযোগী বামপন্থীদের নৃশংস নির্মম নির্যাতন। ফ্যাসিস্টগণ কোন কোন আলেমের মাথা কেটে ফুটবল খেলেছিল। রাজাকার, পিস কমিটির সদস্য, মুসলিম লীগ-জামায়াতে ইসলামী-নিজামী ইসলামীর ন্যায়   পাকিস্তানপন্থী দলের নেতাকর্মীদের উপর নির্মম জুলুম এবং জুলুম শেষে হত্যা করা হয়। তাদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা-বাণিজ্য লুট করা হয়। কিন্তু সে শহীদের কথা আজ আর কেউ বলে না। এমনকি আজকের যারা ইসলামপন্থী এবং সেদিন যারা তাদের সহযাত্রী ছিল তারাও বলে না। বরং তাদের চরিত্রহনন করা হয়। বাঙালি মুসলিমের স্বাধীনতা বাঁচানোর জন্য যারা যুদ্ধ করলো‌ এবং শহীদ হলো তাদেরকে আজ স্বাধীনতার শত্রু বলা হয়।

একাত্তরে অতি ভয়ানক ও দুঃসহ দুর্দিন নেমে আসে ভারত থেকে প্রাণ বাঁচতে আসা প্রায় সাত লক্ষ বিহারীদের উপর। প্রায় দুই লাখ বিহারীকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়, অনেককে আগুনে ফেলে হত্যা করা হয়। হাজার হাজার বিহারী মহিলাদের ধর্ষণের পর ধর্ষণ করা হয়। এবং তাদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা বাণিজ্যকে দখলে নেয়া হয়। বিহারীদের খোলা আকাশের নিচে বস্তিতে পাঠানো হয়। মৃত বিহারীদের লাশ কুকুর শৃগাল দিয়ে খাওয়ানো হয়েছে বা নদীনালায় ফেলে পচানো হয়েছে। এসবই হলো বাঙালি ফ্যাসিস্ট, বাঙালি সেক্যুলারিস্ট ও বাঙালি কম্যুনিস্টদের বর্বর অসভ্যতার চিত্র। বাঙালিরা নিজেদের সে অসভ্য নৃশংসতার ইতিহাস নিজেরা না লিখলেও অন্যরা লিখেছে। দেশে দেশে সে ইতিহাস এখন পড়া হয়। এগুলি তো বাংলাদেশের পাঠ্য বইয়ে স্থান পাওয়া উচিত।   

বিহারীদের সে দুর্দিনের কথা আজ কেউ বলে না। তাদের পুনর্বাসনের কথাও কেউ বলেনা। এ থেকে বুঝা যায় বাঙালির বিবেক ও মানবতা কতটা মৃত। নৃশংসা দুর্বৃত্তি করাতেই তাদের আনন্দ; তা নিয়ে সামান্যতম অনুশোচনা নাই। এমন মৃত বিবেকের কারণে বাংলাদেশ এ শতাব্দীর শুরুতে দুর্বৃত্তিতে বিশ্বে ৫ বার প্রথম হওয়ার রেকর্ড গড়েছিল। আজও পরিস্থিতি একটুও বদলায়নি। ফলে রেকর্ড গড়েছে দেশজুড়ে ভোট ডাকাতি, আয়না ঘরের নৃশংসতায় এবং জুলাই-আগস্টের গণহত্যায়। এমন কদর্য চেতনা ও চরিত্র নিয়ে কি সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণ করা সম্ভব? সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণে তো প্রথমে মানুষদের সভ্য ও ঈমানদার হতে হয়। ঘোড়ার আগে কি গাড়ি জোড়া যায়? ঈমান ও সভ্য চিন্তা-চেতনার মৃত্যু ঘটিয়ে কি তা সম্ভব?  

 

কুর’আনী প্রেসক্রিপশন ছাড়া আরোগ্য নাই

রাষ্ট্রীয় সংস্কাবরে আগে প্রয়োজন বাঙালির চেতনা ও চরিত্রের সংস্কার। সেটি কখনোই ইসলামশূণ্য সেক্যুলার চেতনায় সম্ভব নয়। সে সেক্যুলার চেতনার চাষাবাদ তো এতো কাল বহুত হয়েছে। এমন চেতনা শুধু অসভ্য খুনি ফাসিস্ট হাসিনা, বাকশালী মুজিব, জেনারেল আজিজ, খুনি বেনজির, সন্ত্রাসী RAB, আয়না ঘর, শাপলা চত্বরের গণহত্যা জন্ম দিতে পারে। পৌঁছাতে পারে বিশ্বমাঝে দুর্বৃত্তির শীর্ষে। আমাদের ফিরে যেতে হবে মহান আল্লাহ তায়ালার কুর’আনী প্রসক্রিপশনে। এ প্রেসক্রিপশন শুধু না বুঝে তেলাওয়াত করলে চলবে না, পড়তে ও বুঝতে হবে এবং কর্ম, পরিবার, প্রশাসন, রাজনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রয়োগ করতে হবে। যে কুর’আনী প্রেসক্রিপশন জাহেল আরবদের সমগ্র মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব বানাতে পেরেছিল, তা নিশ্চিত বাঙালিদের ক্ষেত্রেও সফলতা দেখাবে। এ প্রেসক্রিপশনের সক্ষমতা নিযে একমাত্র বেঈমান কাফিরগণই সন্দেহ করতে পারে।  ২৯/০৯/২০২৫। 

Reply all
Reply to author
Forward
0 new messages