সেক্যুলারিস্টদের নাশকতা এবং বাঙালি মুসলিমের স্বাধীনতা
ফিরোজ মাহবুব কামাল
www.drfirozmahboobkamal.com/blog/সেক্যুলারিস্টদের-নাশকত-2/
পার্থিব স্বার্থচেতনা বনাম আখেরাতে জবাবদেহীতা
বিষ যেমন দেহের মৃত্যু ঘটায়, সেক্যুলারিজম তেমনি ঈমানের মৃত্যু ঘটায়। বিষ কিরূপে মৃত্যু ঘটায় -সেটি জানা যেমন জরুরি; তেমনি জরুরি হলো সেক্যুলারিজম কিরূপে ঈমানের মৃত্যু ঘটায় সেটি জানা। গ্রহ-নক্ষত্র ও অনু-পরমাণুর জ্ঞান না রাখলে কেউ জাহান্নামে যাবে না, কিন্তু ঈমানের কিরূপে মৃত্যু হয় সেটি না জানলে ঈমানের মৃত্যু নিয়ে জাহান্নামে যেতে হবে। অনেকেই সেক্যুলারিজমের অর্থ ভাবে, রাষ্ট্র থেকে ধর্মীয় চিন্তার পৃথকীকরণ। অথচ সেক্যুলারিজমের মূল এজেন্ডা এর চেয়ে ব্যাপকতর; শুধু রাজনীতিতে নয়, আঘাত হাতে জীবনের প্রতিটি এজেন্ডাতে। সেক্যুলারিজমের আভিধানিক অর্থ ইহজাগতিকতা; সেক্যুলারিস্টদের চেতনায় কাজ করে পরকালের বদলে পার্থিব স্বার্থ শিকারের চেতনা। তখন মগজে ভর করে দলীয়, গোত্রীয়, পারিবারিক, জাতীয়, রাষ্ট্রীয়, প্রাতিষ্ঠানিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক স্বার্থের ন্যায় যাবত পার্থিব স্বার্থ। তখন আল্লাহ তায়ালার কাছে জবাবদেহীতা ও আখেরাতের কল্যাণের ভাবনা কাজ দেয়না। সেক্যুলারিস্টগণ তাই শাসকের শাসন বাঁচাতে বা ভাষা, বর্ণ, দলীয় ও অর্থনৈতিক স্বার্থে যুদ্ধ করতে রাজী; কারণ তাতে অর্থপ্রাপ্তি ও জাগতিক মর্যাদা আছে। অথচ তারা আল্লাহ তায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য যুদ্ধে রাজী নয়। কারণ তাতে জান্নাতপ্রাপ্তির প্রতিশ্রুতি থাকলেও পার্থিব স্বার্থ নেই।
ঈমানদারকে প্রতি মুহুর্ত বাঁচতে হয় আখেরাতে মহান আল্লাহ তায়ালের কাছে জবাবদেহীতার ভয় নিয়ে। ফলে তাঁর রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, বুদ্ধিবৃত্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য সর্বত্র জুড়ে থাকে পরকালের ভয়। তখন ভিন্ন ভাষা, ভিন্ন বর্ণ ও ভিন্ন অঞ্চলের মুসলিমকে নিজের দ্বীনি ভাই রূপে গ্রহণ করে নেয়াটি ইবাদত মনে হয়। কারণ, সেটিই আল্লাহর বিধান। কিন্তু সেক্যুলারিজমে সে ভয় থাকে না; ফলে মৃত্যু ঘটে প্যান-ইসলামী চেতনার। তখন ব্যক্তির বিলুপ্ত হয় বর্ণ, ভাষা, গোত্র ও অঞ্চল ভিত্তিক পরিচয়ের উর্দ্ধে ঊঠার সামর্থ্য। ফলে ইসলামের গৌরব যুগে আরব, কুর্দ, তুর্ক ইত্যাদি নানা ভাষা, নানা গোত্র, নান বর্ণ ও নানা অঞ্চলের মানুষদের নিয়ে যে খেলাফত গড়ে উঠেছিল - সেক্যুলারিজমের প্লাবনে তা বাঁচেনি। তাই মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে সেক্যুলারিজমের নাশকতা তাই ভয়ানক। একই রূপ নাশকতায় খণ্ডিত হয়েছে পাকিস্তান।
সেক্যুলারিস্টদের ফিতনা
ব্যক্তির কাছে নিরাপদ আশ্রয়স্থল যেমন তার গৃহ, মুসলিম উম্মাহর কাছে তেমনি হলো রাষ্ট্র। তাই ব্যক্তিকে যেমন তার নিজ গৃহের পাহারা দিতে হয়; ঈমানদারকে তেমনি মুসলিম রাষ্ট্রের অখণ্ডতা ও স্বাধীনতা বাঁচাতে হয়। এজন্যই দেশের অখণ্ডতা ও স্বাধীনতা বাঁচানোর জিহাদকে ইসলাম পবিত্র জিহাদের মর্যাদা দেয়। একটি দেশে ইসলাম তথা মহান আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডা কতটা প্রতিষ্ঠা পাবে -সেটি পুরাপুরি নির্ভর করে সেখানে কতটা সফল হলো ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের কাজ। ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের কাজটি ব্যর্থ হলে মহান আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডাও ব্যর্থ হয়ে যায়।
মহান রব চান, রাষ্ট্র পরিণত হোক তাঁর এজেন্ডাকে বিজয়ী করার হাতিয়ারে। কিন্তু সেক্যুলারিস্টগণ রাষ্ট্রকে সে কাজে ব্যবহৃত হতে দিতে রাজী নয়। তাই তারা আল্লাহর শত্রু। এটিই সেক্যুলারিস্টদের ফিতনা। রাষ্ট্রের ইসলামীকরণ এতোই গুরুত্বপূর্ণ যে, ফরজ শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত পালন নয়, বরং ফরজ হলো ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের জিহাদ। জিহাদের মাধ্যমে ঈমানদারগণ একাত্ম হয় মহান আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডার সাথে। যাদের জীবনে জিহাদ নাই, নবীজী (সা:)’র যুগে তারা চিহ্নিত হয়েছে মুনাফিক রূপে। মুসলিমগণ বিভক্ত হলে ব্যর্থ হয়ে যায় ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের কাজ। তখন ব্যর্থ হয় আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডা। বিভক্তির নাশকতা তাই গুরুতর; এজন্যই বিভক্তি হারাম এবং ফরজ হলো একতা। অথচ শেখ মুজিব ও তার সহচরগণ পাকিস্তানের বাঙালিদের ধাবিত করেছিল বিভক্তির পথে। এটিই হলো মুজিবের ঘৃণ্য নাশকতা।
তবে এক শ্রেণীর সেক্যুলারিস্টগণ নামাজ-রোাজ ও হজ্জ-যাকাত পালন করে। কিন্তু তারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে ইসলামী এজেন্ডার প্রবেশাধিকার দিতে রাজী নয়। তাদের যুদ্ধ আল্লাহ তায়ালার রাজনৈতিক এজেন্ডার বিরুদ্ধে। তাদের যুদ্ধ মহান আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়ার বিরুদ্ধে। তারা মুসলিম রূপে বাঁচতে চায় ইসলামের এজেন্ডার সাথে একাত্ম না হয়েই। ইসলামের এরূপ দ্বীন পালনের কোন স্থান নাই। আল্লাহর নির্দেশ: “উদখুলো ফিস সিলমে কা’ফ্ফা”; অর্থ, “ইসলামে প্রবেশ করো পূর্ন ভাবে”। অর্থাৎ পূর্ণ ভাবে একাত্ম হতে হবে মহান আল্লাহর এজেন্ডার সাথে। তাই রাষ্ট্রের ন্যায় সবচেয়ে শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটিকে ইসলামী বিধানের বাইরে রেখে কখনোই ইসলাম পালনের কাজটি হয়না।
সেক্যুলারিস্টদের চিত্তে কাজ করে পার্থিব স্বার্থ হাছিলের তাড়না; ইবাদতের প্রেরণা সেখানে বিলুপ্ত। অখেরাতের ভীতিকে তারা পশ্চাদপদতা বলে। আখেরাতের ভাবনাশূণ্যতাই সেক্যুলারিস্টদের শয়তানের সৈনিকে পরিণত করে। তখন কাফির শক্তির সৈনিকে পরিণত হওয়া তাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। এজন্যই একাত্তরে তারা ভারতের ন্যায় কাফির শক্তির সহযোগীতে পরিণত হয়েছিল। চেতনায় সেক্যুলারিজম বেঁচে থাকলে তাদের মাঝে একাত্তরের ন্যায় কাফির শক্তির সহযোগী হওয়ার ইচ্ছাও বেঁচে থাকবে। তাই সেক্যুলারিস্টরা শুধু পাকিস্তানের জন্য নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতারও বড় শত্রু ।
আধুনিক যুগে মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে ভাষা, বর্ণ, আঞ্চলিকতার নামে সবচেয়ে বড় ফিতনা ও সবচেয়ে বড় নাশকতার কাণ্ডটি ঘটিয়েছে সেক্যুলারিস্টগণ। প্রতিটি মুসলিম দেশে মুসলিমদের ইসলাম থেকে দূরে সরানোর কাজে এবং আখেরাতে জবাবদেহীতা ভুলিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে এরা শয়তানের খলিফা রূপে কাজ করেছে। শয়তান চায়, মুসলিম উম্মাহর বিভক্তি ও শক্তিহীনতা। সেক্যুলারিস্টগণ সে কাজটি করেছে মুসলিম উম্মাহকে ৫০টির বেশী টুকরোয় বিভক্ত করে। এদের কারণে মুসলিম দেশে বিলুপ্ত হয়েছে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়া। সেক্যুলারিস্টদের কারণেই মুসলিম দেশগুলিতে নবীজী (সা)’র প্রবর্তিত বিশুদ্ধ ইসলাম – যাতে ছিল শক্তিশালী ইসলামী রাষ্ট্র, প্যান ইসালামী মুসলিম ভাতৃত্ব, ন্যায় ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা, তা আজ বেঁচে নাই। সেক্যুলারিস্টগণ মুসলিমদের মহান আল্লাহ তায়ালার সৈনিকের বদলে শয়তানের সৈনিকে পরিণত করেছে। এটিই হলো তাদের সবচেয়ে বড় নাশকতা। সেটিরই দৃশ্যমান রূপ হলো, প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ কালে আড়াই লাখ ভারতীয় মুসলিম ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে খলিফার বাহিনীর বিরুদ্ধে ইরাক ও সিরিয়ায় গিয়ে যুদ্ধ করেছে। এবং ১৯১৭ সালে লক্ষাধিক বাঙালি মুসলিম সন্তান পৌত্তলিক ভারতের অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাথে মিলে শয়তানের এজেন্ডাকে বিজয়ী করেছে।
পবিত্র কুর’আনে মহান আল্লাহ তায়াল মানুষের চেতনাগত যে রোগটির অতিশয় নিন্দা করেছেন, সেটি হলো আখেরাতের ভয়শূন্যতা তথা সেক্যুলারিজমকে। যেমন সুরা ক্বিয়ামা’র ২০ ও ২১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:
كَلَّا بَلْ تُحِبُّونَ ٱلْعَاجِلَةَ
وَتَذَرُونَ ٱلْـَٔاخِرَةَ
অর্থ: “কখনোই না, বরং তোমরা ভালবাস দুনিয়ার জীবনকে এবং পরিহার করেছো আখেরাতকে।” একই অভিযোগ আনা হয়েছে সুরা ইনসানে ২৭ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে:
إِنَّ هَـٰٓؤُلَآءِ يُحِبُّونَ ٱلْعَاجِلَةَ وَيَذَرُونَ وَرَآءَهُمْ يَوْمًۭا ثَقِيلًۭا
অর্থ: “নিশ্চয়ই এরাই হলো তারা, যারা ভালবাসে দুনিয়ার জীবনকে এবং পিছনে পরিত্যক্ত রূপে ফেলে রাখে আখেরাতের ভারী দিনগুলোর ভাবনাকে”। এরূপ আখেরাতবিমুখ ব্যক্তিগণ কি কখনো জান্নাত পায়?
বাঙলি আলেমদের ব্যর্থতা
প্রশ্ন হলো, ব্রিটিশের পণ্য ক্রয় হারাম -সে ফতোয়া তো ১৭৫৭ সালের বাঙালি আলেমগণ দিতে পারতো। সে ফতোয়াটি দিলে ব্রিটিশের পণ্যের বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হতো। কিন্তু সেটি তারা করেননি। তারা ফতোয়া দিতে পারতো ইসরাইলী ও ভারতীয় পণ্যের বয়কটের পক্ষে। কারণ ইসরাইল ও ভারতের পণ্য ক্রয়ের অর্থ হলো শত্রুকে হামলায় শক্তি জোগানো। তাতে অর্থ জোগানো হয় অস্ত্র নির্মাণে -যা দিয়ে শত্রু দেশ দুটি মুসলিম হত্যা করে। বুঝতে হবে, শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুধু রণাঙ্গণে হয়না, যুদ্ধ হয় অর্থনৈতিক অঙ্গণে। এবং যুদ্ধ হয় বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গণেও। কিন্তু সে যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় প্রজ্ঞা ও সচেতনতা বাঙালি আলেমগণ ১৭৫৭ সালে যেমন দেখায়নি, আজও দেখাতে পারছে না। ভারতের ন্যায় একটি শত্রু রাষ্ট্রের পণ্য বর্জনের পক্ষে কোন ফতোয়া শীর্ষ আলেমদের পক্ষ থেকে আজও আসেনি। অথচ ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহবান এসেছে পিনাকী ভট্টাচার্যের ন্যায় এক জন হিন্দুর পক্ষ থেকে।
১৭৫৭ সালে মুসলিম বাহিনীর পরাজয়টি শুধু সামরিক ছিল না, সেটি ছিল বুদ্ধিবৃত্তিক পরাজয়ও। সে পরাজয়ের ফলে ব্রিটিশগণ সেদিন তাদের নিজেদের পণ্যের অবাধ বাজার পেয়েছে এবং ধ্বংস করেছে বাংলার মসলিন, রেশম ও মখমল শিল্পকে। এবং একই ভাবে ১৯৭১’য়ের বিজয়ের পর বাংলাদেশে অবাধ বাজার পেয়েছে ভারত। এতে ধ্বংস হয়েছেই বাংলাদেশের নিজস্ব শিল্পের বাজার। পরিতাপের বিষয় হলো, ইমামতি, মুয়াজ্জিনী, মুর্দার জানাজা, মিলাদ পড়ানো ও বিবাহ পড়ানোর বাইরে অন্য কোন বিষয়ে ভাবতে বা দায়িত্ব নিতে আলেমদের দেখা যায় না। আফগানিস্তান দখলের দুই বার চেষ্টা করেছিল ব্রিটিশেরা। দখলে নেয়ার চেষ্টা করেছে সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিবারই সে আগ্রাসন রুখে দিয়েছে আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষ। অথচ সেসব যুদ্ধে দেশের সরকারি সেনাবাহিনীকে দেখা যায়নি। কিন্তু শত্রুর আগ্রাসনের বিরুদ্ধ সেরূপ প্রতিরোধ বাংলার মুসলিমদের পক্ষ থেকে গড়ে উঠেনি। বরং নবাব সিরাজুদ্দৌলার বিরুদ্ধে বিজয়ের পর ক্লাইভের বাহিনী মুর্শিবাদে যে বিজয় মিছিল করেছিল, তাতে বাঙালি মুসলিমগণ বিপুল সংখ্যায় দর্শক রূপে হাজির হয়েছিল। তাদের মধ্যে ব্রিটিশের গোলামীর বিরুদ্ধে সেরূপ ঘৃণাবোধও দেখা যায়নি। কাফিরদের অধিকৃতি যে কতটা ভয়ানক হতে পারে -সে বোধও তাদের ছিল না। এর কারণ, তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যর্থতা। এমন বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যর্থতা নিয়ে কি কোন দেশের স্বাধীনতা বাঁচে?
বাঙালির একাত্তরের অর্জন
বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় যদি ভারতের চেয়ে ১০ গুণ অধিক হয় তবুও বাংলাদেশীদেরকে ভারতের প্রতি আজ্ঞাবহ হয়েই চলতে হবে। এটাই একাত্তরের অর্জন। ১৯৪৭’য়ের অর্জন থেকে একাত্তরের অর্জনের এখানেই মূল পার্থক্য। বাংলাদেশীদের স্বাধীনতার জন্য ভারত যুদ্ধ করে দিয়েছে –এটি হলো ইতিহাসের সবচেয়ে হাস্যকর মিথ্যা। অন্য কারো স্বাধীনতা নিয়ে ভারত কোন কালেই মাথা ঘামায়নি, অর্থও বিনিয়োগ করেনি। ভারত বিনিয়োগ করে ও যুদ্ধ করে অন্য দেশের উপর নিজের দখল জমাতে। ভারত ১৯৭১ সালে সেটিই করেছে বাংলাদেশের মাটিতে। আগামী বহুশত বছর ধরে দাসত্ব বা দাসত্বের ভয় নিয়ে বাঁচতে হবে বাঙালি মুসলিমদের। অথচ এ দাসত্ব পারমাণবিক অস্ত্রধারী পাকিস্তানীদের নাই।
বাংলাদেশের সমস্যাটি শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং সেটি ভূ-রাজনৈতিক। সেটি ক্ষুদ্র ভূগোলের। ক্ষুদ্র ভূগোল নিয়ে ভারতের ন্যায় আগ্রাসী ও মুসলিম বিদ্বেষী একটি বৃহৎ দেশের পাশে বসবাসের এটিই হলো সবচেয়ে বিপদ। তখন বাঁচতে হয় আশ্রিত দেশের মর্যাদা নিয়ে। বিশ্বের অন্যান্য জাতিও এরচেয়ে বেশী মর্যাদা দিতে রাজী হয়না। তাই আঞ্চলিক বৃহৎ শক্তি রূপে ভারত পেয়েছে বাংলাদেশের উপর দাদাগিরির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। বাংলাদেশের জন্য এটিই আজ বাস্তবতা। প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ বাংলাদেশীগণ যেমন আজ পাচ্ছে না, আগামীতেও পাবে না। জমিদারীর পাশের বাড়ির কৃষককে যেমন সকাল-বিকাল জমিদারকে কুর্ণিশ করে চলতে হয়, বাংলাদেশেরও সেই একই অবস্থা।
স্বাধীন থাকার জন্য অতি জরুরি হলো প্রতিরক্ষার সামর্থ্য। সে জন্য অপরিহার্য হলো বৃহৎ ভূগোল, বৃহৎ লোক বল ও বৃহৎ অর্থনীতি। সে ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক সামর্থ্য বাড়াতেই খাজা নাযিমুদ্দীন ও হোসেন শহীদসোহরাওয়ার্দীর ন্যায় বাংলার মুসলিম নেতাগণ স্বেচ্ছায় ১৯৪৭ সালে পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তানে যোগ দিয়েছিলেন। একই কারণে ১৯৭১’য়ে সকল ইসলামী দল ও আলেম পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল। অথচ আজ তাদেরকে দেশের স্বাধীনতার শত্রু বলে গালী দেয়া হয়। এই হলো মুজিবভক্ত বাঙালি সেক্যুলারিস্টদের বিচার। অথচ ১৯৪৭ সালে কেউ জোর করে বা ষড়যন্ত্র করে বাংলাকে পাকিস্তানভুক্ত করেনি। বৃহত্তর সিলেটের জনগণ সেদিন ভোট দিয়ে ভারত ছেড়ে পাকিস্তানভুক্ত হয়েছিল। ফলে আসামের মুসলিমগণ আজ যেরূপ গণহত্যা, নির্যাতন ও অপমানের শিকার হচ্ছে -তা থেকে তারা বেঁচেছে। অথচ বাংলাদেশের ইতিহাসে এ বিষয়গুলি আজ পড়ানো হয় না। আরেকটি সত্য অতি পরিকল্পিত ভাবে গোপন করা হয়।
মুজিবের অপরাধ ও গাদ্দারী
বাঙালি মুসলিমদের বিরুদ্ধে শেখ মুজিবের সবচেয়ে অপরাধটি হলো, ভারতের প্রতি নিবেদিত প্রাণ সেবাদাসটি বাংলাদেশকে শুধু ভারতের অধীনে ২৫ সালা দাসচুক্তিতে আবদ্ধ এক গোলাম রাষ্ট্রে পরিণত করেননি, বরং পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠি রূপে বাঙালি মুসলিমগণ বিশ্ব-রাজনীতি ও মুসলিম বিশ্বের রাজনীতিতে যে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারতো -সে অধিকার ও মর্যাদা থেকেও বঞ্চিত করেছে। শত শত বছর বাঁচতে হবে সে বঞ্চনা নিয়ে। এটা ছিল বাঙালি মুসলিমের ১৯৪৭’য়ের চেতনার সাথে গাদ্দারী। এবং মুজিব সেটি করেছে ১৯৭০’য়ে নির্বাচনে পাকিস্তানের সরকার গঠনের নামে ভোট নিয়ে। মুজিব সে নির্বাচনে পাকিস্তান ভাঙা ও ভারতের সাথে চুক্তিবদ্ধ গোলাম হওয়ার পক্ষে ভোট নেয়নি। মুজিবের ইচ্ছা ছিল আজীবন ক্ষমতায় থাকা; এটিই ছিল তার জীবনের মূল এজেন্ডা। সে এজেন্ডা পূরণ করতে গিয়ে মুজিব গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়েছিল এবং প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল একদলীয় বাকশালী ফ্যাসিবাদের। এবং স্বাধীনতার নামে পরাধীন বানিয়েছিল বাঙালি মুসলিমদের। মুজিব-হাসিনার পতন হলেও ভারতের প্রতি দাসত্বের সে চেতনা আজও বেঁচে আছে তাদের অনুসারীরা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি বড় হুমকি এরাই। স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে এদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিকল্প নাই। ২৮/০৯/২০২৫