মুসলিমদের গর্ব ও উৎসব বিভক্তি নিয়ে!

2 views
Skip to first unread message

Firoz Kamal

unread,
Aug 9, 2025, 6:08:02 AMAug 9
to

মুসলিমদের গর্ব ও উৎসব বিভক্তি নিয়ে!

ফিরোজ মাহবুব কামাল


www.drfirozmahboobkamal.com/blog/মুসলিমদের-গর্ব-ও-উৎসব-বিভ/


 

 ভৌগলিক বিভক্তি: বেঈমানীর দৃশ্যমান রূপ

প্রতিটি ঈমানদারের উপর ফরজ যেমন নামায়-রোজা, তেমনি ফরজ হলো মুসলিম উম্মাহর মাঝে একতা গড়াএবং হারাম হলো বিভক্তি। অথচ আজ মুসলিমদের গর্ব ও উৎসবের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে ভাষা, বর্ণ ও ভৌগলিকতার নামে বিভক্তি। নামা-রোজা পালন না করলে ব্যক্তি কাফির হয়; অপর দিকে একতা না থাকলে মুসলিম উম্মাহ বিভক্ত, পরাজিত ও পরাধীন হয়। শত্রুর পদতলে পিষ্ট সে মুসলিম ভূমিতে তখন অসম্ভব হয় পূর্ণ ইসলাম পালন। তখন মুসলিমের জন্য থাকে না জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা। নামায়-রোজায় ক্বাজা আছে, কিন্তু ক্বাজা নেই কতার ফরজ পালনে

কে কোন দেশের, বর্ণের বা ভাষাররোজ হাশরের বিচার দিনে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না কিন্তু এ হিসাব অবশ্যই দিতে হবে বিভক্ত মুসলিম উম্মাহকে একতাবদ্ধ করার কাজে আদৌ কোন ভূমিকা ছিল কিনা -তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, কি ভূমিকা ছিল আল্লাহ তায়ালার আইন তথা শরিয়তকে আল্লাহর ভূমিতে বিজয়ী করায়? কারণ, নামাজ-রোজার ন্যায় এ দায়িত্ব পালনের দায়ও ফরজ ছিল। মুসলিম উম্মাহর আজকের শক্তিহানী পরাজয়ের মূল কারণটি লোকবল বা অর্থবলের কমতি নয় বরং সেটি হলো টির বেশী রাষ্ট্রের নামে মুসলিম উম্মাহর বিভক্তিআজ যদি খেলাফত বেঁচে থাকতো  এবং আরব ভূমি ২২ টুকরোয় বিভক্ত না হতো -তবে কি ইসরাইল সৃষ্টি হতো? তখন কি ইসরাইল পরিচালিত গণহত্যায় গাজায় নিহত হতো ৬০ হাজারের বেশী নারী, শিশু ও পুরুষ? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল কি তখন সাহস পেত ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন, ইরানে হামলা করতে? এসবের মূল কারণ মুসলিম উম্মাহর বিভক্তি।

বিভক্তি মানেই সিরাতাল মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুতি। এবং সেটি আল্লাহ তায়ালার নির্দেশের সাথে বড় মাপের বেঈমানী।  মুসলিম উম্মাহর বিভক্ত মানচিত্র  হলো সে বিচ্যুতি ও বেঈমানীর দৃশ্যমান দলিল। প্রশ্ন হলো, বিভক্ত হওয়ার দিনগুলিকে - বাংলাদেশের যেমন জন্য ১৬ ডিসেম্বর, বিজয় দিবস রূপে উৎসব করার অর্থ তো সে বিচ্যুতি ও বেঈমানী নিয়ে উৎসব করা। অথচ শুধু বাংলাদেশে নয়, সেরূপ উৎসব ২২টি বিভক্ত আরব দেশেও হচ্ছে। অথচ ঈমান বেঁচে থাকলে মুসলিম উম্মাহর বিভক্তি নিয়ে মুসিলমদের মাঝে মাতম তো। মুসলিমদের বিভক্তি ও পরাজয় নিয়ে উৎসব হবে শত্রু দেশের রাজধানীগুলিতেযেমন দিল্লিতে প্রতি বছর হয় ১৬ ডিসেম্বর এলে হয় -সেটি বোধগম্য। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয় হলো, বিভক্তি নিয়ে উৎসব হয় মুসলিম ভূমিতে!

 

ঈমান দেখা যায় উম্মাহর একতার মাঝে

মহান আল্লাহ তায়ালা তো চান মুসলিম উম্মাহর মাঝে সীসাঢালা প্রাচীরসম একতা তাই যারা মহান আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করতে চান -তারা কি খুশি হতে পারে মুসলিম উম্মাহর বিভক্তি নিয়ে? বস্তুত ঈমান দেখা যায় মুসলিম উম্মাহর একতার মাঝে। এবং বেঈমানী দেখা যায় বেঈমানীর মাঝে। মুমিন ব্যক্তি শুধু নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত ও কুর’আন তেলাওয়াতের তাড়না নিয়ে বাঁচে না, বাঁচে একতা প্রতিষ্ঠার তাড়না ও সাধনা নিয়েও। কারণ সে তাড়না ও সাধনা তাঁর মহান আল্লাহকে খুশি করে। আর বিভক্তি খুশি করে শয়তানকে। এজন্যই নানা ভাষা, নানা বর্ণ নানা অঞ্চলের প্রকৃত ঈমানদারগণ শুধু নামাজের কাতারে একত্রে দাঁড়ায় না, তারা একত্রে বসবাস রে মুসলিম ভূমির অখণ্ড মানচিত্রের মাঝে নবীজী (সা:) তাঁর সাহাবাদের আমলে  আরব, ইরানী, তুর্কি, কুর্দি, হাবশী, মুর মুসলিমগণ তো সেটিই করেছে সেরূপ একতার তাড়না নিয়েই ১৯৪৭ সালে বাঙালি, পাঞ্জাবী, সিন্ধি, পাঠান, বেলুচ ইত্যাদি পরিচয়ের মানুষ একত্রে মিলে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেছিল।

নামাজের কাতার ভাঙ্গা বা কারো গৃহ ভাঙ্গা যেমন হারাম, তেমনি হারাম হলো মুসলিম রাষ্ট্রের মানচিত্র ভাঙ্গা সে ভাঙ্গার এজেন্ডা নিয়ে প্রতি দেশে রাজনীতি করে শয়তানের এজেন্টগণ। তাদের কারণেই মুসলিম উম্মাহর ভৌগলিক মানচিত্র ৫০টির বেশী টুকরোয় বিভক্ত।  ১৯৭১’য়ে পূর্ব পাকিস্তানের বুকে সে ভাঙ্গার এজেন্ডা ছিল বাঙালি ফ্যাসিস্ট, বাঙালি জাতীয়তাবাদী, কম্যুনিস্ট, সেক্যুলারিস্ট ও বাঙালি হিন্দুত্ববাদীদের। বঙ্গীয় বদ্বীপে তারা কাজ করে শয়তানের বিশ্বস্ত খলিফা। তাদের পাকিস্তান ভাঙ্গার প্রকল্পে সহয়তা দিয়েছে ইসলামের চিহ্নিত শত্রু ভারত ও সোভিয়েত রাশিয়া।  তাদের সে মুসলিম বিরোধী নাশকতার কাজে বিশ্বের তাবত কাফেরগণ খুশি হতে পারে, কিন্তু কখনো কি কোন ঈমানদার খুশি হতে পারে? সেটি অভাবনীয়। এজন্যই কোন ইসলামী দল, কোন আলেম, কোন পীর সাহেব এবং কোন বিজ্ঞ ইমাম ১৯৭১’য়ে পাকিস্তান ভাঙ্গাকে সমর্থন করেনি। বেঈমানী শুধু নাস্তিকতা, মিথ্যাচর্চা, চুরি-ডাকাতি, ধর্ষণ নানারূপ দুর্বৃত্তির মাঝেই ধরা পড়ে না, ধরা পড়ে ভাষা, বর্ণ আঞ্চলিকতার নামে বিভক্ত মানচিত্র গড়ার মাঝে সারা জীবন নামাজ-রোজা বার বার হজ্জ-উমরাহ করে কি সে বেঈমানী ঢাকা যায়?

মুসলিমদের আজকের দুরাবস্থার কারণ তো এই ভয়ানক বেঈমানি সে বেঈমানি নিয়ে বাঁচাটি বহু কোটি বাঙালি মুসলিমের রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও অহংকারে পরিণত হয়েছেশেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের পতন হলেও সে হারাম রাজনীতি প্রবল ভাবে বেঁচে আছে বিএনপি ও অন্যান্য জাতীয়তাবাদী, ফ্যাসিবাদী, সেক্যুলার ও বামধারার দলগুলির রাজনীতিতে। তাই একাত্তরের পাকিস্তান ভাঙ্গা তাদের কাছে আজও অহংকারের বিষয়। একতা নিয়ে নয়, বরং বিভক্তি নিয়ে বাঁচাটি তাদের কাছে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালার বিধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের এ সংস্কৃতি কি আযাবই অনিবার্য করবে না।?

 

একতা রহমত আনে এবং বিভক্তি আনে আযাব

একতা মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে প্রচুর রহমত বয়ে আনে এবং বিভক্তি আনে প্রতিশ্রুত আযাব তাই মানচিত্র ভেঙ্গে মুসলিম দেশগুলি যতই ছোট হয়েছে, ততই বেড়েছে আযাববড় আযাবটি আসে শত্রু শক্তির দখলদারি রূপে। ভূগোল ছোট করলে শক্তি বাড়েনা, বরং তা ভয়ানক ভাবে কমে যায় মুসলিমগণ শক্তিতে তখনই অপ্রতিরোধ্য ছিল এবং সে সাথে ইজ্জতের অধিকারী ছিল যখন তাদের একটি মাত্র রাষ্ট্র ছিল এবং ছিল না ভাষা, বর্ণ আঞ্চলিকতার নামে বিভক্তি বিভক্তির মধ্য দিয়ে দেশের সংখ্যা যখন থেকে বাড়তে শুরু করেছে, তখন থেকেই দ্রুত কমতে শুরু করেছে তাদের শক্তি ও স্বাধীনতা এবং দ্রুত কমতে শুরু করেছে ইজ্জত নিরাপত্তা কথা হলো, মৌলিক বিষয়গুলি বোঝার জন্য কি স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়ার প্রয়োজন পড়ে? ইসলামের গৌরব যুগে ভেড়ার রাখালগণও ইসলামের এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বুঝতো তার কারণ, তাদের ছিল পবিত্র কুর’আনের জ্ঞান সে কুর’আনী জ্ঞানের বলে তারা বুঝতেো, মুসলিম জীবনে অতি পবিত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো মুসলিম উম্মাহকে বিভক্তি থেকে বাঁচানো তেমন এক কুর’আনী চেতনার কারণেই তাদের কাছে পবিত্র জিহাদ গণ্য হতো গোত্র, ভাষা, অঞ্চল বর্ণের নামে গড়ে উঠা বিভক্তি বিভেদের দেয়ালগুলি ভাঙ্গা

পরিতাপের বিষয় হলো, দেশের আলেম ও পীরগণ বহু সূন্নত,বহু নফল ও বহু মোস্তাহাব বিষয়ের উপব জোর দেন; অথচ জোর দেন না মুসলিম উম্মাহর একতার উপর। অথচ একতা গড়াটি সূন্নত, নফল বা মোস্তাহাবের বিষয় নয়, সেটি হলো ফরজে আইন। অর্থাৎ ফরজ প্রতিটি ঈমানদারের উপর। এবং বিভক্তি গড়া কুফুরি। এটি এক ভয়ানক ফিতনা যা বিজয় বাড়ায় শয়তানের। তখন শয়তানী শক্তির দখলদারিতে অসম্ভব হয় স্বাধীন ভাবে পূর্ণ ইসলাম পালন। পবিত্র কুর’আনে ফিতনাকে মানব হত্যার চেয়েও গুরুতর নাশকতা বলা হয়েছে। অথচ আলেমদের কাছে এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে না। তারা বরং নিজেরাই নানা ফিরকা, নানা ত্বরিকা ও নানা মজহাবের নামে প্রচণ্ড বিভক্তি বাড়িয়েছেন। বিভক্তি বাড়াতে মসজিদের পাশে মসজিদ গড়েছেন। অর্থাৎ এক সাথে নামাজ আদায়েও তারা রাজী নন। এভাবে তারা খুশি করছেন শয়তানকে। তাদের তাড়নাটি মহান রবকে খুশি করা হলে, সে তাড়নাটি দৃশ্যমান হতো একতা গড়ায় আগ্রহ দেখে। 

 

ঘাড়ে চেপেছে সবচেয়ে বড় বিদ’য়াত

আলেমগণ বহু বিদয়াতের বিরুদ্ধে কথা বলেন; সেটি ভাল। কিন্তু মুসলিম উম্মাহর জীবনে সবচেয়ে বড় এবং হারাম বিদয়াত হলো ভাষা, গোত্র, বর্ণ ও জাতি সত্ত্বার নামে বিভক্তির দেয়াল গড়া এবং পৃথক পৃথক রাষ্ট্র গড়া। সে কাজটি নবীজী (সা:)’র আমলে ছিলনা, সাহাবাদের আমলেও ছিল না। আল্লাহকে খুশি করা তাদের  নিয়ত হলে এ বিদয়াতের বিরুদ্ধে তাদের পক্ষ থেকে লাগাতর যুদ্ধ শুরু হওয়া উচিত ছিল।  পরিতাপের বিষয় হলো, সে রূপ যুদ্ধ তাদের জীবনে নাই। বরং তারা বিরামহীন যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত ভিন্ন মজহাব, ভিন্ন ত্বরিকা ও ভিন্ন ফিরকার বিরুদ্ধে। এভাবেই তারা মুসলিম উম্মাহর পরাজয় ও পরাধীনতা বাড়াচ্ছেন এবং বিজয় বাড়াচ্ছেন শয়তান ও তার অনুসারীদের।

Reply all
Reply to author
Forward
0 new messages