জামায়াত নেতারা সত্য কথা বলতে ভয় পায় কেন?
ফিরোজ মাহবুব কামাল
www.drfirozmahboobkamal.com/blog/জামায়াত-নেতারা-সত্য-কথা/
৭১’য়ের যুদ্ধ ছিল ভারতের অর্থে, অস্ত্রে ও পরিচালনায় ভারতীয় যুদ্ধ
জামায়াত নেতাদের যখন টিভি টক শো’তে প্রশ্ন করা হয়, একাত্তরে তারা কেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করলো, তখন নেতাদের আমতা আমতা করতে দেখা যায়। তারা গুছিয়ে কথা বলতে পারে না। ইনিয়ে বিনয়ে জবাব দেয়ার চেষ্টা করে, তাদের কথার মধ্যে কোন স্পষ্টতা থাকে না। অনেকটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা। একাত্তরে জামায়াত যে পাকিস্তান ভাঙ্গা ও বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরোধীতা করেছিল -সেটি তো বাংলাদেশের শিশুরাও জানে। এখন জামায়াত নেতাদের স্পষ্ট ভাবে জবাব দেয়া উচিত, কেন তারা পাকিস্তান ভাঙ্গার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিল। যতটা সুন্দর ভাবে জবাব দিবে ততই তাদের গ্রহনযোগ্যতা বাড়বে।
অতি দৃঢ় ভাবে ও স্পষ্ট ভাবে তাদের বলা উচিত, পূর্ব পাকিস্তানীরা ছিল পাকিস্তানের সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগণ; মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫৬ ভাগ। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ সংখ্যালঘিষ্ঠদের থেকে আলাদা হতে দেশ ভেঙেছে -সমগ্র মানব ইতিহাসে সে নজির নাই। যখন সে অস্বাভাবিক কাণ্ড ঘটে, বুঝতে হবে এর পিছনে শত্রু শক্তির ষড়যন্ত্র আছে। একাত্তরে তেমন একটি ষড়যন্ত্র ছিল পৌত্তলিক ভারতের ন্যায় চির শত্রু দেশের। মুজিবকে দিয়ে সেরূপ একটি ষড়যন্ত্র ষাটের দশকে আগরতলা ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। দেশপ্রেমিক নাগরিক রূপে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দায় হলো, নিজের দেশকে শক্তিশালী করা, ভাঙা নয়।
দেশ ভাঙলে শত্রুর পদতলে পরাধীনতা বাড়ে; বিলুপ্ত হয় স্বাধীনতা। স্বাধীনতা বাঁচানোর খরচ বিশাল, সে সামর্থ্য ক্ষুদ্র দেশের থাকে না। দেশের অরক্ষিত স্বাধীনতাই তো পরাধীনতা। স্বাধীনতা বাঁচনোর সে খরচে পাঞ্জাবী, পাঠান, সিন্ধি, বেলুচ ও মোহাজিরদের ভাগীদার বানাতে ১৯৪৭’য়ের বাংলার প্রাজ্ঞ মুসলিম নেতাগণ পাকিস্তানে যোগ দেয়। পাঞ্জাব ও সিন্ধুর ন্যায় পাকিস্তানের অন্যান্য প্রদেশের তূলনায় পূর্ব বাংলার পাকিস্তানের যুক্ত হওয়াটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বাংলা হলো সমগ্র মুসলিম বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন এবং তিন দিক দিয়ে ভারত থাকা পরিবেষ্টিত। পাকিস্তানে যুক্ত না হলে সেদিন স্বাধীনতা বাঁচতো না। যেমন বাঁচেনি হায়দারাবাদ, জুনাগড়, মানভাদাড় ও কাশ্মীরের স্বাধীনতা।
বাঙালি মুসলিমের স্বাধীনতার শুরু বস্তুত ১৯৪৭ থেকে; এবং পরাধীনতার শুরু ১৯৭১ থেকে। একাত্তরে শুরু হয় ভারতের প্রতি নতজানু বাঙালি খলিফাদের শাসন। শাসন ক্ষমতা হাতে পেয়ে জনগণের ক্ষমতা কেড়ে নিতে গণতন্ত্রকে কবরে পাঠানো হয়। কেড়ে নেয়া হয় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। এবং চেপে বসে বাকশালী ফ্যাসিবাদ। রাজনৈতিক দল গঠনের অধিকার, ভোটের অধিকার ও কথা বলার অধিকার বিলুপ্ত হলে স্বাধীনতা বাঁচে। সেটি তো নিরেট পরাধীনতা। সেটিই তো একাত্তরের ফসল। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ ছিল ভারতের অস্ত্রে, ভারতের অর্থে এবং ভারতের পরিচালনায় একমাত্র ভারতীয় স্বার্থ হাছিলের যুদ্ধ। ভারতের এ যুদ্ধকে স্বাধীনতার যুদ্ধ বলাটি নিছক ভারত ও তার বাঙালি দাসদের বয়ান। এর মধ্যে কোন সত্যতা নাই।
একাত্তরে যুদ্ধ ছিল একটি হারাম যুদ্ধ
ঈমানদারের কাছে প্রতিটি খাদ্য যেমন হালাল হতে হয়, তেমনি প্রতিটি যুদ্ধকে অবশ্যই হালাল হতে হয়। এবং প্রতিটি হালাল যুদ্ধই হলো পবিত্র জিহাদ। এর অর্থ, যে যুদ্ধ জিহাদ নয়, সে যুদ্ধ অবশ্যই হারাম। কোন ঈমানদার কোন হারাম যুদ্ধে যোগ দিলে এবং নিহত হলে সে নিশ্চিত জাহান্নামে যাবে। এবং জিহাদ হলো এমন এক যুদ্ধে যার লক্ষ্য হয়, ইসলামের বিজয়, শরিয়ার প্রতিষ্ঠা অথবা মুসলিম ভূমির প্রতিরক্ষায়। জিহাদ কখনোই কোন কাফির দেশের অর্থ, অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও পরিচালনায় কাফির দেশকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে সংগঠিত হয় না -যেমনটি একাত্তরের যুদ্ধে দেখা গেছে। তাই যে যুদ্ধের এজেন্ডা ভাষা, বর্ণ, আঞ্চলিকতা, সেক্যুলারিজম ভিত্তিক চেতনা -সেরূপ যুদ্ধ কখনোই হালাল হয়না। আর যে যুদ্ধ হালাল নয়, একজন মুসলিমের কাছে সে যুদ্ধে যোগ দেয়া হারাম। এজন্যই শুধু জামায়াত কেন, কোন ইসলামী দল ও কোন ইসলামী ব্যক্তি মুক্তি যুদ্ধে যোগ দেয়নি।
পরিতাপের বিষয় হলো, ইসলামের এ মৌল ধারণাগুলি বাংলাদেশের টিভি টকশো গুলিতে আলোচনায় আনা হয়না। অথচ মুসলিমের যুদ্ধবিগ্রহ, বুদ্ধিবৃত্তি ও রাজনীতির মূল্যায়নে একমাত্র মানদণ্ড (conceptual paradigm) হতে হবে ইসলামের এ মৌল বিশ্বাস। অথচ প্রতিটি টকশোতে বিচারের মানদণ্ড রূপে গৃহিত হয় ইসলাম বিবর্জিত সেক্যুলার তথা কুফরি মানদণ্ড। কোন মুসলিম সেটি মেনে নিতে পারে না। ইসলামী বিচার বোধ ও শরিয়া শুধু আদালতের বিষয় নয়, বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্লিষণের বিষয়ও। সেক্যুলার মানদণ্ডে জ্বিনার ন্যায় গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধও প্রেম রূপে নন্দিত হয়। একই ভাবে ভারতের ন্যায় একটি পৌত্তলিক কাফির শক্তির সাথে জোট বেঁধে পাকিস্তানের ন্যায় একটি মুসলিম দেশ ভাঙার হারাম যুদ্ধও মহৎ কর্ম রূপে গণ্য হয়।
জামায়াত নেতাদের স্পষ্ট করে বলা উচিত, শরীয়া আইনে মুসলিম দেশ ভাঙা হারাম; এটি শাস্তিযোগ্য ফৌজদারী অপরাধ। শাস্তি মৃত্যদণ্ড। ফলে শুধু জামায়াত কেন, কোন ঈমানদারের পক্ষেই পাকিস্তানের ন্যায় একটি মুসলিম দেশ ভাঙ্গার যুদ্ধে যোগ দেয়া সম্ভব ছিল না। সে সময় দেশের সকল বাঙালি বিজ্ঞ আলেম পাকিস্তান ভাঙ্গাকে হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছিল। জামায়াত যেহেতু শরিয়তে পূর্ণ বিশ্বাস করে, পাকিস্তান ভাঙার পক্ষে যুদ্ধে দাঁড়ালে সেটি হতো মহান আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। আর এরূপ বিদ্রোহ ব্যক্তিকে কাফের ও মুনাফিক বানায়। তাই জামায়াতের নেতা-কর্মীগণ সে পথ বেছে নেয় কি করে? মুক্তি যুদ্ধের ন্যায় একটি হারাম যুদ্ধে সেক্যুলারিস্ট, ফ্যাসিস্ট ও বামপন্থী বেঈমানেরা যতটা সহজে যোগ দিতে পারে, সেরূপ একটি যুদ্ধে যোগ দেয়া ততটাই নিষিদ্ধ হলো ঈমানদারের পক্ষে । তাই কোন আলেম মুক্তি বাহিনীতে যোগ দিয়েছে -তার প্রমাণ নাই। তবে কি তারা স্বাধীনতাকে ভাল বাসতো না?
মুক্তি যুদ্ধের প্রজেক্ট ছিল শত্রুশক্তির
একাত্তরে যারা পাকিস্তান ভাঙার পক্ষে যুদ্ধ করেছিল তারা কেউ ইসলামী ছিল না। তারা ছিল ইসলাম থেকে দূরে সরা বাঙালি ফ্যাসিস্ট, বাঙালি সেকুলারিস্ট, বাঙালি কমিউনিস্ট এবং হিন্দুত্ববাদীরা। এবং তাদেরকে সমর্থন দিয়েছিল হিন্দুত্ববাদী ভারত, ইসরাইল ও কমিউনিস্ট সোভিয়েত রাশিয়া। কোন একটি মুসলিম দেশও পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ নির্মাণের পক্ষে সমর্থন দেয়নি। মুক্তিবাহিনীর প্রজেক্ট ছিল পুরোপুরি ইসলামের শত্রুদের। যদি পাকিস্তান ভাঙা বাঙালি মুসলিমদের জন্য কোন কল্যাণকর কর্ম হতো তবে বিশ্বের তাবত মুসলিম দেশগুলি সেটিকে সমর্থন দিত -যেমন সমর্থন দিয়েছে আলজিরিয়া ও ফিলিস্তিনের মুক্তি যুদ্ধের। তাছাড়া দেশ ভাঙ্গলে স্বাধীনতা বাড়ে না, বরং পরাধীনতা বাড়ে। সে পরাধীনতাই তো একাত্তরের অর্জন। তাই দেশ ভাঙার যুদ্ধকে কখনোই স্বাধীনতার যুদ্ধ বলা যায়না। এটি নিতান্তই ভারতীয় মিথ্যা বয়ান।
জামায়াত নেতাদের বলা উচিত, শুধু জামায়াতে ইসলামী নয়, দেওবন্দী ওলামাদের সংগঠন নিজামী ইসলাম পার্টি, মুসলিম লীগ, নুরুল আমিন সাহেবের পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, খেলাফতে রাব্বানী পার্টি, শরীয়তপুরের পীর মহসিন উদ্দিন দুদুমিয়ার ফরায়েজী আন্দোলন, শেরেবাংলা ফজলুল হক প্রতিষ্ঠিত কৃষক শ্রমিক পার্টিসহ সকল ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলি একাত্তরে অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল। অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষে বয়ান দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পূর্ব পাকিস্তানের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক কর্মী। কোন আলেম, কোন পীর, কোন মূফতি, কোন মুহাদ্দেস পাকিস্তান ভাঙার পক্ষে ফতোয়া দেয়নি। তারা বরং পাকিস্তান ভাঙাকে হারাম বলেছে। এটিও সত্য, ভারত তার ২৫০ হাজার সৈন্য নিয়ে হামলা না করলে পাকিস্তান ভাঙতো না। মুক্তি বাহিনী নিজ শক্তিতে একটি জেলা দূরে থাক, একটি থানাও দখলে নিতে পারিনি। একাত্তরের যুদ্ধটি যে শত ভাগ ভারতীয় যুদ্ধ ছিল এবং সে যুদ্ধ ভারত নিজ শক্তিতে লড়েছে -সেটি তো এভাবেই প্রমাণিত হয়।
জামায়াত নেতাদের স্পষ্ট বলা উচিত, আল্লাহ তায়ালা মুসলিমদের উপর ভু-রাজনৈতিক বিভক্তিকে হারাম করেছেন এবং একতাকে ফরজ করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালার এই কুরআনী হুকুম বাঙালি ফ্যাসিস্ট, বাঙালি সেকুলারিস্ট, বাম কাপালিক ও হিন্দুত্ববাদীদের কাছে যতই গুরুত্বহীন গণ্য হোক, প্রতিটি ঈমানদার মুসলিমকে সেটিই শতভাগ মেনে চলতে হয়। বিদ্রোহ হারাম।
একাত্তর নিয়ে মাফ চাওয়া নয়, গর্ব করা উচিত
জামায়াত নেতাদের আরো বলা উচিত, একাত্তরে অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়ানো যেহেতু শরীয়া ভিত্তিক ছিল, তার জন্য মাফ চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তারা কোন পাপ করেনি। কারণ শরিয়ত মানার মধ্যে কোন অপরাধ নাই। বরং অপরাধ তো শরিয়তের অবাধ্য হওয়ায় এবং একটি সুস্পষ্ট হারাম যুদ্ধে যোগ দেয়ায়। শরিয়ত অমান্যের সে গুরুতর অপরাধটি করেছে মুসলিমের মুখোশধারী বাঙালি জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিস্ট, বাঙালি সেক্যুলারিস্ট ও বাম কাপালিকগণ। সে অপরাধের জন্য তারা বরং যুগ যুগ ধরে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের কাছে ঘৃণা কুড়াবে, যেমন ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছে শেখ মুজিব ও তার অনুসারীরা।
জামায়াত নেতাদের জোর গলায় বলা উচিত, একাত্তরের ভূমিকার জন্য তারা গর্বিত। অন্ততঃ রোজ হাশরের বিচার দিনে তারা বলতে পারবে, যখন বাঙালি ফ্যাসিস্ট, বাঙালি সেকুলারিস্ট ও বাম কাপালিকগণ তাদের ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী প্রভুদের সাথে কোয়ালিশন গড়ে বিশ্বের সর্ব বৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিল তখন সে সম্মিলিত শত্রুপক্ষের প্রতিরোধের তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিল। এবং সে জিহাদে তাদের হাজার হাজার সাথী শহীদ হয়েছিল। তাদের বুঝা উচিত, ঈমানদারের জিহাদ কখনোই কোন সেক্যুলারিস্ট, ফ্যাসিস্ট ও বামপন্থীদের কাছে প্রশংসা পাবে না। কোন কালেই এবং পৃথিবীর কোন দেশেই সেটি পায়নি। ইসলামপন্থীদের আজকের এবং ভবিষ্যতের রাজনীতিও সেটি পাবে না। কারণ তাদের বিরুদ্ধ পক্ষ তো শয়তানের পক্ষের। ইসলামপন্থীদের বিরোধীতা করাই তাদের রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তি।
শত শত বছর পরও তারা সম্মানিত হবে
তবে ইসলামের চিহ্নিত শত্রুদের কাছে জামায়াতসহ ইসলামপন্থী দলগুলির একাত্তরের ভূমিকা যতই নিন্দনীয় হোক না কেন, আজ থেকে বহু শত বছর পরেও তাদের সে ভূমিকাটি মুসলিম উম্মার নতুন প্রজন্মের কাছে অতি প্রশংসিত হবে। নতুন প্রজন্ম সেদিন জেনে খুশি হবে, বাঙালি মুসলিমদের মধ্যে অন্তত কিছু ঈমানদার লোক আগ্রাসী পৌত্তলিক ভারত ও তার বাঙালি দোসরদের সম্মিলিত আক্রমণ থেকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করেছিল।
এটি অতি দুর্বোধ্য মনে হয়, জামায়াতে ইসলামী নেতাগণ কেন এ সত্য ও শরিয়ত সম্মত কথাগুলি বলতে হিমশিম খায়? পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ছিল পূর্ব পাকিস্তানী বাঙালি। পাকিস্তান তাই শুধু পাঞ্জাবী, সিন্ধি, পাঠান ও বেলুচদের ছিল না। দেশটি ছিল বাঙালি মুসলিমেরও। তাই ইসলামের পক্ষে এবং নিজ দেশের অখণ্ডতার পক্ষে দাঁড়ানো অপরাধ হবে কেন? এটি তো গর্বের বিষয়। মুসলিমে দেশকে ভাঙা তো শয়তান ও তার পৌত্তলিক খলিফাদের এজেন্ডা। বাঙালি ফ্যাসিস্ট, সেক্যুলারিস্ট ও বামপন্থীগণ তো সে শয়তানের এজেন্ডা নিয়েই যুদ্ধে নেমেছিল। তারা কখনোই নিজেদেরকে ইসলামের পক্ষের বলে দাবী করে না। এজন্যই ভারতের শাসক পৌত্তলিক শক্তি তাদের প্রতি এতো প্রসন্ন।
আদৌ নেগিটিভ নয়, দারুন পজিটিভ বিষয়
জামায়াত নেতাদের একাত্তর নিয়ে নির্ভয়ে সত্য বলা উচিত। কথা বার্তায় দৃঢ়তা আনতে হবে। তাতে সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ তায়ালা খুশি হবেন। তিনি আপনাদের পাশে থাকবেন। মানুষকে ভয় না করে একমাত্র মহান আল্লাহকে ভয় করুন। একাত্তরে যে সত্যগুলি জনগণকে বলতেন এবং পাকিস্তান বাঁচানোর জিহাদে জনগণকে অনুপ্রাণীত করতেন -সে কথাগুলি আজও সত্য। সে সত্য কথাগুলি না লুকিয়ে আজও নির্ভয়ে বলুন। একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রিয়তার হওয়ার জন্য লড়াই করুন। তখন পাশে পাবেন বঙ্গীয় এই বদ্বীপের বিশাল ঈমানদার বাঙালি জনগোষ্ঠিকে। তারা আপনাদের বাহবা দিবে। একাত্তরে অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষে খাড়া হওয়া আদৌ কোন নেগেটিভ বিষয় নয়, বরং দারুন এক পজেটিভ বিষয় -যদি এ বিষয়টি সঠিক ভাবে পেশ করতে পারেন। আগামী দিনের রাজনীতিতে এটি এক বিশাল এসেট হবে। একাত্তরের জামায়াতের ভূমিকা শুধু মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে নয়, বাংলাদেশের ঈমানদার জনগণের মনেও ইজ্জত বাড়াবে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ তো ভয়ানক নেগেটিভ বিষয় তো তাদের জন্য যারা একাত্তরে ভারতের কোলে বসে ভারতের নিমক খেয়েছে এবং ভারতকে বিজয়ী করতে ভারতের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশী জনগণের ঘৃণার মাত্র স্পষ্ট বুঝা যায় যখন বাঙালি ফ্যাসিস্ট, বাঙালি সেক্যুলারিস্ট ও বামপন্থীদের পিতা ও নেতা মুজিবের মূর্তির গলায় জুতার মালা পড়ায়, তার মূর্তী ভাঙে এবং মূর্তির উপর পেশাব করে। যাদের মনে শরিষার দানা পরিমাণ ঈমান আছে তারা স্বাধীনতার ঘোষাণা দেয়ার অপরাধে জিয়াউর রহমানকেও প্রচণ্ড ঘৃণা করে। যে হারাম ঘোষণাটি মুজিব দিতে ভয় পেয়েছিল বা ইতস্ততঃ করেছিল সেটি ঘোষণাটি জিয়া দিয়েছিল। এটিই জিয়ার অপরাধ। শুধু আজ নয়, শত শত বছর ধরে জিয়া তার হারাম ঘোষণার জন্য ঈমানদার মানুষের ঘৃণা কুড়াবে।
বাঙালি সেকুলারিস্ট, বাঙালি ফ্যাসিস্ট, বাম কাপালিক ও হিন্দুত্ববাদীদের থেকে ভয়ের কিছু নেই। এরা আজ পতিত ও পরাজিত শক্তি। এরা ভারতীয় হিন্দুত্ববাদের পদলেহী দালাল মাত্র। একাত্তরে তারা ভারতের ঘরে বিজয় তুলেছিল এবং বাংলাদেশকে পরাধীন করেছিল -এ অপরাধের কারণে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা এদেরকে মন থেকে ঘৃণা করে। ইসলামের পক্ষে গর্জ উঠার এখনই সময়। এ সময় বেশী দিন নাও থাকতে পারে। কারণ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর শত্রুগণ নিষ্ক্রিয় বসে নাই। পাকিস্তানের ২৩ বছরে মহান আল্লাহর দেয়া সুযোগের সৎ ব্যবহার করা হয়নি বলেই বাঙলি মুসলিম জীবনে একাত্তরে ভারতীয় অধিকৃতি নেমে এসেছিল। সুযোগের সৎ ব্যবহার করা হয়নি ১৯৭৫’য়ের ১৫ আগস্টের পরও। ফলে এসেছে দুর্বৃত্ত ফ্যাসিস্ট হাসিনা নৃশংস শাসন। এ মুহুর্তে চৌকস না হলে ভারতীয় অধিকৃতি আবারো ফিরে আসবে। তাই যার যা সামর্থ্য আছে তা নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার এখনই যথার্থ সময়। ৩০/০৮/২০২৫