Sohel Hasan Galib
unread,Jul 16, 2009, 2:30:19 PM7/16/09Sign in to reply to author
Sign in to forward
You do not have permission to delete messages in this group
Sign in to report message
Either email addresses are anonymous for this group or you need the view member email addresses permission to view the original message
to কবিতাকথা
ঘাটে বসে আছি আনমনা,
বহিয়া যেতেছে সুসময়।
এ বাতাসে তরী ভাসাব না
তোমা-পানে যদি নাহি বয়।
ভেবেছিলাম কবিতাকথায় আরও বেশ কিছুদিন কোনো কথা বলবো না। আমার কথায় যেহেতু কেউ কেউ উগ্রতাচূর্ণ খুঁজে পান। অতএব কাগজ-কলম নিয়ে চুপচাপ থাকা বড় বেশি প্রয়োজন। চারদিক বয়ে যাক শান্ত সমীরণ। কিন্তু আমি অ-রব হলে অন্যেরা কেন সরব হবেন না! হয়েছেনও তাই।
এর মধ্যে তারিক টুকু একদিন শাহীন মোমতাজের কবিতা পোস্ট দিয়েছিলেন এই ফোরামে। তাতে নানা জন, স্বয়ং মডারেটরও এর হেতু-সন্ধানপূর্বক একপ্রকার হেত্বাভাস রচনা করে আলোচনার সর্বনাশ ডেকে আনলেন। অপ্রাসঙ্গিক, তথাপি এই মর্মে তিনি আন্দাজ হাজির করলেন :
১. শাহীন মোমতাজের কবিতা-বই প্রথম আলোয় রিভিউ হবে।
২. ঐ রিভিউটি তারিক টুকুই করছেন।
ঘটনাক্রমে, প্রথম আলোয় তার রিভিউ এলো। আর অমনি দেখি মহৎপ্রাণেরা বলতে লাগলেন, মডারেটরের অনুমানের উপর তাদের ইমান বাড়লো। কিন্তু সেই মহতেরা কেউ এ কথা বললেন না যে, মডারেটরের অনুমান অংশত মিথ্যাও প্রমাণিত হয়েছে। কারণ, রিভিউ টুকু করেন নাই। তবে তো বলাই যায়, ইমান আনা হয়েছিল মিথ্যার উপরেও। এই কথা আমি বলতে পারতাম। তাতে কূটতর্কের গোপন শলতে উশকে দেয়া ছাড়া আর কিছুই হতো না।
কিন্তু, এক্ষণে, বেশ খোলাশা হয়ে গেছে, আন্বীক্ষিকী-বিদ্যাই আমাদের সার।
আমি কারো বিরুদ্ধেই উগ্রতা, ধূর্ততা, মাস্টারি, বাটপারি, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গনামা ইত্যাদি কৌজন্যের অভিযোগ আনি নাই। কেউ আমার সঙ্গে অসৌজন্য করেছেন, তাও বলি নাই। তবে, আজ কেন এতদিন পর, সহসা, সুব্রতদা আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হলেন? অনাবশ্যক উদারতা একপ্রকার নিষ্ঠুরতাও বটে। আমি বিপন্নবিস্ময়ে বিকল ও বিমূঢ় হলাম।
এখন আমার মনে হচ্ছে, আমিই মূল অপরাধী হয়তো। আমিই এই গোগলগ্রুপে কবিতা নিয়ে সৌহার্দ্য-সংহারী আলাপ শুরু করেছিলাম। কিন্তু আলাপেরও আগে যে আরম্ভালাপ আছে, সেটিই গিয়েছিলাম ভুলে। এ কথা স্পষ্ট করে বলতে পারি নি যে, একদিন আমি বা আমরা যাদের কবিতা পড়ে দীক্ষিত ও প্রাণিত হয়েছি, সে তালিকায় মাসুদ খান, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ, শান্তনু চৌধুরী, শোয়েব শাদাব, বিষ্ণুবিশ্বাসসহ মজনু শাহ, কামরুজ্জামান কামু বা চঞ্চল আশরাফ রয়েছেন। আজ যদি তাদের কবিতার সমালোচনা আমাকে করতেই হয়, সে ভূমিকার খণ্ড-ইতিহাস অস্বীকার করে নয়।
কিন্তু, এই কবিতা-কতল অভিযানে আমিই সারথি কিনা সে প্রশ্নশর এসে বিঁধছে। আমারই আলোচনার সূত্রপথে এতদূর! ঘটনা কী? মারুফ ভাইকে ফোন দিলাম, যদিও তিনি আমার পাশের বাড়িতেই থাকেন। পাড়ার বড়ভাই তখন সিলেট চা-বাগানে চা খাচ্ছেন। আমি অগত্যা নেটে, বাংলামাটি পত্রিকায় 'কুরুক্ষেত্র'-এর মূল ময়দান ঘুরে এলাম।
বলতেই হয়, সুব্রতদার কপাল খারাপ। এযাবৎ যে আলোচনাগুলো আমার চোখে পড়েছে, মজনু শাহ, সাখাওয়াৎ টিপু, তপন বাগচী, সর্বশেষ বদরে মুনীর, সকলেই শব্দ-অলংকারের মধ্যেই গড়াগড়ি দিয়েছেন। কোনো আলোচনাই শব্দের দুয়ার পেরুতে পারে নি। ছন্দের ভেতর যে অন্ধকার, যা 'দুলে ওঠে বিশল্যকরণী গাছে', তার কাছেও যেতে পারেন নি, বা যান নি। কিন্তু কেন?
শব্দের খোলশ খুলে, ভাবের ঘরে ঢুকে পড়া এতই দুরূহ? নাকি কোনো ভাববস্তুই নাই সুব্রতর কবিতায়, এ কথাই তারা বলতে চান! তাই যদি হয়, তবে সুব্রতর কবিতা নিয়ে এত কথা কেন? শূন্য-সারাৎসার কাব্যযুঝে আর কী ফল হবে? নিষ্ফল জীবনকে ঘিরে নানা পণ্ডশ্রমের আয়োজন অবশ্য পণ্ডিতেরই সাজে। সম্প্রদান কারক নিয়ে এমনকি ধর্মপুস্তক রচনা করা যেতে পারে।
প্রসঙ্গত বলি, ছন্দের কারুদক্ষতা নিয়ে কবি সুব্রতর উপর আমার অনাস্থা কখনই ছিলো না। তর্ক আমিও করেছি বটে, সেটা তাকে বড় একটা প্রতিষ্ঠান মান্য করেই। নীরব কবিত্বের কোনো মূল্য নাই, মিষ্টান্ন হাতে হাতে পাওয়াই অভিপ্রেত। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন। এদেশে আল মাহমুদ বা সৈয়দ হক যত বড় ছান্দসিকই হোন না কেন, বস্তুত তা অজ্ঞাত এবং বিনিময়হীন। আমাদের সংস্রব- ও সংঘাত-বলয়ের মধ্যে যারা আছেন, বিবেচ্য তারাই এবং সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। পাণিনির সঙ্গে রূপতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা সম্ভব নয়। আমি বড়জোর 'অষ্টাধ্যায়ী' সামনে রেখে 'মহাভাষ্য' রচনা করতে পারি।
সেদিক দিয়ে এটা খুব বড় পাওয়া যে, সুব্রতদা আমাদের সঙ্গে তর্কে অবতীর্ণ হয়েছেন। নিজের কবিতার ডিফেন্সে উদ্বেজিত হতে দেখেছি রবীন্দ্রনাথকে, দেখেছি জীবনানন্দকেও। 'বরং তুমিই লিখো নাকো একটি কবিতা'---এমন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবার যে চকিতচাপল্য, সেটাকে সেদিক থেকেই বিবেচনায় আনা উচিত। তা না এলেও, এতে সুব্রতর কাব্যকৃতি বা কবিব্যক্তিত্বের মান ক্ষুণ্ন হয় না কোনোভাবেই।
ছন্দ-আলোচনায় মতান্তর তৈরি হওয়া সম্ভব ভয়াবহভাবে। 'চিমনি' শব্দটা কয় মাত্রা হবে অক্ষরবৃত্তে, এ নিয়েই এক ফর্মার পুস্তিকা রচনা করতে পারি আমরা। 'মনে' শব্দের সঙ্গে কী কী মিল হবে এবং কেন---তদ্দ্বারা পি এইচ ডি অভিসন্দর্ভ রচনা সম্ভব---বিপ্রদাস পিপিলাই থেকে শুরু করে আলাওল ও ভারতচন্দ্র পর্যন্ত উদাহরণ টেনে। গাথা, গীতিকা আর আউল-বাউল গানের কথা আর কী বলবো। "বাংলাদেশ নিজেকে যথার্থরূপে চিনিয়াছিল মধ্যযুগে"।
কিন্তু আলোচনায় 'আমি আক্রান্ত'---এই বিপন্নবোধ যে উত্তেজনা ছড়ায়, তা আমাকেও স্পর্শ করে বৈকি। তবে, কাব্যালোচনায় কবি অসহিষ্ণু হলেও হতে পারেন, সমালোচক পারেন না। হ্যা পারেন, যদি সমালোচক কবিকে অসম্মানই করতে চান চূড়ান্ত লক্ষ্যে।
যা হোক, আজ কিছু কথা বলা গ্যালো, কোনো প্রতিক্রিয়া আশা না ক'রে। তর্কের দোকান আমি খুলিতে চাহি না আর। আমি অনুত্তম এবং অনুদার। দাসের যোগ্য নই চরণে।
ইতি
অকৃতবিদ্য
গালিব