কবি মারুফ রায়হান সম্পাদিত ‘বাংলামাটি’ ওয়েবম্যাগে কবি সুব্রত অগাস্টিন
গোমেজের কাব্যের ওপর কবি তপন বাগচীর একটি আলোচনা ছাপা হয়েছে। আলোচনাটি
তপন বাগচী কবিতাকথায় যুক্ত করেছেন। ‘বাংলামাটি’র পরের সংখ্যায় কবি সুব্রত
অগাস্টিন গোমেজ একটি প্রতিক্রিয়া জানান। ওই দুটি লেখা পড়ে আমার ভেতরেও
কিছু কথার জন্ম দেয়। আমি পাঠিয়েছিলাম আমার প্রতিক্রিয়া ‘বাংলামাটি’
দপ্তরে। লেখাটির অংশ বিশেষ ছাপা হয়েছে ‘চিঠিপত্র’ বিভাগে। পাঠিয়েছিলাম
৯৪৭ শব্দের একটি লেখা। ছাপা হয়েছে ২৯২ শব্দের একটি খণ্ডিত অংশ। ৬৫৫ শব্দই
বর্জিত হয়েছে। হয়তো ‘বাংলামাটি’-তে স্থান সংকুলনান হয়নি। তাই প্রকাশিত
এবং প্রেরিত লেখা উপরে-নিচে পোস্ট করছি। দুটো লেখা একসঙ্গে পড়লে
‘বাংলামাটি’র সম্পাদনা সম্পর্কেও একটা ধারণা পেতে পারি। যেহেতু তপন
বাগচীর লেখাটি এই কবিতাকথায় প্রকাশিত হয়েছিল বলে শুনেছি। আমি অবশ্য তখন
সদস্য হইনি। তাহলে, তখনই প্রতিক্রিয়া লিখতাম। তপন বাগচীর ওই লেখাটি কোনো
প্রতিক্রিয়া কেন যে হলো না, তা-ও ভাবছি। সুব্রতর ছন্দেও ত্র“টি ধরতে গিয়ে
তপন বাগচী যেসকল কথা বলেছেন, তা-ও তো বিনা তর্কে মেনে নেয়া যায় না। আমার
এই আওেলাচনা হোক সেই লেখারই বিলম্বিত প্রতিক্রিয়া। আমার লেখায় তপন বাগচীর
লেখারও সমালোচনা রয়েছে। তাই এই গ্র“পে একেবারে অপ্রাসঙ্গিক মনে হবে না
বলেই আমার বিশ্বাস।
.................................................................................................
বাংলামাটি’র চিঠিপত্র বিভাগে প্রকাশিত লেখা (শব্দসংখ্যা ২৯২)
কবিতাগ্রন্থের সমালোচনা, কবির জবাব এবং পাঠকের প্রতিক্রিয়া
সম্প্রতি বাংলামাটি’র একটি সংখ্যায় সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ-এর কবিতার ছন্দ
ও মিল নিয়ে তপন বাগচী’র আলোচনা এবং এক সংখ্যা পর সুব্রত গোমেজ-এর
প্রতিক্রিয়া দু’টিই আমি পড়েছি। কবি প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন: “প্রথমদিকে যে-
প্রকারের মিল আমরা চর্যাপদ থেকে ভারতচন্দ্রের আগে পর্যন্ত দেখি, আজকের
বিচারে তার সিংহভাগ অপূর্ণ মিল। ভারত চন্দ্রই পূর্ণ মিল-এর সূচনা করেন
বলা যায়, এবং তাঁর পর থেকে প্রধানত পূর্ণ মিলের ব্যবহারই বাংলায় হ‘য়ে
এসেছে, রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর কিছুকাল পরে পর্যন্ত. . .পৃথিবী/ছবি, তুমি/
আমি, জানি/শুনি. . .এইপ্রকার মিলকে পুরনো বা গ্রাম্য মিল বলা
যায়. . .কিন্তু এসব মিলকে জেনেবুঝে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে (যেমন, ধরা যাক,
হাস্যরসের প্রয়োজনে) পুনর্ব্যবহার করেন যদি কোনো কবি, তাকে কিন্তু ভুল বা
অশুদ্ধ বলা চলে না। আমার কবিতায় আমি ভোগেন/শোবেন, কুটিতে/বঁটিতে, তুমি/
আমি মিল দিয়েছি, সত্য, কিন্তু তারা যে পুরনো, গ্রাম্য মিল, সেটা জেনেই তা
করেছি. . .” কী আশ্চর্য কথা! সুব্রত গোমেজ-এর যেসব কবিতায় এগুলো ব্যবহৃত
হয়েছে তাতে হাস্যরসের চিহ্নমাত্র নেই।
বাংলামাটি’র একটি সংখ্যায় ঢাকায় শঙ্খ ঘোষ-এর আড্ডা নিয়ে একটি লেখা
প্রকাশিত হয়েছিল। অক্ষরবৃত্ত ছন্দ আজকাল অনেকেই কেবল জোড়ায়-জোড়ায় মেলানো
মাত্রা গণনার ভিত্তিতে ব্যবহার করেন কিন্তু এর অন্তর্গত ধ্বনি সৃষ্টিতে
বেশিরভাগ কবিই ব্যর্থ হন এমন ইঙ্গিত ছিলো তাঁর মন্তব্যে। সুব্রত গোমেজ-এর
“তিরিশটি বছর তবু ছিলো সে ভালোই, দুঃখেসুখে/আমি তাকে দেখে গেছি অনুদিন
অনুখন নখদর্পণে মরে বেঁচে/পড়ে গেছি প্রতিটি পৃষ্ঠা তার, বারংবার নিরেট
বাতিকে”। শেষ পঙক্তিটি ছাড়া এই অক্ষরবৃত্তে শঙ্খ ঘোষ-উলে¬¬খিত
অক্ষরবৃত্তীয় ধ্বনিই তৈরি হয় নি। তপন বাগচী কেবল শব্দস্তরের মাত্রা গণনা
করে কিছু প্রশ্ন রেখেছেন। উত্তরে সুব্রত গোমেজ লিখেছেন জীবনানন্দ ও অন্য
অনেকে ‘আমরা’ শব্দটিকে তিনমাত্রা হিসেবে ব্যবহার করেছেন, তাই তিনিও
‘তিরিশটি’ শব্দটিকে তিনমাত্রা হিসেবে এবং ‘পৃষ্ঠা’কে তিনমাত্রা ও
‘দর্পণে’কে চারমাত্রা হিসেবে ব্যবহার করেছেন। ছন্দশাস্ত্রে এখনও স্বীকৃত
না-হলেও সুব্রত’র এই একটিমাত্র যুক্তি কিছুটা গ্রহণযোগ্য এই অর্থে যে,
রবীন্দ্রাত্তরকালে অনেকেই তা করেছেন কিন্তু তা পঙক্তির প্রথম পর্বে যতটা
শ্র“তিসিদ্ধ মনে হয় পরবর্তী পর্বগুলোতে তা মনে হয় না।
.................................................................................................
বাংলামাটি’র সম্পাদকীয় বিভাগে প্রেরিত লেখা (শব্দসংখ্যা ৯৪৭)
তপন বাগচী’র সমালোচনার জবাবে সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ-এর খোঁড়া যুক্তি
সম্প্রতি বাংলামাটি’র একটি সংখ্যায় সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ-এর কবিতার ছন্দ
ও মিল নিয়ে ড. তপন বাগচী’র আলোচনা এবং এক সংখ্যা পর সুব্রত গোমেজ-এর
প্রতিক্রিয়া দু’টিই আমি পড়েছি। তপন বাগচী’র আলোচনার প্রতিটি অংশে তিনি
উপাত্ত তুলে ধরে এমনভাবে বিশ্লেষণ করেছেন যা ছন্দশিক্ষিত যেকোনো পাঠকের
বোধে সংক্রামিত হবে এবং তাঁর যুক্তিকে অখণ্ডনীয় বলে মেনে নেবেন। কবিতার
ছন্দ ও মিল সম্পর্কে সুব্রত গোমেজ-এরও ধারণা আছে বলে তিনি নিজেই কবিতায়
যথাযথ মিল প্রয়োগে তাঁর ব্যর্থতাকে মেনে নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন:
“প্রথমদিকে যে-প্রকারের মিল আমরা চর্যাপদ থেকে ভারতচন্দ্রের আগে পর্যন্ত
দেখি, আজকের বিচারে তার সিংহভাগ অপূর্ণ মিল। ভারত চন্দ্রই পূর্ণ মিল-এর
সূচনা করেন বলা যায়, এবং তাঁর পর থেকে প্রধানত পূর্ণ মিলের ব্যবহারই
বাংলায় হ‘য়ে এসেছে, রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর কিছুকাল পরে পর্যন্ত. . .পৃথিবী/
ছবি, তুমি/আমি, জানি/শুনি. . .এইপ্রকার মিলকে পুরনো বা গ্রাম্য মিল বলা
যায়. . .কিন্তু এসব মিলকে জেনেবুঝে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে (যেমন, ধরা যাক,
হাস্যরসের প্রয়োজনে) পুনর্ব্যবহার করেন যদি কোনো কবি, তাকে কিন্তু ভুল বা
অশুদ্ধ বলা চলে না। আমার কবিতায় আমি ভোগেন/শোবেন, কুটিতে/বঁটিতে, তুমি/
আমি মিল দিয়েছি, সত্য, কিন্তু তারা যে পুরনো, গ্রাম্য মিল, সেটা জেনেই তা
করেছি. . .” কী আশ্চর্য কথা! সুব্রত গোমেজ-এর যেসব কবিতায় এগুলো ব্যবহৃত
হয়েছে তাতে হাস্যরসের চিহ্নমাত্র নেই; তবে, তাঁর ‘পুরনো দিনের গ্রাম্য
মিল’ ব্যবহারের স্বীকারোক্তির সঙ্গে অর্থহীন যুক্তি দেখে অনেকে হাস্যরসে
সিক্ত হবেন। কবি আল মাহমুদ এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন: যে-কবি ছন্দ জানে
না, সে কিছুই জানে না। সঠিক ছন্দ ব্যবহারে হোঁচট খেয়ে ধরা পড়লে তরুণ
প্রজন্মের অনেক কবি আজকাল বলে থাকেন “এগুলো আমার ইচ্ছাকৃত নিরীক্ষা!”
সুব্রত গোমেজ ছন্দ নিয়ে লেখালেখি করেন, তিনিও আত্মপক্ষ সমর্থন করার
প্রয়োজনে তাই বললেন।
সুব্রত গোমেজ-এর উদ্ধৃতাংশে তাঁর ‘আজকের বিবেচনায়’ কথাটির প্রতি আমি
পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই তপন বাগচীও ‘আজকের বিবেচনা’তেই
সুব্রত’র ছন্দ-মিল নিয়ে লিখেছেন, মধ্যযুগের বিবেচনায় নয়। মধ্যযুগের এসব
স্খলন-পতন পেরিয়ে বাংলা কবিতা সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে। সুব্রত গোমেজ
রবীন্দ্রোত্তর কালে মধ্যযুগের পুনরাবৃত্তির কথা বলেছেন। কিন্তু
ক্ষেত্রবিশেষে কিছুটা তা ঘটেছে কবিতার ডিকশনে, ছন্দ ও মিলের ক্ষেত্রে নয়;
ছন্দ ও মিলের ক্ষেত্রে কাদের হাতে মধ্যযুগের গ্রাম্যতা ঘটেছে তা আমাদের
খতিয়ে দেখতে হবে। রবীন্দ্রোত্তর কালের কোনো প্রকৃত কবির হাতে এমনটি ঘটে
নি। তিরিশের পঞ্চপ্রধান থেকে শুরু করে আমাদের আহসান হাবীব, শামসুর
রাহমান, আল মাহমুদ-এর হাত হয়ে বাংলা কবিতার যে মূলধারা প্রবহমান তাতে এমন
ব্যর্থ মিলের ব্যবহার খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। যারা কবিতার জন্য নয়, অন্য
কোনো কারণে কবিতা চর্চা করতে-করতে তপন বাগচী’র ভাষায় ‘মীথ’ হয়ে গেছেন
তাদের ব্যর্থ রচনাকে কবিতা মনে করে এগুলো থেকে উদাহরণ চয়ন করলে শুদ্ধতা-
অশুদ্ধতার বালাই থাকে না। সুব্রত গোমেজও এমনটিই করেছেন। জয় গোস্বামীর
কবিতাকে তিনি আদর্শ মনে করে তাঁর ব্যর্থ মিলের জয়গান গেয়েছেন এবং নিজের
ব্যর্থতাকে ঢাকতে এগুলোকে রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহার করার প্রয়াস
চালিয়েছেন।
মারুফ রায়হান সম্পাদিত অধূনালুপ্ত ‘মাটি’ পত্রিকায় জয় গোস্বামী’র কবিতা
নিয়ে লিখেছিলেন প্রাবন্ধিক ও কথাশিল্পী সুশান্ত মজুমদার। তিনি তাঁর
আলোচনায় দেখিয়েছিলেন কীভাবে জয় গোস্বামী শব্দের পর শব্দ বসিয়ে কেবল ছন্দ
রক্ষা করে শুদ্ধ-অশুদ্ধ সব ধরনের মিল প্রয়োগে এলোমেলো কিছু উক্তি ও
চিত্রকে কবিতার অবয়ব দিচ্ছেন। বাংলাদেশের কোনো প্রজন্মের কোনো প্রকৃত
কবিই তাঁকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন নি, করতে পারেন না; করেছেন তাঁরাই
যারা নিজেরাও প্রলাপ রচনায় পারদশী (!) কারণ জয় গোস্বামীকে আদর্শ মানলে
কবিতা রচনায় আর শ্রম স্বীকার করতে হয় না, কিছুটা ছন্দজ্ঞান থাকলেই চলে।
তপন বাগচী তাঁর আলোচনায় সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ-কে ‘জীবন্ত মীথ’ ইত্যাদি
খেতাবে ভূষিত করে আলোচনায় অগ্রসর হয়েছেন। যদিও এতে কিছুটা শ্লেষের গন্ধ
পেয়েছি, তবুও তপন বাগচী’র এতটা বিনয়ের প্রয়োজন ছিলো না কারণ সুব্রত
অগাস্টিন গোমেজ-এর কবিতা আমিও পড়েছি। তিনি কার কাছে মীথ, কী কারণে মীথ
এসব বুঝে উঠতে পারি নি। তপন বাগচী কেবল সুব্রত গোমেজ-এর একটি গ্রন্থ
‘দিগম্বর চম্পূ’র ওপর তাঁর আলোচনা লিখেছেন। সুব্রত গোমেজ-এর প্রায় সব
কবিতাই আমার পড়া আছে। তিনিও জয় গোস্বামীদের মত প্রলাপ রচনা করে চলেছেন।
পার্থক্য কেবল জয় গোস্বামী’র ছন্দজ্ঞান তাঁর চেয়ে ভালো।
বাংলামাটি’র একটি সংখ্যায় মারুফ রায়হান তাঁর নিজের-নেওয়া শঙ্খ ঘোষ-এর
একটি সাক্ষাতকার প্রকাশ করেছিলেন। তাতে শঙ্খ ঘোষ বলেছিলেন অক্ষরবৃত্ত
ছন্দ আজকাল অনেকেই কেবল জোড়ায়-জোড়ায় মেলানো মাত্রা গণনার ভিত্তিতে
ব্যবহার করেন কিন্তু এর অন্তর্গত ধ্বনি সৃষ্টিতে বেশিরভাগ কবিই ব্যর্থ হন
এমন ইঙ্গিত ছিলো তাঁর মন্তব্যে। তপন বাগচী’র আলোচনায় উদ্ধৃত সুব্রত গোমেজ-
এর “তিরিশটি বছর তবু ছিলো সে ভালোই, দুঃখেসুখে/আমি তাকে দেখে গেছি অনুদিন
অনুখন নখদর্পণে মরে বেঁচে/পড়ে গেছি প্রতিটি পৃষ্ঠা তার, বারংবার নিরেট
বাতিকে”। শেষ পঙক্তিটি ছাড়া এই অক্ষরবৃত্তে শঙ্খ ঘোষ-উল্লেখিত
অক্ষরবৃত্তীয় ধ্বনিই তৈরি হয় নি। অতএব সর্ব অর্থেই এটি একটি ব্যর্থ
অক্ষরবৃত্তীয় রচনা। তপন বাগচী কেবল শব্দস্তরের মাত্রা গণনা করে কিছু
প্রশ্ন রেখেছেন। উত্তরে সুব্রত গোমেজ লিখেছেন জীবনানন্দ ও অন্য অনেকে
‘আমরা’ শব্দটিকে তিনমাত্রা হিসেবে ব্যবহার করেছেন, তাই তিনিও ‘তিরিশটি’
শব্দটিকে তিনমাত্রা হিসেবে এবং ‘পৃষ্ঠা’কে তিনমাত্রা ও ‘দর্পণে’কে
চারমাত্রা হিসেবে ব্যবহার করেছেন। ছন্দশাস্ত্রে এখনও স্বীকৃত না-হলেও
সুব্রত’র এই একটিমাত্র যুক্তি কিছুটা গ্রহণযোগ্য এই অর্থে যে,
রবীন্দ্রাত্তরকালে অনেকেই তা করেছেন কিন্তু তা পঙক্তির প্রথম পর্বে যতটা
শ্র“তিসিদ্ধ মনে হয় পরবর্তী পর্বগুলোতে তা মনে হয় না। সুব্রত’র
‘নখদর্পণে’ শব্দটি পঙক্তির তৃতীয় পর্বে ব্যবহৃত হয়েছে যেখানে তার প্রয়োগ
একেবারেই বেখাপ্পা। তাই তপন বাগচী’র আপত্তিই যথার্থ।
সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ-এর কাব্যবিশ্বাসের ভালো দিকটি এই যে, তিনি আধুনিক
কবিতায় ছন্দকে আবশ্যিক মনে করেন এবং এই মর্মে লেখালেখিও করেন, যা তপন
বাগচীও উল্লেখ করেছেন। কিন্তু নিজের কবিতায় প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হলে এই
ছন্দজ্ঞান নিয়ে তাত্ত্বিক হওয়া যায়, কবি হওয়া যায় না। সুব্রত গোমেজ-কে
তাঁর এক অন্ধ ভক্ত একটি ইলেকট্রনিক ফোরামে মন্তব্য করেছেন তিনি নাকি
জীবিত কবিদের মধ্যে সবচেয়ে ছন্দজ্ঞানসম্পন্ন! পঞ্চাশের দশকের আল মাহমুদ,
সৈয়দ শামসুল হক, মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ থেকে শুরু করে বর্তমান প্রজন্মেরও
প্রায় কয়েক ডজন ‘জীবিত’ কবি আছেন যারা ছন্দশাস্ত্রে সুশিক্ষিত এবং একই
সঙ্গে নিজ কবিতায় ছন্দরীতির প্রয়োগেও সুব্রত গোমেজ-এর চেয়ে অনেক বেশি
সিদ্ধহন্ত।
তপন বাগচী’র উদ্দেশে সুব্রত গোমেজ বেশকিছু উপদেশ বর্ষণ করেছেন, যা তপন
বাগচী’র জন্য প্রয়োজন নেই কারণ তপন বাগচী ছন্দশাস্ত্রে যেমন শিক্ষিত
তেমনি নিজের কবিতায় তার প্রয়োগেও দক্ষ। তপন বাগচী তাঁর অনুজ বলেই সুব্রত
গোমেজ-এর অর্থহীন যুক্তি মানতে তিনি বাধ্য হবেন কেন?
সবশেষে বলবো কবিতা কোনো বায়বীয় বিষয় নয় যে, একেক পাঠকের কাছে একেক কবিতা
একেক রকম মূল্য পাবে। সুব্রত গোমেজ-এর এই যুক্তিটিও নড়বড়ে। ভালো কবিতা
সবার কাছেই ভালো এবং আলোচনার মাধ্যমে অনেক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করেই
সেই ভালোমন্দ চিহ্নিত করা সম্ভব।
কুমার বিপ্লব, ঢাকা
kumar.b...@gmail.com
সুব্রতদা,
আপনি কুমার বিপ্লবের লেখাটি দেখে শিহরিত হয়েছেন। আর কেউ যদি আপনার মতো একজন ছন্দমনা কবির ছন্দচ্যুতি ও মিলের অপূর্ণতা দেখে শিহরিত হন, তাঁকে কি আর দোষ দেয়া যাবে?
কুমার বিপ্লবের লেখা দেখে আপনার কেন যে স্কুলমাস্টারের কথা মনে পড়ল, বুঝলাম না। একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। একবার শাহবাগের আড্ডায় একটা লেখা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল! যাঁর লেখার নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল তিনি কথাসাহিত্যিক, পেশায় একসময় স্কুল শিক্ষক ছিলেন, তখন একটি পত্রিকার সম্পাদনা বিভাগে কাজ করেন। আড্ডায় ছিলাম আমি, ছিলেন সমুদ্র গুপ্ত। একসময় ঢুকলেন হুমায়ুন আজাদ। তিনি আলোচনার মাঝখানে ঢুকেই বললেন, ‘তোমরা ওই স্কুল মাস্টারের লেখা নিয়ে আলোচনা করছ?’ মুহূর্তেই জ্বলে উঠলেন সমুদ্র গুপ্ত। ‘হুমাযুন, নিজেকে কী ভাবছ? স্কুল মাস্টার পরিচয়টাকেই দেখলে? সে তোমার চেয়ে খারাপ লেখে না। এবং বয়সেও তোমার চেয়ে বড়। মানুষকে অসম্মান করে কথা বলবে না?’ সমুদ্র গুপ্তও বয়সে বড় ছিলেন হুমাযুন আজাদের। হুমায়ুন আজাদ আর কথা বাড়ালেন না। শব্দ করে হাসলেন শুধু। হায় আজ দুজনেই পরলোকে!
‘স্কুল শিক্ষক’ বলার মাধ্যমে অন্যকে তুচ্ছ করার যে মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে, তাতে আমি লা জবাব!
আপনি বলেছেন, আমার প্রতিক্রিয়াটিও আপনাকে শিহরিত করবে, তাতেও কোনো সন্দেহ নাই। ভয় পাবেন না, দাদা। নানান কারণে আমি আপনাকে শ্রদ্ধা করি। আর সে কারণেই আপনার কবিতায় ছন্দ প্রয়োগ নিয়ে যেটুকু কথা বলেছি, সেটুকু শালীনতার মধ্যে রাখতে চেয়েছি। আপনার প্রতিক্রিয়ায় যে সকল খোঁড়া যুক্তি দিয়েছেন, তা খণ্ডানোর দায় ছিল সত্যের খাতিরে। আপনার আতঙ্ক কাটাতে, সেই দায় পালন থেকে না হয় দূরেই থাকব।
আলোচনা হয়েছে আপনার ছন্দ নিয়ে। তপন বাগচীর কবিতায় কী দেখা যায়, সেটি এখানে টানছেন কেন? তপন বাগচীর আলোচনা টানুন। সেটাই সঙ্গত। আমার ভুল হলে, সে দায় বহন করতে রাজি আছি। কিংবা শুধরে দিলে আপনার কাছ থেকে শেখার মানসিকতাও লালন করছি। কিন্তু আপনি লিখলেন-
কুমার বা আপনি ছন্দ "জানেন" না রে ভাই... ছন্দ পুথিগত বিদ্যা না, ছন্দ রক্তে বইবার ব্যাপার... বই প'ড়ে যে ছন্দ হয়, তা তপন বাগচীর কবিতায় দ্যাখা যায়, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের কবিতায় না...
‘আমার কবিতায় আমি ভোগেন / শোবেন, কুটিতে / বঁটিতে, তুমি / আমি মিল দিয়েছি, সত্য, কিন্তু তারা যে পুরানো, গ্রাম্য মিল, সেটা জেনেই তা করেছি, এবং একটা উদ্দেশ্যেই করেছি।’
আল মাহমুদ বা শঙ্খ ঘোষ ছন্দঃসিদ্ধ কবি; তাঁদেরকে বরং আমার লেখাটি নিয়ে মতামত দিতে বলুন, যদি পারেন, ওঁদের যে-কোনো সমালোচনা আমি খোলামনে নেব... গ্রহণ করি-না-করি... কিন্তু, সরি, স্কুলমাস্টারদেরকে খাতির করতে চাই না আর... আমার স্কুলজীবন বহুকাল হ'ল শেষ হয়েছে।
Ôযারা অন্ধ, সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা!Õ
‘অনেক বড় ওস্তাদ হামেশা এক রাগের ভিতর আরেক রাগের প্রবেশ-প্রস্থান ঘটিয়ে দেন, ঐ রাগের আবহাওয়াকে খানিক পাল্টে দিতে। সেটাকে নূতনত্ব বলতে হবে আমাদের। একই কাজ একজন শিক্ষানবিসের গানে আমরা হয়তো নেব না, বলব, ব্যাটার রাগসিদ্ধি নেই, মালকোষে পঞ্চম লাগাচ্ছে। আবার, বড় ওস্তাদেরা সুরের প্রয়োজনে বা আমেজমুগ্ধ অবস্থায় দু’একটা ভুলচুকও, অনিচ্ছায়, করে বসতে পারেন, যা, গানটির সুরকে, এবং সর্বোপরি আবহাওয়া বা মাহলকে ব্যাহত না-করলে, আমরা তাকে স্বচ্ছন্দে গ্রহণ ক’রে থাকি। সুরসম্রাট আব্দুল করিম খাঁ-র অনেক গানেই অনিচ্ছাকৃত নিষিদ্ধ স্বরের ব্যবহার থাকত, কিন্তু তাতে তাঁকে উপভোগের মাত্রা কোনো শ্রোতার কানে ক’মে যায় নি।’
তপন বাগচী
ঢাকা
সুব্রত গোমেজের জবাবের জবাব
কুমার বিপ্লব
আমাকে স্কুল মাস্টার সম্বোধন করে লেখা সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ-এর প্রতিক্রিয়া পড়ে মনে হচ্ছে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। তপন বাগচী ও আমাকে উদ্দেশ করে লেখা “ কুমার বা আপনি ছন্দ ‘জানেন’ না রে ভাই...ছন্দ পুথিগত বিদ্যা না, ছন্দ রক্তে বইবার ব্যাপার...বই পড়ে যে ছন্দ হয়, তা তপন বাগচীর কবিতায় দ্যাখা যায়, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের কবিতায় না..”।
ভাব দেখে মনে হ্েচ্ছ সুব্রত গোমেজ তাঁর রক্তে একধরনের ছন্দ বয়ে বেড়াচ্ছেন যা পুথিগত নয়, একেবারেই নতুন জিনিস (ছন্দ-অনভিজ্ঞ এবং আমূল গদ্যরীতি-নির্ভর নবীন কবিরা নিজেদের রচনাকর্ম সম্পর্কে যা বলে থাকেন)। কিন্তু এপর্যন্ত আমি সুব্রত গোমেজের ছন্দবিষয়ক যতগুলো লেখা পড়েছি তাতে প্রচলিত ছন্দশাস্ত্রের বাইরে কিছু ‘নতুন শাস্ত্র’ খুঁজে পাই নি। প্রচলিত ছন্দরীতিরও অত্যন্ত প্রাথমিক স্তরের কিছু ধারণা আছে তাঁর। এজন্যই নিজের কবিতায় তা যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারেন না এবং তপন বাগচী ও আমার মন্তব্য কিন্তু সুব্রত’র ছন্দজ্ঞান নিয়ে নয়, নিজের কবিতায় ছন্দপ্রয়োগের ব্যর্থতা নিয়ে। এবার যখন বলে বসলেন আমরা ছন্দই জানি না তখন বলতে হয় তিনি নিজে ছন্দ বিষয়ে জানেন, ছন্দ জানেন না। ভালোভাবে জানলে তিনি তা নিজের কবিতায় যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারতেন।
পুথিগত বিদ্যার প্রতি যদি এতই অনাগ্রহ থাকে তবে সুব্রত গোমেজ নতুন ছন্দশাস্ত্র রচনা করছেন না কেন? কেন শঙ্ঘ ঘোষের মত তাত্ত্বিক মারুফ রায়হানের প্রশ্নের উত্তরে বলেন: নতুন ছন্দ আবিষ্কারের প্রয়োজন এবং সম্ভাবনা একবারেই নেই। প্রচলিত ছন্দেই বৈচিত্র্য আরোপ করার অনেক সুযোগ রয়েছে! এই বৈচিত্র্য আরোপের সুযোগ বলতে কী তিনি ‘তুমি/আমি’, ‘জানি/শুনি’, ভোগেন/শোবেন, কুটিতে/বটিতে’ ধরনের বস্তাপচা গ্রাম্য মিল ব্যবহারকে বুঝিয়েছেন?
সুব্রত গোমেজ-এর মানসিক ভারসাম্যহীনতার আরেকটি প্রমাণ সংস্কৃত ‘তোটক’ ছন্দে ১০০ লাইনের একটি কবিতা লেখার জন্য আমাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে-মারা। এই তোটক ছন্দটি কি সুব্রত গোমেজের রক্তে প্রবাহিত ছিলো না কি পুথি পড়েই শিখেছেন এই প্রশ্ন রইলো সবার কাছে?
আপাতত এই পর্যন্ত। সময়ের জন্য কিছু কথা জমা রইল।
The way you are debating on rhyme and rhythm isn’t something amazing. There is no constant theory can be applied on poetry and littr. Its fluid, throughout the time its flowing. The sound is the justice after all, no so called grammer.
And the trend of ours to blame on others, in the name of ‘critism’ is not something widly excepted.
However, I always appreciate sweet fight, not bitter.
Thanks
sarwar
--
ভাটির মানুষ আমি বুঝিনা উজানের গতি
টপিকে থেকে বাংলায় কথা বললে ফোরামের রীতিটাও যেমন মানা হয়, তেমনি আপনার
সাথে আমাদের যোগাযোগটাও ভালো হয়। আসুন সারওয়ার ভাই, এ ফোরামে আমরা
বাংলায়ই বলি।
তপন, কুমার বিপ্লব, মুজিব,
আমার অন্যায়, অভদ্র আচরণের জন্য আমি দুঃখিত। আপনারা আমাকে ক্ষমা করবেন। এর আগে স্নেহাস্পদ গালিবের সঙ্গেও আমার ব্যবহার অসৌজন্যমূলক হয়েছিল, তাঁরও কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
আপনারা ভালো থাকুন।
সুব্রত
বরিশালে জন্মগ্রহণকারী কুমার বিপ্লব রাতবিরেতে শাহবাগের আড্ডায় আসেন বলে
শুনেছি, তবে আজিজে নয়, পিজিসংলগ্ন এলাকায়। আমার সঙ্গে কখনো তাঁর
ব্যক্তিগত পরিচয় গড়ে ওঠে নি। সম্প্রতি ম্যাজিক লণ্ঠন সাহিত্য আড্ডায়
যুক্ত হয়েছেন বলেও খবর পেয়েছি।
এবার আমার অনুভূতিটা আপনার সঙ্গে শেয়ার করি। আপনি আমার কাছে যথেষ্টই
শ্রদ্ধেয়, কবি হিসেবে তো বটেই আলংকারিক হিসেবেও। আপনার জানাশোনা
বিশেষভাবে উচ্চাঙ্গের, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তুলনারহিত। ছান্দসিক হিসেবে
আপনি আমার প্রণম্যও। কিন্তু তাই বলে আপনার ব্যবহৃত ছন্দ নিয়ে কেউ কথা
বলতে পারবে না ব্যাপারটাকে আপনি সেভাবে দেখছেন কেন সুব্রতদা? এটা তো বরং
ভালো লক্ষণ যে, এ যুগের লোকজন সবকিছুই ঠিক বাজিয়ে নিতে চান।
তপন বাগচী বা কুমার বিপ্লব আপনার চেয়ে বেশি ছন্দ জানেন কি না আমার পক্ষে
এরকম রায় দেয়া অসম্ভব। তবে আপনার মতো একজন সর্বজ্ঞ ছান্দসিকের সঙ্গে
যাঁরা লড়তে আসতে সাহস পান, তাঁদের জানাশোনা ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা রাখা
বোধকরি ঠিক কাজের হয় না।
সবিশেষ ছন্দ নিয়ে আপনাদের পারস্পরিক তর্ক-বিতর্কের ভিতর দিয়ে আমার মতো
ছন্দ না-জানা বা কম জানা কবিতাকর্মীগণ খুবই উপকৃত হয়েছেন ও হচ্ছেন বলে
ধারণা করি। অনুগ্রহ করে আপনি যদি বিষয়টিকে স্বাভাবিক আলোচনা-পর্যালোচনা
হিসেবেই নেন তো কৃতজ্ঞ হই।
বিনীত
মুজিব মেহদী
সঞ্চালক, কবিতাকথা
সুব্রত সাহেব,
আমি তো আপনার মত কিছু মিডিয়ার কল্যাণে ‘মীথ’ হয়ে যাইনি যে আমাকে আপনার চিনতে হবে। কিন্তু দুই দশকে বড় পত্রিকা, ছোট কাগজ, ইত্যাদিতে আমারও বেশকিছু লেখা তো প্রকাশিত হয়েছে। একাধিক প্রকাশিত গ্রন্থও রয়েছে। কিছু সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত আছি। জনাব মুজিব মেহদী তাঁর ছদ্মনাম হিসেবে আমার নাম ব্যবহার করতে যাবেন কোন্ দুঃখে?
আপনার কাছে অপরিচিত, তবুও ছন্দ বিষয়ে আমার ‘মাস্টারি’ দেখে আমাকে স্কুল মাস্টার বলে সম্বোধন করেছেন, এতেই আমার সুখ। এখন মডারেটার সাহেবকেই ‘আমি’ মনে করে হুমকি দিচ্ছেন দল ছেড়ে চলে যাবেন। আপনার জন্য আমরাও একটা ‘পদবী’ খুঁজে পেয়েছি। সংস্কৃতের প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ‘টোল’ বলা হয় এ-কথা আপনার জানা থাকার কথা। তোটক ছন্দে ১০০ লাইনের কবিতা লেখার হোম টাস্ক দিয়ে আপনি এই ফোরামের অনেকের কাছে ‘টোল পণ্ডিত’ খেতাব পেয়েছেন।
আপনি লিখেছেন “আমি কবিতা লিখছি বহুদিন...আর আমার শত শত কবিতার মধ্যে প্রকৃত গদ্যে লেখা কবিতা হাতে গোনা যাবে এবং মিল বিন্যাসের (রাইমস্কিম) প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতা আছে...অমিলের চেয়ে সমিল কবিতা আমার অনেক বেশি।”
সুব্রত সাহেব, আমি আপনার নামের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলাম আধুনিক কবিতায় ছন্দ ও মিলের এমন প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে আপনি কোথাও কিছু লিখেছিলেন বলে। ভেবেছিলাম সবকালের প্রকৃত বড় কবিদের মত আপনার এই বোধটি অন্তত ভিতরে-ভিতরে জন্ম নিয়েছে। আপনি যা বিশ্বাস করেন সে-বিষয়ে প্রায়োগিক কৌশল আপনার কতটা তা দেখার জন্যই আপনার কবিতা পড়েছি এবং তপন বাগচীর মতই হতভম্ব হয়ে দেখেছি আপনার নিজের রচনায় এই বিশ্বাসের প্রতিফলন নেই। তপন বাগচী তো কেবল আপনার মিল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মিল মানেই তো আর ছন্দ নয়! আপনার পর্ববিভক্তি এবং পঙক্তিবিন্যাস স্ক্যান করে এই অধম ’স্কুল মাস্টার’ দেখাতে পারবে আপনি কবিতায় ছন্দের গুরুত্ব বিষয়ে জানেন, ভালোভাবে ছন্দ জানেন না অথচ মাস্টারদেরকেও হোম টাস্ক দেন!! বাংলা ছন্দই যিনি ভালো করে জানেন না তার ‘টুল পণ্ডিতি’ করাটা কি ঠিক হলো? আমাদের পাটিগণিত দিয়ে আপনার বীজগণিত বোঝা যাবে না এ-কথা যখন বললেন তখন দল ছেড়ে পালাবেন না সাহেব, বীজগণিতের পর আপনাকে ছন্দের ক্যালকুলাস ও ট্রিগোনোমেট্রি শেখাবার শখও এই অধম স্কুল মাস্টারের মনে জাগ্রত করেছেন আপনি আপনার সর্বশেষ প্রতিক্রিয়াটি লিখে।
আপনার মনোভাব ও ভাষা ব্যবহার দেখে মনে হয় আপনি নিজেকে কেবল আইনস্টাইন নয়, আরো বড় কিছু ভেবে বসে আছেন এবং মূল সমস্যা এখানেই । জীবনানন্দ দাশের একটি পঙক্তি “যারা অন্ধ, সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা” তীরের মত ছুঁড়েছিলেন আমাদের প্রতি। আমার ইচ্ছে হলো একটু বুমেরাং-বুমেরাং খেলি। রেডি!!!!!!!
কুমার বিপ্লব
ঢাকা
এখন থেকে কবিতা বা যে কোনো লেখা লিখে তাঁর বিস্তারিত টীকা, ভাষ্যও লিখতে হবে দেখা যাচ্ছে: অমুক লাইনের শেষে পূর্ণমিল ব্যবহার করা হয় নাই, উহা লেখকের ইচ্ছাকৃত, উক্ত স্থানে অপূর্ণ মিলের ব্যবহারের দ্বারা লেখক অমুক উদ্দেশ্য সাধন করিতে চাহিয়াছিলেন, তাহা নাজায়েজ মনে হইলে লেখকের ইমেল অ্যাড্রেস-এ পত্র দিন... ইত্যাদি।
সোহেল হাসান গালিবের কি অবকাশ হবে তোটক নিয়ে কথা বলবার? খুব ব্যস্ত না-
থাকলে অনুগ্রহ করে আপনিই শুরু করতে পারেন।
asun amra sobai kut torko rekhe diye kobita lekhay monojog di. pls stop it at now. --- On Mon, 7/13/09, kumar biplab <kumar.b...@gmail.com> wrote: |
|
|
|
তোটক ছন্দ নিয়ে আলোচনার আহ্বান দেখে সেই সন্দেহ দূর হতে শুরু করেছে। দেখা
যাক কত দূর হয়!
আপনি এই গ্রুপে আজই প্রথম কথা বলছেন, স্বাগতম আপনাকে। কিন্তু প্রথমবারই
আপনি যে স্বরে কথা বললেন, তাতে আমার মোটামুটি ভয় পেয়ে যাবার মতো অবস্থা
হয়েছে। কেন রে ভাই! কবিতা লিখলে কবিতা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে কথা বলা
যাবে না কেন? তর্ক মাঝেমধ্যে কূটতর্কের দিকে গিয়ে ফের তর্কে ফিরে আসতেও
তো পারে। সেই লক্ষ্যে কিছু ইনপুটও তো দিতে পারেন আপনি, নাকি!
আর কায়সার ভাই, দয়া করে বাংলা বর্ণমালা ব্যবহার করতে পারেন কি?
কবি শাহীন মোমতাজ,
আপনাকেও স্বাগতম। কিন্তু 'তোটক'বিদ্যার ঝাঁপিটা কেউই তো খুলছেন না দেখছি।
সেক্ষেত্রে আবারও হয়ত 'কসাইপ্রবণ মন নিয়ে কবিতার রক্তমাংস নাড়াচাড়া করা'ই
সার হবে আমাদের।
আপনারও সক্রিয়তা আশা করি।