তপন বাগচীর সমালোচনা, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের প্রতিক্রিয়া ও মারুফ রায়হানের সম্পাদনা প্রসঙ্গে

154 views
Skip to first unread message

কুমার বিপ্লব

unread,
Jul 12, 2009, 4:20:53 AM7/12/09
to কবিতাকথা
তপন বাগচীর সমালোচনা, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের প্রতিক্রিয়া ও মারুফ
রায়হানের সম্পাদনা প্রসঙ্গে
.................................................................................................
.................................................................................................

কবি মারুফ রায়হান সম্পাদিত ‘বাংলামাটি’ ওয়েবম্যাগে কবি সুব্রত অগাস্টিন
গোমেজের কাব্যের ওপর কবি তপন বাগচীর একটি আলোচনা ছাপা হয়েছে। আলোচনাটি
তপন বাগচী কবিতাকথায় যুক্ত করেছেন। ‘বাংলামাটি’র পরের সংখ্যায় কবি সুব্রত
অগাস্টিন গোমেজ একটি প্রতিক্রিয়া জানান। ওই দুটি লেখা পড়ে আমার ভেতরেও
কিছু কথার জন্ম দেয়। আমি পাঠিয়েছিলাম আমার প্রতিক্রিয়া ‘বাংলামাটি’
দপ্তরে। লেখাটির অংশ বিশেষ ছাপা হয়েছে ‘চিঠিপত্র’ বিভাগে। পাঠিয়েছিলাম
৯৪৭ শব্দের একটি লেখা। ছাপা হয়েছে ২৯২ শব্দের একটি খণ্ডিত অংশ। ৬৫৫ শব্দই
বর্জিত হয়েছে। হয়তো ‘বাংলামাটি’-তে স্থান সংকুলনান হয়নি। তাই প্রকাশিত
এবং প্রেরিত লেখা উপরে-নিচে পোস্ট করছি। দুটো লেখা একসঙ্গে পড়লে
‘বাংলামাটি’র সম্পাদনা সম্পর্কেও একটা ধারণা পেতে পারি। যেহেতু তপন
বাগচীর লেখাটি এই কবিতাকথায় প্রকাশিত হয়েছিল বলে শুনেছি। আমি অবশ্য তখন
সদস্য হইনি। তাহলে, তখনই প্রতিক্রিয়া লিখতাম। তপন বাগচীর ওই লেখাটি কোনো
প্রতিক্রিয়া কেন যে হলো না, তা-ও ভাবছি। সুব্রতর ছন্দেও ত্র“টি ধরতে গিয়ে
তপন বাগচী যেসকল কথা বলেছেন, তা-ও তো বিনা তর্কে মেনে নেয়া যায় না। আমার
এই আওেলাচনা হোক সেই লেখারই বিলম্বিত প্রতিক্রিয়া। আমার লেখায় তপন বাগচীর
লেখারও সমালোচনা রয়েছে। তাই এই গ্র“পে একেবারে অপ্রাসঙ্গিক মনে হবে না
বলেই আমার বিশ্বাস।
.................................................................................................
বাংলামাটি’র চিঠিপত্র বিভাগে প্রকাশিত লেখা (শব্দসংখ্যা ২৯২)
কবিতাগ্রন্থের সমালোচনা, কবির জবাব এবং পাঠকের প্রতিক্রিয়া

সম্প্রতি বাংলামাটি’র একটি সংখ্যায় সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ-এর কবিতার ছন্দ
ও মিল নিয়ে তপন বাগচী’র আলোচনা এবং এক সংখ্যা পর সুব্রত গোমেজ-এর
প্রতিক্রিয়া দু’টিই আমি পড়েছি। কবি প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন: “প্রথমদিকে যে-
প্রকারের মিল আমরা চর্যাপদ থেকে ভারতচন্দ্রের আগে পর্যন্ত দেখি, আজকের
বিচারে তার সিংহভাগ অপূর্ণ মিল। ভারত চন্দ্রই পূর্ণ মিল-এর সূচনা করেন
বলা যায়, এবং তাঁর পর থেকে প্রধানত পূর্ণ মিলের ব্যবহারই বাংলায় হ‘য়ে
এসেছে, রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর কিছুকাল পরে পর্যন্ত. . .পৃথিবী/ছবি, তুমি/
আমি, জানি/শুনি. . .এইপ্রকার মিলকে পুরনো বা গ্রাম্য মিল বলা
যায়. . .কিন্তু এসব মিলকে জেনেবুঝে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে (যেমন, ধরা যাক,
হাস্যরসের প্রয়োজনে) পুনর্ব্যবহার করেন যদি কোনো কবি, তাকে কিন্তু ভুল বা
অশুদ্ধ বলা চলে না। আমার কবিতায় আমি ভোগেন/শোবেন, কুটিতে/বঁটিতে, তুমি/
আমি মিল দিয়েছি, সত্য, কিন্তু তারা যে পুরনো, গ্রাম্য মিল, সেটা জেনেই তা
করেছি. . .” কী আশ্চর্য কথা! সুব্রত গোমেজ-এর যেসব কবিতায় এগুলো ব্যবহৃত
হয়েছে তাতে হাস্যরসের চিহ্নমাত্র নেই।
বাংলামাটি’র একটি সংখ্যায় ঢাকায় শঙ্খ ঘোষ-এর আড্ডা নিয়ে একটি লেখা
প্রকাশিত হয়েছিল। অক্ষরবৃত্ত ছন্দ আজকাল অনেকেই কেবল জোড়ায়-জোড়ায় মেলানো
মাত্রা গণনার ভিত্তিতে ব্যবহার করেন কিন্তু এর অন্তর্গত ধ্বনি সৃষ্টিতে
বেশিরভাগ কবিই ব্যর্থ হন এমন ইঙ্গিত ছিলো তাঁর মন্তব্যে। সুব্রত গোমেজ-এর
“তিরিশটি বছর তবু ছিলো সে ভালোই, দুঃখেসুখে/আমি তাকে দেখে গেছি অনুদিন
অনুখন নখদর্পণে মরে বেঁচে/পড়ে গেছি প্রতিটি পৃষ্ঠা তার, বারংবার নিরেট
বাতিকে”। শেষ পঙক্তিটি ছাড়া এই অক্ষরবৃত্তে শঙ্খ ঘোষ-উলে¬¬খিত
অক্ষরবৃত্তীয় ধ্বনিই তৈরি হয় নি। তপন বাগচী কেবল শব্দস্তরের মাত্রা গণনা
করে কিছু প্রশ্ন রেখেছেন। উত্তরে সুব্রত গোমেজ লিখেছেন জীবনানন্দ ও অন্য
অনেকে ‘আমরা’ শব্দটিকে তিনমাত্রা হিসেবে ব্যবহার করেছেন, তাই তিনিও
‘তিরিশটি’ শব্দটিকে তিনমাত্রা হিসেবে এবং ‘পৃষ্ঠা’কে তিনমাত্রা ও
‘দর্পণে’কে চারমাত্রা হিসেবে ব্যবহার করেছেন। ছন্দশাস্ত্রে এখনও স্বীকৃত
না-হলেও সুব্রত’র এই একটিমাত্র যুক্তি কিছুটা গ্রহণযোগ্য এই অর্থে যে,
রবীন্দ্রাত্তরকালে অনেকেই তা করেছেন কিন্তু তা পঙক্তির প্রথম পর্বে যতটা
শ্র“তিসিদ্ধ মনে হয় পরবর্তী পর্বগুলোতে তা মনে হয় না।

.................................................................................................
বাংলামাটি’র সম্পাদকীয় বিভাগে প্রেরিত লেখা (শব্দসংখ্যা ৯৪৭)

তপন বাগচী’র সমালোচনার জবাবে সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ-এর খোঁড়া যুক্তি

সম্প্রতি বাংলামাটি’র একটি সংখ্যায় সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ-এর কবিতার ছন্দ
ও মিল নিয়ে ড. তপন বাগচী’র আলোচনা এবং এক সংখ্যা পর সুব্রত গোমেজ-এর
প্রতিক্রিয়া দু’টিই আমি পড়েছি। তপন বাগচী’র আলোচনার প্রতিটি অংশে তিনি
উপাত্ত তুলে ধরে এমনভাবে বিশ্লেষণ করেছেন যা ছন্দশিক্ষিত যেকোনো পাঠকের
বোধে সংক্রামিত হবে এবং তাঁর যুক্তিকে অখণ্ডনীয় বলে মেনে নেবেন। কবিতার
ছন্দ ও মিল সম্পর্কে সুব্রত গোমেজ-এরও ধারণা আছে বলে তিনি নিজেই কবিতায়
যথাযথ মিল প্রয়োগে তাঁর ব্যর্থতাকে মেনে নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন:
“প্রথমদিকে যে-প্রকারের মিল আমরা চর্যাপদ থেকে ভারতচন্দ্রের আগে পর্যন্ত
দেখি, আজকের বিচারে তার সিংহভাগ অপূর্ণ মিল। ভারত চন্দ্রই পূর্ণ মিল-এর
সূচনা করেন বলা যায়, এবং তাঁর পর থেকে প্রধানত পূর্ণ মিলের ব্যবহারই
বাংলায় হ‘য়ে এসেছে, রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর কিছুকাল পরে পর্যন্ত. . .পৃথিবী/
ছবি, তুমি/আমি, জানি/শুনি. . .এইপ্রকার মিলকে পুরনো বা গ্রাম্য মিল বলা
যায়. . .কিন্তু এসব মিলকে জেনেবুঝে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে (যেমন, ধরা যাক,
হাস্যরসের প্রয়োজনে) পুনর্ব্যবহার করেন যদি কোনো কবি, তাকে কিন্তু ভুল বা
অশুদ্ধ বলা চলে না। আমার কবিতায় আমি ভোগেন/শোবেন, কুটিতে/বঁটিতে, তুমি/
আমি মিল দিয়েছি, সত্য, কিন্তু তারা যে পুরনো, গ্রাম্য মিল, সেটা জেনেই তা
করেছি. . .” কী আশ্চর্য কথা! সুব্রত গোমেজ-এর যেসব কবিতায় এগুলো ব্যবহৃত
হয়েছে তাতে হাস্যরসের চিহ্নমাত্র নেই; তবে, তাঁর ‘পুরনো দিনের গ্রাম্য
মিল’ ব্যবহারের স্বীকারোক্তির সঙ্গে অর্থহীন যুক্তি দেখে অনেকে হাস্যরসে
সিক্ত হবেন। কবি আল মাহমুদ এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন: যে-কবি ছন্দ জানে
না, সে কিছুই জানে না। সঠিক ছন্দ ব্যবহারে হোঁচট খেয়ে ধরা পড়লে তরুণ
প্রজন্মের অনেক কবি আজকাল বলে থাকেন “এগুলো আমার ইচ্ছাকৃত নিরীক্ষা!”
সুব্রত গোমেজ ছন্দ নিয়ে লেখালেখি করেন, তিনিও আত্মপক্ষ সমর্থন করার
প্রয়োজনে তাই বললেন।
সুব্রত গোমেজ-এর উদ্ধৃতাংশে তাঁর ‘আজকের বিবেচনায়’ কথাটির প্রতি আমি
পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই তপন বাগচীও ‘আজকের বিবেচনা’তেই
সুব্রত’র ছন্দ-মিল নিয়ে লিখেছেন, মধ্যযুগের বিবেচনায় নয়। মধ্যযুগের এসব
স্খলন-পতন পেরিয়ে বাংলা কবিতা সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে। সুব্রত গোমেজ
রবীন্দ্রোত্তর কালে মধ্যযুগের পুনরাবৃত্তির কথা বলেছেন। কিন্তু
ক্ষেত্রবিশেষে কিছুটা তা ঘটেছে কবিতার ডিকশনে, ছন্দ ও মিলের ক্ষেত্রে নয়;
ছন্দ ও মিলের ক্ষেত্রে কাদের হাতে মধ্যযুগের গ্রাম্যতা ঘটেছে তা আমাদের
খতিয়ে দেখতে হবে। রবীন্দ্রোত্তর কালের কোনো প্রকৃত কবির হাতে এমনটি ঘটে
নি। তিরিশের পঞ্চপ্রধান থেকে শুরু করে আমাদের আহসান হাবীব, শামসুর
রাহমান, আল মাহমুদ-এর হাত হয়ে বাংলা কবিতার যে মূলধারা প্রবহমান তাতে এমন
ব্যর্থ মিলের ব্যবহার খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। যারা কবিতার জন্য নয়, অন্য
কোনো কারণে কবিতা চর্চা করতে-করতে তপন বাগচী’র ভাষায় ‘মীথ’ হয়ে গেছেন
তাদের ব্যর্থ রচনাকে কবিতা মনে করে এগুলো থেকে উদাহরণ চয়ন করলে শুদ্ধতা-
অশুদ্ধতার বালাই থাকে না। সুব্রত গোমেজও এমনটিই করেছেন। জয় গোস্বামীর
কবিতাকে তিনি আদর্শ মনে করে তাঁর ব্যর্থ মিলের জয়গান গেয়েছেন এবং নিজের
ব্যর্থতাকে ঢাকতে এগুলোকে রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহার করার প্রয়াস
চালিয়েছেন।
মারুফ রায়হান সম্পাদিত অধূনালুপ্ত ‘মাটি’ পত্রিকায় জয় গোস্বামী’র কবিতা
নিয়ে লিখেছিলেন প্রাবন্ধিক ও কথাশিল্পী সুশান্ত মজুমদার। তিনি তাঁর
আলোচনায় দেখিয়েছিলেন কীভাবে জয় গোস্বামী শব্দের পর শব্দ বসিয়ে কেবল ছন্দ
রক্ষা করে শুদ্ধ-অশুদ্ধ সব ধরনের মিল প্রয়োগে এলোমেলো কিছু উক্তি ও
চিত্রকে কবিতার অবয়ব দিচ্ছেন। বাংলাদেশের কোনো প্রজন্মের কোনো প্রকৃত
কবিই তাঁকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন নি, করতে পারেন না; করেছেন তাঁরাই
যারা নিজেরাও প্রলাপ রচনায় পারদশী (!) কারণ জয় গোস্বামীকে আদর্শ মানলে
কবিতা রচনায় আর শ্রম স্বীকার করতে হয় না, কিছুটা ছন্দজ্ঞান থাকলেই চলে।
তপন বাগচী তাঁর আলোচনায় সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ-কে ‘জীবন্ত মীথ’ ইত্যাদি
খেতাবে ভূষিত করে আলোচনায় অগ্রসর হয়েছেন। যদিও এতে কিছুটা শ্লেষের গন্ধ
পেয়েছি, তবুও তপন বাগচী’র এতটা বিনয়ের প্রয়োজন ছিলো না কারণ সুব্রত
অগাস্টিন গোমেজ-এর কবিতা আমিও পড়েছি। তিনি কার কাছে মীথ, কী কারণে মীথ
এসব বুঝে উঠতে পারি নি। তপন বাগচী কেবল সুব্রত গোমেজ-এর একটি গ্রন্থ
‘দিগম্বর চম্পূ’র ওপর তাঁর আলোচনা লিখেছেন। সুব্রত গোমেজ-এর প্রায় সব
কবিতাই আমার পড়া আছে। তিনিও জয় গোস্বামীদের মত প্রলাপ রচনা করে চলেছেন।
পার্থক্য কেবল জয় গোস্বামী’র ছন্দজ্ঞান তাঁর চেয়ে ভালো।
বাংলামাটি’র একটি সংখ্যায় মারুফ রায়হান তাঁর নিজের-নেওয়া শঙ্খ ঘোষ-এর
একটি সাক্ষাতকার প্রকাশ করেছিলেন। তাতে শঙ্খ ঘোষ বলেছিলেন অক্ষরবৃত্ত
ছন্দ আজকাল অনেকেই কেবল জোড়ায়-জোড়ায় মেলানো মাত্রা গণনার ভিত্তিতে
ব্যবহার করেন কিন্তু এর অন্তর্গত ধ্বনি সৃষ্টিতে বেশিরভাগ কবিই ব্যর্থ হন
এমন ইঙ্গিত ছিলো তাঁর মন্তব্যে। তপন বাগচী’র আলোচনায় উদ্ধৃত সুব্রত গোমেজ-
এর “তিরিশটি বছর তবু ছিলো সে ভালোই, দুঃখেসুখে/আমি তাকে দেখে গেছি অনুদিন
অনুখন নখদর্পণে মরে বেঁচে/পড়ে গেছি প্রতিটি পৃষ্ঠা তার, বারংবার নিরেট
বাতিকে”। শেষ পঙক্তিটি ছাড়া এই অক্ষরবৃত্তে শঙ্খ ঘোষ-উল্লেখিত
অক্ষরবৃত্তীয় ধ্বনিই তৈরি হয় নি। অতএব সর্ব অর্থেই এটি একটি ব্যর্থ
অক্ষরবৃত্তীয় রচনা। তপন বাগচী কেবল শব্দস্তরের মাত্রা গণনা করে কিছু
প্রশ্ন রেখেছেন। উত্তরে সুব্রত গোমেজ লিখেছেন জীবনানন্দ ও অন্য অনেকে
‘আমরা’ শব্দটিকে তিনমাত্রা হিসেবে ব্যবহার করেছেন, তাই তিনিও ‘তিরিশটি’
শব্দটিকে তিনমাত্রা হিসেবে এবং ‘পৃষ্ঠা’কে তিনমাত্রা ও ‘দর্পণে’কে
চারমাত্রা হিসেবে ব্যবহার করেছেন। ছন্দশাস্ত্রে এখনও স্বীকৃত না-হলেও
সুব্রত’র এই একটিমাত্র যুক্তি কিছুটা গ্রহণযোগ্য এই অর্থে যে,
রবীন্দ্রাত্তরকালে অনেকেই তা করেছেন কিন্তু তা পঙক্তির প্রথম পর্বে যতটা
শ্র“তিসিদ্ধ মনে হয় পরবর্তী পর্বগুলোতে তা মনে হয় না। সুব্রত’র
‘নখদর্পণে’ শব্দটি পঙক্তির তৃতীয় পর্বে ব্যবহৃত হয়েছে যেখানে তার প্রয়োগ
একেবারেই বেখাপ্পা। তাই তপন বাগচী’র আপত্তিই যথার্থ।
সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ-এর কাব্যবিশ্বাসের ভালো দিকটি এই যে, তিনি আধুনিক
কবিতায় ছন্দকে আবশ্যিক মনে করেন এবং এই মর্মে লেখালেখিও করেন, যা তপন
বাগচীও উল্লেখ করেছেন। কিন্তু নিজের কবিতায় প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হলে এই
ছন্দজ্ঞান নিয়ে তাত্ত্বিক হওয়া যায়, কবি হওয়া যায় না। সুব্রত গোমেজ-কে
তাঁর এক অন্ধ ভক্ত একটি ইলেকট্রনিক ফোরামে মন্তব্য করেছেন তিনি নাকি
জীবিত কবিদের মধ্যে সবচেয়ে ছন্দজ্ঞানসম্পন্ন! পঞ্চাশের দশকের আল মাহমুদ,
সৈয়দ শামসুল হক, মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ থেকে শুরু করে বর্তমান প্রজন্মেরও
প্রায় কয়েক ডজন ‘জীবিত’ কবি আছেন যারা ছন্দশাস্ত্রে সুশিক্ষিত এবং একই
সঙ্গে নিজ কবিতায় ছন্দরীতির প্রয়োগেও সুব্রত গোমেজ-এর চেয়ে অনেক বেশি
সিদ্ধহন্ত।
তপন বাগচী’র উদ্দেশে সুব্রত গোমেজ বেশকিছু উপদেশ বর্ষণ করেছেন, যা তপন
বাগচী’র জন্য প্রয়োজন নেই কারণ তপন বাগচী ছন্দশাস্ত্রে যেমন শিক্ষিত
তেমনি নিজের কবিতায় তার প্রয়োগেও দক্ষ। তপন বাগচী তাঁর অনুজ বলেই সুব্রত
গোমেজ-এর অর্থহীন যুক্তি মানতে তিনি বাধ্য হবেন কেন?
সবশেষে বলবো কবিতা কোনো বায়বীয় বিষয় নয় যে, একেক পাঠকের কাছে একেক কবিতা
একেক রকম মূল্য পাবে। সুব্রত গোমেজ-এর এই যুক্তিটিও নড়বড়ে। ভালো কবিতা
সবার কাছেই ভালো এবং আলোচনার মাধ্যমে অনেক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করেই
সেই ভালোমন্দ চিহ্নিত করা সম্ভব।
কুমার বিপ্লব, ঢাকা
kumar.b...@gmail.com

Tapan Bagchi

unread,
Jul 12, 2009, 4:46:58 AM7/12/09
to kobit...@googlegroups.com
কবি কুমার বিপ্লবকে ধন্যবাদ। আমার সমালোচনা ও  কবি সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের লেখার প্রতিক্রিয়া প্রকাশের জন্য। আমার লেখাটি কবিতাকথা-আড্ডায় পোস্ট করেছিলাম। কিন্তু সুনসান নীরবতা। সুব্রতদার ছন্দ-প্রয়োগ বিষয়ে ভিন্নমত জানানোর পরেও কেউ কোনো প্রতিক্রিয়া জানালেন না দেখে আমিও কিছুটা অবাক হয়েছি। সুব্রতদার প্রতিক্রিয়ার একটি জবাব আমি প্রস্তুত করেছি। কিন্তু  চূড়ান্ত করে পাঠানোর সময় পাইনি। আগামী সংখ্যায় পাঠাবো, ভাবছি। কিন্তু কুমার বিপ্লবের পাঠানোর প্রতিক্রিয়া যেভাবে কর্তন করা হয়েছে, দেখে তো শঙ্কা জাগে। আমার বক্তব্যও যদি এভাবে কর্তন করা হয়! তবু পাঠাবো। কারণ, আমি কবি মারুফ রায়হানের কাছে কৃতজ্ঞ, আমার  লেখাটি যেখানে দুইজন সম্পাদকের হাত ঘুরে আসছে, তা মারুফ ভাই প্রকাশ করেছেন বলে। কুমার বিপ্লবের প্রতিক্রিয়ায় আমারও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সময় করে পড়ে একটু প্রস্তুতি নিয়ে আমি পরে আমার প্রতিক্রিয়া জানাব। আপাতত তাকে কৃতজ্ঞতা জানাই, প্রায় থেমে যাওয়া একটা বিতর্ককে উসকে দেয়ার জন্য।
তপন বাগচী

Gomes, Subrata Augustine

unread,
Jul 12, 2009, 2:59:24 PM7/12/09
to kobit...@googlegroups.com
প্রিয় তপন,
 
কুমার বিপ্লবের লেখাটি দেখে আমি শিহরিত হলাম! এ নিয়ে আর আমার বলবার কিছু নাই! আমার জানা ছিল বাংলাদেশের প্রত্যেক রাস্তায় অন্ততঃ একজন ক'রে স্কুলমাস্টার থাকে... এখন দেখছি সংখ্যা আরও বেড়েছে।
 
আপনার প্রতিক্রিয়াটিও যে আমাকে শিহরিত করবে তাতেও সন্দেহ নাই।
 
আপনারা এত ছোট মাছ ধরার চাইতে না হয় আরও বড় কোনো মাছ ধরতে যেতেন? মানে একজন পেডান্ট চাইলে হোমারকেও ফলসিফাই ক'রে দিতে পারে, তাই না?
 
কুমার বা আপনি ছন্দ "জানেন" না রে ভাই... ছন্দ পুথিগত বিদ্যা না, ছন্দ রক্তে বইবার ব্যাপার... বই প'ড়ে যে ছন্দ হয়, তা তপন বাগচীর কবিতায় দ্যাখা যায়, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের কবিতায় না...
 
তপন, একটা ছোট্ট পরীক্ষা দিচ্ছি: আমার "কবিতাসংগ্রহ" বইয়ে, "নাগপঞ্চমী" ব'লে একটা কবিতা আছে, টাইটেলের নীচে লেখা আছে "তোটক"। কবিতাটা আদ্যন্ত সংস্কৃত তোটক ছন্দে লেখা... পারলে ঐ কবিতাটাকে রেপ্লিকেট করুন আপনি বা বিপ্লব। একটা ১০০ লাইনের কবিতা প্রসব ক'রে দ্যাখান, যাতে প্রতিটা চরণে অক্ষরবিন্যাস হবে: লঘু-লঘু-গুরু লঘু-লঘু-গুরু লঘু-লঘু-গুরু লঘু-লঘু-গুরু। আরও অনেক উদাহরণ টানতে পারতাম। কিন্তু ভাই, আপনারা জয় গোস্বামীকেই রেয়াত করেন না, আমাকে কী করবেন... ছন্দ-বাবদে জয়ের চেয়ে সুব্রতর কাজ কম নয় হয়তো... তবে কবিত্বের বাবদে জয় নিশ্চয়ই বহু মাইল এগিয়ে...
 
আল মাহমুদ বা শঙ্খ ঘোষ ছন্দঃসিদ্ধ কবি; তাঁদেরকে বরং আমার লেখাটি নিয়ে মতামত দিতে বলুন, যদি পারেন, ওঁদের যে-কোনো সমালোচনা আমি খোলামনে নেব... গ্রহণ করি-না-করি... কিন্তু, সরি, স্কুলমাস্টারদেরকে খাতির করতে চাই না আর... আমার স্কুলজীবন বহুকাল হ'ল শেষ হয়েছে।
 
যারা অন্ধ, সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা!
 
সুব্রত।
 

From: kobit...@googlegroups.com [kobit...@googlegroups.com] On Behalf Of Tapan Bagchi [drbagch...@gmail.com]
Sent: Sunday, 12 July 2009 4:46 AM
To: kobit...@googlegroups.com
Subject: [কবিতাকথা:836] Re: তপন বাগচীর সমালোচনা, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের প্রতিক্রিয়া ও মারুফ রায়হানের সম্পাদনা প্রসঙ্গে

Tapan Bagchi

unread,
Jul 13, 2009, 2:47:42 AM7/13/09
to kobit...@googlegroups.com

সুব্রতদা,
আপনি কুমার বিপ্লবের লেখাটি দেখে শিহরিত হয়েছেন। আর  কেউ যদি আপনার মতো একজন ছন্দমনা কবির ছন্দচ্যুতি ও মিলের অপূর্ণতা দেখে শিহরিত হন, তাঁকে কি আর দোষ দেয়া যাবে?
কুমার বিপ্লবের লেখা দেখে আপনার কেন যে স্কুলমাস্টারের কথা মনে পড়ল, বুঝলাম না। একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। একবার শাহবাগের আড্ডায় একটা লেখা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল! যাঁর লেখার নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল তিনি কথাসাহিত্যিক, পেশায় একসময় স্কুল শিক্ষক ছিলেন, তখন একটি পত্রিকার সম্পাদনা বিভাগে কাজ করেন। আড্ডায় ছিলাম আমি, ছিলেন সমুদ্র গুপ্ত। একসময় ঢুকলেন হুমায়ুন আজাদ। তিনি আলোচনার মাঝখানে ঢুকেই বললেন, ‘তোমরা ওই স্কুল মাস্টারের লেখা নিয়ে আলোচনা করছ?’ মুহূর্তেই জ্বলে উঠলেন সমুদ্র গুপ্ত। ‘হুমাযুন, নিজেকে কী ভাবছ? স্কুল মাস্টার পরিচয়টাকেই দেখলে? সে তোমার চেয়ে খারাপ লেখে না। এবং বয়সেও তোমার চেয়ে বড়। মানুষকে অসম্মান করে কথা বলবে না?’ সমুদ্র গুপ্তও বয়সে বড় ছিলেন হুমাযুন আজাদের। হুমায়ুন আজাদ আর কথা বাড়ালেন না। শব্দ করে হাসলেন শুধু। হায় আজ দুজনেই পরলোকে!
‘স্কুল শিক্ষক’ বলার মাধ্যমে অন্যকে তুচ্ছ করার যে মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে, তাতে আমি লা জবাব!
আপনি বলেছেন, আমার প্রতিক্রিয়াটিও আপনাকে শিহরিত করবে, তাতেও কোনো সন্দেহ নাই। ভয় পাবেন না, দাদা। নানান কারণে আমি আপনাকে শ্রদ্ধা করি। আর সে কারণেই আপনার কবিতায় ছন্দ প্রয়োগ নিয়ে যেটুকু কথা বলেছি, সেটুকু শালীনতার মধ্যে রাখতে চেয়েছি। আপনার প্রতিক্রিয়ায় যে সকল খোঁড়া যুক্তি দিয়েছেন, তা খণ্ডানোর দায় ছিল সত্যের খাতিরে। আপনার আতঙ্ক কাটাতে, সেই দায় পালন থেকে না হয় দূরেই থাকব।
আলোচনা হয়েছে আপনার ছন্দ নিয়ে। তপন বাগচীর কবিতায় কী দেখা যায়, সেটি এখানে টানছেন কেন? তপন বাগচীর আলোচনা টানুন। সেটাই সঙ্গত। আমার ভুল হলে, সে দায় বহন করতে রাজি আছি। কিংবা শুধরে দিলে আপনার কাছ থেকে শেখার মানসিকতাও লালন করছি। কিন্তু আপনি লিখলেন-

কুমার বা আপনি ছন্দ "জানেন" না রে ভাই... ছন্দ পুথিগত বিদ্যা না, ছন্দ রক্তে বইবার ব্যাপার... বই 'ড়ে যে ছন্দ হয়, তা তপন বাগচীর কবিতায় দ্যাখা যায়, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের কবিতায় না...

আমি কিংবা কুমার ছন্দ জানি কি না-জানি সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। তপন কিংবা কুমার ছন্দ  ‘‘জানেন’ না রে ভাই.. ’’ প্রচার করে কি আপনার ছন্দ জানার ঘটনা প্রমাণ করা যায়? ‘ছন্দ পুথিগত বিদ্যা নয়..’ এই বাক্যটিও কিন্তু পুথিতে ঢুকে যাচ্ছে! অতএব...। আপনার কবিতাও তো পড়েছি পুথিতে। অর্থাৎ আপনার কবিতা থেকে যেটুকু বিদ্যা অর্জন করেছি, তা-ও তো পুথিগত। আপনিও তো চান যে,  আপনার লেখা পাঠক পড়–ক। সেকারণেই তো পুথিতে ঢোকাচ্ছেন। তাহলে পুথিগত বিদ্যার দোষ কি? অনেক আগেই তো স্কুলজীবন শেষ করেছেন। পুথি কি অনায়ত্ত ছিল দাদা? আপনি যে জ্ঞান আমাকে দান করে যাচ্ছেন, তা হয়তো আপনার ধারণাগত, কিন্তু আমি যখন গ্রহণ করছি, তা কি পুথিগত নয়!
আপনার কবিতার রেপ্লিকেট করার অনুরোধ করেছেন। একটু বেশি হয়ে গেল না, দাদা? আপনার কবিতার রেপ্লিকেট করার দুর্মতি যেন না হয়, আশীর্বাদ করবেন।
‘বাংলামাটি’তে প্রকাশিত আপনার প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন,
‘আমার কবিতায় আমি ভোগেন / শোবেন, কুটিতে / বঁটিতে, তুমি / আমি মিল দিয়েছি, সত্য, কিন্তু তারা যে পুরানো, গ্রাম্য মিল, সেটা জেনেই তা করেছি, এবং একটা উদ্দেশ্যেই করেছি।’
আপনি নিজেই যখন স্বীকার করেছেন আপনার মিল ‘গ্রাম্য’, তাই এ নিয়ে আর মন্তব্য করতে চাই না। ‘সেটা জেনেই তা করেছেন’-- জেনে করুন আর না-জেনে করুন, কাজটি যেহেতু আপনি করেছেন, তাই তার দায় আপনারই।  ‘একটা উদ্দেশ্যেই করেছি’- ভালো কথা। সকল কাজেরই একটা উদ্দেশ্য থাকে। উদ্দেশ্যহীনতাও উদ্দেশ্য বটে! তাই এরকম বাগাডম্বরকে নিজের অক্ষমতা ঢাকার প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না।
আপনি পরীক্ষা দিচ্ছেন (নাকি নিচ্ছেন?) ‘নাগপঞ্চমী’র মতো সংস্কৃত তোটক ছন্দে কবিতা লিখেতে। আমি না পারলে কি প্রমাণ হয় যে, আপনার কাজ শুদ্ধ? আমার সঙ্গে কুমার বিপ্লবকে জড়িয়ে ‘আপনারা’ সম্বোধন করেছেন কেন? কুমার তো আমারও সমালোচনা করেছেন। আমি যে আপনাকে ‘জীবন্ত মীথ’ বলেছিলাম, কুমার বিপ্লব তাতে শ্লেষের গন্ধ খুঁজে পেয়ে ‘এতটা প্রয়োজন ছিল না’ বলে জ্ঞান দিয়েছেন। আমি তাঁর এই সমালোচনাকে  মানতে না পারি, কিন্তু তাঁকে আক্রমণ করতে চাই না। বরং আপনার আক্রমণ দেখে মনে হচ্ছে, অতটা ‘বিনয়’ আমার না দেখানোই ভাল ছিল।
কুমার বিপ্লব তো আপনার পক্ষেও কিছু বক্তব্য হাজির করেছেন। তিনি আমাদের দুজনেরই সমালোচনা করেছেন। কিন্তু আপনি দুজনকেই আপনার প্রতিপক্ষ ঠাউরেছেন। বলেছেন, ‘আপনারা জয় গোস্বামীকেই রেয়াত করেন না..’। আমার ক্ষেত্রে এর জবাব হলো, কবি হিসেবে জয় অনেক বড়। কিন্তু ছন্দের প্রয়োগে তাঁরও বিচ্যুতিকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তাই ছন্দের ক্ষেত্রে জয়কে স্বাক্ষী মানা অন্তত আপনার কাছে বেমানান মনে হয়েছে। জয় গোস্বামী কিংবা কোনও বড় কবি ভুল করলে, তাঁকে স্বাক্ষী মেনে নিজের ভুলকে জায়েজ করা যায় কি?
বলেছেন-

আল মাহমুদ বা শঙ্খ ঘোষ ছন্দঃসিদ্ধ কবি; তাঁদেরকে বরং আমার লেখাটি নিয়ে মতামত দিতে বলুন, যদি পারেন, ওঁদের যে-কোনো সমালোচনা আমি খোলামনে নেব... গ্রহণ করি-না-করি... কিন্তু, সরি, স্কুলমাস্টারদেরকে খাতির করতে চাই না আর... আমার স্কুলজীবন বহুকাল ' শেষ হয়েছে।

 
একটু বেশি হয়ে গেল না, দাদা? তাঁদের কাছে আমি যাব কেন? যাওয়ার পালা তো আপনার! তাঁদের সার্টিফিকেট এনে আপনি দেখাতে পারেন- আপনি কতটা সফল! সরি, দাদা, এই দায়িত্ব আমার নয়। আপনার স্কুল জীবন বহুকাল হ’ল শেষ হয়েছে। এবং তার মাত্র তিন বছর পরে শেষ হয়েছে আমার স্কুলজীবন। সেটিও বহুকাল বইকি! আপনি স্কুল মাস্টারদের খাতির করেন না। অথচ নিজেই স্কুল খুলে বসেছেন। নিজে এখন মাস্টার হয়েছেন বলে স্কুলের মাস্টারদের ভুলে যাওয়াই স্বাভাবিক! কিন্তু এখনও আমি স্কুল মাস্টারদের খাতির করি। তাই সুযোগ পেলে আপনার স্কুলেও ঢুকে পড়ি।

Ôযারা অন্ধ, সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা!Õ

এই মুহূর্তে এই প্রিয় বাক্যটি উচ্চারণ করতে পারলে আমারও ভালো লাগত। কিন্তু সেই ঔদ্ধত্য ধারণ করি না! কারণ আপনার কাছ থেকে শিখেছি,
 
‘অনেক বড় ওস্তাদ হামেশা এক রাগের ভিতর আরেক রাগের প্রবেশ-প্রস্থান ঘটিয়ে দেন, ঐ রাগের আবহাওয়াকে খানিক পাল্টে দিতে। সেটাকে নূতনত্ব বলতে হবে আমাদের। একই কাজ একজন শিক্ষানবিসের গানে আমরা হয়তো নেব না, বলব, ব্যাটার রাগসিদ্ধি নেই, মালকোষে পঞ্চম লাগাচ্ছে। আবার, বড় ওস্তাদেরা সুরের প্রয়োজনে বা আমেজমুগ্ধ অবস্থায় দু’একটা ভুলচুকও, অনিচ্ছায়, করে বসতে পারেন, যা, গানটির সুরকে, এবং সর্বোপরি আবহাওয়া বা মাহলকে ব্যাহত না-করলে, আমরা তাকে স্বচ্ছন্দে গ্রহণ ক’রে থাকি। সুরসম্রাট আব্দুল করিম খাঁ-র অনেক গানেই অনিচ্ছাকৃত নিষিদ্ধ স্বরের ব্যবহার থাকত, কিন্তু তাতে তাঁকে উপভোগের মাত্রা কোনো শ্রোতার কানে ক’মে যায় নি।’
আপনি সুরসম্রাট আব্দুল করিম খাঁ-র মতো ভাবছেন নিজেকে, আপনাকে অন্ধ বলা কি আমার মতো অভাজনের সাজে! ঘাড়ে তো মাথা একটাই!
‘বাংলামাটি’তে লেখা আপনার প্রতিক্রিয়ার জবাব লিখব কি না এখনো ভাবছি। কুমার বিপ্লবের জবাব যেভাবে বাংলামাটি কর্তন করেছে, ভয় হয়, না জানি পণ্ডশ্রম হয় কিনা!
ভালো থাকুন, সুব্রতদাদা। নির্ভয়ে মাস্টারি চালিয়ে যান। আর, আপনার স্কুলের ছাত্র হিসেবে আমাকে গ্রহণ করুন, এই প্রার্থনা!

তপন বাগচী
ঢাকা

 

kumar biplab

unread,
Jul 13, 2009, 4:44:38 AM7/13/09
to kobit...@googlegroups.com

সুব্রত গোমেজের জবাবের জবাব


কুমার বিপ্লব

আমাকে স্কুল মাস্টার সম্বোধন করে লেখা সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ-এর প্রতিক্রিয়া পড়ে মনে হচ্ছে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। তপন বাগচী ও আমাকে  উদ্দেশ করে লেখা “ কুমার বা আপনি ছন্দ ‘জানেন’ না রে ভাই...ছন্দ পুথিগত বিদ্যা না, ছন্দ রক্তে বইবার ব্যাপার...বই পড়ে যে ছন্দ হয়, তা তপন বাগচীর কবিতায় দ্যাখা যায়, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের কবিতায় না..”।

ভাব দেখে মনে হ্েচ্ছ সুব্রত গোমেজ তাঁর রক্তে একধরনের ছন্দ বয়ে বেড়াচ্ছেন যা পুথিগত নয়, একেবারেই নতুন জিনিস (ছন্দ-অনভিজ্ঞ এবং আমূল গদ্যরীতি-নির্ভর নবীন কবিরা নিজেদের রচনাকর্ম সম্পর্কে যা বলে থাকেন)। কিন্তু এপর্যন্ত আমি সুব্রত গোমেজের ছন্দবিষয়ক যতগুলো লেখা পড়েছি তাতে প্রচলিত ছন্দশাস্ত্রের বাইরে কিছু ‘নতুন শাস্ত্র’ খুঁজে পাই নি। প্রচলিত ছন্দরীতিরও অত্যন্ত প্রাথমিক স্তরের কিছু ধারণা আছে তাঁর। এজন্যই নিজের কবিতায় তা যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারেন না এবং তপন বাগচী ও আমার মন্তব্য কিন্তু সুব্রত’র ছন্দজ্ঞান নিয়ে নয়, নিজের কবিতায় ছন্দপ্রয়োগের ব্যর্থতা নিয়ে। এবার যখন বলে বসলেন আমরা ছন্দই জানি না তখন বলতে হয় তিনি নিজে ছন্দ বিষয়ে জানেন, ছন্দ জানেন না। ভালোভাবে জানলে তিনি তা নিজের কবিতায় যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারতেন।

পুথিগত বিদ্যার প্রতি যদি এতই অনাগ্রহ থাকে তবে সুব্রত গোমেজ নতুন ছন্দশাস্ত্র রচনা করছেন না কেন? কেন শঙ্ঘ ঘোষের মত তাত্ত্বিক মারুফ রায়হানের প্রশ্নের উত্তরে বলেন: নতুন ছন্দ আবিষ্কারের প্রয়োজন এবং সম্ভাবনা একবারেই নেই। প্রচলিত ছন্দেই বৈচিত্র্য আরোপ করার অনেক সুযোগ রয়েছে! এই বৈচিত্র্য আরোপের সুযোগ বলতে কী তিনি ‘তুমি/আমি’, ‘জানি/শুনি’, ভোগেন/শোবেন, কুটিতে/বটিতে’ ধরনের বস্তাপচা গ্রাম্য মিল ব্যবহারকে বুঝিয়েছেন?      

সুব্রত গোমেজ-এর মানসিক ভারসাম্যহীনতার আরেকটি প্রমাণ সংস্কৃত ‘তোটক’ ছন্দে ১০০ লাইনের একটি কবিতা লেখার জন্য আমাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে-মারা। এই তোটক ছন্দটি কি সুব্রত গোমেজের রক্তে প্রবাহিত ছিলো না কি পুথি পড়েই শিখেছেন এই প্রশ্ন রইলো সবার কাছে?
আপাতত এই পর্যন্ত। সময়ের জন্য কিছু কথা জমা রইল।

   

Sarwar Chowdhury

unread,
Jul 13, 2009, 8:02:57 AM7/13/09
to kobit...@googlegroups.com

The way you are debating on rhyme and rhythm isn’t  something amazing. There is no constant theory can be applied on poetry and littr. Its fluid, throughout the time its flowing. The sound is the justice after all, no so called grammer.

And the trend of ours to blame on others, in the name of ‘critism’ is not something widly excepted.

However, I always appreciate sweet fight, not bitter.

 

Thanks

 

sarwar

Haseeb Mahmud

unread,
Jul 13, 2009, 8:19:50 AM7/13/09
to kobit...@googlegroups.com
অফটপিক -

সারোয়ার চৌধুরী সাহেব,

বাংলা মেসেজ প্রসঙ্গে -
এই গ্রুপে বাংলায় লেখা নিয়ম বলেই জানি । এটা এ কারনে বোধকরি যে ইংরেজী ভাষাটা সকল সভ্যের কাছে তেমন সড়গড় অবস্থায় হাজির হয় না । বলতে দ্বিধা নেই আমিও সেই দলেই পড়ি ।

থ্রেডে আপনার জবাব প্রসঙ্গে -
অনেকক্ষন চিন্তা করেও আপনার "
Its fluid, throughout the time its flowing. The sound is the justice after all, no so called grammer." বাক্যদুইটির অর্থ বুঝতে পারলাম না । প্রথম বাক্যে ফ্লুইড কিভাবে থ্রুআউট দ্য টাইম প্রবাহিত হয় সেটা বুঝিনি । দ্বিতীয় বাক্য গোটাটাই বুঝি নাই ।
অনুগ্রহ করে আরেকটু বিস্তারিত বলুন । খুব বেশী অফটপিক মনে করলে আলাদা টপিক খুলতে পারেন ।


//
গুনমুগ্ধ, হাসিব




2009/7/13 Sarwar Chowdhury <sarw...@gmail.com>



--
Haseeb Mahmud
Hafenbad 12
Ulm 89073, Germany
Phone: +49  (0) 731 290 1787 (Home)
+49 (0)176 60 850 154 (Mobile)

Tapan Bagchi

unread,
Jul 13, 2009, 8:59:15 AM7/13/09
to kobit...@googlegroups.com
ভাই হাসিব, আপনি জার্মানি থেকেও সরওয়ার চৌধুরীর ইংরেজি বুঝতে পারছেন না, আর আমরা খাঁটি বাঙ্গাল কেমন বুঝি। সওয়ার চৌধুরীকে অনুরোধ করব, একটু ঝেড়ে কাশুন ভায়া!
আপনার প্রতিক্রিয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই। চুপ করে থাকার চেয়ে কিছু বললে আসর তো জমে!
তপন বাগচী

SHUDDHASHARs ahmedurrashid

unread,
Jul 13, 2009, 11:04:05 AM7/13/09
to kobit...@googlegroups.com
মডারেটর ভাই
কবিতাকথায় বাংলাচর্চা নিশ্চিত করুন।


--
ভাটির মানুষ আমি বুঝিনা উজানের গতি

মুজিব মেহদী

unread,
Jul 13, 2009, 1:06:25 PM7/13/09
to কবিতাকথা
সারওয়ার ভাই সম্পর্কে আমার যতদূর জানাশোনা, তাতে এটা নিশ্চিত করেই বলতে
পারি যে, তিনি অপেক্ষাকৃত প্রবীণ ইউনিকোড ব্যবহারকারী। সামহ্যোয়ারে
ব্লগার হিসেবে তিনি যখন খ্যাতিমান (সুখ্যাতি না কুখ্যাতি আমি অতটা স্পষ্ট
নই যদিও), তখন আমার ব্লগারজন্ম ঘটছে মাত্র। সম্প্রতি তিনি ইংরেজিতে কবিতা
লিখেন বলে শুনেছি। কিন্তু তাই বলে বাংলা ফোরামেও তাঁকে ইংরেজিতে কথা বলতে
হবে কেন তা তো বুঝতে পারছি না!

টপিকে থেকে বাংলায় কথা বললে ফোরামের রীতিটাও যেমন মানা হয়, তেমনি আপনার
সাথে আমাদের যোগাযোগটাও ভালো হয়। আসুন সারওয়ার ভাই, এ ফোরামে আমরা
বাংলায়ই বলি।

Sarwar Chowdhury

unread,
Jul 13, 2009, 2:16:25 PM7/13/09
to kobit...@googlegroups.com
হা হা হা দৌড়ের মধ্যে মেইল করেছিলাম বলেই বিপত্তি দেখা দিয়েছে। আমার লেপটপটা দেশে ছোট ভাই রেখে দিয়েছে। দেশ থেকে এলাম মাত্র কিছু দিন হলো। অন্য একজনের কম্পু থেকে যখন লিখছিলাম তখন ইউনিকোড খুঁজে তংবং না করে তাড়াতাড়ি স্পোকেন ইং-তেই শর্টকার্ট মেইল করেছিলাম। যাক এখন আমার ইউএসবি'র ইউনিকোড থেকে বলছি।
বলতে চেয়েছিলাম, ছন্দ নিয়ে বেশি কাদা না-ছুড়ে এবং দোষারোপের আমাদের যে-ট্রেডিশন, সেমতে তর্ক না করে, ক্রিয়েটিভ ইতিবাচক বিতর্ক করলে ভালো লাগে। কিছুদিন আগে সনেট নিয়ে ইংরেজীওয়ালাদের সাথে তর্ক করতে গিয়ে এই প্রসঙ্গটা উঠেছিলো যে, সাহিত্য/কবিতার দুনিয়াটা ফ্লুয়িডের গড়ানোর মতো, কোনো বাঁধন মানে না। মন এবং কান হৃদয়গ্রাহী করে। ছন্দহীনতার মধ্যেও ছন্দ বের করে। উদাহরণ- আমরা সবাই জানি, এলান পো'র 'আন্নাবেল লী' গ্রামারের বাইরের ছন্দ সমৃদ্ধ হয়ে সেটি একটি অসাধারণ কবিতা ও গান হতে পেরেছে। আমি বলছিলাম, সনেটের ক্লোজিং সিসেট কখগখ ট্রেডিশনের বাইরে গিয়ে ককখখ এমতের পক্ষে, যাতে নতুন টেস্ট বের করা যায়।
যাক, আমি আসলে ভাইসব, ইংরেজী চর্চা করছি, বৃহত পরিসরে জীবন জগতকে বুঝার জন্য। বিভিন্ন জাতির মানুষের চিন্তাকে আত্মস্ত করার জন্য। এবং দেখলাম কিছু বাঘা বাঘা সমকালিন কবি বিভিন্ন প্রান্তের, আমার ভকেইবুলারীর প্রশংসা করছে। আপনারা আমার ইংরেজী কবিতা সম্পর্কে কমেন্টগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন। ওখানে সবাই যে প্রশংসা করে তা না নেতিবাচকও আসে। তবে ওরা দেখলাম, যৌক্তিক এবং দলিল সমৃদ্ধ তর্ককে মেনে নিতে কার্পন্য করে না।
যাক, আজ আর না। খুবই ব্যস্ত আছি। মাঝে মধ্যে আপনাদের আড্ডায় আসার চেষ্টা করবো। সবাই ভালো থাকুন।
মুজিব মেহেদী ভাইকে জোনাকরোডের সাক্ষাতকারটির জন্য লাল সালাম !

Gomes, Subrata Augustine

unread,
Jul 13, 2009, 3:26:45 PM7/13/09
to kobit...@googlegroups.com
প্রিয় মুজিব,
 
আপনাকে সম্বোধন ক'রে লিখছি, আপনি এই গ্রুপ মডারেট করেন ব'লে।
 
আপনার কাছে একটা স্পষ্ট কথা জানতে চাই আমি, এবং চাই এই গ্রুপে আর যাঁরা আছেন তাঁদের সবারই কাছে। এ আমার শেষ প্রশ্ন এই গ্রুপে, হয়তো...
 
আপনি, আপনারা, মনে করেন সত্যিই যে আমি ছন্দ জানি না? অন্ততঃ এই কুমার বিপ্লব (কে তিনি!) বা তপন বাগচীর চেয়ে ঢের কম জানি?
 
বাই দ্য ওয়ে, গ্রুপের মডারেটর হিসাবে আপনি নিশ্চয়ই জানবেন এই "কুমার বিপ্লব" কে। আমি তাঁর নামের সঙ্গে পরিচিত নই, এই গ্রুপে আর-কেউ কি আছেন যিনি এঁকে চেনেন? তাঁর কবিতা বা অন্যান্য লেখা পড়বার কোনো উপায় জানা আছে কারো? আমি তাঁর ক্লেইমের তুলনায় তাঁর আউটপুটের পরিচয় পেতে আগ্রহী।
 
আপনি যদি জানাতে অস্বীকার করেন ইনি কে, তাহলে বাধ্য হ'য়ে আমাকে ধ'রে নিতে হবে এটি আপনারই ছদ্মনাম, এবং সেক্ষেত্রে আমি এই গ্রুপ থেকে আমার নাম প্রত্যাহার করব।
 
 
 
 
প্রিয় তপন,
 
স্কুলমাস্টার আক্ষরিক অর্থে ব্যবহৃত হয় নি, এবং এটা যে আপনাকে আবার আমার ব'লে দিতে হচ্ছে সেই দুঃখ কোথায় রাখি বলেন তো? এই স্কুলমাস্টার (ইংরেজিতে পেডান্ট) একটা বিশেষ প্রবণতাযুক্ত মানুষদের বলা হয়... ফারসিতে হরেদরে সমার্থক একটা শব্দ আছে "নুক্তাচি", মানে, ভাষা ঠিকমতো জানে না অথচ জের-জবর-নুক্তা নিয়ে বাগাড়ম্বর ক'রে বেড়ায়...
 
নিজেকে আব্দল করিম মনে করতে দোষ কি, তপন? আমি যখন যাঁর গান শুনি আমি তখন সেই গায়ক হ'য়ে যাই... তবে তাঁর উল্লেখ এই রচনায় ছিল নিজেকে তাঁর সমতুলনীয় মনে করাবার জন্য নয়, এটাও আবার আপনাকে ব'লে দিতে হচ্ছে আমার! এখন থেকে কবিতা বা যে কোনো লেখা লিখে তাঁর বিস্তারিত টীকা, ভাষ্যও লিখতে হবে দেখা যাচ্ছে: অমুক লাইনের শেষে পূর্ণমিল ব্যবহার করা হয় নাই, উহা লেখকের ইচ্ছাকৃত, উক্ত স্থানে অপূর্ণ মিলের ব্যবহারের দ্বারা লেখক অমুক উদ্দেশ্য সাধন করিতে চাহিয়াছিলেন, তাহা নাজায়েজ মনে হইলে লেখকের ইমেল অ্যাড্রেস-এ পত্র দিন... ইত্যাদি।
 
মাটি পত্রিকা তথা মারুফ রায়হান, কুমার বিপ্লবের লেখা কেটেছেঁটে কেন ছেপেছেন তা তো আমি বলতে পারব না। তবে আপনার ইঙ্গিতটা যদি এমন হয় যে আমার প্ররোচনায় সেটা করা হয়েছে... আমি সেক্ষেত্রে মারুফকে মুখ খোলবার অনুরোধ জানাব, এবং এক পেট হেসে নেব নিজে...
 
অপিচ, আমি কোনো পাঠশালা খুলে বসি নি। আমি শিক্ষক শ্রেণিতে কখনোই ছিলাম না, আজীবন ছাত্র (শিক্ষকদের ভয় সেজন্যেই পাই এখনও)। আপনি বরং কুমার বিপ্লবের ছাত্র হ'তে পারেন চাইলে।
 
 
 
 
কুমার বিপ্লব মহাশয়,
 
পুথিগত বিদ্যা আর প্রকৃত বিদ্যার তফাত কী? অধিকাংশ বিদ্যাই প্রাথমিকভাবে পুথিগত বটে, কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে তা পুথিগতই থেকে যায় আজীবন, যদি না পুথি থেকে আহরিত বিদ্যা তার জীবনাচরণের অংশ হ'য়ে ওঠে। (সত্যিসত্যি বা মনে মনে) আঙুল গুনে ছন্দ মেলানো লাগে যাদের এখনও, ছন্দ যারা চোখে দ্যাখে, কানে শোনে না, তাদের ছন্দোজ্ঞান পুথিগত। আমার আঙুল গুনতে হয় না আর। কবিতার চরণগুলি ছন্দোবদ্ধ অবস্থাতেই আমার মনে আসে। আমিই বরং কখনও ইচ্ছা ক'রে মনে-আসা "সঠিক" ছন্দ ভেঙে একটু "বেঠিকের মতো" (প্রকৃত বেঠিক নয়) ক'রে দিই, কোনো না কোনো স্পেশাল ই্যফেক্ট তৈরি করবার জন্য।... আর, আর-কোনো ই্যফেক্ট তৈরি করতে যদি না-ও পেরে থাকি, আপনার মতো নুক্তাচিদের পিত্তি তো জ্বালানো গেছে, এ-ই বা কম কী।
 
আমি কবিতা লিখছি বহুদিন... আর আমার শত-শত কবিতার মধ্যে প্রকৃত গদ্যে লেখা কবিতা হাতে গোনা যাবে। এবং মিলবিন্যাসের (রাইমস্কিম) প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতা আছে; অমিলের চেয়ে সমিল কবিতা আমার অনেক বেশি। বাংলা কবিতায় প্রচলিত এমন কোনো ছন্দ নাই যাতে আমি চোখ বন্ধ ক'রে কবিতা লিখতে পারি না, এবং লিখি নি... তদুপরি নানা সংস্কৃত ছন্দ এবং কিছু বৈদেশিক ছন্দেরও, নিজের মতো ক'রে প্রয়োগ করেছি আমি কবিতায়। আপনার ছন্দোজ্ঞান, আপনার কথানুযায়ী হ'লে, এবং আবারও, আপনারই কথানুযায়ী, আপনি আমার "সব" কবিতা প'ড়ে থাকলে (সেটা কেমন করে সম্ভব তা অবশ্য জানি না), সেসব লক্ষ ক'রে থাকতে পারতেন।
 
এবং... সাতকাণ্ড রামায়ণ প'ড়ে সীতা কার বাপ জানতে চাইতেন না।
 
আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। মনে করি না যে কোনো একটা বিষয়ে কথা বলবার অধিকার কোনো কোনো ব্যক্তিরই আছে শুধু। কিন্তু তবু, আমি আবার চক্ষুলজ্জায়ও বিশ্বাস করি। পাটীগণিতের জ্ঞান নিয়ে আইনস্টাইনের "ভুল" ধরতে আমি অন্ততঃ যেতাম না। এখানে অবশ্য দয়া ক'রে ভাববেন না যে নিজেকে কাব্যজগতের আইনস্টাইন ঠাউরাচ্ছি আমি। তা না... তবে মনে হয় পাটীগণিত শেষ ক'রে বীজগণিতে হাত দিয়েছি এখন, আর আসা করছি যে আপনার পাটীগণিত দিয়ে আমার বীজগণিতের ব্যাখ্যা করবার পণ্ডশ্রমটুকু করবেন না...
 
আর, কথায় কথায় শঙ্খ ঘোষের রেফারেন্স কেন দেন, মহাশয়? তাঁর কি উচিত নয় বরং আপনার রেফারেন্স দেওয়া? আর আমার মতো অজ্ঞজনের কাছে কোনো রেফারেন্সের তো মূল্য কিছু নাই...
 
ছন্দে আমার কৃতি প্রাথমিক নাকি মাধ্যমিক স্তরের তা আপনি বলবার যোগ্যতা রাখেন কীনা তা কী দিয়ে যাচাই করা যায় বলুন তো? আমার যা আছে তা তো, যাকে বলে, ডকুমেন্টেড... আপনার ডকুমেন্টগুলির হদিস আমাকে দিন, আমি সাগ্রহে পড়ব, এবং প'ড়ে আপনাকে ওস্তাদ মনে হ'লে আপনার সাকরেদ হবার আর্জি করব।
 
ধন্যবাদ।

Gomes, Subrata Augustine

unread,
Jul 13, 2009, 9:59:29 PM7/13/09
to kobit...@googlegroups.com

তপন, কুমার বিপ্লব, মুজিব,

 

আমার অন্যায়, অভদ্র আচরণের জন্য আমি দুঃখিত। আপনারা আমাকে ক্ষমা করবেন। এর আগে স্নেহাস্পদ গালিবের সঙ্গেও আমার ব্যবহার অসৌজন্যমূলক হয়েছিল, তাঁরও কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

 

আপনারা ভালো থাকুন।

 

সুব্রত

মুজিব মেহদী

unread,
Jul 13, 2009, 10:28:14 PM7/13/09
to কবিতাকথা
প্রিয় সুব্রতদা,
না, কুমার বিপ্লব কোনো নিক নয়। তিনি জ্বলজ্যান্ত একজন কবিতাকর্মী,
ঢাকাতেই বিচরণ করেন। প্রধানত বিভিন্ন দৈনিক কাগজে লিখলেও স্বভাবে
নিভৃতচারী। বাংলা একাডেমীর তরুণ লেখক প্রকল্পের দ্বিতীয় ব্যাচে ছিলেন।
একই ব্যাচে ছিলেন বায়তুল্লাহ কাদেরী, তপন বাগচী, মতিন রায়হান, আশিক আকবর,
শান্তা মারিয়া, আয়শা ঝর্না, নাজিব তারেক, তাপস সরকার, রণক মুহম্মদ রফিক
প্রমুখ কবি। এঁদের প্রত্যেকেরই তাঁকে চিনবার কথা। তরুণ লেখক প্রকল্প থেকে
বেরিয়েছিল ‌‌তাঁর 'জন্মের পেছনে যাবো'। তারপরেও আরেকটি কাব্যগ্রন্থ
বেরিয়েছে, নাম জানা নেই।

বরিশালে জন্মগ্রহণকারী কুমার বিপ্লব রাতবিরেতে শাহবাগের আড্ডায় আসেন বলে
শুনেছি, তবে আজিজে নয়, পিজিসংলগ্ন এলাকায়। আমার সঙ্গে কখনো তাঁর
ব্যক্তিগত পরিচয় গড়ে ওঠে নি। সম্প্রতি ম্যাজিক লণ্ঠন সাহিত্য আড্ডায়
যুক্ত হয়েছেন বলেও খবর পেয়েছি।


এবার আমার অনুভূতিটা আপনার সঙ্গে শেয়ার করি। আপনি আমার কাছে যথেষ্টই
শ্রদ্ধেয়, কবি হিসেবে তো বটেই আলংকারিক হিসেবেও। আপনার জানাশোনা
বিশেষভাবে উচ্চাঙ্গের, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তুলনারহিত। ছান্দসিক হিসেবে
আপনি আমার প্রণম্যও। কিন্তু তাই বলে আপনার ব্যবহৃত ছন্দ নিয়ে কেউ কথা
বলতে পারবে না ব্যাপারটাকে আপনি সেভাবে দেখছেন কেন সুব্রতদা? এটা তো বরং
ভালো লক্ষণ যে, এ যুগের লোকজন সবকিছুই ঠিক বাজিয়ে নিতে চান।

তপন বাগচী বা কুমার বিপ্লব আপনার চেয়ে বেশি ছন্দ জানেন কি না আমার পক্ষে
এরকম রায় দেয়া অসম্ভব। তবে আপনার মতো একজন সর্বজ্ঞ ছান্দসিকের সঙ্গে
যাঁরা লড়তে আসতে সাহস পান, তাঁদের জানাশোনা ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা রাখা
বোধকরি ঠিক কাজের হয় না।

সবিশেষ ছন্দ নিয়ে আপনাদের পারস্পরিক তর্ক-বিতর্কের ভিতর দিয়ে আমার মতো
ছন্দ না-জানা বা কম জানা কবিতাকর্মীগণ খুবই উপকৃত হয়েছেন ও হচ্ছেন বলে
ধারণা করি। অনুগ্রহ করে আপনি যদি বিষয়টিকে স্বাভাবিক আলোচনা-পর্যালোচনা
হিসেবেই নেন তো কৃতজ্ঞ হই।

বিনীত


মুজিব মেহদী

সঞ্চালক, কবিতাকথা

kumar biplab

unread,
Jul 13, 2009, 11:22:42 PM7/13/09
to kobit...@googlegroups.com

সুব্রত সাহেব,

আমি তো আপনার মত কিছু মিডিয়ার কল্যাণে ‘মীথ’ হয়ে যাইনি যে আমাকে আপনার চিনতে হবে। কিন্তু দুই দশকে বড় পত্রিকা, ছোট কাগজ, ইত্যাদিতে আমারও বেশকিছু লেখা তো প্রকাশিত হয়েছে। একাধিক প্রকাশিত গ্রন্থও রয়েছে। কিছু সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত আছি। জনাব মুজিব মেহদী তাঁর ছদ্মনাম হিসেবে আমার নাম ব্যবহার করতে যাবেন কোন্ দুঃখে?

আপনার কাছে অপরিচিত, তবুও ছন্দ বিষয়ে আমার ‘মাস্টারি’ দেখে আমাকে স্কুল মাস্টার বলে সম্বোধন করেছেন, এতেই আমার সুখ। এখন মডারেটার সাহেবকেই ‘আমি’ মনে করে হুমকি দিচ্ছেন দল ছেড়ে চলে যাবেন। আপনার জন্য আমরাও একটা ‘পদবী’ খুঁজে পেয়েছি। সংস্কৃতের প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ‘টোল’ বলা হয় এ-কথা আপনার জানা থাকার কথা। তোটক ছন্দে ১০০ লাইনের কবিতা লেখার হোম টাস্ক দিয়ে আপনি এই ফোরামের অনেকের কাছে ‘টোল পণ্ডিত’ খেতাব পেয়েছেন।

আপনি লিখেছেন “আমি কবিতা লিখছি বহুদিন...আর আমার শত শত কবিতার মধ্যে প্রকৃত গদ্যে লেখা কবিতা হাতে গোনা যাবে এবং মিল বিন্যাসের (রাইমস্কিম) প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতা আছে...অমিলের চেয়ে সমিল কবিতা আমার অনেক বেশি।”

সুব্রত সাহেব, আমি আপনার নামের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলাম আধুনিক কবিতায় ছন্দ ও মিলের এমন প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে আপনি কোথাও কিছু লিখেছিলেন বলে। ভেবেছিলাম সবকালের প্রকৃত বড় কবিদের মত আপনার এই বোধটি অন্তত ভিতরে-ভিতরে জন্ম নিয়েছে। আপনি যা বিশ্বাস করেন সে-বিষয়ে প্রায়োগিক কৌশল আপনার কতটা তা দেখার জন্যই আপনার কবিতা পড়েছি এবং তপন বাগচীর মতই হতভম্ব হয়ে দেখেছি আপনার নিজের রচনায় এই বিশ্বাসের প্রতিফলন নেই। তপন বাগচী তো কেবল আপনার মিল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মিল মানেই তো আর ছন্দ নয়! আপনার পর্ববিভক্তি এবং পঙক্তিবিন্যাস স্ক্যান করে এই অধম ’স্কুল মাস্টার’ দেখাতে পারবে আপনি কবিতায় ছন্দের গুরুত্ব বিষয়ে জানেন, ভালোভাবে ছন্দ জানেন না অথচ মাস্টারদেরকেও হোম টাস্ক দেন!! বাংলা ছন্দই যিনি ভালো করে জানেন না তার ‘টুল পণ্ডিতি’ করাটা কি ঠিক হলো? আমাদের পাটিগণিত দিয়ে আপনার বীজগণিত বোঝা যাবে না এ-কথা যখন বললেন তখন দল ছেড়ে পালাবেন না সাহেব, বীজগণিতের পর আপনাকে ছন্দের ক্যালকুলাস ও ট্রিগোনোমেট্রি শেখাবার শখও এই অধম স্কুল মাস্টারের মনে জাগ্রত করেছেন আপনি আপনার সর্বশেষ প্রতিক্রিয়াটি লিখে।          
 
আপনার মনোভাব ও ভাষা ব্যবহার দেখে মনে হয় আপনি নিজেকে কেবল আইনস্টাইন নয়, আরো বড় কিছু ভেবে বসে আছেন এবং মূল সমস্যা এখানেই । জীবনানন্দ দাশের একটি পঙক্তি “যারা অন্ধ, সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা” তীরের মত ছুঁড়েছিলেন আমাদের প্রতি। আমার ইচ্ছে হলো একটু বুমেরাং-বুমেরাং খেলি। রেডি!!!!!!!

কুমার বিপ্লব

ঢাকা    

Tapan Bagchi

unread,
Jul 13, 2009, 11:28:21 PM7/13/09
to kobit...@googlegroups.com
সুব্রতদা, আপনি ক্ষমা চাচ্ছেন কেন? হায়! হায়!
আপনার স্কুলের ছাত্র হিসেবে আমরাই তো ক্ষমা চাইব।  মাস্টাররা ক্ষমা  চেয়ে স্কুল ছেড়ে যেতে চাইলে আমরা ছাত্ররা শিখব কীভাবে?
প্লিজ, গ্রুপ ছাড়বেন না। আপনার তো স্কুল জীবন শেষ হয়েছে কতকাল আগে। আমাদের তো এখনো শেষ হয়নি। বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র!
ভালই তো শিখছিলাম। আমাদের বঞ্চিত করবেন না, দাদা।
প্রণত
তপন বাগচী

Tapan Bagchi

unread,
Jul 14, 2009, 3:23:30 AM7/14/09
to kobit...@googlegroups.com
সুব্রতদার প্রতিক্রিয়ায় মুজিব মেহদী এবং কুমার বিপ্লব মহাশয় জবাব দিয়েছেন। আমার জবাবটাও দেয়া দরকার।
আমাকে বলেছেন,
স্কুলমাস্টার আক্ষরিক অর্থে ব্যবহৃত হয় নি, এবং এটা যে আপনাকে আবার আমার ব'লে দিতে হচ্ছে সেই দুঃখ কোথায় রাখি বলেন তো?'
 
বলে দিতে হচ্ছে এই জন্যে যে, আপনার মনের কথা আর লেখার কথায় ফারাক থেকে যাচ্ছে। আপনি বলেছেন আক্ষরিক অর্থে ব্যবহার করেননি। আর আগের চিঠির প্রায় শেষদিকে লিখেছেন ‘স্কুলমাস্টারদরেকে খাতরি করতে চাই না আর... আমার স্কুলজীবন বহুকাল হ'ল শষে হয়ছে।'
স্কুলজীবন শেষ করার মধ্য দিয়ে কি স্কুলমাস্টারের একটা আক্ষরিক অর্থ দাঁড়িয়ে যায় না?
না দাদা, নিজেকে আবদুল করিম মনে করায় কোনো দোষ নেই। কিন্তু নিজেকে আবদুল করিম বলে  ঘোষণা করে তাদের দোষ বা ইচ্ছের ত্র“টির কথা উল্লেখ করার মাধ্যমে নিজের ত্র“টিকে জায়েজ করায় আমার আপত্তি। ‘আপনাকে বড় বলে, বড় সেই নয়’ প্রবাদটি কেন যে মনে পড়ে গেল, জানি না!
সুব্রতদা লিখেছেন,
এখন থেকে কবিতা বা যে কোনো লেখা লিখে তাঁর বিস্তারিত টীকা, ভাষ্যও লিখতে হবে দেখা যাচ্ছে: অমুক লাইনের শেষে পূর্ণমিল ব্যবহার করা হয় নাই, উহা লেখকের ইচ্ছাকৃত, উক্ত স্থানে অপূর্ণ মিলের ব্যবহারের দ্বারা লেখক অমুক উদ্দেশ্য সাধন করিতে চাহিয়াছিলেন, তাহা নাজায়েজ মনে হইলে লেখকের ইমেল অ্যাড্রেস-এ পত্র দিন... ইত্যাদি।
আপনার এই উপলব্ধির জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। রবীন্দ্রনাথ-জীবনানন্দ-রাহমান-মাহমুদকে কিন্তু ওই কাজটি করতে হয় না। কারণ তাঁরা ওই নামের কবি শুধু নয়, ওই নামের মাপেরও কবি। কিন্তু আপনার প্রতি (এবং কবিত্বের প্রতিও) শ্রদ্ধা রেখেই বলি, আপনি কবি সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের মতো কিন্তু নিজেকে ভেবে বসেন আবদুল করিম কিবা আইনস্টাইনের মতো। সমস্যাটা এখানেই। আপনি যদি নিজেকে কবি সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ ভাবেন, তাহলে নিজের কবিতার টীকা-ভাষ্য লিখতে হবে না। অথবা, যদি নিজেকে আবদুল করিম কিবা আইনস্টাইনের মতো তৈরি করেন, তাহলেও কবিতার টীকা-ভাষ্য লিখতে হবে না। ভাববেন না, জ্ঞান দিচ্ছি। তহালে বড় বিব্রত হবো। তবে, অভিমান করে গ্র“প ছেড়ে চলে যাব না। কারণ এত সাধের স্কুল আমি ছেড়ে যেতে চাই না।
মারুফ রায়হান আপনার প্ররোচনায় কুমার বিপ্লবের বক্তব্য কাটছাঁট করেছে, তেমন ধারণা আমি করি নি। সাহিত্যপত্রিকা-সম্পাদনা মারুফ রায়হানের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আমি জানি। তিনি যে অন্যের মুখে ঝাল খাবেন না, সেটা আমি বুঝি। মারুফ রায়হানকে মুখ খুলতে অনুরোধ করছেন কেন? মারুফ ভাই তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর কাছে যেটুকু প্রকাশযোগ্য মনে হয়েছে, সেটুকুই প্রকাশ করেছেন। আমি বলব, সম্পাদক হিসেবে তিনি তাঁর অধিকারের বাইরে যান নি। বাংলামাটিতে কুমার বিপ্লবের কথা বলার পথ রুদ্ধ হয়েছে, তাই হয়তো তিনি সুযোগ পেয়েছেন, সেই বক্তব্য এই উন্মুক্ত ফোরামে তুলে ধরার। সেটিও তার অধিকারের অঙ্গ। এখানে মারুফ ভাইকে তো আমি কোনো দোষ দিইনি। আমি তাঁকে উসকে দিচ্ছেন দেখে আমি এক পেট হেসে নিচ্ছি। এবার, আরেকটি প্রবাদ খুব মনে পড়ছে এবার, ‘ঠাকুরঘরে কে রে?... আমি কলা খাই না!’
আপনার শেষের পরামর্শটি খুব সুন্দর, ‘আপনি বরং কুমার বিপ্লবের ছাত্র হতে পারেন চাইলে।’ আমিও ভাবছি, তাঁর ছাত্র হবো। তাঁর লেখা পড়ে মনে হলো, তাঁর কাছ থেকে আমার অনেক কিছু শেখার আছে।
আপনি মুজিবের কাছে কুমার বিপ্লবের ঠিকুজি জানতে চেয়েছেন। আমিও কিছু চিনি কুমার বিপ্লবকে। ১৯৯৬ সালে থেকে। কবিতার মাধ্যমেই পরিচয়। তখন আমার একটা কবিতার বই বেরিয়ে গেছে- ‘কেতকীর প্রতি পক্ষপাত’। কেবল এমএ শেষ করেছি। কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার আহ্বানে বাংলা একাডেমী তরুণ লেখক প্রকল্পে ভর্তি হয়েছিলাম। ওখান থেকে বেরিয়েছে আমার দ্বিতীয় কাব্য ‘শ্মশানেই শুনি শঙ্খধ্বনি’। ওখানে পরিচয় সর্বকবি শান্তা মারিয়া, আয়শা ঝর্না, মতিন রায়হান, বায়তুল্লাহ কাদেরী, আশিক আকবর, কুমার বিপ্লব, মাহমুদ কুদ্দুস, রণক মুহম্মদ রফিক, তাপস সরকার, রোকসানা আফরীন, সেলিনা শিরীন সিকদার প্রমুখের সঙ্গে। বিপ্লব ভাল লিখতেন। তাঁর ‘জন্মের পেছনে যাব’ নব্বই দশকের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ।
আপনি মুজিবকে লিখেছেন, ‘আমি তাঁর ক্লেইমের তুলনায় তাঁর আউটপুটের পরিচয় পেতে আগ্রহী।’ আউটপুট খারাপ হলে কি তাঁর ক্লেইম বাতিল হয়ে যায়? একজন কবি হিসেবে দুর্বল হতে পারেন, কিন্তু পাঠক হিসেবে তো সবল হতে পারেন। কিংবা একজন ভালো সমালোচককে যে কবি (ভালো কিংবা খারাপ) হতে হবে, এমনও তো শর্ত নেই।
যেহেতু দুইজনকে চিনি, তাই আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুজিব মেহেদী ও কুমার বিপ্লব একই ব্যক্তি নয়। তাঁরা চেহারায় আলাদা, শিক্ষায় আলাদা, জন্মস্থানে আলাদা, বাসস্থানে আলাদা, লেখায় আলাদা.. ..। তাই মুজিবের ছদ্মনাম ধরে নিয়ে এবং এই অজুহাতে গ্র“প থেকে নাম প্রত্যাহার করবেন না। বিনীত অনুরোধ আপনাকে।
কুমার বিপ্লবকে যেভাবে আন্ডার-এস্টিমেট করেছেন, ভেবে অবাক হই। যাঁর সম্পর্কে আপনার কিছুই জানা নেই বলে ঘোষণা করেছেন, তাঁকে পাটীগণিতের জ্ঞানের অধিকারী ভাবলেন কী করে? আপনি পাটীগণিত ছেড়ে বীজগণিতে হাত দিন, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। অচেনা একজনকে পাটীগণিতের পর্যায়ে আর নিজেকে বীজগণিতের পর্যায়ে ভাবা এবং তা প্রকাশ করার মধ্যে কি একটু দম্ভ এসে উপস্থিত হয় না?
মুজিবের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, `
আপনি, আপনারা, মনে করেন সত্যিই যে আমি ছন্দ জানি না? অন্ততঃ এই কুমার বিপ্লব (কে তিনি!) বা তপন বাগচীর চেয়ে ঢের কম জানি?'
এর জবাব মুজিবের জানা থাকার কথা নয়। আমার আংশিক জানা আছে বলে মনে করি। ছন্দ সম্পর্কে আপনার জ্ঞান কবি কুমার বিপ্লবের চেয়ে কম না বেশি তা আমি জানি না, কিন্তু আমার চেয়ে আপনি ঢের বেশি জানেন, এই ঘোষণা আমি তারস্বরে প্রকাশ করতে চাই। আর সেই জন্যেই তো আপনার কাছ থেকে আরো শিখতে চাই। আপনি গ্র“প ছেড়ে চলে গেলে, কার কাছে শিখব? ঘটনাচক্রে আপনি তো আমাকে কুমার বিপ্লবের কাছেই ছন্দ শেখাতে পাঠাচ্ছেন বলে মনে হয়।
ভালো থাকুন। ওপরে থাকুন।
তপন বাগচী

মুজিব মেহদী

unread,
Jul 14, 2009, 4:15:20 AM7/14/09
to কবিতাকথা
কথাবার্তা এখন যে জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে আশান্বিত হবার মতো কিছু
দেখছি না। এখন ছন্দ নিয়ে কোনো কথা হচ্ছে না প্রায়, কথা হচ্ছে ছান্দসিকদের
নিয়ে। কিন্তু ছান্দসিকদের নিয়ে বেশিক্ষণ আগ্রহ ধরে রাখা মুশকিলের। তাছাড়া
এতে কথাবার্তা ব্যক্তিগত আক্রমণের দিকে ধাবিত হবার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।
কাজেই এ লক্ষ্যে সুদূর আলাপচারিতায় আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশেষ আগ্রহ পাচ্ছি
না। আমার আগ্রহ তোটক ছন্দ বিষয়ে। কেউ কি দয়া করে এ নিয়ে উদাহরণসহ কথা
পাড়বেন? যাঁরা এ বিতর্কে ছিলেন, তাঁরা শুরু করলেই ভালো, তবে তাঁদের বাইরে
অন্য কেউ শুরু করলে আরো বেশি ভালো।

সোহেল হাসান গালিবের কি অবকাশ হবে তোটক নিয়ে কথা বলবার? খুব ব্যস্ত না-
থাকলে অনুগ্রহ করে আপনিই শুরু করতে পারেন।

Tapan Bagchi

unread,
Jul 14, 2009, 8:03:27 AM7/14/09
to kobit...@googlegroups.com
মুজিব মেহদী, 'তোটক ছন্দ' নিয়ে আলোচনার ডাক দিয়ে প্রকারান্তরে আলোচনার মো ঘুরিয় দেয়ার উদ্রোগকে স্বাগত জানাই। আমি সুব্রতদার কাছ থেকেই এ বিষয়ে জানতে আগ্রহী। কবিতায় প্রয়োগ নিয়ে আমার যতই সংশয় থাক, তাঁর ছন্দ্র শেখানো নিয়ে আমার অন্তত কোনো আপত্তি নেই।
আর হ্যাঁ, সংস্কৃত ছন্দভান্ডার অত্যন্ত বিশাল। মন্দাক্রান্তা, রুচিরা, তোটক, মালিনী, অনুষ্টুপ, -এরকম কয়েকটির নাম শুধু আলোচিত হয়। আমি একবার সংস্তৃত ছন্দ পড়া শুরু করেছিলাম। বেশ কিছু সূত্র আয়ত্তও করেছিলাম। একপর্যায়ে দেখলাম, সংস্কৃত ভাষার ছন্দই হোক আর ইংরেজিভাষার ছন্দই হোক, আমার বাংলাভাষার তিনপ্রকারের বাইরে তার অধিষ্ঠান। অর্থাৎ বোঝতে চাইছি যে, কবি যে ছন্দ ভেবেই লিখুক, যদি শুদ্ধ হয়, তবে বাংলা অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও স্বরবৃত্তের জালে তাকে বন্দি করা যাবে।
তোটক নিয়ে জানার অপেক্ষায় রইলাম।

omar kaiser

unread,
Jul 14, 2009, 12:00:23 PM7/14/09
to kobit...@googlegroups.com

asun amra sobai kut torko rekhe diye kobita lekhay monojog di. pls stop it at now.
--- On Mon, 7/13/09, kumar biplab <kumar.b...@gmail.com> wrote:

From: kumar biplab <kumar.b...@gmail.com>
Subject: [কবিতাকথা:840] Re: তপন বাগচীর সমালোচনা, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের প্রতিক্রিয়া ও মারুফ রায়হানের সম্পাদনা প্রসঙ্গে
To: kobit...@googlegroups.com
Date: Monday, July 13, 2009, 2:44 PM

সুব্রত গোমেজের জবাবের জবাব
কুমার বিপ্লব

niharika

unread,
Jul 14, 2009, 12:43:05 PM7/14/09
to কবিতাকথা
এই গ্রুপ তো আলোচনার জন্য ভাল, সম্ভাবনাময়। নাম কবিতাকথা - কিন্তু
'স্কুলমাস্টার' এর আক্ষরিক অর্থ ধরে নিয়ে অর্থহীন আলোচনার পিছনে সভ্যদের
সময় ব্যয় করার প্রবণতা দেখে সন্দেহ হতে থাকে, কসাইপ্রবণ মন নিয়ে কবিতার
রক্তমাংস নাড়াচাড়া করা ছাড়া এখানে আর কিছু ঘটা সম্ভব কী না । সুব্রতদা'র
আক্ষেপ তাই সঙ্গত, বিশেষত তপনদা'কে যেখানে কবি ও কবিতাসংলগ্ন মানুষ বলেই
জানি।

তোটক ছন্দ নিয়ে আলোচনার আহ্বান দেখে সেই সন্দেহ দূর হতে শুরু করেছে। দেখা
যাক কত দূর হয়!

মুজিব মেহদী

unread,
Jul 14, 2009, 1:37:57 PM7/14/09
to কবিতাকথা
শ্রদ্ধেয় কবি ওমর কায়সার,

আপনি এই গ্রুপে আজই প্রথম কথা বলছেন, স্বাগতম আপনাকে। কিন্তু প্রথমবারই
আপনি যে স্বরে কথা বললেন, তাতে আমার মোটামুটি ভয় পেয়ে যাবার মতো অবস্থা
হয়েছে। কেন রে ভাই! কবিতা লিখলে কবিতা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে কথা বলা
যাবে না কেন? তর্ক মাঝেমধ্যে কূটতর্কের দিকে গিয়ে ফের তর্কে ফিরে আসতেও
তো পারে। সেই লক্ষ্যে কিছু ইনপুটও তো দিতে পারেন আপনি, নাকি!

আর কায়সার ভাই, দয়া করে বাংলা বর্ণমালা ব্যবহার করতে পারেন কি?

কবি শাহীন মোমতাজ,

আপনাকেও স্বাগতম। কিন্তু 'তোটক'বিদ্যার ঝাঁপিটা কেউই তো খুলছেন না দেখছি।
সেক্ষেত্রে আবারও হয়ত 'কসাইপ্রবণ মন নিয়ে কবিতার রক্তমাংস নাড়াচাড়া করা'ই
সার হবে আমাদের।

আপনারও সক্রিয়তা আশা করি।

Reply all
Reply to author
Forward
0 new messages