সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের ‘দিগম্বর চম্বূ’: কিঞ্চিৎ আশাহত পাঠকের প্রতিক্রিয়া

70 views
Skip to first unread message

তপন বাগচী

unread,
May 13, 2009, 12:23:37 AM5/13/09
to কবিতাকথা
সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের ‘দিগম্বর চম্বূ’: কিঞ্চিৎ আশাহত পাঠকের
প্রতিক্রিয়া

আআশির দশকের শেষের দিকে, আমার নিবিড় কবিতাপাঠের প্রথম দিকে, অসীমকুমার
দাস, বিষ্ণু বিশ্বাস ও সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের নাম বেশ শুনেছি। ‘ঝঞ্ঝা ও
পুনরুত্থান’, ‘ভোরের মন্দির’ ও ‘তনুমধ্যা’ প্রকাশের আগেই এঁরা কবিমহলে
আলোচিত হয়ে উঠেছেন। নিজের কথাই যদি বলি, এঁদের কবিতা পাঠের আগেই এঁদের
বন্ধুভক্তকুলের মুখে শংসা ও স্তুতি শুনে মনের মধ্যে এক-একটা মূর্তি গড়ে
নিয়েছিলাম। কেবল আমার কাছেই নয়, আশির দশকের কবিতার সড়কদ্বীপে এঁরা আলোচিত
মূর্তি হয়েই দাঁড়িয়েছিলেন। নব্বই পেরোতেই প্রথম দুজন কবিতার ভুবন থেকে
হারিয়ে যেতে থাকলেও, তৃতীয়জন এখনও সক্রিয়। এঁদের কারো সঙ্গেই আমার
ব্যক্তি-পরিচয় নেই (আমার এমনই দুর্ভাগ্য!) তবে দৈনিক ‘বাংলাবাজার
পত্রিকা’য় সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের ‘তনুমধ্যা’ নিয়ে ছোট্ট একটা আলোচনা
লিখেছিলাম কবি ব্রাত্য রাইসু’র অনুরোধে। সেই আলোচনা প্রকাশ-সূত্রেও
সুব্রত’র সঙ্গে দেখা হয়নি। আমার অপরিণত বোধে সুব্রতর সেই সময়ের কবিতা
যতটুকু আলোড়ন তুলেছিল, তারই সামান্য প্রকাশ ছিল ওই অল্পদীর্ঘ নিবন্ধ।
ভেবেছিলাম বড় হলে, বোধ পাকা হলে লিখবো বড় করে। কিন্তু দেখতে দেখতে সুব্রত
আমাদের চোখের সামনে দিয়ে কেমন যেন মিথ হয়ে উঠলেন! তবে আশার কথা এই যে,
অনেকই যেমন না লিখেও বড় কবি, সুব্রত তেমন নন। তিনি ক্রমাগত লিখেই বড় কবি
হিসেবে নিজের অবস্থান দৃঢ় করেছেন। সুব্রত হয়ে উঠেছেন জীবন্ত মিথ!
ছন্দ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করি বলে নব্বই দশকের কবিবন্ধুরা আমার দিকে
ঠারেঠোরে চায়। ছন্দ নিয়ে কথা বলতে চাই বলে, আমার কবিবন্ধুরা আমাকে কবি
হিসেবে ‘সেকেলে’ মনে করে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়। আবার রাইসু-পরিচালিত
‘কবিসভা’য় সুব্রত’র ছন্দের ক্লাসে অনেকেই ঢুকে পড়ে ছন্দের পাঠ নেন দেখে
ভালো লাগে।
ছন্দ অনেকেই জানেন, মানেন, কিংবা ছন্দ প্রয়োগে ভুল করে ‘ছন্দ ভেঙে
দিয়েছি’ বলে আস্ফালন করেন- এরকম নানান মতের-পথের কবি আছেন এই দেশে।
সুব্রত ছন্দ জানেন, মানেন এবং ছন্দ জানাকে কবিত্বের অন্যতম শর্ত হিসেবেও
হয়তো গণ্য করেন বলে আমার ধারণা। কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্তও একদা বলেছিলেন,
‘ছন্দঃস্বাচ্ছন্দ্যই কবিপ্রতিভার একমাত্র অভিজ্ঞানপত্র’। কিছুদিন আগে
নব্বই দশকের কবিতা নিয়ে ‘স্রোতচিহ্ন’ পত্রিকায় সমালোচক সুব্রত অগাস্টিন
গোমেজ এরকম ধারণার পক্ষাবলম্বন করেছেন। ওই দশকের কবিতা আলোচনায় তিনি ছন্দ-
প্রয়োগের সফলতাকে বিবেচনায় নিয়েছেন। আমিও দীর্ঘদিন ধরে এরকম বলে আসছি যে,
ছন্দ না জেনেও ভালো কবিতা লেখা যায়। কিন্তু ভালো কবিকে ছন্দ জানতে হয়।
ছন্দ জানলেই কেবল ছন্দকে অস্বীকার কিংবা অমান্য করার ক্ষমতা ও অধিকার
জন্মায়। ছন্দের পক্ষে সুব্রত’র ওই অবস্থানকে আমি সমর্থন ও সম্মান করি।
ছন্দ-সম্পর্কিত তাঁর বিভিন্ন আলোচনা পড়ে আমার এই প্রতীতি জন্মেছে যে,
সুব্রত ছন্দ ভালো জানেন এবং কবিতায় তাঁর সফল প্রয়োগের পক্ষপাতী। পাঠক-আমি
কেন, তাঁর ভক্তবন্ধুকুলেরও বোধ করি এরকম ধারণা। আমি তাই প্রায় স্থির
করেছি যে, ছন্দঃস্বাচ্ছন্দ্যের মাপকাঠি দিয়েই সুব্রত’র কবিতার বিচার করা
যেতে পারে। একুশে পাবলিকেশন্স থেকে সংগ্রহ করেছি তাঁর ‘দিগম্বর চম্পূ’
কাব্য। এই গ্রন্থ পড়তে পড়তে আমি কবি-ছান্দসিক সুব্রত’র ‘খোলা কবিতা’গুলোর
গায়ে মাঝেমাঝে হোঁচট খেয়েছি।
আমরা দেখেছি যে, কবি সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ ছন্দ জানেন, মানেন, প্রয়োগ
করেন, বিচার করেন, বিশ্লেষণ করেন। তাই ছন্দকে অস্বীকার কিংবা নিরীক্ষা
করার শক্তিও তিনি ধারণ করেন। ব্যাকরণদ্রোহিতারও ব্যাকরণ তৈরি হয় বলে আমরা
জানি। সেই রকমর ধারণা নিয়েই আমি সুব্রতর কবিতা পাঠ করতে চাই। এবং চাই
বলেই এরকম আলোচনার প্রবৃত্তি জাগে।
ছন্দ এবং মিল দুটি ভিন্ন বিষয়। মিল মানে ছন্দ নয়। ছন্দ মানেও মিলের
দাসত্ব নয়। তবু ছন্দ আলোচনায় মিলের প্রসঙ্গ টেনে আনছি। আগে সে ব্যাপারেই
কিছু বলি। সুব্রত’র ‘মাছ’ কবিতায় (পৃ. ১৪) ‘ভোগেন’-এর সঙ্গে ‘শোবেন’-এর
মিল কতটা পূর্ণ এবং শ্রতিগ্রাহ্য সেই বিচারে না গেলেও ‘কুটিতে/বঁটিতে’,
‘তুমি/আমি’ প্রয়োগ শুদ্ধ কিংবা পূর্ণ ভাবার সুযোগ কোথায়! মাছের হাঁড়িতে
কুটি-কুটি চাক-করা নিজেকে দেখার মধ্য দিয়ে কৃষ্ণের বাঁশির সুরদাসীর যে
প্রতীকী কল্পনার রূপ কবি এঁকেছেন, তাকে নানান তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করা
গেলেও প্রাণের কানাইকে জানতে দুর্বল অন্ত্যমিলের ব্যবহার করে মধ্যযুগের
গীতিকবিতার আবহ সৃষ্টি করা কতটা সদর্থক, তা নিয়ে আমার মনে প্রশ্ন থেকে
যায়। তবে ‘বাঁশি’/সুর‘দাসীর’, ‘তাহা’/‘কাহার’ মিল শ্র“তিকে তেমন
বাধাগ্রস্ত করে না। এগুলো স্বীকৃতি পেয়েছে। আমার এক বন্ধুকবি শৈলেন্দ্র
হালদারের ছড়ায় এধরনের মিল দেখে বেশ বিস্মিত ও আনন্দিত হয়েছিলাম বছর দশেক
আগে। ওই ধরনের নিরীক্ষায় আমার সায় রয়েছে। তবে ‘কুটিতে/বঁটিতে’, ‘তুমি/
আমি’, ‘যাঁকে/দিকে’, ‘এক ফাঁকে/কইবে কে’ জাতীয় মিলকে পূর্ণ বলে মেনে নিতে
পারি না।
কবি-ছান্দসিক সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘আমি বসনে ঢেকেছি মুখ দেখিতে তোমায়’
উদ্ধৃতি দিয়ে শুরু হয়েছে সুব্রত’র অসমাপ্ত কবিতা ‘আরশিনগর’। অক্ষরবৃত্ত
ছন্দের ঝোঁক বেশি থাকা এই কবিতা কোনো কোনো পর্বে মাত্রাবৃত্তের দোলা
জাগে। এই ধরনের কবিতাকে ছন্দ-সফল বলার সুযোগ কম। আর নিরীক্ষার কথা বলেও
ওয়াকওভার দিতে মন সায় দেয় না। পাঠকের সঙ্গে আমার ভাবনা মিলিয়ে নেয়ার জন্য
একটু উদ্ধৃতি দিতে চাইÑ
তিরিশটি বছর তবু ছিল সে ভালোই, দুঃখেসুখে
আমি তাকে দেখে গেছি অনুদিন অনুখন নখদর্পণে মরে বেঁচে
পড়ে গেছি প্রতিটি পৃষ্ঠা তার, বারংবার নিরেট বাতিকে:
(পৃ. ৫৮)
গোটা কবিতা তিনবৃত্তের কোনো বৃত্তেই পুরোপুরি ফেলা যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে
না। আমার বোধে কুলোচ্ছে না। তবে নিম্নরেখ শব্দগুলির স্থলে ‘তিরিশ’,
‘দরপন’, ‘পিরিষ্ঠা’ এরকম বানিয়ে নিলে অক্ষরবৃত্তের চালে ফেলা যায়। কিন্তু
ভেঙে পড়া ওই শব্দগুলি অক্ষরবৃত্তের চালকে শিথিল করে ওই পর্বগুলোতে
মাত্রাবৃত্তের প্রবাহ সৃষ্টি করে। সুব্রত কি বিকল্প শব্দ বসাতে পারতেন
না?
‘গান’ নামের চম্পূতে (পৃ. ৯২) মাত্রাবৃত্ত ছন্দের প্রয়োগ করেছেন। যেহেতু
‘গান’, তাই সুরকারের ওপর ভরসা করে ‘ঢংকার/বাংকার’, ‘নিক্তির/রিক্তের’
মিলগুলোর অশুদ্ধতা কি ভুলে যেতে হবে? ব্যকরণ একে অপূর্ণ মিল বলে অভিহিত
করে। কিন্তু অপূর্ণ মানে তো আর পূর্ণ হতে পারে না। তাই পূর্ণতার ঘাটতি এই
মিলগুলোকে বহন করতে হয়। আমরা তো এখানে শ্রোতা নই, পাঠক মাত্র। গানের সুর
তো সুরকার বেঁধে দিয়ে শিল্পীর কণ্ঠে তুলে দেন। তাই মাত্রার সীমাবদ্ধতা
কিংবা মিলের অপূর্ণতা ঢেকে যায় সুরের ওঠানামায়। তাই কবিতার অপূর্ণতার দায়
কবিকেই নিতে হয়।
এবারে বলছি মাত্রাসমতার কথা। ‘বন্দে তনুমধ্যা!’ নামের চম্পূর শেষ চরণের
একমাত্রা আমরা পাঠকেরা কী দিয়ে পূরণ করবো? সংস্কৃত ছন্দে দীর্ঘ উচ্চারণকে
মাত্রাগণনায় গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু বাংলা ছন্দে হ্রস্ব-দীর্ঘ একই
মর্যাদা লাভ করে। সুব্রত’র পক্ষে একমাত্রা যোগ করা কঠিন কোনো কাজ বলে মনে
হচ্ছে না। কিন্তু তার দেখাদেখি আমরাও কেউ যদি এমন ভুল করি, তিনি কি তাঁকে
সমর্থন করবেন?
‘এই অবস্থা’ কবিতায় ধাঁধায় পড়বেন আমার মতো সাধারণ পাঠকেরা। কবিতাটি শুরু
হয়েছে অক্ষরবৃত্তে। কিন্তু ‘এক শতক সাপ-ঘুমের পর’ চরণের চাল কি পুরোপুরি
অক্ষরবৃত্তীয় রীতিকে মান্য করে। ‘এক’ এবং ‘সাপ’ ২ মাত্রাই পায়। ‘এক্শ
+তক’, ‘সাপ্ঘু+মের’ এভাবে উচ্চারণ করলে হয়তো অক্ষরবৃত্ত বিবেচনা করা যায়,
কিন্তু তাতে সাবলীলতা নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এভাবে গুরুচণ্ডালির ধাঁধায়
পড়ে আমরা এই কবিতার অন্তর্নিহিত ছন্দকে ‘সুব্রতবৃত্ত’ নাম দিয়ে উদ্ধার
পেতে পারি।
ছন্দ নিয়ে সুব্রত’র এই খেলা কতটা প্রীতিপূর্ণ, জানি না। তাতে যে মীমাংসা
নেই, এ আমি নিশ্চয় করে বুঝতে পারি। প্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণ কবিতাকে
‘অমীমাংসিত রমণী’ আখ্যা দিয়েছেন। সুব্রত’র কবিতা পড়ে মনে হচ্ছে ছন্দও
বুঝি অমীমাংসিত। কিন্তু ছন্দ যতখানি শিল্পকলা, তার চেয়ে কম নয় বিজ্ঞানের
খেলা। তাই নিজের জানাটাকে ঝালাই করে নিতে চাই।
একথা ঠিক যে, কবিতা বিচারে ছন্দই একমাত্র মাপকাঠি নয়। কিন্তু ছন্দকে যদি
সুব্রত-কথিত ‘কঙ্কালে’র সঙ্গে তুলনা করি, তবে তার আকার-আকৃতি নিয়ে,
সন্দেহ-সংশয় নিয়ে আমরা মেদ-মাংস-আবেগ-অভিব্যক্তির জগতে ঢুকতে চাই। সুব্রত
লিখেছেনÑ
সময়সুবিধা অনুযায়ী
শুয়ে তিনি পড়বেন এক ফাঁকে।
নাকি হয়েছেন শরাশায়ী
এরই মধ্যে- তাইবা কইবে কে! (পৃ. ৫১)
এই চরণগুলোর জন্য আমি আশির নমস্য কবি সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের কাব্যস্থ
হতে যাব কেন? এই চরণগুলো কেবলই কথা। এর থেকে উত্তরণ না ঘটাতে পারলে কবিতা
হিসেবে মেনে নিতে কষ্ট হয়! কিংবা ‘তুষার-মানিক’, ‘বর্ষার গান’, ‘সুব্রত
মঙ্গল’-জাতীয় পদ্য কি সুব্রত’র গড়ে-ওঠা মূর্তির ও ওজনের সঙ্গে মানায়।
তাঁর কাছে বেশি প্রত্যাশা বলেই অপ্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় মাথা কুটতে ইচ্ছে
করে। তাঁর কবিতায় আমি খুঁজছি চিত্রকল্প। এই যেমনÑ
কিংবা, ভাবো, একদিন এই কালিদহে
সবগুলি হাতি গেলা হয়ে গেলে পরে
চৌষট্টি পাপড়ির পদ্মে বসে এক ভূয়সী ভামিনী
সংক্রান্তির রাতে ওর টেবোটেবো গাল টিপে দেবে। (বিষ্ণু, পৃ. ৭৫)
চিত্রকল্পের মাধ্যমেই সুব্রত সৃষ্টি করে ফেললেন অপূর্ব ‘বিষ্ণুপুরাণ’।
প্রায়োগিক শব্দের পাশাপশি অভিধান-সেঁচা শব্দের প্রতি সুব্রত’র আগ্রহ
লক্ষণীয়। এতে পাঠকের লাভ হয় বটে। কবিতার লাবণ্য কিছু নষ্ট হয় হোক! তবু
সুব্রত-ব্যবহৃত অনেক উপমার প্রতি আমার মুগ্ধতা রয়েছে। যেমনÑ
১. যেমন গলে মোমের মতন সোম নক্ষত্রের নীল ডানা হতে (পৃ. ৮৮)
২. সর্ববেধী অদৃশ্য শিখায়
এইসব অনুভব জতুর মতন গলে যায় (পৃ. ৮২)
৩. বুড়ির সুতোর মতো নামল আসমান থেনে এক.... (পৃ. ৬৩)
৪. বোতলের দৈত্য এক অতৃপ্ত রতির মতো ছিপিমুক্ত (পৃ. ২৯)
এ-রকম সুচারু উপমার পাশে ‘জ্বলে গেল ধূপের মতন’ উপমা খুব ক্লিশে মনে হয়।
বইয়ের শেষপ্রচ্ছদে বলা হয়েছে ‘আমরা অনায়াসে পেয়ে যাই ফুল ফল কাঁটা পাতা
ছায়া ও শুশ্রƒষায় ভরা এক সবুজ ঘটনাÑ সুব্রত’র কবিতা।’ আমি এই ‘আমরা’র দলে
ভেড়ার যোগ্যতা হয়তো অর্জন করিনি। তবে অনেকের হাতে যা ‘খোলা কবিতা’,
সুব্রত’র হাতে তা ‘দিগম্বর চম্পূ’। এই শিল্পিত আবরণ ও আভরণ সুব্রত’র অনেক
কবিতায় পাওয়া যায়। আশির কবিদের মধ্যে তাঁকে আলাদা দেখার এই এক শর্ত বটে!
সুব্রত’র বিচিত্রবিহারী পঠন-পাঠনের চিহ্নও রয়েছে এ-গ্রন্থে। প্রাচ্য ও
প্রতীচ্যের অনেক পুরাণ তিনি ব্যবহার করেছেন, যাতে তাঁর কবিতা ঋদ্ধ হয়েছে।
শব্দ নিয়ে খেলা করার ক্ষমতাও তিনি অর্জন করেছেন। বাংলাদেশের কবিতায় তাঁর
অবস্থানকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। এই আলোচনা আশাহত এক পাঠাকের বিবেচনা
হিসেবে দেখা যেতে পারে। হয়তো ঝুঁকিই নিচ্ছি। কিন্তু সত্যের খাতিরে নিজের
ভালো-মন্দ লাগাকে প্রকাশ করতে আমি নির্দ্বিধ।
সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের সঙ্গে চাক্ষুষ পরিচয় যেহেতু নেই, তাই সম্পর্ক
নষ্টের শঙ্কা নেই। আলোচনা লিখে অনেকে সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে। এই মোক্ষম
অবস্থানে থেকে জোর গলায় বলতে পারি, সুব্রত’র এ-গ্রন্থের সকল কবিতা মন
দিয়ে পড়ায় আমার ভাবনায় কিছু নতুন উপকরণ যুক্ত হয়েছে। সুব্রত’র কবিতা
ভাবায়, জাগায়।

[পাদটীকা : এই আলোচনাটি লিখেছিলাম ‘অমিত্রাক্ষর’-সম্পাদক কবি আমিনুর
রহমান সুলতানের অনুরোধে। তিনি বইটি আমাকে কিনে দিতে চেয়েছিলেন। লেখাটি
‘অমিত্রাক্ষর ১ নং কম্পোজ’ লিখে তিনি নথিভুক্তও করেন। কিন্তু কয়েকদিন পরে
তিনি এটি ছাপতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। আমি লেখাটি ফেরত নিই। এই ঘটনা
একদিন পাড়ি ‘লোক’ পত্রিকার আড্ডায়। তখন ‘আজকের কাগজে’র সাময়িকী-সম্পাদক
কবি শামীম রেজা এটি তাঁর পত্রিকায় পাঠাতে বলেন। আমি লেখাটির কপি তাঁকে
দিই। দীর্ঘদিন অপেক্ষা শেষে এটি কবে ছাপা হবে তা জানতে চাই। লেখাটির আকার
একটু বাড়িয়ে দিলে ভালো হয় বলে তিনি জানান। বইয়ের আলোচনা গড়পড়তা এরকম
আকারের হয় বলেই মনে হয়। বাড়িয়ে দেয়ার অনুরোধ আমি রক্ষা করতে যাইনি।
লেখাটি সেখানে ছাপা হয়নি। একসময় কাগজটিই উঠে যায়। দীর্ঘদিন লেখাটি খুঁজে
পাচ্ছিলাম না। এতদনি পরে মনে হলো, লেখাটি প্রকাশ হওয়া দরকার। অগত্যা!]

তপন বাগচী

muzib mehdy

unread,
May 13, 2009, 12:59:03 AM5/13/09
to kobit...@googlegroups.com
ছন্দনিষ্ঠ চমৎকার গ্রন্থালোচনাটি কবিতাকথায় পোস্ট করায় তপন বাগচীকে ধন্যবাদ। সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ নিজে যেহেতু কবিতাকথায় সরব আছেন, কাজেই এখানে সম্পর্কহানির ভয় আমি করছি না। তপনদার খটকার জায়গাগুলো সম্পর্কে নিশ্চয়ই সুব্রতদা তাঁর ব্যাখ্যা হাজির করবেন। মাঝখান থেকে আমরা (কবিতাকথার সদস্যরা) লাভবান হবো।

এই পোস্টে মাহবুব লীলেন, সোহেল হাসান গালিবসহ কবিতাকথার ছন্দাগ্রহী সকল বন্ধুকে আমন্ত্রণ।

Gomes, Subrata Augustine

unread,
May 13, 2009, 1:04:33 AM5/13/09
to kobit...@googlegroups.com

Priyo Muzib,

 

Ami ei lekhaTar ekTa protikriya Maruf-ke paThiyechhi ja ekhono Bangla Mati-te chhepe beroy ni, sheTi ta(n)r onumoti byatireke ekhane dakhil kora uchit hobe kina bujhte parchhi na...

 

 

Priyo Maruf,

 

Apnake paThano protikriyaTi ekhane dite apnar apotti achhe ki? EkTu janaben please.

 

Subrata



From: kobit...@googlegroups.com [mailto:kobit...@googlegroups.com] On Behalf Of muzib mehdy
Sent: Wednesday, 13 May 2009 2:59 PM
To: kobit...@googlegroups.com
Subject: [????????:667] Re: ?????? ???????? ??????? ‘??????? ?????’: ??????? ????? ?????? ???????????

maruf raihan

unread,
May 13, 2009, 1:05:03 AM5/13/09
to kobit...@googlegroups.com
তপন, লেখাটা তো বাংলামাটির মে সংখ্যায় গেছে, সুব্রতও একটা দীর্ঘ প্রতিক্রিয়া পাঠিয়েছেন। আবার কেন?
http://www.banglamati.net.bd/


2009/5/13 muzib mehdy <m.m...@gmail.com>

ছন্দনিষ্ঠ চমৎকার গ্রন্থালোচনাটি কবিতাকথায় পোস্ট করায় তপন বাগচীকে ধন্যবাদ। সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ নিজে যেহেতু কবিতাকথায় সরব আছেন, কাজেই এখানে সম্পর্কহানির ভয় আমি করছি না। তপনদার খটকার জায়গাগুলো সম্পর্কে নিশ্চয়ই সুব্রতদা তাঁর ব্যাখ্যা হাজির করবেন। মাঝখান থেকে আমরা (কবিতাকথার সদস্যরা) লাভবান হবো।

এই পোস্টে মাহবুব লীলেন, সোহেল হাসান গালিবসহ কবিতাকথার ছন্দাগ্রহী সকল বন্ধুকে আমন্ত্রণ।






--
Maruf Raihan


www.banglamati.net.bd

maruf raihan

unread,
May 13, 2009, 1:13:27 AM5/13/09
to kobit...@googlegroups.com
সুব্রত, আমার মনে হয় আপনার প্রতিক্রিয়াটা বাংলামাটিতেই যাক। সবাই অপেক্ষা করুন না হয়। তপন জানতেন যে আমি লেখাটা প্রকাশ করছি। তারপরেও তিনি এটা কবিতাকথায় দিয়ে কি ঠিক কাজ করলেন? ওর লেখার শেষের নোটটি পড়েছেন নিশ্চয়ই। তিনি মাত্র ক'দিন আগে আমাকে একটা এডিটেড ভার্সন পাঠান লেখাটার, সেটাই বাংলামাটির মে সংখ্যায় আপনি পড়ে প্রতিক্রিয়া পাঠিয়েছেন। ভালো থাকুন।
http://www.banglamati.net.bd/


2009/5/13 Gomes, Subrata Augustine <AG21...@ncr.com>



--
Maruf Raihan


www.banglamati.net.bd

muzib mehdy

unread,
May 13, 2009, 1:16:52 AM5/13/09
to kobit...@googlegroups.com
সুব্রতদা ও মারুফ ভাই,
একটা লেখা একাধিক জায়গায় ছাপা হতে পারে, এটা কোনো দোষের ব্যাপার নয় বোধকরি।

যেহেতু তপনদা লেখাটি এখানেও পোস্ট করেছেন, কাজেই সুব্রতদার বক্তব্যটাও এখানে থাকা দরকার মনে করছি।

আমরা কবিতাকথার অনেক পাঠকই বাংলামাটি পড়ে থাকি, কিন্তু সবাই যে পড়তে পারি না তা বলাই বাহুল্য। কিছু বাড়তি পাঠক তো এই আলাপচারিতা দ্বারা ঋদ্ধ হতে পারি। তাই না?

কাজেই আপনাদের সুমতি হোক।

Gomes, Subrata Augustine

unread,
May 13, 2009, 1:20:10 AM5/13/09
to kobit...@googlegroups.com
Maruf, amio sherokom-i bhabchhilam. Apnar confirmation-er jonyo dhonyobad...
 
Bhalo thakben,
Subrata


From: kobit...@googlegroups.com [mailto:kobit...@googlegroups.com] On Behalf Of maruf raihan
Sent: Wednesday, 13 May 2009 3:13 PM
To: kobit...@googlegroups.com
Subject: [????????:670] Re: [????????:667] Re: ?????? ???????? ??????? ‘??????? ?????’: ??????? ????? ?????? ???????????

Tapan Bagchi

unread,
May 13, 2009, 2:25:23 AM5/13/09
to kobit...@googlegroups.com
মারুফ ভাই,
লেখাটি তো বাংলামাটির মে (http://www.banglamati.net.bd/may-09/book.php সংখ্যায় পড়েছি। ছাপা হাওয়া লেখা যেমন বন্ধুদের পড়তে দেন, এটি আমি তেমনিভাবেই কবিতাকথায় পড়তে দিয়েছি। লেখাটি পাঠানোর সময় পৃথক চিঠিতে মুজিবকে লিখেছিলাম, ‘দেখুন, বিবেচনা করে, প্রকাশ করবেন কিনা’। মারুফভাই লিখেছেন, ‘‘তপন জানতনে যে আমি লেখাটা প্রকাশ করছ। কিন্তু তারপরেও তিনি এটা কবিতাকথায় দিয়ে কি ঠিক করলেন?’ পাঠানোর সময়ে, আমারও মনে হচ্ছিল, কাজটি ঠিক করছি কিনা। কিন্তু মারুফ ভাইয়ের প্রশ্নের ঠিক-বেঠিকের জবাব দিতে গিয়ে মনে হলো, ভুল করিনি। কারণ, আর আপনারটি (বাংলামাটি) তো পত্রিকা, মুজিবেরটি (কবিতাকথা) তো আড্ডা। পত্রিকায়  প্রকাশিত লেখা কি আড্ডায় দেখানো যাবে না? এরকম নিয়ম আছে কি না জানতে পারলে ভালো হতো। তাছাড়া তো আমি লেখাটি প্রকাশের পরেই তো দিয়েছি। বাংলামাটিতে পাঠানো লেখা প্রকাশের আগে অন্য কোথাও দেয়ার মতো দুর্মতি আমার নেই। আর প্রকাশ না হলে সুব্রতদা প্রতিক্রিয়া লেখার সুযোগ পেলেন কীভাবে? তো, প্রকাশিত লেখার অনুলিপি আড্ডায় দিয়ে ঠিক করেছি কিনা, মারুফভাই কি একবার ভেবে বলবেন?
তপন বাগচী
Message has been deleted

muzib mehdy

unread,
May 13, 2009, 2:59:50 AM5/13/09
to kobit...@googlegroups.com
কবিতাকথায় তপন বাগচী লেখাটি পোস্ট করেছেন আজ সকাল ৮.৫৩-এ। আর আমাকে ব্যক্তিগত মেইল পাঠিয়েছেন ৮.৫৫-এ। মানে প্রায় একইসময়ে ঘটেছে দুটো ঘটনা। সুতরাং এটি 'বাংলামাটি'তে ছাপা হয়েছে বা হবে এই বিবেচনা করে প্রকাশ করব কী করব না এরকম ভেবে ওঠবার সুযোগ ছিল না আমার। যদি কবিতাকথায় মডারেশন সিস্টেম কার্যকর থাকত, তাহলে হয়ত মারুফ ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ করে পরে ছাড় দেয়া না-দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া যেত।

আমি কাজেই তপনদাকে ব্যক্তিগত মেইলে জানিয়েছি যে, এক লেখা একাধিক জায়গায় ছাপা হওয়াকে আমি দোষের কিছু মনে করি না। সব ঠিক আছে।

মুদ্রণ মাধ্যমে এ ব্যাপারে নানারকম কড়াকড়ি এখনো প্রচলিত আছে, কিন্তু সফট মাধ্যমে এসব রীতিব্যবস্থা অনেকটাই ভেঙে গেছে, যেটুকু আছে ভবিষ্যতে সেটুকুও থাকবে বলে মনে হয় না! সুতরাং আমরাও সেসব রীতিনীতির নিকুচি করতে শুরু করতে পারি তো!

Tapan Bagchi

unread,
May 13, 2009, 3:21:11 AM5/13/09
to kobit...@googlegroups.com
মুিজব, আমি মনে করেছি, আপনি একটু দেখে তারপর পোস্ট করেন। একই সময়ে পৃথক চিঠিতে তাই আমার সংশয়ের কথা জানিয়েছি। তবে সেটা কোনো বিষয় নয়। বাংলামাটি পত্রিকার লেখা নিয়ে যদি শাহবাগের আড্ডায আলোচনা করা যায়, তাহলে কবিতাকথার আড্ডায়ও আলোচনা করা যেতে পারে। এতে মহাভারত অশুদ্ধ হয়নি বলেই আমি মনে করছি। মারুফ ভাই কি বলেন?

muzib mehdy

unread,
May 13, 2009, 3:29:37 AM5/13/09
to kobit...@googlegroups.com
তপনদা,
সেটা করা যায় কেবল তখন, যখন মডারেশন আইকনটা একটিভ থাকে। সেক্ষেত্রে সকল আলোচনা, মন্তব্য, প্রতিমন্তব্যই আমার ছাড়ের জন্য অপেক্ষা করবে। কবিতাকথা তো সেটা করে না, আপনি জানেন। এখানে সব সরাসরি।

মডারেটর হিসেবে বর্তমানে আমার হাতে কেবল এই সুযোগটাই আছে যে, আমি লেখাটা মুছে দিতে পারি। কিন্তু সেটা করার কোনো সুযুক্তি আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ আমারও মত এই যে, এতে মহাভারত অংশতও অশুদ্ধ হয় নি।
 

Reply all
Reply to author
Forward
0 new messages