লেজিসলেটিভ থিয়েটারঃপ্রথম কাজটা হল একটু গবেষণা করে নেওয়া। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল সমেত বিভিন্ন দেশের আইন ও রীতি নীতি যা ধর্ষণের বিষয়টির সঙ্গে সম্পর্ক রাখে সেগুলো একটু জেনে নেওয়া। নানা রকমের সংখ্যাতত্ত্ব সংগ্রহ করা। জন সংখ্যায় নারীর সংখ্যা থেকে শিশুমৃত্যুতে মেয়ে শিশুর সংখ্যা স্থান-কালা অনুসারে- এই জাতীয় তথ্য মূলত সংগ্রহ করা। দ্বিতীয় কাজটি হল প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায়/ ক্ষেত্র সমীক্ষার মাধ্যমে/ সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে (বা তিনটেই কম-বেশী করে) বর্তমান সামাজিক রাজনৈতিক অবস্থায় (শহরের ও গ্রামের) নারীর অবস্থান বিষয়ক তথ্যাদি সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা।
এবারে এগুলোকে সামনে রেখে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে দুটি কাজ করতে হবে।
প্রথমে এই সমস্যার মোকাবিলার জন্য এক বা একাধিক (ক্ষেত্র অনুযায়ী হয়) আইন তৈরী করতে হবে। ধরা যাক একটি আইন সামাজিক লিঙ্গ অসাম্য দূর করার জন্য এবং অন্যটি শারীরিক/মানসিক অত্যাচার থেকে শুরু করে ধর্ষণ বিষয়ক আইন। এই দুটি আইনের খসড়া আমাদের বানিয়ে নিতে হবে। সেই খসড়া প্রতিটি দর্শককে বাড়তি সাদা কাগজ সহ দিতে হবে।
দ্বিতীয়ত, ধরে নেওয়া যাক আপাতত যে এই ধর্ষণ সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের সমাজে মোটামুটি চাররকমের মতবাদ দেখা দিয়েছে। তাহলে সেই চাররকমের প্রতিটি মতবাদকে তার নিপূণ যুক্তি ও আবেগ সমেত উপস্থিত করার জন্য চারজন অভিনেতার জন্য চারটি স্পীচ তৈরী করা। প্রতি অভিনেতা একটি ইন্টারেস্ট গ্রুপের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
এই কাজটা একটি মুক্ত মঞ্চের চেয়েও এখনকার সময়ের জন্য প্রেক্ষাগৃহে হলে সুবিধে। সেখানে একজনকে স্পীকার হিসেবে থাকতে হবে। চার অভিনেতা চার অবস্থানের বক্তব্য জানাবেন। যাঁরা দর্শক তাঁরা এই চারজনের বক্তব্য শেষ হয়ে গেলে দু ভাবে অংশ নিতে পারেন। চাইলে তাঁরা সরাসরি বক্তব্য পেশ করতে পারেন, অথবা তাঁরা তাঁদের হাতে দেওয়া কাগজে এই আইনগুলোর জন্য তাঁদের প্রস্তাবিত সংশোধনী লিখে দিতে পারেন।
সেই সংশোধনীগুলোর বিচার বিবেচনাও হবে ওই মঞ্চে। যতগুলি সংশোধনী আসবে ততগুলির ক্ষেত্রেই ভোটদানের মাধ্যমে রাখা না রাখা নির্ধারিত হবে। সংশোধনীর স্বপক্ষে মূল প্রস্তাবক স্বল্প কিছু সময় বলার সুযোগ পাবেন। তার উপর ভোট হবে।
এই পর্ব শেষ হলে হবে মূল খসড়া আইনের উপর ভোটগ্রহণের প্রক্রিয়া। সমস্ত ভোটগ্রহণ এখানে প্রকাশ্যে হবে। হাততোলা ও সংখ্যা গোণার মাধ্যমেই হবে।
এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া বা এই প্রক্রিয়াতে মতামত দেওয়ার জন্য বহুক্ষেত্রে সমাজের নানান অংশের মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তার মধ্যে যাঁরা বিধানসভা বা লোকসভায় প্রতিনিধিত্ব করেন তাঁদেরও আহ্বান জানানো হয়ে থাকে।
প্রত্যেকটা সেশন আলাদা আলাদা হবে। কাজটি সময় সাপেক্ষ এবং অবশ্যই এর সংগঠন নিখুঁত হওয়াই বাঞ্ছনীয়। সেই সংগঠন করার ক্ষেত্রে গোপনীয়তা বজায় রাখা থেকে শুরু করে বাইরের প্ররোচনা বা আক্রমণ ঠেকানোর ভাবনা ভেবে রাখা সবটাই পরে।
মোটামুটি এই হচ্ছে ব্যাপারটার সারমর্ম ও পদ্ধতি।
--
শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ
Suddhasatya Ghosh