এই সময়, কলকাতা
সবিনয় নিবেদন,
গত ২০ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে আপনাদের পত্রিকার প্রথম পাতায় ‘ডিভোর্স : ঋণে ডুবে, সর্বস্বান্ত হয়ে ৪২% স্বামী খোরপোশ দেন’ শিরোনামে একটি সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। আমরা আমান নেটওয়ার্ক, পশ্চিমবঙ্গ নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
আমান নেটওয়ার্ক গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মহিলাদের ওপর পারিবারিক নির্যাতন বিষয়ে স্থানীয় ও জাতীয় স্তরে কাজ করছে। সারা দেশে ১৫০টিরও বেশি সংগঠন এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত।
উক্ত প্রতিবেদনে একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সমীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে সমীক্ষাকারী সংস্থার নাম পর্যন্ত উল্লেখ নেই। শুধুমাত্র একটি ফিন্যান্স ম্যাগাজিনের সমীক্ষা বলেই প্রতিবেদক থেমে গিয়েছেন। মাত্র ১,২৫৮ জন নারী-পুরুষের তথাকথিত সমীক্ষা থেকে যে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়েছে—যে ৪২% পুরুষ খোরপোশ দিতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত, ২৯% পুরুষ সর্বস্বান্ত, ইত্যাদি—তা ১৪২ কোটির দেশের সামগ্রিক বাস্তবতাকে কোনোভাবেই প্রতিফলিত করে না।
এ ধরনের ক্ষুদ্র ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সমীক্ষা বাস্তব পরিস্থিতির বিকৃতি ঘটায়। আরও উদ্বেগজনক বিষয়, একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দৈনিক এমন একটি রিপোর্ট প্রকাশ করায় সমাজে নারী অধিকারবিরোধী, পুরুষতান্ত্রিক ও প্রতিক্রিয়াশীল মনোভাবকে উৎসাহিত করতে পারে। এই ধরনের তথ্য বিকৃতি আদালত ও জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে এবং মেয়েদের বিচার পাওয়ার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করবে।
ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে (২০১৯–২১) অনুযায়ী, ১৮–৪৯ বছরের ২৯.৩% নারী পারিবারিক হিংসার শিকার হয়েছেন, যেখানে হিংসা বলতে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন বোঝানো হয়েছে। এই সমীক্ষা কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের অধীনে পরিচালিত।
দেশজুড়ে আমান নেটওয়ার্কের ১৫০ টির বেশি সংগঠনের কাজের অভিজ্ঞতায়ও দেখা যায়, পারিবারিক হিংসায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন নারী ও শিশুরা। আপনাদের প্রতিবেদনে শিশুদের খোরপোশের বিষয়টি অনুল্লেখিত রয়ে গেছে। রাষ্ট্র যখন ভরণপোষণ থেকে বিমুখ, তখন এই দায় সম্পূর্ণ পরিবারের ওপর এসে পড়ে। নির্যাতিত নারীরা ছোট শিশুদের নিয়ে আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াতে বাধ্য হন। পাঁচ কোটির বেশি মামলা ঝুলে থাকা বিচারব্যবস্থায় খোরপোশের আদেশ পেতে বছর কেটে যায়—যার দায় নারীদের নয়। সুপ্রিম কোর্টও (রজনীশ বনাম নেহা, ২০২০) এই অবস্থানকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
যদি সরকারি তথ্যও দেখা যায়, ২০২৩ সালের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো-র তথ্যমতে, স্বামী ও তার পরিজনের হাতে নির্যাতনের ১,৩৩,২৭৬টি কেস নথিভুক্ত হয়েছে, এবং ২০২৩ সালের শেষে ৮,১৮,৬২৫টি মামলা ঝুলে ছিল। এর মধ্যে ৯০.৪% মামলা এখনো বিচারাধীন। শুধু গুজরাটে ৩২,৯৮০ এবং হরিয়ানায় ৬০,৬১৬ খোরপোশের মামলা ঝুলে আছে—দেশজুড়ে সংখ্যাটা কত ভয়ঙ্কর, তা অনুমান করা কঠিন নয়।
এই সময় ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ দৈনিক, যা দীর্ঘদিন ধরে মানুষের পক্ষে কাজ করে চলেছে। তাই নেটওয়ার্কের তরফে অনুরোধ, আমাদের এই মতামতটি আপনাদের পত্রিকায় প্রকাশ করুন, যাতে দেশের বাস্তব পরিস্থিতি, অসংখ্য সংগঠনের অভিজ্ঞতা ও সরকারি তথ্যের ভিত্তিতে গঠিত আমাদের বক্তব্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়।
ধন্যবাদান্তে,
আমান নেটওয়ার্ক, পশ্চিমবঙ্গ নেটওয়ার্ক
এই সময়, কলকাতা
সবিনয় নিবেদন,
গত ২০ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে আপনাদের পত্রিকার প্রথম পাতায় ‘ডিভোর্স : ঋণে ডুবে, সর্বস্বান্ত হয়ে ৪২% স্বামী খোরপোশ দেন’ শিরোনামে একটি সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। আমরা আমান, পশ্চিমবঙ্গ নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
আমান, পশ্চিমবঙ্গ নেটওয়ার্ক