নগরায়ণের এ কোন ছবি, প্রশ্ন তুলছে নিউ টাউন

39 views
Skip to first unread message

A vick, Pune

unread,
Jul 19, 2013, 1:50:06 AM7/19/13
to newtown-raja...@googlegroups.com, Akankha...@googlegroups.com
Bit over-critical and one-sided....but read it....
 
নগরায়ণের এ কোন ছবি, প্রশ্ন তুলছে নিউ টাউন
অনুপ চট্টোপাধ্যায় ও আর্যভট্ট খান
ঝাঁ-চকচকে, স্বয়ংসম্পূর্ণ ১৫তলা আবাসন। তবে ঢোকার মুখেই পচা খাল। যাতায়াতে ভরসা বাঁশের নড়বড়ে সেতু। আর গাড়ি নিয়ে যেতে হলে ঘুরতে হবে পাঁচ কিলোমিটার পথ।
রাস্তার এক দিকে ধানখেত। অন্য প্রান্তে বিস্তীর্ণ মাঠ বড় বড় ঘাসে ঢাকা। চরছে গরু। আর মাঠ বরাবর দূরে সারি সারি বহুতল। সেগুলিতে যেতে ঘুরতে হবে অনেকটা পথ। ঘুরপথে ওই আবাসনের একটি বহুতলে পৌঁছে জানা গেল, আবাসনে রয়েছে সাকুল্যে ২৫টি পরিবার। বাকি সব ফ্ল্যাট তালাবন্ধ। এক আবাসিক বলেন, “কে আসবে এখানে? জল কিনে খেতে হয়। রাস্তা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু অনেকটা ঘুরপথ। বাজারহাট নেই, ওষুধের দোকান নেই, বাস নেই। নিজেদের গাড়ি না-থাকলে ভরসা গ্রামের লোকেদের টেম্পো।
নিউ টাউন অ্যাকশন এরিয়া টু-র একটি বহুতলে সাততলার ফ্ল্যাটে ছেলে ও বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে থাকেন অধ্যাপিকা দেবিকা চৌধুরী। দিন কয়েক আগে রাতে তাঁর বাবার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ওষুধ কিনতে যেতে হল বাগুইআটি। সেখানে যেতেও ভরসা ট্যাক্সি, বেশি ভাড়া দিয়ে। দেবিকাদেবীর আফশোস, গত কয়েক বছরে আবাসনের কাছাকাছি একটা ওষুধের দোকান পর্যন্ত হয়নি। নেই ট্যাক্সি স্ট্যান্ডও।
রাজ্যের গর্ব রাজারহাট উপনগরীতে আপনি স্বাগত।
বহুতলের পাশেই গরু চরার আদর্শ মাঠ।
সারা দেশে নজরকাড়া উপনগরী হবে নিউ টাউন। নগরায়ণের শুরুতে এমনই দাবি করেছিল পূর্বতন বাম সরকার। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে অনাবাসী ভারতীয় থেকে দেশি বিদেশি নানা সংস্থা জমি নিয়ে নির্মাণ শুরু করে সেখানে। ৩০-৪০ তলা বাড়ি বানায় শ’খানেক আবাসন নির্মাণকারী সংস্থা। কোটি কোটি টাকা লগ্নি করে অনেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন, খুব দ্রুত গড়ে উঠবে উপনগরী। কিন্তু নিউ টাউনে বাসযোগ্য পরিবেশ আজও অধরাই। তাই অনেক ফ্ল্যাটই এখনও খাঁ খা।
অ্যাকশন এরিয়া থ্রি-র এক বাসিন্দার বক্তব্য, “অধিকাংশ ফ্ল্যাটমালিক নিজেরা থাকেন না। তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের ভাড়া দিয়েছেন। ওই কর্মীরা সকালে অফিসে বেরিয়ে যান। ফেরেন রাতে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থাকা-থাওয়া সবই অফিসে। ফলে অসুবিধা টেরই পান না তাঁরা।”
বসবাসের কতটা উপযুক্ত আধুনিক ওই উপনগরী? কিছুটা আঁচ মিলেছে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটিস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস-এর প্রকাশনা বিভাগের এডিটোরিয়াল ডিরেক্টর অ্যালান টমাসের পর্যবেক্ষণে। নগরায়ণ নিয়ে গবেষণামূলক তথ্য ও ছবি সংগ্রহে ২০০৮ থেকে বারবার তিনি কলকাতায় এসেছেন এবং বিমানবন্দরে আসা-যাওয়ার পথে ঘুরেছেন রাজারহাট-নিউ টাউন এলাকা। তাঁর কথায়, “খাপছাড়া ভাবে বড় বড় কিছু আবাসন। পাশাপাশিই অব্যবহৃত প্রচুর জমি, গরু চরছে।” অ্যালানের মন্তব্য, “গোটা পরিকল্পনার কোনও সুষ্ঠু রূপরেখা নেই।” অট্টালিকার বাসিন্দাদের অবস্থা আরও সঙ্গীন। জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় জল, আলোও নেই। “অবস্থা যেন বস্তিরও অধম,” চোখে পড়েছে অ্যালানের।
নিউ টাউন যে এখনও অপরিকল্পিত রয়ে গিয়েছে, তা অস্বীকার করেননি ডান অথবা বাম, কোনও রাজনৈতিক দলের নেতারাই। এমনকী, রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “নিউ টাউন এখনও অপরিকল্পিত শহর হয়েই রয়েছে।”
কেন এই হাল? কারণ নিয়ে যথারীতি ‘আমরা-ওরা’র রাজনৈতিক চাপান-উতোর। বামফ্রন্টের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “পাঁচ শতাংশ জায়গার উপরে ৩০ শতাংশ মানুষের বসবাসের বন্দোবস্ত করে দিতে কাজ এগোচ্ছিল দ্রুত গতিতে। এক সময়ে নগরায়ণের পথে বাধা হন তৃণমূল সমর্থকেরা।” তৃণমূলের আমলে প্রকল্পের কাজ মুখ থুবড়ে পড়েছে বলেও অভিযোগ করেন অশোকবাবু।
রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অবশ্য মনে করেন রাজারহাট উপনগরীকে অপরিকল্পিত করে তুলেছে বিগত বাম সরকারই। তাঁর বক্তব্য, “অগোছালো নগরায়ণের জন্য দায়ী হিডকো-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান গৌতম দেব। পরিকল্পনা না-করেই নিজেদের লোককে এবং দলের ধামাধরা প্রোমোটারকে দেদার জমি বিলি করেছেন ওঁরা।” ফিরহাদের মতে, একটা বিশেষ অঞ্চলের কাজ শেষ না করেই যত্রতত্র জমি বিলির ফলে নগরায়ণের কাজ সুষ্ঠু ভাবে হয়ে ওঠেনি। তাঁর কথায়, “অ্যাকশন এরিয়া ওয়ানের কাজ শেষ না করে অ্যাকশন এরিয়া টু ও থ্রি-তে কাজ শুরু করে দেওয়ায় কোনও এলাকাই বসবাসের উপযোগী হয়ে ওঠেনি। দফায় দফায় এলাকা ধরে কাজ করলে ভাল হত।”
ঝকঝকে আবাসনের পাড়ায় চলছে ভেলায় পারাপার।
মানতে নারাজ রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “নতুন উপনগরীর দু’পাশে দুই শহর সল্টলেক ও রাজারহাট। নিউ টাউনে বাস করতে আসা মানুষের বিশ্বাস অর্জনের জন্য পুরো জায়গাকে প্রথমেই ঘিরে ফেলা দরকার ছিল। আমরা তা-ই করেছিলাম।” তাঁর আমলে পছন্দমতো লোককে দেদার জমি বিলি নিয়ে ফিরহাদের অভিযোগের জবাবে গৌতমবাবু বলেন, “প্রতিটি প্লটই পরিকল্পনা মতোই বণ্টন করা হয়েছিল। কাগজপত্রে তার প্রমাণও মিলবে।”
অ্যাকশন এরিয়া ওয়ান থেকে থ্রি-র মাঝখানে বিক্ষিপ্ত বহুতল ও দোকানপাট। কেন এখনও নিউ টাউনে নগরায়ণ জমাট বাঁধল না? হিডকো-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন বলেন, “নিউ টাউন একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনাতেই এগোচ্ছে। সেক্টর ফাইভের ধার ঘেঁষে অ্যাকশন এরিয়া ওয়ান। সেখানে বহুতলের পাশাপাশি দোকান-বাজার, বাসস্ট্যান্ড। আর অ্যাকশন এরিয়া টু-র বহুতলগুলি ভিআইপি রোড বা রাজারহাটের ধার ঘেঁষে। সেখানে শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স, রেস্তোরাঁ। নিউ টাউনের দুই প্রান্ত ধরে উপনগরীকে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।”

সব প্লট পরিকল্পনা মতোই
বণ্টন করা হয়েছিল।
গৌতম দেব

সব কাজ শেষ করতে
আরও ১০ বছর লেগে যাবে।

ফিরহাদ হাকিম
অথচ নিউ টাউনের দুই প্রান্তের মাঝেও বিক্ষিপ্ত ভাবে প্রচুর বহুতল। সেগুলির বাসিন্দারা ন্যূনতম পরিষেবা, যেমন রাস্তা, জল, বিদ্যুৎ, বাজার, যানবাহনের সুযোগসুবিধা কতটা পান? দেবাশিসবাবুর দাবি, “ন্যূনতম পরিষেবা যেমন রাস্তা, বিদ্যুৎ, ফোন লাইনের সুবিধা মিলছে। বাজার বা যানবাহন সে ভাবে জমেনি। কারণ আবাসনে লোকসংখ্যা কম। তা বাড়লেই যানবাহন বাড়বে।” যদিও বাসিন্দাদের পাল্টা যুক্তি, “যানবাহন, বাজার হলে তবেই আবাসনে লোক আসবে।” অ্যাকশন এরিয়া টু-র এক আবাসিক বলেন, “বিদ্যুৎ, রাস্তা সম্প্রতি হয়েছে। বছর দুই আগেও কিছু আবাসনে আলো না থাকায় মোমবাতি জ্বালিয়ে থাকতে হয়েছে। রাস্তা হয়েছে সম্প্রতি। আগে কাদা পেরিয়ে বাড়ি ঢুকতে হতো। এখন পরিস্থিতির একটু উন্নতি হলেও যানবাহন বা বাজারহাট নেই। পানীয় জলও কিনে খেতে হয়।”
সব দিক থেকে কবে বাসযোগ্য হবে আধুনিক এই উপনগরী? হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিসবাবু বলেন, “গঙ্গার জল এনে প্লান্টে পরিশোধন করে নিউ টাউনে পানীয় জল সরবরাহ করা হবে তিন বছরের মধ্যে। পাইপলাইন বসানোর কাজ চলছে।”
আর মন্ত্রী ফিরহাদের বক্তব্য, “এখনও অনেক কাজ বাকি। সব কাজ শেষ করতে আরও ১০ বছর লাগবে।”
Reply all
Reply to author
Forward
0 new messages